প্রথম ভারতীয় মহিলা ট্রান্স হিমালয় অভিযান, ১৯৯৭

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রথম ভারতীয় মহিলা ট্রান্স হিমালয় অভিযান, ১৯৯৭ (Indian Women’s First Trans Himalayan Journey 1997) আট সদস্যের একটি ভারতীয় মহিলা পর্বতারোহী দলের হিমালয়ের উচ্চ গিরিবর্ত্মগুলির মধ্য দিয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ হতে লাদাখ পর্যন্ত প্রায় ৪৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রমণের একটি অভিযান। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের এই অভিযান পৃথিবীর ইতিহাসে কোন মহিলা দলের প্রথম ট্রান্স হিমালয় অভিযান হিসেবে গণ্য করা হয়।[১][২]

দল নির্বাচন ও অর্থ প্রদান[সম্পাদনা]

বিখ্যাত ভারতীয় পর্বতারোহী বাচেন্দ্রী পাল প্রথম ভারতীয় মহিলা ট্রান্স হিমালয় অভিযানের পরিকল্পনা করেন। এই অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য পঁচিশজন মহিলা আবেদন করলেও তিনি পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাত জনকে নির্বাচন করেন। এই সাতজন হলেন গুজরাতের চাওলা জাগরীদার, উড়িষ্যার চেতনা সাহু, মুম্বইয়ের আলোকচিত্ৰকর বিনীতা মুনি, টাটানগরের বাঙালি প্রকৌশলী সুমিতা রায়, সুরাটের স্থপতি নন্দা পটেল, মুন্সিয়ারির মলিকা বির্দি এবং ব্যাঙ্গালোরের উকিল কোকিলা সাধু। এই অভিযানের জন্য টাটা স্টীল অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন দশ লক্ষ টাকা এবং ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ক্রীড়া ও যুব বিভাগ দশ লক্ষ টাকা প্রদান করে।[১]

অরুণাচল প্রদেশ, ভুটান, সিক্কিম ও নেপাল[সম্পাদনা]

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ভারতের অরুণাচল প্রদেশের বোমডিলা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এই দল রাহুং,পঞ্চবতী, দেরাং, বৈশাখী হয়ে ৪,১২৫ মিটার উচ্চ ত্সে গিরিবর্ত্ম পার করে তাওয়াং, লুমলা ও ব্লাটিং হয়ে পূর্ব ভুটানের তাশিগাং নামক স্থানে প্রবেশ করে। তাঁরা ল্হুনত্শি, বুমথাং, থোংসা, ওয়াংদি, ফোড্রাং, থিম্পু, পারো, হা, সামত্সে হয়ে সিবসু নামক স্থানে ভুটানের পশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করে সিক্কিমের পাঙ্গোলাখা নামক স্থানে প্রবেশ করেন। এই পথে তাঁদের ইয়োতাং গিরিবর্ত্ম (৩,৫২৬ মিটার), থ্রুমসিং গিরিবর্ত্ম (৩,৭৫৮ মিটার), শেলথোং গিরিবর্ত্ম (৩,৫৭৬ মিটার), পেলে গিরিবর্ত্ম (৩,৩০০ মিটার), দোচু গিরিবর্ত্ম (৩,০৮০ মিটার), পুম গিরিবর্ত্ম (৩,০৫০ মিটার), জিলে গিরিবর্ত্ম (৩,৭৮০ মিটার), চেলে গিরিবর্ত্ম (৩,৯৯৫ মিটার), সেলে গিরিবর্ত্ম (৩,৪৯০ মিটার) প্রভৃতি ভুটানের উচ্চ গিরিবর্ত্মগুলি অতিক্রম করতে হয়। সিক্কিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে তাঁরা ইয়োকসাম যাত্রা করে সেখান থেকে বাখিম, দ্জোংরি গিরিবর্ত্ম (৪,৩২০ মিটার), রাথোং হিমবাহরাথোং গিরিবর্ত্ম (৫,১৮০ মিটার) পেরিয়ে যাত্রা শুরুর আটান্নদিন পরে পূর্ব নেপালের ইয়ালুং হিমবাহ অতিক্রম করেন। এরপর তাঁরা দেওরালি ডান্ডা (৩৪০০ মিটার), সল্প ধারা (৩৩১৫ মিটার), লামাজুরা গিরিবর্ত্ম (৩৫৪০ মিটার) হয়ে তেইশ দিন পরে কাঠমাণ্ডু পৌঁছন। এরপর তাঁরা বেসিশহর থেকে যাত্রা শুরু করে পিসাং, মানাং, থরং গিরিবর্ত্ম, মুক্তিনাথ হয়ে কাগবেণী পৌছে মধ্য নেপালের অন্নপূর্ণা পরিক্রমা নামক বিখ্যাত ট্রেক সম্পন্ন করেন। এরপর তাঁরা সাংদা গিরিবর্ত্ম (৫১২৩ মিটার) হয়ে দোল্পা ও দুনাই অঞ্চল হয়ে পশ্চিম নেপালের দেওরালি (২৭০০ মিটার), ভোটি লেখ (২৪৪৫ মিটার), গোশাদা গিরিবর্ত্ম (৩২০০ মিটার), চৈনপুর, শিওরিপাখা (৩১১০ মিটার), দাল লেখ (৩৪৪০ মিটার) ৭ই জুন ভারত-নেপাল সীমান্তের ধার্চুলা পৌঁছন। নেপালের চৌদ্দটি জেলার মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম নেপাল যাত্রা করতে তাঁদের মোট ছেষট্টি দিন সময় লাগে।[৩]

দলে ভাঙ্গন[সম্পাদনা]

ধার্চুলায় দলের তিন সদস্য মলিকা বির্দি, সুমিতা রায়বিনীতা মুনি দলনেত্রী বাচেন্দ্রী পালের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে দল থেকে সরে এসে নিজেরা একটি দল গঠন করে স্বাধীন ভাবে অভিযানটি সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন।[১] ১৬ই জুন তাঁরা টু ওয়াক অ্যাক্রস দ্য হাই হিমালয় - এ জার্নি বাই ইন্ডিয়ান ওমেন, '৯৭ নামে ধার্চুলা থেকে নতুন করে অভিযান শুরু করেন। এই অভিযানের খরচ বহন করে ঐতিহ্যবাহী দ্য হিমালয়ান ক্লাব। এই তিন জন দল ছেড়ে চলে যাওয়ায় লক্ষ্মী গর্ব্যাল, পার্বতী সীপাল ও মীনা রটেলা নামক তিন মহিলা ট্রেকারকে বাচেন্দ্রী পাল দলভুক্ত করেন। [৩]

টু ওয়াক অ্যাক্রস দ্য হাই হিমালয় - এ জার্নি বাই ইন্ডিয়ান ওমেন, '৯৭[সম্পাদনা]

মলিকা বির্দি, সুমিতা রায়বিনীতা মুনি মুন্সিয়ারী, মার্তোলি, মিলাম হিমবাহ, উন্তধুর (৫৩৬০ মিটার), খিঙ্গুর গিরিবর্ত্ম (৫২২৪ মিটার), লাপথাল, মাতোলি গিরিবর্ত্ম (৫৩৫০ মিটার) হয়ে মালারি পৌঁছন। এই স্থান থেকে তাঁরা অমৃত গঙ্গার তীর ধরে গমসলি হয়ে ভুইধর খাল (৫০৫৭ মিটার) হিমবাহ পেরিয়ে ধাদা খারক ও বামনি ধর হয়ে পুষ্প উপত্যকা জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা খুন্টি খাল, হনুমান চটি, বদ্রীনাথ, মানা হয়ে কালিন্দী গিরিবর্ত্ম (৫৭৫০ মিটার) পার করেন। এরপর তাঁরা বাসুকি তাল হয়ে চতুরঙ্গী হিমবাহগোমুখ হয়ে গঙ্গোত্রী পৌঁছন। গঙ্গোত্রী থেকে তাঁরা লামখাগা গিরিবর্ত্ম (৫২৮২ মিটার) হয়ে হিমাচল প্রদেশে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা স্পিতি অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে সাংলা, ভাবা গিরিবর্ত্ম (৪৮৬৫ মিটার), গুলিং, কিব্বার, থাল্ডা, পারাং গিরিবর্ত্ম (৫৫৭৮ মিটার) পেরিয়ে ২৯শে জুলাই লাদাখের রুপশু উপত্যকায় প্রবেশ করেন। লাদাখ অঞ্চলে তাঁরা পোলোগোংকা গিরিবর্ত্ম (৫১৭০ মিটার), মান্ডা গিরিবর্ত্ম (৫০৫০ মিটার), কামদের গিরিবর্ত্ম (৫১০০ মিটার), উপশি হয়ে ৫ই আগস্ট লেহ শহরে পৌঁছন। তাঁরা পরের দিন খার্দুং গিরিবর্ত্ম (৫৫৪৫ মিটার) হয়ে পুনরায় লেহ শহরে ফিরে আসেন। ৯ই আগস্ট জাঁ থমাস নামক মীরাটের উনষাট বছর বয়স্ক মহিলা ট্রেকার তাঁদের দলভুক্ত হন এবং তাঁরা খার্দুং গিরিবর্ত্ম হয়ে নুব্রা নদী উপত্যকার তীরবর্তী খালসার, পানামিক, সাসোমা, তুলুং পুতি গিরিবর্ত্ম (৩৫৯৫ মিটার), তুর্তাইলাক হয়ে ১৫ই আগস্ট সাসের গিরিবর্ত্ম (৫৭১০ মিটার) পৌঁছন। এরপর তাঁরা শ্যোক নদী পেরিয়ে ছোংতাশ ও দেপসাং গিরিবর্ত্ম (৫৪৭৫ মিটার) হয়ে কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম (৫৬৩৮ মিটার) পৌঁছে তাঁদের যাত্রা সমাপ্ত করেন।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ice maidens Trans-Himalayan traverse: Sub-zero temperatures, hostile terrain, personal feuds fail to crush spirit of eight intrepid Indian women on 4,500-km trek"। India Today, Sheela Raval। সংগ্রহের তারিখ July 14, 1997, 15:44 IST  line feed character in |শিরোনাম= at position 12 (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. http://www.everesthistory.com/climbers/pal.htm
  3. Vineeta Muni (১৯৯৯)। "On The Dream Trail — Across The Himalaya"The Himalayan Journal55