দ্রাবিড় ভাষাসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দ্রাবিড় ভাষা

দ্রাবিড়
ভৌগোলিক বিস্তারদক্ষিণ এশিয়া
ভাষাগত শ্রেণীবিভাগবিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা পরিবার
উপবিভাগ
  • উত্তর
  • মধ্য
  • দক্ষিণ-মধ্য
  • দক্ষিণ
আইএসও ৬৩৯-২/dra

XXX

দ্রাবিড় ভাষাসমূহের বিস্তার

দ্রাবিড় ভাষাসমূহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রচলিত ৭৩টি [১] ভাষার একটি পরিবার। এই ভাষাগুলিতে প্রায় ২২ কোটি লোক কথা বলেন। তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম

চারটি প্রধান দ্রাবিড় ভাষা। বাকি ভাষাগুলির মধ্যে গোন্ডি, তুলু ও কুরুখ উল্লেখযোগ্য । দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডা, ফিলিপাইনেও এ ভাষা সীমিত আকারে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

বক্তাসংখ্যা[সম্পাদনা]

তেলুগু ভাষায় প্রায় ৮ কোটি, তামিল ভাষায় সাড়ে ৬ কোটি, কন্নড় ভাষায় প্রায় ৪ কোটি এবং মালয়লম ভাষায় সাড়ে ৩ কোটির বেশি লোক কথা বলেন। এছাড়া গোণ্ডী ভাষায় আড়াই কোটি, তুলু ভাষায় দেড় কোটি এবং কুরুখ ভাষায় এক কোটির উপর বক্তা আছে।

অবস্থান[সম্পাদনা]

দ্রাবিড় ভাষাগুলি মূলত ভারতের দক্ষিণ, পূর্ব ও মধ্য অঞ্চলে প্রচলিত। ভারতের বাইরে শ্রীলংকাতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগর, পূর্ব আফ্রিকা ও অন্যান্য প্রবাসী দ্রাবিড় সম্প্রদায়েও এগুলি প্রচলিত। দ্রাবিড় ভাষাগুলির মূল অঞ্চল থেকে অনেক দূরে পাকিস্তানে ব্রাহুই নামের দ্রাবিড় ভাষাটিতে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ লোক কথা বলেন।

চারটি মূল দ্রাবিড় ভাষা -- তেলুগু, তামিল, কন্নড় ও মালয়লম --- যথাক্রমে অন্ধ্র প্রদেশ, তামিল নাড়ু, কর্ণাটক ও কেরল রাজ্যের সরকারি ভাষা।

বংশ[সম্পাদনা]

অন্য কোন ভাষাপরিবারের সাথে দ্রাবিড় ভাষাগুলির সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ইন্দো-ইউরোপীয়, বাস্ক, সুমেরীয়, কোরীয় কারও সাথেই এদের মিল নেই। উরালীয় ও আলতায়ীয় ভাষাগুলির সাথে মিল থাকতেও পারে।

১৮১৬ সালে ভারতে ব্রিটিশ কর্মচারী ফ্রান্সিস এলিস আলাদা পরিবার হিসেবে দ্রাবিড় ভাষাগুলিকে প্রথম শনাক্ত করেন। রবার্ট কল্ডওয়েল তার যুগান্তকারী A Comparative Grammar of the Dravidian or South Indian Family of Languages (১৮৫৬) বইটিতে প্রথম সংস্কৃত "দ্রাবিড়" শব্দটি দিয়ে এই ভাষাগুলিকে নির্দেশ করেন।

দ্রাবিড় পরিবারের ভাষাসমূহ[সম্পাদনা]

তামিল[সম্পাদনা]

তামিল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য ও শ্রীলঙ্কায় প্রচলিত। তামিল নাড়ুতে প্রায় ৫ কোটি এবং শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৪০ লক্ষ লোক এ ভাষায় কথা বলেন। তামিল অত্যন্ত প্রাচীন একটি ভাষা। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে এতে রচিত সাহিত্যের নিদর্শন পাওয়া গেছে। দ্রাবিড় ভাষাগুলির মধ্যে তামিলের সাহিত্যই সবচেয়ে প্রাচীন এবং এটি অনেকটা সংস্কৃতের সমতুল্য। তামিলের ধ্বনিতত্ত্ব ও ব্যাকরণের সাথে আদি-দ্রাবিড় ভাষার সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া যায়। তামিলের উপভাষাগুলিকে উত্তর-পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও শ্রীলঙ্কান এই চারটি দলে ভাগ করা যায়। ব্রাহ্মণ ও অ-ব্রাহ্মণদের বলা তামিল ভাষার মধ্যেও পার্থক্য আছে, অর্থাৎ তামিল ভাষা কেবল ভৌগোলিকভাবেই নয়, সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ীও ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া আনুষ্ঠানিক তামিল ভাষা ও কথ্য তামিল ভাষার মধ্যেও বড় পার্থক্য বিদ্যমান।

মালয়ালম[সম্পাদনা]

মালয়ালম তামিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ভাষা। ভারতের কেরল রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক এতে কথা বলে। ভাষাটির নিজস্ব লিপি ও একটি সমৃদ্ধ আধুনিক সাহিত্য রয়েছে। মালয়ালমের উপভাষাগুলিকে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ — এই তিন দলে ভাগ করা যায়।

গোত্র ভাষাসমূহ[সম্পাদনা]

নিলগিরি ও আশেপাশের অঞ্চলে বিভিন্ন গোত্র কোটা, তোদা, বড়গ (বা "বাড়াগা"), ইরুলা, ইত্যাদি ভাষায় কথা বলে।

কোড়ব / কোডাভা[সম্পাদনা]

কুর্গ পাহাড় অঞ্চলে প্রায় ১ লক্ষ লোক কোড়াভা বা কোড়ব ভাষায় কথা বলে।

কন্নড়[সম্পাদনা]

কন্নড় কর্ণাটকের প্রায় ৩ কোটি মানুষের ভাষা। শিক্ষিত ও সাধারণ ভাষায় পার্থক্য আছে। সাধারণ ভাষা আবার ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ ও হরিজন তিন রকমের উপভাষায় বিভক্ত। এছাড়া বেঙ্গালুরু, মাঙ্গালুরু ও ধারোয়ার-কেন্দ্রিক আঞ্চলিক উপভাষাও বিদ্যমান। কন্নড়ের নিজস্ব লিপি আছে এবং এর প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ।

তুলু[সম্পাদনা]

কর্ণাটকের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ( উডূপী জেলা ও দক্ষিণ কন্নড় জেলা) এবং কেরলের উত্তরের অঞ্চলে (কাসারাগোড জেলা) প্রায় ১৫ লক্ষ লোক তুলু ভাষায় কথা বলে।

তেলুগু[সম্পাদনা]

তেলুগু অন্ধ্র প্রদেশেরতেলেঙ্গানা প্রদেশের সরকারী ভাষা এবং এতে প্রায় ৯ কোটি লোক কথা বলে। লিখিত ও কথ্য তেলুগুর মধ্যে পার্থক্য আছে। এছাড়া ঔপভাষিক ও বর্ণগত বিভাজনও (ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ, হরিজন) রয়েছে। ভাষাটির নিজস্ব লিপি আছে, যার সাথে কন্নড় লিপির মিল আছে। ভাষাটির সাহিত্যিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ।

মধ্য দ্রাবিড় গোত্র-ভাষাসমূহ[সম্পাদনা]

এগুলির মধ্যে আছে কোলমি, পারজি, কোন্দা, গাদবা, পেংগো, কুই, কুভি, গোণ্ডি ভাষা। এগুলি অন্ধ্র প্রদেশ ও এর আশেপাশে মধ্য ভারত এলাকায় প্রচলিত। উত্তরে আসাম, বিহার, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে ওঁরাও গোত্রের লোকেরা কুরুখ ভাষায় কথা বলে। বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে মালতো ভাষা প্রচলিত।

ব্রাহুই[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের সিন্ধবালুচিস্তান প্রদেশে এবং আফগানিস্তানের কিয়দংশে ব্রাহুই নামের দ্রাবিড় ভাষাটিতে প্রায় ১৬ লক্ষ লোক কথা বলে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Browse by Language Family"Ethnologue (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]