বিষয়বস্তুতে চলুন

শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৭৫ নং লাইন: ১৭৫ নং লাইন:


====সুশ্রী যুবা====<!-- This section is linked from William Shakespeare and from Oxfordian theory-->
====সুশ্রী যুবা====<!-- This section is linked from William Shakespeare and from Oxfordian theory-->
"সুশ্রী যুবা" হলেন শেকসপিয়রীয় চতুর্দশপদীগুচ্ছের বৃহত্তর অংশ জুড়ে (সনেট [[সনেট ১|১]]-[[সনেট ১২৬|১২৬]]) অনুরক্ত কবি কর্তৃক উল্লিখিত এক অজ্ঞাতনামা যুবক। এই যুবক সুদর্শন, আত্ম-কেন্দ্রিক, সর্বজন প্রশংসিত ও বহুজন কর্তৃক আকাঙ্ক্ষিত। এই চতুর্দশপদী-পরম্পরার গোড়ার দিকের কবিতাগুলিতে (সনেট ১-[[সনেট ১৭|১৭]] দেখা যায় যে, কবি সেই যুবককে বিবাহ করে সন্তানের জন্মদান করতে অনুরোধ করছেন। কবির সঙ্গে সেই যুবকের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়, এই বন্ধুত্বের মধ্যে কখনও কখনও একটি সমকামী যৌনকামনারও আভাস পাওয়া যায়। এরপর একগুচ্ছ চতুর্দশপদীতে পাওয়া যায়, সেই যুবক কর্তৃক কবিকে প্রত্যাখ্যানের আভাস। কারণ, তখন সেই যুবককে প্রলুব্ধ করেছেন এক কৃষ্ণাঙ্গী নারী এবং উভয়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অবৈধ যৌনসম্পর্ক (সনেট [[সনেট ১৩৩|১৩৩]], [[সনেট ১৩৪|১৩৪]] ও [[সনেট ১৪৪|১৪৪]])। কবিকে সে সবই সহ্য করতে হয়। পরিশেষে কবি স্বয়ং সেই যুবককে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার ফলে তাঁর থেকে মুক্তিলাভ করেন ("[[সনেট ১৫২]]")।<ref>Hammond. ''The Reader and the Young Man Sonnets''. Barnes & Noble. 1981. p. 2. {{ISBN|978-1-349-05443-5}}</ref><ref name="duncan-jones" />{{rp|৯৩}}<ref name="auto2">Hubler, Edward. ''Shakespeare’s Songs and Poems''. McGraw HIll. 1964. p. xl</ref>

সুশ্রী যুবার পরিচয় নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিস্তর জল্পনাকল্পনা হয়েছে। একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব হল, এই যুবক ছিলেন [[হেনরি রিদেসলি, সাউদাম্পটনের ৩য় আর্ল|হেনরি রিদেসলি]], সাউদাম্পটনের তৃতীয় আর্ল। তাঁর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, বয়স ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে চতুর্দশপদীগুচ্ছে বর্ণিত যুবকের অনেক মিল পাওয়া যায়।<ref name=":0">{{Cite book|title=Shakespeare's Sonnets|last=Sarker|first=Sunil|publisher=Atlantic Publishers & Distributors|year=2006|isbn=8171567258|location=New Delhi|pages=87, 89}}</ref> সমসাময়িককালের বিশিষ্টতম অভিজাতদের অন্যতম এই ব্যক্তি একাধারে ছিলেন শেকসপিয়রের গুণগ্রাহী ও পৃষ্ঠপোষক।<ref>{{Cite book|title=William Stanley as Shakespeare: Evidence of Authorship by the Sixth Earl of Derby|last=Rollett|first=John|publisher=McFarland & Company, Inc., Publishers|year=2015|isbn=978-0786496600|location=Jefferson, NC|pages=108}}</ref> উল্লেখ্য, ১৫৯৩ সালে প্রকাশিত শেকসপিয়রের কবিতা ''[[ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস (শেকসপিয়রের কবিতা)|ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস]]'' সাউদাম্পটনের প্রতিই উৎসর্গিত হয়েছিল এবং সেই কবিতাতেও দেখা যায়, যুবক অ্যাডোনিস প্রেমের দেবী ভেনাস কর্তৃক উৎসাহিত হচ্ছেন সন্তানোৎপাদনের জন্য (যা চতুর্দশপদীগুচ্ছেরও অন্যতম বিষয়বস্তু)। নিচে ''ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস'' কবিতার কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত হল:<ref>{{Cite book|title=The Apocryphal William Shakespeare: Book One of A 'Third Way' Shakespeare Authorship Scenario|last=Feldman|first=Sabrina|publisher=Dog Ear Publishing|year=2011|isbn=978-1457507212|location=Indianapolis, IN|page=110}}</ref>

{{blockquote|<poem>Torches are made to light, jewels to wear,
Dainties to taste, fresh beauty for the use,
Herbs for their smell, and sappy plants to bear;
Things growing to themselves are growth’s abuse,
Seeds spring from seeds, and beauty breedeth beauty;
Thou wast begot; to get it is thy duty.

Upon the earth’s increase why shouldst thou feed,
Unless the earth with thy increase be fed?
By law of nature thou art bound to breed,
That thine may live when thou thyself art dead;
And so in spite of death thou dost survive,
In that thy likeness still is left alive.<ref>Duncan-Jones, Katherine. Woudhuysen, H. R. eds. Shakespeare, William. ''Shakespeare's Poems: Third Series''. Arden Shakespeare. (28 September 2007) lines 163–174 {{ISBN|978-1903436875}}</ref></poem>}}

সুশ্রী যুবাকে সাউদাম্পটন হিসেবে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা এই যে, চতুর্দশপদীগুচ্ছে উল্লিখিত যে ঘটনাগুলিকে নিশ্চিতভাবে তারিখায়িত করা যায় সেগুলি হল ১৬০৬ সালে এসেক্সের পতন এবং গানপাউডার ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যুদণ্ড। এর ফলে বোঝা যায়, কবিতাগুলি রচনাকালে সাউদাম্পটনের বয়স ছিল ৩৩ এবং প্রকাশকালে ছিল ৩৯। অর্থাৎ, যে বয়সে তাঁকে "সুকুমার বালক" বা "সুশ্রী যুবা" বলে সম্বোধন করা যায়, সেই বয়স তিনি পেরিয়ে এসেছিলেন।<ref name="duncan-jones" />{{rp|৫২}}

[[টমাস টারহুইট]] ও [[অস্কার ওয়াইল্ড]] প্রমুখ লেখকবৃন্দের মতে,<ref>{{Cite book|title=The Poems of William Shakespeare|last1=Shakespeare|first1=William|last2=Bell|first2=Robert|publisher=John W. Parker and Son West Strand|year=1855|location=London|page=163}}</ref> এই সুশ্রী যুবা ছিলেন উইলিয়াম হিউজেস নামে এক রূপবান তরুণ অভিনেতা, যিনি শেকসপিয়রের নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। নির্দিষ্টভাবে ওয়াইল্ড দাবি করেছেন যে, এই ব্যক্তিই হলেন চতুর্দশপদীর পাণ্ডুলিপির সঙ্গে যুক্ত উৎসর্গপত্রে উল্লিখিত মি. ডব্লিউ. এইচ.।<ref>{{Cite book|title=Lord Arthur Savile ́s Crime – The Portrait of Mr. W. H. and other Stories|last=Wilde|first=Oscar|publisher=Outlook|year=2018|isbn=978-3732658817|location=Main, Germany|pages=82–83, 87}}</ref><ref name=":0" />

====কৃষ্ণাঙ্গী====<!-- This section is linked from William Shakespeare.-->
====কৃষ্ণাঙ্গী====<!-- This section is linked from William Shakespeare.-->
====প্রতিদ্বন্দ্বী কবি====
====প্রতিদ্বন্দ্বী কবি====

১৭:৪৩, ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছ
চতুর্দশপদীগুচ্ছের থর্প সংস্করণ (১৬০৯)
লেখকউইলিয়াম শেকসপিয়র
দেশইংল্যান্ড
ভাষাআদি আধুনিক ইংরেজি
ধরননবজাগরণ কবিতা
প্রকাশকটমাস থর্প
প্রকাশনার তারিখ
১৬০৯
পাঠ্যশেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছ উইকিসংকলন

উইলিয়াম শেকসপিয়র (১৫৬৪-১৬১৬) বিভিন্ন বিষয়ের উপর চতুর্দশপদী (সনেট) রচনা করেছিলেন। শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুলি আলোচনা বা উল্লেখের সময় প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ১৬০৯ সালে একটি কোয়ার্টো প্রকাশনায় একত্রে প্রথম প্রকাশিত ১৫৪টি চতুর্দশপদীর কথাই বলা হয়ে থাকে।[১] যদিও অতিরিক্ত ছয়টি চতুর্দশপদী রচনার পর শেকসপিয়র সেগুলিকে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, হেনরি দ্য ফিফথলাভ'স লেবার'স লস্ট নাটকের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও রিচার্ড দ্য থার্ড নাটকে আরও একটি আংশিক চতুর্দশপদী পাওয়া যায়।

প্রেক্ষাপট

চতুর্দশ শতাব্দীতে ইতালিতে নবজাগরণের যুগে প্লুতার্ক যে চতুর্দশপদী ধারার প্রবর্তন করেন এবং যা শেষপর্যন্ত ষোড়শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে টমাস ওয়াটের দ্বারা প্রবর্তিত হয়ে হেনরি হাওয়ার্ড কর্তৃক নির্দিষ্ট অন্তমিলযুক্ত ছন্দ এবং চৌপদীতে বিন্যস্ত হয়, শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছ সেই ধারারই অনুবর্তী। কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছ অন্তমিল বিন্যাস, চোদ্দো পংক্তি ও ছন্দের দিক থেকে ইংরেজি চতুর্দশপদীর শৈলীগত রূপটিকেই অনুসরণ করেছিল; কিন্তু বিষয়বস্তুর দিক থেকে এগুলি এতটাই ভিন্ন ধরনের যে দেখে মনে হয় তা সুপ্রচলিত ২০০ বছরের প্রথাটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।[২]

পেত্রার্ক, দান্তেফিলিপ সিডনির চতুর্দশপদীতে প্রায় দেবী-তুল্যা অ-প্রাপ্তিসাধ্য এক আকাঙ্ক্ষিত নারীর প্রতি সশ্রদ্ধ প্রেম নিবেদিত হয়েছে; কিন্তু শেকসপিয়র তাঁর রচনায় এনেছেন এক যুবককে। এছাড়া তিনি কৃষ্ণাঙ্গীর কথা উল্লেখ করেছেন, তিনিও দেবী-তুল্যা নন। দেহজ কামনা, সমকামী যৌনকামনা, নারীবিদ্বেষ, নাস্তিক্য ও স্বভাবকটুতার মতো বিষয়গুলিকে তিনি তাঁর কবিতায় এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, সেগুলি প্রচলিত ধারণাকে দ্বন্দ্বে আহ্বান করতে পারে। সেই সঙ্গে এই বিষয়গুলি আবার চতুর্দশপদীর জগতে নতুন ক্ষেত্রের দরজা খুলে দেয়।[২]

১৬০৯ সালের কোয়ার্টো

শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছের প্রাথমিক উৎসসূত্রটি হল শেক-স্পিয়র'স সনেটস (ইংরেজি: Shake-speare’s Sonnets) শিরোনামে ১৬০৯ সালের একটি কোয়ার্টো প্রকাশনা। এই প্রকাশনায় ১৫৪টি চতুর্দশপদী এবং তারপর আ লাভার'স কমপ্লেইন নামে একটি দীর্ঘ কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কোয়ার্টো প্রকাশনাটির তেরোটি কপি অদ্যাবধি মোটামুঠি ঠিকঠাক অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাপ্ত একতি কপির প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় একটি টীপ্পনি থেকে জানা যায় যে, বিশিষ্ট এলিজাবেথীয় অভিনেতা এডওয়ার্ড অ্যালান ১৬০৯ সালের জুন মাসে এক শিলিং দিয়ে সেই কপিটি ক্রয় করেছিলেন।[৩][২]:

চতুর্দশপদীগুলির বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে সময়ের চলে-যাওয়া, প্রেম, নাস্তিক্য, ঈর্ষা, সৌন্দর্য ও নশ্বরতা। প্রথম ১২৬টি চতুর্দশপদী এক যুবককে উদ্দেশ্য করে রচিত; শেষ ২৮টি উদ্দিষ্ট হয়েছে অথবা উল্লেখ করেছে এক নারীকে। (১৩৮১৪৪ সংখ্যক চতুর্দশপদী দু'টি ইতিপূর্বে ১৫৯৯ সালে সংকলন গ্রন্থ দ্য প্যাশনেট পিলগ্রিম-এ প্রকাশিত হয়েছিল।)

কোয়ার্টো প্রকাশনার শিরোনামের বানানটি (Shake-speare’s Sonnets) স্টেশনারস' রেজিস্টার-এর ভুক্তিটির বানানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শিরোনামটি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় বড়ো হাতের অক্ষরে লেখা হয়েছিল, এবং তারপর “Neuer before Imprinted” ("আগে কখনও মুদ্রিত হয়নি") কথাটি মুদ্রিত ছিল। প্রতিবার কোয়ার্টোটি খুললেই প্রচ্ছদটি দৃষ্ট হয়। লেখকের নামটি শিরোনামে যেভাবে অধিকারসূচক প্রণালীতে মুদ্রিত হয়েছিল, তা সেকালের অন্যান্য চতুর্দশপদী সংকলনে দেখা যায় না—কেবলমাত্র ১৫৯১ সালে স্যার ফিলিপ সিডনির মরণোত্তর প্রকাশিত সংকলনটির নাম ছিল স্যার. পি. এস. হিজ অ্যাস্ট্রোফেল অ্যান্ড স্টেলা (ইংরেজি: Syr. P.S. his Astrophel and Stella), যেটিকে শেকসপিয়রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মডেলগুলির একটি মনে করা হয়। সিডনি সম্ভবত শেকসপিয়রকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন; বিশেষত যদি শেকসপিয়রের উৎসর্গপত্রে উল্লিখিত "ডব্লিউ.এইচ." কথাটি সিডনির ভ্রাতুষ্পুত্র ও উত্তরাধিকারী উইলিয়াম হারবার্টকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়ে থাকে তো। শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি শেকসপিয়র নিজে, গবেষকেরা এমন একটি ধারণার তীব্র পরিপন্থী হলেও কোয়ার্টোর প্রচ্ছদটি এই ধরনেরই একটি অনুমানের দ্যোতক বলেই মনে করা হয়।[২]:৮৫

প্রথম সতেরোটি কবিতা (প্রথাগতভাবে প্রজনন চতুর্দশপদীগুচ্ছ নামে পরিচিত) এক যুবককে উদ্দেশ্য করে রচিত—তাঁর প্রতি আবেদন রাখা হয়েছে, তিনি যেন বিবাহ করে সন্তান উৎপাদন করেন, যাতে তাঁর সৌন্দর্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়ে অমরত্ব লাভ করতে পারে।[৪] অন্যান্য চতুর্দশপদীগুলিতেও সেই যুবকের উদ্দেশ্যে কবির প্রেম ব্যক্ত হয়েছে; কবি গভীরভাবে চিন্তা করেছেন একাকীত্ব, মৃত্যু ও জীবনের অনিত্যতা নিয়ে; মনে হয়েছে কবির প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও কবিকে পছন্দ করার জন্য তিনি সেই যুবকের সমালোচনা করছেন; নিজের পত্নীর সম্পর্কেও দ্ব্যর্থবোধক অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে; এবং কবির নাম নিয়েও কৌতুক করা হয়েছে। শেষ চতুর্দশপদী দু'টি হল "প্রেমের ছোট্ট দেবতা" কিউপিডকে উপলক্ষ্যে করে লেখা গ্রিক এপিগ্রামের রূপকালংকারের প্রয়োগ।

প্রকাশক টমাস থর্প বইটির নাম স্টেশনারস' রেজিস্টার-এ অন্তর্ভুক্ত করেন ১৬০৯ সালের ২০ মে:[৫]

Tho. Thorpe. Entred for his copie under the handes of master Wilson and master Lownes Wardenes a booke called Shakespeares sonnettes vjd.

উৎসর্গ

দ্য সনেটস-এর উৎসর্গপৃষ্ঠা

শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছে "মি. ডব্লিউ.এইচ."-এর উদ্দেশ্যে একটি উৎসর্গপৃষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে:

TO.THE.ONLIE.BEGETTER.OF.
THESE.INSUING.SONNETS.
Mr.W.H.   ALL.HAPPINESSE.
AND.THAT.ETERNITIE.
PROMISED.
BY.
OUR.EVER-LIVING.POET.
WISHETH.
THE.WELL-WISHING.
ADVENTURER.IN.
SETTING.
FORTH.

T.T.

উৎসর্গপত্রে বড়ো হাতের অক্ষর এবং প্রতিটি শব্দের শেষে একটি করে ফুলস্টপ চিহ্ন সম্ভবত প্রাচীন রোমান পাথর-খোদাই অভিলেখ বা স্মারক পিতলের অনুকরণে লিখিত। সম্ভবত সনেট ৫৫-এ রচনার বিষয়কে অমরত্ব দেওয়ার যে কথাটি বলা হয়েছে তার দ্যোতক এটি:[৬]

"Not marble, nor the gilded monuments
Of princes shall outlive this pow'rful rhyme"

আদ্যক্ষর "টি.টি." প্রকাশক টমাস থর্পের নামের দ্যোতক, যদিও একমাত্র লেখক দেশের বাইরে থাকলে বা ইতিমধ্যে প্রয়াত হলে তবেই থর্প প্রস্তাবনামূলক অংশে সাক্ষর করতেন।[৭] যদিও থর্পের প্রকাশনায় এই ধরনের রচনার মধ্যে মাত্র চারটি উৎসর্গপত্র ও তিনটি মুখবন্ধই পাওয়া যায়।[৮] এমনও মনে করা হয় যে, লেখকের পরিবর্তে উৎসর্গপত্রে থর্পের সাক্ষরের অর্থ এমন হতে পারে যে, থর্প শেকসপিয়রের অনুমতি ছাড়াই এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন।[৯] অবশ্য এই সাক্ষরের অপর একটি ব্যাখ্যা এই যে, গ্রন্থটি প্রকাশের সময় শেকসপিয়র ব্যবসা ও পর্যটনের কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে প্রকাশনার কাজে তাঁর পক্ষে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় ছিল না।[১০] বিশেষত ১৬০৯ সালের মে মাসটি ছিল একটি বিশেষ সময়: এই মাসেই মহামারীর এক তীব্র সংক্রমণ দেখা যায়, যার ফলে নাট্যশালাগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং লোকজনও লন্ডন ছেড়ে পালাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শেকসপিয়রের থিয়েটার কোম্পানি সেই সময় ইপসউইচ থেকে অক্সফোর্ড পর্যন্ত সফরে রত ছিল। তাছাড়া শেকসপিয়র স্ট্র্যাটফোর্ডের বাইরে ছিলেন এবং সেই মাসেই তাঁকে পারিবারিক ও ব্যবসা-সংক্রান্ত কিছু কাজের জন্য সেখানে ফিরতে হয়েছিল[১১] এবং ওয়ারিকশায়ারে একটি মামলাও দায়ের করতে হয়েছিল, যার জন্য প্রভূত অর্থব্যয় হয় তাঁর।[১২]

মি. ডব্লিউ. এইচ.

"শেকসপিয়র'স সনেটস গ্রন্থের একমাত্র জনক" মি. ডব্লিউ. এইচ.-এর পরিচয় সঠিক জানা যায় না। তাঁর পরিচয় নিয়ে গবেষক মহলে অনুমানের অন্ত নেই: কেউ মনে করেন ইনি কবির পৃষ্ঠপোষক, কেউ মনে করেন যে ইনি একাধারে কবির পৃষ্ঠপোষক এবং চতুর্দশপদীগুচ্ছে উল্লিখিত "সুশ্রী যুবা", আবার কেউ মনে করেন যে কয়েকটি চতুর্দশপদীতে উল্লিখিত "সুশ্রী যুবা" মি. ডব্লিউ. এইচ.-কে দেখে রচিত হলেও সব ক্ষেত্রে তা হয়নি। আবার এই বিষয়ে অন্যান্য ধারণাও রয়েছে।[১৩][২]:৫১–৫৫, ৬৩–৬৮[১৪]

উইলিয়াম হারবার্ট, পেমব্রোকের ৩য় আর্ল
হেনরি রিওথিসলি, সাউদাম্পটনের ৩য় আর্ল

পেমব্রোকের আর্ল উইলিয়াম হারবার্টের নামই খুব সম্ভবত মি. ডব্লিউ. এইচ. ও "যুবা পুরুষ"-এর পরিচয় হিসেবে উঠে আসে। ফার্স্ট ফোলিও তাঁকেই উৎসর্গ করা হয়েছিল। থর্প খুব সম্ভবত একজন লর্ডকে "মি." সম্ভাষণ করেননি।[১৫] কিন্তু তার কোনও ব্যাখ্যা থাকতে পারে। হয়তো লেখক নিজেই এই সম্বোধন করেছিলেন। কারণ, তিনি হারবার্টের পূর্বজীবনের কথা উল্লেখ করতে চান—হারবার্ট যখন "যুবা পুরুষ" ছিলেন।[১৬] পরবর্তীকালে কবিতার একটি কোয়ার্টোও হারবার্টকে উৎসর্গিত হয়েছিল। এটি ছিল বেন জনসনের এপিগ্রামস (১৬১৬)। এই গ্রন্থে জনসনের উৎসর্গপত্রে বলা হয়েছিল"MY LORD, While you cannot change your merit, I dare not change your title … " পেমব্রোকের উপাধির উপর জনসনের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ ও তাঁর মন্তব্যটি দৃষ্টে মনে হয় যে, কেউ ভুল উপাধিটি ব্যবহারের ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল, হয়তো এটি শেকসপিয়রের উৎসর্গপত্রটিরই দ্যোতনা।[২]:৬০

হেনরি রিথেসলির (সাউদাম্পটনের আর্ল) নামও সম্ভাব্য ব্যক্তির নাম হিসেবে উঠে আসে (সেক্ষেত্রে নামের আদ্যক্ষর দু'টি উল্টে নিয়ে)। শেকসপিয়রের ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিসদ্য রেপ অফ লুক্রেসি কবিতা দু'টি তাঁকেই উৎসর্গ করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অন্যান্য ধারণাগুলি হল:

  • এটি শেকসপিয়রের নিজের নামের আদ্যক্ষরের মুদ্রণ বিভ্রাট: "ডব্লিউ. এস." বা "ডব্লিউ. এসএইচ."। বার্ট্রান্ড রাসেলজনাথান বেট এই তত্ত্বটি প্রস্তাব করেন।[১৭]
  • উইলিয়াম হল, থর্পের সহকর্মী জনৈক মুদ্রণকারী।[১৮][৯] কথিত হয় যে, "MR. W. H."-এর পরে "ALL" কথাটির শুদ্ধ পাঠ হল "MR. W. HALL". ডব্লিউ. এইচ. আদ্যক্ষর নিয়ে হল রবার্ট সাউথওয়েলের একটি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেছিলেন; যেটির মুদ্রণকারী ছিলেন ১৬০৯ সালে প্রকাশিত চতুর্দশপদীগুচ্ছ মুদ্রণকারী জর্জ এল্ড[১৯]
  • স্যার উইলিয়াম হার্ভে, সাউদাম্পটনের সৎ-পিতা।[১৫][২০]
  • উইলিয়াম হটন, একজন সমসাময়িক নাট্যকার।[২১][২২]
  • উইলিয়াম হার্ট, শেকসপিয়রের ভ্রাতুষ্পুত্র ও পুরুষ উত্তরাধিকারী।[২৩]
  • "কে তিনি" (Who He)। কেউ কেউ মনে করেন, উৎসর্গপত্রি ইচ্ছাকৃতভাবেই অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। সম্ভবত কথাটির অর্থ "হু হি" বা তিনি কে? এই ধরনের সরস বক্তব্য সমকালের একটি প্যামফ্লেটে ব্যবহৃত হয়েছিল। সম্ভবত অনুমান ও আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য (বিক্রি বাড়ানোর জন্য) থর্পই সম্ভবত এটির উদ্ভাবক ছিলেন।[২৪]
  • উইলি হিউজেস। অষ্টাদশ শতাব্দীর গবেষক টমাস টারহুইট চতুর্দশপদীগুলিতে (বিশেষত "সনেট ২০"-এ) নাম নিয়ে উপহাস লক্ষিত হয় তার ভিত্তিতে "উইলিয়াম হিউজেস" নামটি প্রস্তাব করেন। অস্কার ওয়াইল্ডের ছোটোগল্প "দ্য পোর্ট্রেট অফ মি. ডব্লিউ. এইচ."-এ এই ধারণা ব্যক্ত হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, শেকসপিয়রের নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয়কারী কোনও অল্পবয়সী অভিনেতার উদ্দেশ্যে চতুর্দশপদীগুলি রচিত।[২৫]

চতুর্দশপদীগুচ্ছের রূপ ও গঠনভঙ্গিমা

লেইডেনের দেওয়াল কবিতা হিসেবে "সনেট ৩০"

প্রায় সব ক'টি চতুর্দশপদীই তিনটি চৌপদী (চার-চরণের স্তবক) ও তারপর একটি শেষ দ্বিপদী নিয়ে গঠিত। শেকসপিয়রের নাটকে ব্যবহৃত ছন্দ আয়াম্বিক পেন্টামিটারেই চতুর্দশপদীগুলি রচিত। ছন্দবিন্যাসটি হল কখকখ গঘগঘ ঙচঙচ ছছ। এই বিন্যাসে রচিত চতুর্দশপদীগুলি "শেকসপিয়রীয় চতুর্দশপদী" বা "ইংরেজি চতুর্দশপদী" বা "এলিজাবেথীয় চতুর্দশপদী" নামে পরিচিত। প্রায়শই তৃতীয় চৌপদীতে একটি "ভোল্টা" ("পরিবর্তন") দেখা যায়, যেখানে কবিতার মোড় ঘুরে যেতে দেখা যায় এবং কবির চিন্তায় একটি পরিবর্তন সূচিত হয়।[২৬]

কয়েকটি ব্যতিক্রম রয়েছে: ৯৯, ১২৬১৪৫-সংখ্যক চতুর্দশপদী। ৯৯-সংখ্যক চতুর্দশপদীটিতে পনেরোটি চরণ রয়েছে। আবার ১২৬-সংখ্যক চতুর্দশপদীটিতে ছয়টি দ্বিপদী এবং বাঁকানো বন্ধনী-যুক্ত দু'টি শূন্য চরণ রয়েছে। ১৪৫-সংখ্যক চতুর্দশপদীটি আয়াম্বিক টেট্রামিটার ছন্দে রচিত। "সনেট ২৯"-এ আবার এমন একটি উদাহরণ পাওয়া যায় যেখানে প্রথম চৌপদীর দ্বিতীয় ছন্দটির (খ) দ্বারা তৃতীয় চৌপদীর দ্বিতীয় ছন্দটি (চ) প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

ছন্দ ছাড়াও ধারণার বিন্যাস ও ভোল্টার অবস্থান ছাড়া অনেকগুলি চতুর্দশপদী ইতালীয় চতুর্দশপদীর দুই-অংশবিশিষ্ট বিন্যাসের ধারা বজায় রেখেছে। সেক্ষেত্রে চতুর্দশপদীর প্রথম আটটি চরণকে বলা হয় "অক্টেভ" ও শেষ ছয়টি চরণকে বলা হয় "সেস্টেক"। শেকসপিয়র চোদ্দো চরণের কবিতার বিষয়বস্তু নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে গিয়ে অন্যভাবেই চরণ-বিন্যাস ঘটিয়েছিলেন।[২৭]

চতুর্দশপদীগুচ্ছের চরিত্রেরা

শেকসপিয়রীয় চতুর্দশপদীগুচ্ছের চরিত্রেরা সাধারণভাবে উল্লিখিত হয়েছেন "সুশ্রী যুবা", "প্রতিদ্বন্দ্বী কবি" ও "কৃষ্ণাঙ্গী" হিসেবে। কবি এখানে সুশ্রী যুবার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন এবং—যদি চতুর্দশপদীগুলিকে প্রকাশকে কালপঞ্জিগত বিন্যাসে পড়া হয়—তাহলে দেখা যাবে কবির সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গীর এক প্রণয়সম্পর্ক আছে, এবং কৃষ্ণাঙ্গীর সঙ্গে অনুরূপ সম্পর্ক সেই যুবকেরও রয়েছে। সাম্প্রতিক ভাষাবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে অবশ্য এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কৃষ্ণাঙ্গীর উদ্দেশ্যে রচিত চতুর্দশপদীগুলি পূর্বে রচিত হয়েছিল (১৫৯১-৯৫ সাল নাগাদ), তারপর প্রজনন চতুর্দশপদীগুচ্ছ এবং সুশ্রী যুবার উদ্দেশ্যে রচিত চতুর্দশপদীগুচ্ছ রচিত হয় সব শেষে (১৫৯৭-১৬০৩)। কবিতাগুলি ও সেগুলির চরিত্রেরা কাল্পনিক না আত্মজৈবনিক তা জানা যায় না; যে সকল গবেষক চতুর্দশপদীগুলিকে আত্মজৈবনিক মনে করেন তাঁরা চরিত্রগুলিকে কোনও ঐতিহাসিক ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করার চেষ্টা করেন।[২৮]

সুশ্রী যুবা

"সুশ্রী যুবা" হলেন শেকসপিয়রীয় চতুর্দশপদীগুচ্ছের বৃহত্তর অংশ জুড়ে (সনেট -১২৬) অনুরক্ত কবি কর্তৃক উল্লিখিত এক অজ্ঞাতনামা যুবক। এই যুবক সুদর্শন, আত্ম-কেন্দ্রিক, সর্বজন প্রশংসিত ও বহুজন কর্তৃক আকাঙ্ক্ষিত। এই চতুর্দশপদী-পরম্পরার গোড়ার দিকের কবিতাগুলিতে (সনেট ১-১৭ দেখা যায় যে, কবি সেই যুবককে বিবাহ করে সন্তানের জন্মদান করতে অনুরোধ করছেন। কবির সঙ্গে সেই যুবকের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়, এই বন্ধুত্বের মধ্যে কখনও কখনও একটি সমকামী যৌনকামনারও আভাস পাওয়া যায়। এরপর একগুচ্ছ চতুর্দশপদীতে পাওয়া যায়, সেই যুবক কর্তৃক কবিকে প্রত্যাখ্যানের আভাস। কারণ, তখন সেই যুবককে প্রলুব্ধ করেছেন এক কৃষ্ণাঙ্গী নারী এবং উভয়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অবৈধ যৌনসম্পর্ক (সনেট ১৩৩, ১৩৪১৪৪)। কবিকে সে সবই সহ্য করতে হয়। পরিশেষে কবি স্বয়ং সেই যুবককে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার ফলে তাঁর থেকে মুক্তিলাভ করেন ("সনেট ১৫২")।[২৯][২]:৯৩[৩০]

সুশ্রী যুবার পরিচয় নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিস্তর জল্পনাকল্পনা হয়েছে। একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব হল, এই যুবক ছিলেন হেনরি রিদেসলি, সাউদাম্পটনের তৃতীয় আর্ল। তাঁর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, বয়স ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে চতুর্দশপদীগুচ্ছে বর্ণিত যুবকের অনেক মিল পাওয়া যায়।[৩১] সমসাময়িককালের বিশিষ্টতম অভিজাতদের অন্যতম এই ব্যক্তি একাধারে ছিলেন শেকসপিয়রের গুণগ্রাহী ও পৃষ্ঠপোষক।[৩২] উল্লেখ্য, ১৫৯৩ সালে প্রকাশিত শেকসপিয়রের কবিতা ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস সাউদাম্পটনের প্রতিই উৎসর্গিত হয়েছিল এবং সেই কবিতাতেও দেখা যায়, যুবক অ্যাডোনিস প্রেমের দেবী ভেনাস কর্তৃক উৎসাহিত হচ্ছেন সন্তানোৎপাদনের জন্য (যা চতুর্দশপদীগুচ্ছেরও অন্যতম বিষয়বস্তু)। নিচে ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস কবিতার কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত হল:[৩৩]

Torches are made to light, jewels to wear,
Dainties to taste, fresh beauty for the use,
Herbs for their smell, and sappy plants to bear;
Things growing to themselves are growth’s abuse,
  Seeds spring from seeds, and beauty breedeth beauty;
  Thou wast begot; to get it is thy duty.

Upon the earth’s increase why shouldst thou feed,
Unless the earth with thy increase be fed?
By law of nature thou art bound to breed,
That thine may live when thou thyself art dead;
  And so in spite of death thou dost survive,
  In that thy likeness still is left alive.[৩৪]

সুশ্রী যুবাকে সাউদাম্পটন হিসেবে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা এই যে, চতুর্দশপদীগুচ্ছে উল্লিখিত যে ঘটনাগুলিকে নিশ্চিতভাবে তারিখায়িত করা যায় সেগুলি হল ১৬০৬ সালে এসেক্সের পতন এবং গানপাউডার ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যুদণ্ড। এর ফলে বোঝা যায়, কবিতাগুলি রচনাকালে সাউদাম্পটনের বয়স ছিল ৩৩ এবং প্রকাশকালে ছিল ৩৯। অর্থাৎ, যে বয়সে তাঁকে "সুকুমার বালক" বা "সুশ্রী যুবা" বলে সম্বোধন করা যায়, সেই বয়স তিনি পেরিয়ে এসেছিলেন।[২]:৫২

টমাস টারহুইটঅস্কার ওয়াইল্ড প্রমুখ লেখকবৃন্দের মতে,[৩৫] এই সুশ্রী যুবা ছিলেন উইলিয়াম হিউজেস নামে এক রূপবান তরুণ অভিনেতা, যিনি শেকসপিয়রের নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। নির্দিষ্টভাবে ওয়াইল্ড দাবি করেছেন যে, এই ব্যক্তিই হলেন চতুর্দশপদীর পাণ্ডুলিপির সঙ্গে যুক্ত উৎসর্গপত্রে উল্লিখিত মি. ডব্লিউ. এইচ.।[৩৬][৩১]

কৃষ্ণাঙ্গী

প্রতিদ্বন্দ্বী কবি

"আ লাভার'স কমপ্লেইন"

"আ লাভার'স কমপ্লেইন"-এর আখ্যানভাগ

তারিখ

সমালোচনা

সংস্করণ

নাটকের অন্তর্ভুক্ত চতুর্দশপদী

আদি কমেডি

হেনরি দ্য ফিফথ

হেনরি দ্য ফিফথ নাটকের শেষে উপসংহার অংশটি একটি চতুর্দশপদীর আকারে রচিত (“Thus far with rough, and all-unable pen…”)।[৩৭] নাটকের প্রথা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উপসংহার অংশ ছিল সুপ্রচলিত। শেকসপিয়রের তেরোটি নাটকে এই ধরনের উপসংহার দেখা যায়। হেনরি দ্য ফিফথ নাটকে সম্মেলক চরিত্রটি নাটক চলাকালীন বেশ কয়েকবার দর্শকদের সম্বোধন করে বিভিন্ন ধরনের উপসংহার/চতুর্দশপদীতে কথা বলেছে। গোড়াতেই সম্মেলক বলেছে যে, নাটকে গল্পটি হয়তো পূর্ণ গৌরবে প্রকাশ পায়নি। বলা হয়েছে যে, পরবর্তী রাজা হবেন ষষ্ঠ হেনরি। পঞ্চম হেনরির সিংহাসন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়ার সময় তিনি নাবালক ছিলেন এবং পঞ্চম হেনরি "lost France, and made his England bleed/ Which oft our stage hath shown." এটিতে হেনরি দ্য সিক্সথ-এর তিনটি পর্ব ও রিচার্ড দ্য থার্ড নাটকের উল্লেখ আছে — যার ফলে এই নাটকটি ল্যাংকাস্ট্রীয় ও ইয়র্কীয় চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে।[৩৮]

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকে তিনটি চতুর্দশপদী পাওয়া যায়: নাটকের নান্দীমুখে (“Two households, both alike in dignity…”), দ্বিতীয় অঙ্কের নান্দীমুখে (“Now old desire doth in his death-bed lie…”) এবং রোমিও ও জুলিয়েটের সাক্ষাৎমুহুর্তের সংলাপের আকারে:

ROMEO
If I profane with my unworthiest hand
This holy shrine, the gentle fine is this:
My lips, two blushing pilgrims, ready stand
To smooth that rough touch with a tender kiss.
JULIET
Good pilgrim, you do wrong your hand too much,
Which mannerly devotion shows in this;
For saints have hands that pilgrims' hands do touch,
And palm to palm is holy palmers' kiss.
ROMEO
Have not saints lips, and holy palmers too?
JULIET
Ay, pilgrim, lips that they must use in prayer.
ROMEO
O, then, dear saint, let lips do what hands do;
They pray, grant thou, lest faith turn to despair.
JULIET
Saints do not move, though grant for prayers' sake.
ROMEO
Then move not, while my prayer's effect I take.[৩৯]

মাচ অ্যাডু অ্যাবাউট নাথিং

মাচ অ্যাডু অ্যাবাউট নাথিং নাটকে দু'টি চতুর্দশপদীর কথা উল্লিখিত হয়েছে—বিয়াত্রিশে ও বেনেডিকের লেখা চতুর্দশপদী—সেগুলি লিখিত না হলেও শেকসপিয়রের মনে থেকে যায়। ক্লডিও কর্তৃক উল্লিখিত প্রথম চতুর্দশপদীটির বর্ণনায় বলা হয়: "A halting sonnet of his own pure brain/Fashion’d to Beatrice". হিরোর পাওয়া দ্বিতীয় চতুর্দশপদীটির বর্ণনায় রয়েছে: "Writ in my cousin's hand, stolen from her pocket/Containing her affection unto Benedick".[৪০]

এডওয়ার্ড দ্য থার্ড

এডওয়ার্ড দ্য থার্ড নাটকটি সম্প্রতি শেকসপিয়রের প্রামাণ্য নাট্যসাহিত্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পূর্বে এটিকে অজ্ঞাতনামা কোনও নাট্যকারের রচনা মনে করা হত। প্রথম প্রকাশের সময়ও নাট্যকারের নাম উল্লিখিত হয়নি। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে এটি শেকসপিয়রের রচনাসমগ্রগুলিতে অন্যদের সহযোগিতায় লিখিত শেকসপিয়রের নাটক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে।[৪১] জনাথান বেট, এডওয়ার্ড ক্যাপেল, এলিয়ট স্লেটার,[৪২] এরিক স্যামস,[৪৩] জর্জিও মেলশিওরি,[৪৪] ব্রায়ান ভাইকারস প্রমুখ গবেষকেরা এই অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করেন। ১৫৯৬ সালে মুদ্রিত এই নাটকে যে ভাষা ও বিষয়বস্তুর প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে তা শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছেও পাওয়া যায়। যার অন্যতম হল "Lilies that fester smell far worse than weeds” পংক্তিটি, যেটি পাওয়া যায় "সনেট ৯৪"-এ এবং "scarlet ornaments” শব্দবন্ধটি, যা পাওয়া যায় "সনেট ১৪২"-এ।[৪৫] নাটকের যে দৃশ্যে এই উদ্ধৃতিগুলি ছিল সেটি একটি হাস্যরসাত্মক দৃশ্য, যেখানে দেখানো হয়েছে এক কবি তাঁর রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের হয়ে প্রেমের কবিতা লেখার চেষ্টা করছেন।[৪৬] এডওয়ার্ড দ্য থার্ড নাটকটির প্রকাশকালে শেকসপিয়রের চতুর্দশপদীগুচ্ছ সম্পর্কে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে অবহিত হলেও তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি।[৪৩]

রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড স্যালিসবেরির কাউন্টেসের প্রেমে পড়েছিলেন। নিজের সচিত লোডোউইককে তিনি বলেন কাগজ ও কালি নিয়ে আসতে। কাউন্টেসের প্রশংসা করে একটি কবিতা লেখার কাজে এডওয়ার্ড লোডোউইকের সহায়তা চান। লোডোউইক প্রশ্ন করেন:

LODOWICK
Write I to a woman?

KING EDWARD
What beauty else could triumph over me,
Or who but women do our love lays greet?
What, thinkest thou I did bid thee praise a horse?

তারপর এক প্রাণোচ্ছল কবিতায় রাজা নিজের আবেগ প্রকাশ করেন এবং তা লিখে নেওয়ার নির্দেশ দেন। লোডোউইক কী লিখেছেন, তা রাজা পড়ে শোনাতে বললে, তিনি পড়েন:

LODOWICK.
'More fair and chaste’—

KING EDWARD.
I did not bid thee talk of chastity …

কাউন্টেস যখন প্রবেশ করেন, তখন কাব্যরচনার দৃশ্যটিতে বাধা পড়ে। লোডোউইকও কবিতার বেশি অংশ লিখতে পারেননি—শুধু দু'টি চরণ ছাড়া:

More fair and chaste than is the queen of shades,
More bold in constance … Than Judith was.[৪৫]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "First edition of Shakespeare's Sonnets, 1609"The British Library। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৮ 
  2. Shakespeare, William (২০১০)। Duncan-Jones, Katherine, সম্পাদক। Shakespeare's Sonnets। Bloomsbury Arden। আইএসবিএন 978-1408017975 
  3. Shakespeare, William. Callaghan, Dympna, editor. Shakespeare’s Sonnets. John Wiley & Sons, 2008. p. x. আইএসবিএন ৯৭৮-০৪৭০৭৭৭৫১০.
  4. Stanley Wells and Michael Dobson, eds., The Oxford Companion to Shakespeare Oxford University Press, 2001, p. 439.
  5. Dautch, Aviva (৩০ মার্চ ২০১৭)। "Shakespeare, sexuality and the Sonnets"British Library। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৯ 
  6. Burrow 2002, 380.
  7. Burrow, Colin (২০০২)। Complete Sonnets and Poemsবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 99আইএসবিএন 0-19-818431-X 
  8. Foster 1984, 43.
  9. Vickers, Brian (২০০৭)। Shakespeare, A lover's complaint, and John Davies of Hereford। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 8আইএসবিএন 978-0-521-85912-7 
  10. Honigmann, E.A.J. "There is a World Elsewhere, William Shakespeare, Businessman". Habitcht, W., editor. Images of Shakespeare. (1988) আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৭৪১৩৩২৯৫ p. 45
  11. Chambers, The Elizabethan Stage, vol. 2, p. 214 (1923). আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৫৬৭৪৭৮
  12. Schoenbaum, Samuel. William Shakespeare, a Documentary Life, Oxford (1975). আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫০৫১৬১২ p. 183
  13. Rollins, H. E., A New Variorum Edition of Shakespeare: The Sonnets. Lippincott & Co. 1944. pp. 174–185
  14. Schoenbaum, S. S. Shakespeare’s Lives. Oxford University Press. 1991. p. 566. আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৮১৮৬১৮২
  15. Schoenbaum, S. (১৯৭৭)। William Shakespeare: a compact documentary life (1st সংস্করণ)। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 270–271আইএসবিএন 0-19-502211-4ওএল 21295405M 
  16. Burrow, Colin, William Shakespeare: Complete Sonnets and Poems, Oxford University Press, 2002, p. 98.
  17. Bate, Jonathan. The Genius of Shakespeare (1998) 61–62.
  18. Lee, Sidney, Sir. A Life of William Shakespeare (1898). Cambridge University Press, 2012. আইএসবিএন ৯৭৮-১১০৮০৪৮১৯৪
  19. Collins, John Churton. Ephemera Critica. Westminster, Constable and Co., 1902; p. 216.
  20. Appleby, John C (২০০৮)। "Hervey, William, Baron Hervey of Kidbrooke and Baron Hervey of Ross (d. 1642)"। Oxford Dictionary of National Biography। Oxford, England: Oxford University Press। 
  21. Berryman, John (২০০১)। Haffenden, John, সম্পাদক। Berryman's Shakespeare: essays, letters and other writings। London: Tauris Parke। পৃষ্ঠা xxxvi। আইএসবিএন 978-1-86064-643-0 
  22. Neil, Samuel (২৭ এপ্রিল ১৮৬৭)। "Moffat, N.B., Shakespeare's birthday, 1867."। Athenæum। খণ্ড 1867 নং 2061। London। পৃষ্ঠা 552। hdl:2027/uc1.l0063569123অবাধে প্রবেশযোগ্যHathiTrust-এর মাধ্যমে। 
  23. Neil, Samuel (১৮৬৩)। Shakespere: a critical biography। London: Houlston and Wright। পৃষ্ঠা 105–106। ওসিএলসি 77866350 
  24. Colin Burrow, ed. The Complete Sonnets and Poems (Oxford UP, 2002), pp. 98, 102–103.
  25. Hyder Edward Rollins, The Sonnets, New Variorum Shakespeare, vol. 25 II, Lippincott, 1944, pp. 181–184.
  26. "Glossary of Poetic Terms"Poetry Foundation। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  27. Vendler, Helen. The Art of Shakespeare’s Sonnets. Harvard University Press, 1999. আইএসবিএন ৯৭৮-০৬৭৪৬৩৭১২২ p. 50
  28. "The International Literary Quarterly"। Interlitq.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০২ 
  29. Hammond. The Reader and the Young Man Sonnets. Barnes & Noble. 1981. p. 2. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৩৪৯-০৫৪৪৩-৫
  30. Hubler, Edward. Shakespeare’s Songs and Poems. McGraw HIll. 1964. p. xl
  31. Sarker, Sunil (২০০৬)। Shakespeare's Sonnets। New Delhi: Atlantic Publishers & Distributors। পৃষ্ঠা 87, 89। আইএসবিএন 8171567258 
  32. Rollett, John (২০১৫)। William Stanley as Shakespeare: Evidence of Authorship by the Sixth Earl of Derby। Jefferson, NC: McFarland & Company, Inc., Publishers। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 978-0786496600 
  33. Feldman, Sabrina (২০১১)। The Apocryphal William Shakespeare: Book One of A 'Third Way' Shakespeare Authorship Scenario। Indianapolis, IN: Dog Ear Publishing। পৃষ্ঠা 110। আইএসবিএন 978-1457507212 
  34. Duncan-Jones, Katherine. Woudhuysen, H. R. eds. Shakespeare, William. Shakespeare's Poems: Third Series. Arden Shakespeare. (28 September 2007) lines 163–174 আইএসবিএন ৯৭৮-১৯০৩৪৩৬৮৭৫
  35. Shakespeare, William; Bell, Robert (১৮৫৫)। The Poems of William Shakespeare। London: John W. Parker and Son West Strand। পৃষ্ঠা 163। 
  36. Wilde, Oscar (২০১৮)। Lord Arthur Savile ́s Crime – The Portrait of Mr. W. H. and other Stories। Main, Germany: Outlook। পৃষ্ঠা 82–83, 87। আইএসবিএন 978-3732658817 
  37. Law, Robert Adger. "The Choruses in Henry the Fifth". The University of Texas Studies in English. Vol. 35 (1956), University of Texas Press. p. 11
  38. McNeir, Waldo. "Shakespeare's Epilogues". CEA Critic, Vol. 47, No. 1/2. The Johns Hopkins University Press (1984), pp. 7-16
  39. Romeo and Juliet. I,v,91–104
  40. Emerson, Oliver Farrar. "Shakespeare’s Sonneteering". Studies in Philology, Vol. 20, No. 2 University of North Carolina Press. (1923). p. 121
  41. Dunton-Downer, Leslie. Riding, Alan. Essential Shakespeare Handbook. Publisher: DK 2004 . P. 97 আইএসবিএন  ৯৭৮-০৭৮৯৪৯৩৩৩০
  42. Stater, Elliot, The Problem of the Reign of King Edward III: A Statistical Approach, Cambridge University Press, 1988, pp. 7–9.
  43. Sams, Eric. Shakespeare's Edward III : An Early Play Restored to the Canon (Yale UP, 1996) আইএসবিএন ৯৭৮-০৩০০০৬৬২৬৫
  44. Melchiori, Giorgio, ed. The New Cambridge Shakespeare: King Edward III, 1998, p. 2.
  45. Sams, Eric. Shakespeare's Edward III : An Early Play Restored to the Canon (Yale UP, 1996) আইএসবিএন ৯৭৮-০৩০০০৬৬২৬৫ Act 2, scene 1.
  46. Edward III. Act 2, scene 1.

বহিঃসংযোগ

সম্পূর্ণ সংকলন

বিশ্লেষণমূলক পাঠ

ভাষ্য