নির্বাচিত কলাম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
পরিষ্কারকরণ
তথ্যসূত্র
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
{{উৎসহীন|date=সেপ্টেম্বর ২০১৬}}
{{উৎসহীন|date=সেপ্টেম্বর ২০১৬}}
}}
}}
'''নির্বাচিত কলাম''' একটি বাংলা [[নারীবাদী]] গ্রন্থ। [[বাংলাদেশী]] লেখিকা [[তসলিমা নাসরিন|তসলিমা নাসরিনের]] প্রথম [[গদ্য]]কর্ম যা তার লিখিত কলামগুলির সংকলন।
'''নির্বাচিত কলাম''' একটি বাংলা [[নারীবাদী]] গ্রন্থ। [[বাংলাদেশী]] লেখিকা [[তসলিমা নাসরিন|তসলিমা নাসরিনের]] প্রথম [[গদ্য]]কর্ম যা তার লিখিত কলামগুলির সংকলন।<ref>{{Cite web|url=http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/7108880.stm|title=BBC NEWS {{!}} South Asia {{!}} Taslima Nasreen: Controversy's child|website=news.bbc.co.uk|access-date=2017-02-15}}</ref><ref>{{Cite book|url=https://books.google.com/?id=SpFaBwAAQBAJ&pg=PA152&dq=Nirbachito+Column#v=onepage&q=Nirbachito%20Column&f=false|title=Political Islam and Governance in Bangladesh|last=Riaz|first=Ali|last2=Fair|first2=Assistant Professor of Security Studies C. Christine|last3=Fair|first3=C. Christine|date=2010-10-04|publisher=Routledge|year=|isbn=9781136926242|location=|pages=152|language=en|quote=|via=}}</ref>


== ভূমিকা ==
== ভূমিকা ==
২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
|format=[[Ogg]]}}
|format=[[Ogg]]}}


বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইয়েই [[ইসলাম]] ও এর প্রবক্তা মোহাম্মদকে সরাসরি ভাষায় আক্রমণ করা হয়।{{Citation needed|date=August 2016}} বইটিতে হিন্দুধর্মের সমালোচনাও রয়েছে। এই বইটি যেমন অনেক নারীকেই অনুপ্রাণিত করেছে, তেমন অনেক মৌলবাদীকেই রাগান্বিত করেছে। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইটিতেই যৌনতা নিয়ে একজন নারী রাখঢাকবিহীন বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের সমাজে যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি আলাপআলোচনা এখনও স্বীকৃত নয়। এই বইটিতে সংকলিত কলামগুলির রচিত হয় ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালে। [[বেগম রোকেয়া]]র প্রায় একশ' বছর পর এই কলামগুলির মাধ্যমেই বাংলাদেশে নারীবাদের লড়াই পুনরুজ্জীবন লাভ করে। এখনও এই কলামগুলিই বাংলা ভাষায় একজন নারীর রচিত সবচেয়ে সাহসী লেখা হিসেবে স্বীকৃত। [[পশ্চিমবঙ্গ]] বা [[বাংলাদেশ]]- কোথাও বাঙালি নারী লেখকের মাঝে তসলিমা নাসরিনের মতো সাহস খুব কমই দেখা গেছে।
বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইয়েই [[ইসলাম]] ও এর প্রবক্তা মোহাম্মদকে সরাসরি ভাষায় আক্রমণ করা হয়।<ref>{{Cite book|url=https://books.google.com/?id=KvOFDAAAQBAJ&pg=PA194&dq=Nirbachito+Column#v=onepage&q=Nirbachito%20Column&f=false|title=Women and Islam in Bangladesh: Beyond Subjection and Tyranny|last=Hashmi|first=T.|date=2000-03-10|publisher=Springer|year=|isbn=9780333993873|location=|pages=194|language=en|quote=|via=}}</ref> বইটিতে হিন্দুধর্মের সমালোচনাও রয়েছে। এই বইটি যেমন অনেক নারীকেই অনুপ্রাণিত করেছে, তেমন অনেক মৌলবাদীকেই রাগান্বিত করেছে। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইটিতেই যৌনতা নিয়ে একজন নারী রাখঢাকবিহীন বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের সমাজে যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি আলাপআলোচনা এখনও স্বীকৃত নয়। এই বইটিতে সংকলিত কলামগুলির রচিত হয় ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালে। [[বেগম রোকেয়া]]র প্রায় একশ' বছর পর এই কলামগুলির মাধ্যমেই বাংলাদেশে নারীবাদের লড়াই পুনরুজ্জীবন লাভ করে। এখনও এই কলামগুলিই বাংলা ভাষায় একজন নারীর রচিত সবচেয়ে সাহসী লেখা হিসেবে স্বীকৃত। [[পশ্চিমবঙ্গ]] বা [[বাংলাদেশ]]- কোথাও বাঙালি নারী লেখকের মাঝে তসলিমা নাসরিনের মতো সাহস খুব কমই দেখা গেছে।


== প্রকাশনা ==
== প্রকাশনা ==
৩০ নং লাইন: ৩০ নং লাইন:
কলামটি আদৌ প্রকাশিত হবে কি না তা নিয়েও তসলিমা নাসরিন সংশয়ে ছিলেন। যথাসময়ে তাঁকে অবাক করে দিয়ে কলামটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির অনেক সাধারণ পাঠকেরই নজরে আসে এটি। এরপরই তসলিমা নাসরিন নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর কলাম ছাপা হলে যে কোনো পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যেতে শুরু করে।
কলামটি আদৌ প্রকাশিত হবে কি না তা নিয়েও তসলিমা নাসরিন সংশয়ে ছিলেন। যথাসময়ে তাঁকে অবাক করে দিয়ে কলামটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির অনেক সাধারণ পাঠকেরই নজরে আসে এটি। এরপরই তসলিমা নাসরিন নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর কলাম ছাপা হলে যে কোনো পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যেতে শুরু করে।


১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক মুজিবর রহমান খোকা (তিনি সেই সময়ে তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন) তাঁকে তাঁর লেখা কলামগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বইটি "বিদ্যাপ্রকাশ" প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বইটি সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকার শীর্ষে চলে আসে এবং একসময় বাংলায় লেখা নারীবাদের একটি মাস্টারপিস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।.
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক মুজিবর রহমান খোকা (তিনি সেই সময়ে তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন) তাঁকে তাঁর লেখা কলামগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বইটি "বিদ্যাপ্রকাশ" প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বইটি সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকার শীর্ষে চলে আসে। <ref name=":0">{{Cite book|url=https://books.google.com/?id=WHksAAAAYAAJ&q=Nirbachito+Column&dq=Nirbachito+Column|title=The Book Review|last=|first=|date=2004-01-01|publisher=C. Chari for Perspective Publications|year=|isbn=|location=|pages=47|language=en|quote=|via=}}</ref>


== বিতর্ক ==
== বিতর্ক ==
বইটিকে [[আনন্দ পুরস্কার]] দেয়ার কথা ঘোষণা করার পর তসলিমা নাসরিন পুরস্কার কমিটিকে জানান যে তিনি বইটির একটি কলামের কিছু অংশ সুকুমারী ভট্টাচার্য্যের বেদের ওপর একটি লেখা থেকে নকল করে লিখেছেন। তবে আনন্দ পুরস্কার কমিটি একে বড় কোনো ব্যাপার বলে বিবেচনা করেনি, সম্ভবত লেখক নিজেই কথাটি সততার সাথে স্বীকার করেছিলেন বলে। তবে বর্তমানেও তসলিমা-বিদ্বেষী ভন্ড ও মৌলবাদীরা এই নকলের ব্যাপারটি নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের নারীবিরোধী সমাজকাঠামোয় তসলিমা নাসরিনের স্বীকারোক্তির সৎসাহসকে গুরুত্ব দেয়ার মতো লোকের সংখ্যা অত্যন্ত কম।{{citation needed|date=April 2012}} [[আনন্দবাজার পত্রিকা]]<nowiki/>র অন্যতম কর্তা ও সুলেখক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ আনন্দ পুরষ্কারের জন্যে বইটির নাম সুপারিশ করেছিলেন।
বইটিকে [[আনন্দ পুরস্কার]] দেয়ার কথা ঘোষণা করার পর তসলিমা নাসরিন পুরস্কার কমিটিকে জানান যে তিনি বইটির একটি কলামের কিছু অংশ সুকুমারী ভট্টাচার্য্যের বেদের ওপর একটি লেখা থেকে নকল করে লিখেছেন। তবে আনন্দ পুরস্কার কমিটি একে বড় কোনো ব্যাপার বলে বিবেচনা করেনি, সম্ভবত লেখক নিজেই কথাটি সততার সাথে স্বীকার করেছিলেন বলে। তবে বর্তমানেও তসলিমা-বিদ্বেষী ভন্ড ও মৌলবাদীরা এই নকলের ব্যাপারটি নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের নারীবিরোধী সমাজকাঠামোয় তসলিমা নাসরিনের স্বীকারোক্তির সৎসাহসকে গুরুত্ব দেয়ার মতো লোকের সংখ্যা অত্যন্ত কম।{{citation needed|date=April 2012}} [[আনন্দবাজার পত্রিকা]]র অন্যতম কর্তা ও সুলেখক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ আনন্দ পুরষ্কারের জন্যে বইটির নাম সুপারিশ করেছিলেন।
বইটি নিয়ে সম্ভবত এটিই প্রধান বিতর্ক। এছাড়াও চরমপন্থী মুসলিমেরা তাঁকে বরাবরের মতোই এই বইতেও ইসলামের সমালোচনা করার দায়ে অভিযুক্ত করে থাকে। এরা বলে থাকে যে তিনি [[কোরান]]-[[হাদিস]] ভাল করে না বুঝেই [[ইসলাম|ইসলামকে]] বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন।{{citation needed|date=April 2012}}
বইটি নিয়ে সম্ভবত এটিই প্রধান বিতর্ক। এছাড়াও চরমপন্থী মুসলিমেরা তাঁকে বরাবরের মতোই এই বইতেও ইসলামের সমালোচনা করার দায়ে অভিযুক্ত করে থাকে।<ref name="angla rebel’s fresh tirade">{{Cite web|url=http://www.tribuneindia.com/2004/20040822/spectrum/book4.htm|title=Bangla rebel’s fresh tirade|last=Sekhon|first=Aradhika|date=|website=The Sunday Tribune|archive-url=|archive-date=|dead-url=|access-date=15 February 2017}}</ref> এরা বলে থাকে যে তিনি [[কোরান]]-[[হাদিস]] ভাল করে না বুঝেই [[ইসলাম|ইসলামকে]] বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন। {{citation needed|date=April 2012}}

মৌলবাদীরা যে যে কারণে তসলিমা নাসরিনের ওপর বিভিন্ন [[ফতোয়া]] ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে এই বইটি লেখাও একটি প্রধান কারণ।{{citation needed|date=April 2012}}
মৌলবাদীরা যে যে কারণে তসলিমা নাসরিনের ওপর বিভিন্ন [[ফতোয়া]] ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে এই বইটি লেখাও একটি প্রধান কারণ।{{citation needed|date=April 2012}}



১৭:০৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নির্বাচিত কলাম একটি বাংলা নারীবাদী গ্রন্থ। বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের প্রথম গদ্যকর্ম যা তার লিখিত কলামগুলির সংকলন।[১][২]

ভূমিকা

"নির্বাচিত কলাম" নারীবাদী ও ধর্মমুক্ত মানবতাবাদী হিসেবে বিখ্যাত তসলিমা নাসরিনের লেখা একটি ধ্রুপদী গ্রন্থ। এছাড়া তিনি "লজ্জা","আমার মেয়েবেলা", "ক" (পশ্চিমবঙ্গে এই বইটির নাম "দ্বিখন্ডিত") ইত্যাদিরও প্রণেতা। এই বইগুলো ছাড়াও তসলিমা নাসরিন বেশ ক'টি উপন্যাস, কবিতা, কলাম ও গল্প লিখেছেন। তবে "নির্বাচিত কলাম"ই প্রথম তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। বইটি তাঁর লেখা কিছু কলামের সংকলন।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বইটির শুরুর কলামটিতে রয়েছে লেখকের আঠারো-উনিশ বছর বয়সে একটি ছেলের হাতে নির্যাতিত হওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা। ছেলেটি তাঁর হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে চলে যায়। কলামটির উপসংহারে লেখক বলেছেনঃ "ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে মেয়েদের স্কুল, কলেজ, সিনেমা হলের পাশে কাঠের থামের উপর এক ধরনের সাইনবোর্ড ঝুলত, ওতে লেখা ছিল 'বখাটেদের উৎপাতে টহল পুলিশের সাহায্য নিন'। এই ব্যবস্থাটি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। সম্ভবত বখাটেরা ওর গুঁড়িসুদ্ধ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। যতদিন সাইনবোর্ড ছিল, মেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসার সময় বখাটেরা ওই থামে হেলান দিয়েই শিস দিত। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, টহল পুলিশের উৎপাতে একবার স্কুলের মেয়েরা বখাটেদের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছিল।" বইটিতে এরকম বেশ কিছু কলামে পুরুষ-অধিকৃত একটি সমাজে নারীজীবনের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে।.

বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইয়েই ইসলাম ও এর প্রবক্তা মোহাম্মদকে সরাসরি ভাষায় আক্রমণ করা হয়।[৩] বইটিতে হিন্দুধর্মের সমালোচনাও রয়েছে। এই বইটি যেমন অনেক নারীকেই অনুপ্রাণিত করেছে, তেমন অনেক মৌলবাদীকেই রাগান্বিত করেছে। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইটিতেই যৌনতা নিয়ে একজন নারী রাখঢাকবিহীন বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের সমাজে যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি আলাপআলোচনা এখনও স্বীকৃত নয়। এই বইটিতে সংকলিত কলামগুলির রচিত হয় ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালে। বেগম রোকেয়ার প্রায় একশ' বছর পর এই কলামগুলির মাধ্যমেই বাংলাদেশে নারীবাদের লড়াই পুনরুজ্জীবন লাভ করে। এখনও এই কলামগুলিই বাংলা ভাষায় একজন নারীর রচিত সবচেয়ে সাহসী লেখা হিসেবে স্বীকৃত। পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ- কোথাও বাঙালি নারী লেখকের মাঝে তসলিমা নাসরিনের মতো সাহস খুব কমই দেখা গেছে।

প্রকাশনা

"ক" বা "দ্বিখন্ডিত"তে তসলিমা নাসরিনের দেয়া ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৮৯ সালে তাঁকে সেইসময়ের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা "আজকের কাগজে" কলাম লিখবার আমন্ত্রণ জানান পত্রিকাটির সম্পাদক ও লেখকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাঈমুল ইসলাম খান (পরে ইনি তাঁর সাথে বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং একসময় বিবাহবিচ্ছেদও ঘটে)। তসলিমা নাসরিন উত্তর দেন, "ধুর কলাম কি করে লিখতে হয় আমি জানি না।" নাঈমুল ইসলাম খান তাঁকে "তোর যা ইচ্ছে করে তাই লেখ, ঘাবড়ানির কিছু নাই" বলে অভয় দেন।

তসলিমা নাসরিন যখন লিখবার বিষয় কি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তাঁর দৃষ্টি আবদ্ধ হয় তাঁর ডান হাতের একটি কালো দাগে। তাঁর মনে পড়ে যায় যে একটি ছেলে তাঁর হাতে একবার সিগারেট চেপে ধরায় ক্ষত থেকে উক্ত কালো দাগটি তৈরী হয়েছিল। এ নিয়ে তিনি তাঁর প্রথম কলামটি লিখে ফেলেন। এরপরও আদৌ লেখাটি কলাম হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তা ছিল। অবশেষে একসময় দ্বিধাগ্রস্ত লেখক "দেখ, কলাম কি করে লিখতে হয় তা তো আমি জানি না। নিজের জীবনের একটা অভিজ্ঞতার কথা লিখেছি শুধু" বলে কলামটি নাঈমুল ইসলাম খানের কাছে জমা দেন।

কলামটি আদৌ প্রকাশিত হবে কি না তা নিয়েও তসলিমা নাসরিন সংশয়ে ছিলেন। যথাসময়ে তাঁকে অবাক করে দিয়ে কলামটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির অনেক সাধারণ পাঠকেরই নজরে আসে এটি। এরপরই তসলিমা নাসরিন নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর কলাম ছাপা হলে যে কোনো পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যেতে শুরু করে।

১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক মুজিবর রহমান খোকা (তিনি সেই সময়ে তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন) তাঁকে তাঁর লেখা কলামগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বইটি "বিদ্যাপ্রকাশ" প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বইটি সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকার শীর্ষে চলে আসে। [৪]

বিতর্ক

বইটিকে আনন্দ পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করার পর তসলিমা নাসরিন পুরস্কার কমিটিকে জানান যে তিনি বইটির একটি কলামের কিছু অংশ সুকুমারী ভট্টাচার্য্যের বেদের ওপর একটি লেখা থেকে নকল করে লিখেছেন। তবে আনন্দ পুরস্কার কমিটি একে বড় কোনো ব্যাপার বলে বিবেচনা করেনি, সম্ভবত লেখক নিজেই কথাটি সততার সাথে স্বীকার করেছিলেন বলে। তবে বর্তমানেও তসলিমা-বিদ্বেষী ভন্ড ও মৌলবাদীরা এই নকলের ব্যাপারটি নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের নারীবিরোধী সমাজকাঠামোয় তসলিমা নাসরিনের স্বীকারোক্তির সৎসাহসকে গুরুত্ব দেয়ার মতো লোকের সংখ্যা অত্যন্ত কম।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আনন্দবাজার পত্রিকার অন্যতম কর্তা ও সুলেখক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ আনন্দ পুরষ্কারের জন্যে বইটির নাম সুপারিশ করেছিলেন।

বইটি নিয়ে সম্ভবত এটিই প্রধান বিতর্ক। এছাড়াও চরমপন্থী মুসলিমেরা তাঁকে বরাবরের মতোই এই বইতেও ইসলামের সমালোচনা করার দায়ে অভিযুক্ত করে থাকে।[৫] এরা বলে থাকে যে তিনি কোরান-হাদিস ভাল করে না বুঝেই ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মৌলবাদীরা যে যে কারণে তসলিমা নাসরিনের ওপর বিভিন্ন ফতোয়া ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে এই বইটি লেখাও একটি প্রধান কারণ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বইটি আনন্দ পুরস্কার পাওয়ার পর বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবিই তসলিমা নাসরিনের প্রতি ঈর্ষা বোধ করতে আরম্ভ করেন। তসলিমা নাসরিনের অনেক শুভাকাঙ্খীই রাতারাতি তাঁর শত্রুতে রুপান্তরিত হন এবং তাঁর নামে অসত্য গুজব ও নিন্দা ছড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত হন। ঈর্ষান্বিত কিছু লেখক, যাঁরা তসলিমা নাসরিনের একসময়ের বন্ধু ছিলেন, অল্প বয়সে আনন্দ পুরস্কার ও সেইসাথে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে খ্যাতি অর্জনের কারণে ঈর্ষান্বিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে "তৃতীয় শ্রেণীর লেখক" উপাধি দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তসলিমা নাসরিন বইটির জন্য ১৯৯২ সালে "আনন্দ পুরস্কার (তাঁর ভাষায় যা "বাংলার নোবেল পুরস্কার)" লাভ করেন। বইটি বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রসিদ্ধ।

অনুবাদ

দেবযানী সেনগুপ্ত বইটি ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করেছেন। এছাড়াও বইটি হিন্দি, অসমীয়া, মারাঠিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

আরও দেখুন

  1. "BBC NEWS | South Asia | Taslima Nasreen: Controversy's child"news.bbc.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১৫ 
  2. Riaz, Ali; Fair, Assistant Professor of Security Studies C. Christine; Fair, C. Christine (২০১০-১০-০৪)। Political Islam and Governance in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 152। আইএসবিএন 9781136926242 
  3. Hashmi, T. (২০০০-০৩-১০)। Women and Islam in Bangladesh: Beyond Subjection and Tyranny (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। পৃষ্ঠা 194। আইএসবিএন 9780333993873 
  4. The Book Review (ইংরেজি ভাষায়)। C. Chari for Perspective Publications। ২০০৪-০১-০১। পৃষ্ঠা 47। 
  5. Sekhon, Aradhika। "Bangla rebel's fresh tirade"The Sunday Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭