২০১৯ পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের ধর্মঘট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২০১৯ পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের ধর্মঘট
তারিখ১১ জুন ২০১৯– চলছে
(৪ বছর, ১০ মাস, ২ সপ্তাহ ও ৬ দিন)
অবস্থান
কারণরাজ্য পরিচালিত হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা অভাব
নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-এর দুই জুনিয়র ডাক্তারের উপর হামলা
লক্ষ্যসমূহচিকিৎসা পেশাদারদের জন্য বিধান নিরাপত্তা
প্রক্রিয়াসমূহ
অবস্থাচলছে
ক্ষয়ক্ষতি
আহত২ জুনিয়র ডাক্তার
গ্রেপ্তার৫ জন[১]

২০১৯ সালের ১০ই জুন রাতে নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (এনআরএসসিএচ) দুই জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর হামলার পর কলকাতার জুনিয়র চিকিৎসকরা ১১ই জুন থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিকিৎসা পেশাদারদের জন্য মধ্যস্থতা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানান।[২][৩][৪][৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২] মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ১৩ জুন পর্যন্ত বিক্ষোভ চলতে থাকে, অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদকারী ডাক্তারদের একটি চরমপত্র (আল্টিমেটাম) প্রদান করেন।[১৩][১৪][১৫] শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদকারী ডাক্তারা দাবি করে সরকার তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করুক[১৬] এবং মুখ্যমন্ত্রী কাছ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি করে।[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের হামলা পশ্চিমবঙ্গে মোটামুটি সাধারণ বিষয়। [৯] কলকাতার ট্যাংরা থেকে ভর্তি হওয়া ৭৫ বছর বয়সী একজন রোগী মোহাম্মদ শহেদ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১০ জুন রাত ১০ টায় এই ঘটনা ঘটে।[৩] মৃতের ১১ জন আত্মীয় রোগীর মৃত্যুর কারণে বিষণ্ণ ছিল [১০] এবং অভিযোগ করেছেন যে তিনি চিকিৎসাদের অবহেলার কারণে মারা যান।[২][৩] তারা দাবি করেছে, মৃতদেহ সেই সময় তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি।[২][৩] হাসপাতালের কর্মীরা জানায়, আত্মীয়রাও জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে দুর্ব্যবহার করে।[১০] এর অল্প কিছু পরে, ভিড় প্রায় ১১ টায় (ইউটিসি+০৫:৩০) এনআরএসএমএচ পৌঁছেছিল এবং জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে।[২][৩] সংঘর্ষে রাতে হাসপাতাল একটি "যুদ্ধক্ষেত্রে" পরিণত হয় এবং ডাক্তারা অভিযোগ করেন, সকাল মধ্যে প্রাঙ্গনে ২০০ বেশি মানুষ ট্রাক করে এসে[৫] ডাক্তারদের উপর হামলা চালায় এবং হাসপাতাল সম্পত্তি ধ্বংস করে।[৩] অন্য একাউন্টে বলা হয়েছে যে, হাসপাতালে ডাক্তারদের হামলা করার জন্য লোকেরা হেলমেট পরে গাড়িতে করে পৌঁছেছিল।[৮] দুই ইন্টার্ন ডাক্তার, পরিবহ মুখোপাধ্যায় এবং যশ তেকওয়ানি,[৫] যারা মৃত রোগীর প্রতিবাদী আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তারা পরবর্তী সংঘর্ষে আহত হন। [৩] যশকে এনআরএসএসসিএচ [১০]-এ ভর্তি করা হয়েছিল, গুরুতর আহত পরিবহকে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসিয়েন্সেসে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে ভর্তি করা হয়।[৯] হাসপাতালের ডাক্তারদের দ্বারা আপলোড করা একটি সিটি স্ক্যানের ছবিতে দেখা যায় পরিবহের ফ্রন্টাল লোবের[৫] একটি অংশ ভেঙে মাথার ভিতরের দিকে ঢুকে গিয়েছে।[৬]

প্রতিবাদ[সম্পাদনা]

প্রথম দিন: ১১ জুন ২০১৯[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের ১১ জুন, কমপক্ষে ৫০ জন ইন্টার্ন ডাক্তার দুই জন জুনিয়র ডাক্তারের ওপর হামলার প্রতিবাদে এনআরএসএমএচ-এর প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয় এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হামলার ঘটনার ব্যবস্থা নেয়া এবং ডাক্তারদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি করেন।[৩][৪][৭] ডাক্তাররা অভিযোগ করেছেন যে, গত রাতে দুজন জুনিয়র ডাক্তারকে হামলা করার পর পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।[১৩] সিপিএম সমর্থিত ডাক্তার ফোরাম আগামী দিন থেকে পশ্চিমবঙ্গের সকল সরকারি হাসপাতালের বহিঃপ্রাঙ্গণ বিভাগে সব কাজ বন্ধ করার প্রস্তাব দেয়। ফোরামের সদস্য আরও বলেছেন যে জরুরি পরিষেবা সব হাসপাতালগুলিতে সক্রিয় থাকবে।[৭]

দ্বিতীয় দিন: ১২ জুন ২০১৯[সম্পাদনা]

১২ জুন ২০১৯-এ হরতাল দ্বিতীয় দিন পরে, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়, কারণ জুনিয়র চিকিৎসকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিল। একই দিনে, এনআরএসএসএচ-এ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলন শহরে ৩০ টি সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং কমপক্ষে ছয়টি জেলা হাসপাতালে ছড়িয়ে পরে[১০] এবং আন্দোলনকারীরা নিয়মিত চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।[৩][৪] প্রভাবিত হাসপাতালগুলির মধ্যে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এসএসকেএম হাসপাতাল, আরজি কর হাসপাতাল এবং মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, উত্তরবঙ্গ ও বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজ ছিল।[১০] জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভের পর বহির্বিভাগ এবং প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিসহ সকল বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবাদকারীরা বলেন, চিকিৎসা পেশাজীবীদের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালগুলিতে কাজ শুরু হবে না।[২][৩] ডক্টরস ফোরামের দ্বারা বিবৃতির পক্ষান্তরে রাজ্য জুড়ে জরুরি পরিষেবা বন্ধ করা হয় এবং তা জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ ছিল না, ফলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়।[৫]

মধ্যস্থতা[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলের (ডব্লিউবিএমসি) সভাপতি ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ নির্মল মাঝি প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেন যে কাজ পুনরায় শুরু করতে ডাক্তারদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে[২] প্রতিবাদকারীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তবে কেবলমাত্র তার উপপরিচালক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এনআরএসএমসিএচ পরিদর্শন করেছিলেন। ডাক্তার ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। সরকারের মুখপাত্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সংসদ সদস্য অভিষেক ব্যানার্জিও আবারো কাজ শুরু করার আহ্বান জানান। যাইহোক, মধ্যস্থতা সফল ছিল না এবং প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে।[১০]

তৃতীয় দিন: ১৩ জুন ২০১৯[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের ১৩ জুন বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে সরকারি হাসপাতালের সকল বহিঃপ্রাঙ্গণ বিভাগ বন্ধ ছিল,[১৩] কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতাল এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বিভাগীয় ও বহির বিভাগের শুধুমাত্র সিনিয়র চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকেন।[১৪]

চরমপত্র[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের ১৩ জুন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪ ঘণ্টার[১৪] (স্থানীয় সময় ২ টা নাগাদ) মধ্যে কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য হরতালকারী ডাক্তারদের একটি আল্টিমেটাম জারি করেন।[১৩] এসএসকেএম হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হরতালকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি বক্তব্য রাখেন। ডাক্তারদের কথা বলার সময় তিনি বলেন, তারা বাইরের। সরকার কোনোভাবে তাদের সমর্থন করবে না। আমি ধর্মঘটকারী ডাক্তারদের নিন্দা করছি। পুলিশ কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যায় কিন্তু পুলিশ ধর্মঘটে যায় না।[১৩][১৪][১৫] আরও যোগ করেন যে ধর্মঘট সহ্য করা হবে না।[১]

গ্রেপ্তার[সম্পাদনা]

২০‌‌‌১৯ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত এই হামলার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।[১]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে এই বিক্ষোভ বামফ্রন্ট এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যেকার ষড়যন্ত্রের ফল।[১৭] তিনি এই ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন এবং বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে অমিত শাহ রাজ্যে বিভ্রান্তি ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন"।[১৬] রাজ্য বিজেপির প্রধান দিলীপ ঘোষ তারপর অভিযোগ করেন যে, যারা ডাক্তারদের ওপর হামলা চালায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না, কারণ তারা "তার ভোটার"।[১৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Singh, Shiv Sahay (১৩ জুন ২০১৯)। "Junior doctors in Kolkata refuse to return to work, situation volatile"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  2. "Doctors in West Bengal Go on Strike After Colleague's Assault, Demand Full Protection"News18। News18। PTI। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  3. "How an intern doctor's fractured skull has Kolkata up in arms as BJP blames Trinamool"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। India Today। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  4. Banerjie, Monideepa। "Bengal Doctors On Strike After Colleague Attacked For Alleged Negligence"NDTV.com। NDTV। NDTV। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  5. "Calcutta doctors attacked, BJP leader blames a particular community"www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। The Telegraph। TT Bureau। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  6. Basu, Kinsuk। "Protests erupt across state after assault on NRS doctors"www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। The Telegraph। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  7. "Junior doctors threaten strike in Bengal on Wednesday"Business Standard India। Business Standard। IANS। ১১ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  8. "Kolkata doctor attack: Outdoor facility closed across Bengal, clashes reported from Bardhaman medical college | Latest News & Updates at DNAIndia.com"DNA India (ইংরেজি ভাষায়)। DNA। DNA Web Team। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  9. "Services hit at Bengal's state-run hospitals as doctors strike work after alleged assault on colleague"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। Hindustan Times। HT Correspondent। ১১ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  10. Bhattacharya, Ravik; Kumari, Sweety (১৩ জুন ২০১৯)। "West Bengal political pot simmers as hospital protests spread"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  11. Kumari, Sweety (১২ জুন ২০১৯)। "Doctors at Kolkata hospitals on strike after colleague assaulted by patient's relatives"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  12. "Doctors' strike in West Bengal enters third day, Out Patient Departments in Siliguri hospitals to remain shut"Firstpost। Firstpost। Asian News International। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  13. Varma, Shylaja। "Get Back To Work: Mamata Banerjee's 4-Hour Ultimatum to Striking Doctors"NDTV। NDTV। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  14. "Get back to work, Mamata Banerjee sets a deadline for Bengal's striking doctors"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। Hindustan Times। HT Correspondent। ১৩ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  15. "'Return to Work or Vacate Hostels': Mamata Issues 4-Hour Ultimatum to Protesting Bengal Doctors"News18। News18। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  16. Kundu, Indrajit। "It is Amit Shah: Mamata Banerjee blames BJP for communalising Kolkata doctors' strike | EXCLUSIVE"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। India Today। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ 
  17. Sanyal, Anindita। "Mamata Banerjee Versus BJP Plays Out In Bengal Doctors' Strike"NDTV। NDTV। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯