বারো দলীয় জোট
বারো দলীয় জোট হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে 'যুগপৎ আন্দোলন'-এর লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপির সমমনা ১২টি দল নিয়ে গঠিত সরকার-বিরোধী জোট। পূর্ববর্তী বিশ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোট গঠন করা হয়।[১] তবে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটের অংশ নয়। ২০২২-২৩ সালে জোটটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহ বিভিন্ন দাবিতে স্বৈরাচারী[২] আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।[৩] পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্রসংস্কারের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে।[৪]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বিএনপি ১৯৯৯ সালে চার দলীয় জোট গঠন করে ২০০১ এর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসলেও ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের (১৪ দলীয় জোট) নিকট পরাজিত হয়। এরপর ২০১২ সালে প্রথমে চার দলীয় জোট সম্প্রসারণ করে ১৮ দলীয় জোট ও পরে আরও ২টি দল যোগ করে ২০ দলীয় জোট গঠন করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে জোট থেকে বিভিন্ন দল যোগ-বিয়োগ হয়েছে। ২০১৮ এর নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-গণফোরাম সহ কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলে ২০ দলীয় জোট দুর্বল হতে থাকে।[৫] ফলে নির্বাচনের পর জোটে ভাঙন দেখা দেয়।[৬] মূল শক্তি বিএনপিও জোট রাজনীতিতে অনাগ্রহ দেখাতে থাকলে জোটটি বাস্তবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে।[৭]
২০২২ সালে বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশের মাধ্যমে রাজনীতিতে পুনরায় পুরোদমে সক্রিয় হলেও জোটবদ্ধ কোনও কার্যক্রমে না গিয়ে এককভাবে কাজ করতে থাকে। এসময় তারা শরিকদল ও অন্যান্য সমমনা দলকে সরকারের বিরুদ্ধে 'যুগপৎ আন্দোলন' করার আহ্বান জানায়। ৯ ডিসেম্বরে বিএনপি তাদের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন ২০ দলীয় শরিকদের নিয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক সভায় ২০ দলীয় জোটকে বিলুপ্ত করার কথা জানায়।[৮][৯] এরপর বিএনপির সমর্থনেই[১০] জোটের ছোটো ছোটো শরিক দলগুলো নতুন জোট তৈরির কার্যক্রম শুরু করে। এসময় ৩৬টি সমমনা দল ও ভগ্নদল মিলে চারটি প্ল্যাটফর্মে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়।[১১] এসময় বিভিন্ন সময়ে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের সাথে সম্পৃক্ত ছোটো ছোটো দল দুটি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।[১২] ১২ দলীয় জোটের পর গঠিত হওয়া অপর জোটটি হচ্ছে ১১টি দল বিশিষ্ট ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’।[১৩] অন্যদিকে বিএনপি, জামায়েতে ইসলামী ও অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন মূল এলডিপি কোনও জোটে না থেকে এককভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।[১৪]
প্রথমদিকে জোটটির নাম "জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট" রাখার কথা থাকলেও[১৫][১৬] পরে বারো দলীয় জোট নামকরণ করা হয়।[১০] ২২ ডিসেম্বরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোট গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়।[১৭] তারা এদিন নিজস্ব সাত দফা দাবির পাশাপাশি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে উত্থাপিত ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত কথা ও বিএনপির ২৭ দফা রুপরেখার সাথে একমত প্রকাশ করেছে।[১৮]
জোটের সদস্য
[সম্পাদনা]জোটের প্রত্যেক সদস্যই ২০ দলীয় জোটের অংশ ছিল। এই ১২টি দলের মধ্যে মাত্র দুটি দল তথা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।[১৯] দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে মূল দলের বিদ্রোহী বা বিকল্প শাখা কিংবা দল ভেঙে গঠন করা নতুন দল। কয়েকটি অনিবন্ধিত দল-উপদলগুলো নিবন্ধনের আবেদন করেছে। সদস্য দলগুলোর তালিকা:
- জাতীয় পার্টি (জাফর) — মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (একাংশ )
- বাংলাদেশ জাস্টিস পাটি — ড. সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ জাতীয় দল — সৈয়দ এহসানুল হুদারের নেতৃত্বে
- ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি — কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ এলডিপি — শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ মুসলিম লীগ — জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে
- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম — মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে
- ইসলামী ঐক্যজোট — মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে
- জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) — তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল — নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি — আবুল কাসেমের নেতৃত্বে
- বাংলাদেশ লেবার পার্টি— লায়ন ফারুক আহমদের নেতৃত্বে
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ প্রতিনিধি, বিশেষ। "২০ দল ভেঙে দুটি জোট, লক্ষ্য যুগপৎ আন্দোলন"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ বিবিসি (২০২৪-০৮-০৬)। "শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রের প্রতীক থেকে 'স্বৈরাচার'"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৯।
- ↑ প্রতিনিধি, বিশেষ (২০২৩-০৭-১২)। "আজ 'এক দফার' ঘোষণা দেবে বিএনপিসহ ৩৭ দল"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৮।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-১০-২০)। "রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আ.লীগের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৯।
- ↑ "২০ দলের ভবিষ্যৎ কি?"। মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ জনকণ্ঠ, দৈনিক। "বিলুপ্তির পথে ২০ দলীয় জোট, অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়"। দৈনিক জনকণ্ঠ || Daily Janakantha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ "সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তায় মৃতপ্রায় ২০ দল!"। jjdin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "বিএনপির শরিকরা এল '১২ দলীয় জোট' নিয়ে"। bdnews24। ২০২২-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ "২০ দলীয় জোটের গোপনে বিলোপে মন ভেঙেছে শরিকদের"। Newsbangla24। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ ক খ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "এল ১২ দলীয় জোট"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ Dhakatimes24.com। "নিষ্ক্রিয় ২০ দলীয় জোট, ৩৬ দল সক্রিয় চার প্ল্যাটফর্মে"। Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ "নিষ্ক্রিয় ২০ দলের শরিকরা গড়ছে নতুন দুটি জোট"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ "এবার ১১ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আত্মপ্রকাশ"। www.jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৯।
- ↑ "বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ভেঙে হচ্ছে আরও দুই জোট – DW – 21.12.2022"। dw.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ ডেস্ক, অনলাইন। "আসছে নতুন ৭ দলীয় জোট, আজ ঘোষণা জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোটের"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ "ভেঙে গেল ২০ দলীয় জোট"। www.jugantor.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ "২০ দল ভেঙে ১২ দলের নতুন জোট"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "'১২ দলীয় জোটের' আত্মপ্রকাশ"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন করতে ১২ দলীয় জোট গঠন"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৩।