হরপ্রসাদ মিত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হরপ্রসাদ মিত্র
জন্ম(১৯১৭-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯১৭
দেওঘর ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড)
মৃত্যু১৫ আগস্ট ১৯৯৪(1994-08-15) (বয়স ৭৭)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারউল্টোরথ পুরস্কার
শিশিরকুমার পুরস্কার
সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার

ড.হরপ্রসাদ মিত্র ( ১ জানুয়ারি ১৯১৭ - ১৫ আগস্ট ১৯৯৪)[১] ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য-সমালোচক। [২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

হরপ্রসাদ মিত্রের জন্ম ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন বিহার রাজ্যের অধুনা ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে পিতার কর্মস্থলে। পিতার নাম মণীন্দ্রনাথ মিত্র। পিতার কর্মসূত্রে হরপ্রসাদের বাল্যকালে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের সুযোগ হয়। পরে ১৯২৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে মিত্র পরিবার স্থায়ীভাবে বাংলার শ্রীরামপুরে বসবাস শুরু করেন। শ্রীরামপুরের চাতরা নন্দলাল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ স্নাতক হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ পাশ করেন। [২]

কর্মজীবন ও সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

হরপ্রসাদ এম.এ পাশের পর স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন সরকারী কলেজে কাজ করার পর যোগ দেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ইতিমধ্যে আচার্য সুকুমার সেনের অধীনে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা ও কাব্যরূপ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক হরনাথ মিত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক পদে যোগ দেন এবং ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। [২]

অধ্যাপক হরনাথ মিত্র ছাত্রজীবনে কবিতা লেখালেখি শুরু করেছিলেন এবং কবি হিসাবে পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। মূলত তার কবিতা ছিল হালকা মেজাজের, মসৃণ ছন্দের এবং ঘরোয়া ভাষায়। [১] তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ চলার গান অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকাসহ প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে। তার পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলি হল—

  • চন্দ্রমল্লিকা (১৯৩৫)
  • পৌত্তলিক (১৯৪১)
  • ভ্রমণ (১৯৪৩)
  • চুনিপান্নার কান্না (১৯৪৫)
  • তিমিরাভিসার (১৯৫৪)
  • আশ্বিনের ফেরিওয়ালা (১৯৬৩)
  • ঝাউয়ের শব্দ (১৯৭৩)
  • সাঁকো থেকে দেখা (১৯৮০)
  • ইদানিং আমি (১৯৮০)
  • ছবি ফিরে দেখা (১৯৮৫)
  • ইয়াক (১৯৮৫)
  • প্রেমকে মৃত্যুকে চিনে ইত্যাদি।

কাব্যগ্রন্থ অনুবাদেও তার বেশ দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি রুশি কবিতা অনুবাদের জন্য সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার লাভ করেন।

অধ্যাপক ড. হরপ্রসাদ মিত্র সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। কিছু গ্রন্থের সম্পাদনাও করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল—

সমালোচনাগ্রন্থ—
  • বাংলা কাব্যে প্রাক রবীন্দ্র (১৯৪৬);
  • সাহিত্য পাঠকের ডায়েরি;
  • সাহিত্যের নানাকথা;
  • বিবেকানন্দের সাহিত্য ও সমাজ চিন্তা;
  • তারাশঙ্কর ;
  • কবিতার বিচিত্র পাঠ;
  • রবীন্দ্র সাহিত্য পাঠ
  • বঙ্কিম সাহিত্য পাঠ ইত্যাদি।
সম্পাদিত গ্রন্থ—
  • কিরণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নতুন খাতা ও অন্যান্য কবিতা
  • রবীন্দ্রচর্চা
  • শরৎচর্চা
  • সেক্সপীয়র গ্রন্থাবলী প্রভৃতি।

এছাড়াও তিনি শ্রীঅরবিন্দের জীবন ও দর্শন নিয়ে দুই খণ্ডে রচনা করেন দেবতার দীপ হস্তে আসিল ভবে

সম্মাননা[সম্পাদনা]

হরপ্রসাদ মিত্র কাব্যগ্রন্থ অনুবাদের জন্য সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার ছাড়াও, কবিতার জন্য উল্টোরথ পুরস্কার এবং সাহিত্যকর্মের জন্য শিশিরকুমার পুরস্কার লাভ করেছিলেন। [২]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ২৩৮। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬