হডসনের বন্দুক (চলচ্চিত্র)
হডসনের বন্দুক | |
---|---|
পরিচালক | প্রশান্ত অধিকারী |
প্রযোজক | রাফকাট ফিল্মস এডটাচ |
রচয়িতা | সৈয়দ শামসুল হক |
চিত্রনাট্যকার | প্রশান্ত অধিকারী আলি আশরাফ আকনজি |
উৎস | হডসনের বন্দুক |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | এ কে মজুমদার ইশতি |
চিত্রগ্রাহক | মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান সাহিল রনি |
সম্পাদক | আপন আহমেদ |
প্রযোজনা কোম্পানি | রাফকাট ফিল্মস |
পরিবেশক | রাফকাট ফিল্মস |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৯৬ মিনিট[১] |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
নির্মাণব্যয় | ৳ ৪০ লাখ[২] (প্রযোজনা) |
হডসনের বন্দুক ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী রহস্য-রোমাঞ্চ-অভিযান চলচ্চিত্র।[৩] রাফকাট ফিল্মসের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটির পরিচালনা করেছেন প্রশান্ত অধিকারী। সৈয়দ শামসুল হকের একই নামের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রশান্ত অধিকারী ও আলি আশরাফ আকনজি রিয়েল। চলচ্চিত্রটির মূল তিন চরিত্র শখের গোয়েন্দা ও চিত্রশিল্পী নয়ন মামা ও তার ভাগ্নি/সহকারী ঝিনুকের চরিত্রে রূপদান করেছেন লুৎফর রহমান জর্জ ও মৌসুমী হামিদ এবং হডসনের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাজিদ শিখালিভ।[৪] বাংলাদেশের চা বাগানে থাকা সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে ব্যবহৃত একটি পুরনো বন্দুক লন্ডনে পাচার ঠেকাতে দুজন শখের গোয়েন্দার অভিযান নিয়ে চলচ্চিত্রটির গল্প বর্ণিত হয়েছে। ২০১৪ হতে ২০১৭ পর্যন্ত ধাপে ধাপে এটির নির্মাণ চলে। ছবি নির্মার্ণে আর্থিক সংকট ও কারিগরি সমস্যা হয়েছিল। চলচ্চিত্রে তিনটি গান ব্যবহার করা হয়েছে। নির্মাণযজ্ঞ শুরুর ৯ বছর পর চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[৩][৪] মুক্তির পর এটি একজন সমালোচক হতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পায়।
গল্পসূত্র
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের সিলেটে কোন এক চা-বাগানে একটি এনফিল্ড রাইফেল আছে; যা ১৮৫৭ সালের ঐতিহাসিক সিপাহি বিদ্রোহে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রাইফেল দিয়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল হডসন বাহাদুর শাহ আর তার তিন ছেলেকে হত্যা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে সেই ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন বন্দুকটি সিলেটের চাবাগানে নিয়ে আসেন। প্রায় দেড়শত বছর পর বর্তমান সময়ে লন্ডন থেকে ক্যাপ্টেন হডসনের এক বংশধর এবার বন্দুকটি ফিরিয়ে নিতে এসেছে। বন্দুক বিক্রির জন্য লন্ডনের এক নিলাম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে আসে। বন্দুক হস্তগত করতে বাংলাদেশের সে একটি মাফিয়া দলের সঙ্গে হাত মেলায়, কিন্তু কেউ একজন চায় বন্দুকটি বাংলাদেশের জাদুঘরে জমা দিতে। ঘটনাক্রমে ঐ ব্যক্তিআ সাথে সাক্ষাত হয় চিত্রশিল্পী নয়ন ও তার ভাগ্নি ঝিনুকের সাথে। লোকটির সিলেট নিয়ে আগ্রহ আর চেলোর বাক্স দেখে সন্দেহ হয় মামা-ভাগ্নির। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হডসনের বন্দুক বাংলাদেশে রাখার জন্য অভিযান শুরু করেন শখের গোয়েন্দা নয়ন ও তার সহকারী ঝিনুক।
কুশীলব
[সম্পাদনা]শ্রেষ্ঠাংশের শিল্পীরা-
- লুৎফর রহমান জর্জ
- মৌসুমী হামিদ
- মাজিদ শিখালিভ
- এস এম মহসিন
- কাজী উজ্জ্বল
- অর্নব অন্তু
- মাহমুদুল ইসলাম মিঠু
- সৈয়দ জোবায়ের
- মিশু চৌধুরী
- মুনির হাসান
- মাসুদ পারভেজ মিঝু
- এমডি নাসির
প্রযোজনা
[সম্পাদনা]হডসনের বন্দুক ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার হতে নির্মাণের জন্য অনুদান প্রাপ্ত ৬টি চলচ্চিত্রের অন্যতম। সরকার এ ছবিতে ৩৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করে।[২] পরিচালক হিসেবে এটি প্রশান্ত অধিকারীর অভিষেক চলচ্চিত্র।[৩] অধিকারী ও আলি আশরাফ আকনজি রিয়েল যৌথভাবে সৈয়দ শামসুল হকের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে চিত্রনাট্য রচনা করেন।[৪] হুমায়ুন ফরীদিকে ভাবনায় রেখে নয়ন মামা'র চরিত্র লেখা হয়েছিল। চিত্রগ্রহণ শুরুর আগেই তার মৃত্যু হয়।[১] পরবর্তীতে নয়নের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নাসিরউদ্দীন শাহ, সব্যসাচী চক্রবর্তী, ও অঞ্জন দত্ত প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।[৩] প্রাথমিক চিত্রগ্রহণে মিশা সওদাগর অংশ নিলেও পরে তার অভিনীত অংশ বাদ দেয়া হয়।[১] ২০১৪ সালে চিত্রগ্রহণ শুরু হয়। ৩৪ কার্যদিবসে চিত্রগ্রহণের পরিকল্পনা ছিল। অর্থসংকট, ফুটেজ হারিয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতির কারণে ধাপে ধাপে চলচ্চিত্রায়ন সম্পন্ন হয়।[৩] মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ও সাহিল রনির চিত্রগ্রহণে[৫] এফডিসি, ঢাকার ধানমন্ডি, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, জাফলংসহ বিভিন্ন স্থানে দৃশ্য ধারণ করা হয়।[৩][৪] চিত্রগ্রহণে তিন বছর লাগে। চিত্রগ্রহণের পর ছবির সংশোধন ও সংস্কার করা হয়।[৬] অনুদানের পাশাপাশি অধিকারীর নিজের আঁকা চিত্রকর্মের বিক্রয়লব্ধ অর্থসহ আরো ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল।[৩][৬]
হডসনের বন্দুকে ব্যবহারের জন্য ১৩টি গান লেখা, সঙ্গীতায়োজন ও ধারণ করা হয়েছিল।[৭] টুএজি স্টুডিওতে ইফিতেখার ইফতির শব্দ ধারণ ও সম্পাদনায় গানগুলির ধারণ করা হয়েছিল।[৮] চূড়ান্ত সম্পাদনায় বাছাই করা তিনটি গান ব্যবহার হয়েছে। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর রাফকাট ফিল্মস এই ছবির 'রাতের ফেরিওয়ালা' শিরোনামের একটি গান ইউটিউবে প্রকাশ করে। ব্লুজ ধাচের গানটি প্রশান্তর রচনায় এবং প্রবর রিপনের কন্ঠে প্রকাশিত হয়েছে।[৭] এছাড়াও "আমি পাখি নই তবু আমি উড়ে যাব তোর কাছে" শিরোনামের আরেকটি গান আছে।[৯]
মুক্তি
[সম্পাদনা]হডসনের বন্দুক ২০১৩ সালে মুক্তির জন্য পরিকল্পিত ছিল। ধাপে ধাপে দীর্ঘসময় নিয়ে নির্মাণের পর ২০২১ সালের এপ্রিলে এটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড হতে প্রদর্শনের অনুমতি পায়। সংবাদ সম্মেলন, পোস্টার ও ট্রেলার এবং ছবির শিল্পীদের সামাজিক মাধ্যমে ছবির প্রচার চলে।[৩][১][১০] ২০২২ সালের নভেম্বরে মুক্তির ঘোষণা আসে।[৫] একই বছর ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[৩] ২০২৩ সালের ইদুল আযহার সময় ছবিটি টেলিভিশনের দর্শকদের জন্য প্রচার করা হয়।[১১]
মূল্যায়ন
[সম্পাদনা]বাংলা মুভি ডেটাবেজে হডসনের বন্দুক নিয়ে একটি মিশ্র সমালোচনায় রহমান মতি ছবির ধীর গতিতে গল্প বর্ণনা হলেও কুশীলবদের অভিনয় শিল্পীদের সহজাত অভিনয়, গান, আবহ সঙ্গীত ও চিত্রগ্রহণের স্থান নির্বাচনের প্রসংশা করেন। তিনি সার্বিকভাবে এই ছবিকে রেটিং দেন।[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ হাসান, মীর রাকিব (২০২২-১২-০১)। "৯ বছর পর হডসনের বন্দুক"। কালের কণ্ঠ। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ ক খ "১০ বছরে ৭৪ চলচ্চিত্রে অনুদান, ৪৯টিই মুক্তি পায়নি"। জাগো নিউজ। ২০২০-১০-২৬। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "'হডসনের বন্দুক' নিয়ে রহস্য"। প্রথম আলো। ২০২২-১২-০২। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ ক খ গ ঘ "অবশেষে রহস্যের জট খুললো 'হডসনের বন্দুক'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২২-১২-০২। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ ক খ "আসছে 'হডসনের বন্দুক'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২২-১১-০৯। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ ক খ "অনুদানের ১০ বছর পর মুক্তি, কারণ জানালেন নির্মাতা"। বাংলা ট্রিভিউন। ২০২২-১১-০৯। ২০২২-১১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৯।
- ↑ ক খ "'হডসনের বন্দুক'র জন্য বানানো হল ১৩টি গান"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২২-১১-২৬। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ "হডসনের বন্দুক | রাতের ফেরিওয়ালা"। রাফকাট ফিল্মস। ২০২২-১১-১৭। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ মতি, রহমান (২০২২-১২-০৩)। "ইতিহাস ও রহস্যে 'হডসনের বন্দুক'"। বাংলা মুভি ডেটাবেজ । ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ "অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে 'হডসনের বন্দুক'"। বণিক বার্তা। ২০২২-১১-১২। ২০২২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ "রবিবার সকালে চ্যানেল আইয়ে 'হডসনের বন্দুক'"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০২৩-০৭-০১। ২০২৩-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০৮।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- বাংলা মুভি ডেটাবেজে হডসনের বন্দুক