বিষয়বস্তুতে চলুন

সুদাতেনল্যান্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৯৩০ সালে চেক‌ রিপাবলিকের‌ সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত স্থানীয় জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চল, যা আন্তঃযুদ্ধকালীন সময় এ সুদাতেনল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল
জার্মান ভাষাভাষী ইউরোপ

সুদাতেনল্যান্ড (/ suːˈdeɪtənlænd /); জার্মান: [ zuˈdeːtn̩ˌlant ]; হল সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া-র উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম অঞ্চলের ঐতিহাসিক জার্মান নাম যেখানে মূলত সুদাতেন জার্মান-রা বসবাস করত। এই জার্মান ভাষাভাষী-রা অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য এর সময় থেকেই বোহেমিয়া, মোরাভিয়া এবং চেক সাইলেসিয়া সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছিলেন।

"সুদাতেনল্যান্ড" শব্দটি বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত অস্তিত্ব পায়নি এবং শতাব্দীর প্রায় দুই দশক ধরে জনপ্রিয়তা পায়নি যতদিন না পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর পরে জার্মান অধ্যুষিত অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল এবং সুদাতেন জার্মানরা নিজেদের নতুন দেশ চেকোস্লোভাকিয়া তে বসবাস করতে আবিষ্কার করেছিল। ১৯৩৮ সালের সুদাতেন সংকট নাৎসি জার্মানি-র প্যান-জার্মানবাদী দাবী দ্বারা উস্কে দেওয়া হয়েছিল যে সুদাতেনল্যান্ডকে জার্মানির সাথে যুক্ত করা উচিত, যা পরবর্তীকালে মিউনিখ চুক্তি-র পরে ঘটেছিল। সীমান্তের কিছু অংশ পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিল এবং এর অধীনে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পরে যখন চেকোস্লোভাকিয়া পুনর্গঠন করা হয়েছিল, তখন সুদাতেন জার্মানদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল এবং আজ অঞ্চলটিতে চেক ভাষাভাষীরা প্রায় একচেটিয়াভাবে বসবাস করে।

সুদাতেনল্যান্ড শব্দটি ল্যান্ডের সাথে একটি জার্মান শব্দের মিশ্রণ, যেখানে ল্যান্ড অর্থ "দেশ", এবং সুদাতেন শব্দটি সুদাতেন পর্বতমালা-র নাম হতে উদ্ভূত, যা উত্তরের চেক সীমান্ত এবং নিম্ন সাইলেসিয়া (বর্তমানে পোল্যান্ড-এ) বরাবর অবস্থিত। তবে সুদাতেনল্যান্ড এই পর্বতমালাগুলোর বাইরেও বেশ কয়েকটি অঞ্চল ঘিরে রেখেছে।

কার্লোভী ভেরি, লিবেরেক, ওলোমুক, মোরাভিয়া-সাইলেসিয়া এবং উস্তি নাদ লেবেম নামক এখনকার চেক অঞ্চলের অংশগুলো বর্তমানে সুদাতেনল্যান্ড অঞ্চলে রয়েছে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

পরবর্তীকালে সুদাতেনল্যান্ড হিসাবে পরিচিত অঞ্চলগুলো কখনও একটি একক ঐতিহাসিক অঞ্চল গঠন করে নি, যা উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদ এর আবির্ভাব হওয়ার আগ পর্যন্ত বোহেমিয়া থেকে সুদাতেনল্যান্ডের ইতিহাসকে আলাদা করা কঠিন করে তোলে।

প্রারম্ভিক উৎপত্তি

[সম্পাদনা]

সেল্টিক এবং বোয়াই উপজাতিগুলো এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং এই অঞ্চলটি দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমাইওস এর মানচিত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল। মার্কোমান্নি নামক জার্মান উপজাতি পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে এই অঞ্চলের সম্পূর্ণ ভূখণ্ডে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। এই উপজাতিগুলো ইতোমধ্যে ব্রনো-র মতো শহর তৈরি করেছিল, তবে অভিপ্রয়াণ কাল চলাকালে এরা পশ্চিমের দিকে চলে যায়। খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে স্লাভিক লোকেরা সামো রাজ্যের অধীনে এখানে এসেছিল এবং একত্রিত হয়েছিল। পরে উচ্চ মধ্যযুগ-এ জার্মানরা এই কম জনবহুল সীমান্ত অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।

৭০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির পূর্বাঞ্চলের বসতি

মধ্যযুগডুচি এবং চেক রাজ্যের বোহেমিয়া অঞ্চলের পার্বত্য সীমান্তে অবস্থিত অঞ্চলগুলোতে অভিপ্রয়াণ কাল থেকে মূলত পশ্চিম স্লাভিক চেক-রা বসতি স্থাপন করেছিল। পশ্চিমে বোহেমিয়ান অরণ্য এর পাশাপাশি, চেক ভূখণ্ড জার্মান স্লাভিক উপজাতির বাভারিয়া এবং ফ্রাঙ্কোনিয়া-র স্টেম ডুচির সাথে সীমান্তবর্তী ছিল; মধ্যযুগীয় জার্মান রাজ্য বোহেমিয়ান-মোরাভিয়ান পার্বত্য অঞ্চল এর দক্ষিণে এবং ওরে পর্বতমালা পেরিয়ে উত্তর মেইসেন অঞ্চলে সংলগ্ন অস্ট্রিয়ান ভূখণ্ডে-ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওসটেডলং (পূর্বাঞ্চলের বন্দোবস্ত) চলাকালীন ১৩ তম শতাব্দীর পর থেকে জার্মান উপনিবেশ সুদাতেস পর্বতমালার উত্তরের উচ্চ লুসিয়াটিয়া অঞ্চলে এবং সাইলিসিয়ার ডুচি তে অগ্রসর হতে থাকে।

ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম থেকে এই বোহেমিয়ার সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে আদি জার্মান রা বসতি স্থাপন করেছিল, যাদের প্রেমিস্লিড বোহেমিয়ান রাজা নিমন্ত্রণ করেছিলেন - বিশেষত দ্বিতীয় অটোকার দ্বিতীয় (১২৫৩–১২৭৮) এবং ওয়েনসেশ্লাউস দ্বিতীয় (১২৭৮-১৩০৫)। ১৩০৬ সালে প্রেমিস্লিড রাজবংশের বিলুপ্তির পরে, বোহেমিয়ান অভিজাতবর্গ জন অফ লুক্সেমবার্গ কে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডিউক হেনরি অফ করিন্থিয়া-র বিরুদ্ধে রাজা হিসাবে সমর্থন করেছিল। ১৩২২ সালে বোহেমিয়ার রাজা জন পশ্চিমের সাবেক সার্বভৌম ইগারল্যান্ড অঞ্চলটি (তৃতীয়বারের মতো) অধিগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৩৫ সালের ট্রেন্টশিন চুক্তি অনুসারে পোল্যান্ডের রাজা তৃতীয় ক্যাসিমির এর দ্বারা স্বীকৃত বেশিরভাগ পাইয়াস্ট সাইলেসিয়ান ডুচিদের স্থানান্তর করতে সক্ষম হন। তার পুত্র বোহেমিয়ান রাজা চতুর্থ চার্লস, ১৩৪৬ সালে রোমানদের রাজা নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৩৫৫ সালে রোমান সাম্রাজ্য এর মুকুট অর্জন করেছিলেন। তিনি লুসাশিয়াস-কে বোহেমিয়ান ভূখণ্ড-এ যুক্ত করেছিলেন, যা তৎকালে উল্লেখযোগ্য জার্মান জনসংখ্যার সাথে বিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল।

পার্বত্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জার্মান বসতি স্থাপনকারীরা ফরেস্ট গ্লাস(মধ্যযুগীয় জার্মান কাঁচ) এর বড় উৎপাদনশিল্প গড়ে তুলেছিলেন। জার্মান জনসংখ্যার পরিস্থিতি হুসাইট যুদ্ধ(১৪১৯–১৪৩৪) দ্বারা আরও খারাপ হয়েছিল, যদিও হুসাইট বিদ্রোহীদের মধ্যে কিছু জার্মান ছিল।

ততক্ষণে জার্মানরা পার্বত্য বোহেমিয়ার সীমান্ত অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি নিম্নভূমির শহরগুলোতে বসতি স্থাপন করেছিল; মূলত দক্ষিণ বোহেমিয়ান এবং দক্ষিণ মোরাভিয়ান অঞ্চল, ব্রনো, জিহলাভা, সেস্কি বুদেজোভিস এবং পশ্চিম বোহেমিয়ান প্লাজেন অঞ্চল এ বাভারিয়ান বংশোদ্ভূত মানুষ; জাটেক ফ্র্যাঙ্কোনিয়ান গোষ্ঠী; পার্শ্ববর্তী উত্তর বোহেমিয়া সংলগ্ন উচ্চ স্যাক্সনস, যেখানে স্যাকসন ইলেক্টোরেট এর সাথে সীমানা ১৪৫৯ সালের পিস অফ ইগার দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল; ক্লাডসকো বিভাগ, সুইটভি এবং ওলোমুক এর মোরাভিয়ান – সাইলেসিয়ান অঞ্চল সংলগ্ন সুদাতেস অঞ্চলে জার্মান সাইলেসিয়ান-রা। প্রাগ শহরে ১৭ শতকের শেষ তৃতীয়াংশ থেকে ১৮৬০ সাল অবধি জার্মান-ভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, তবে ১৯১০ এর পরে জার্মান ভাষীদের অনুপাত জনসংখ্যার ৬.৭ শতাংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

লুক্সেমবার্গীয়‌দের থেকে বোহেমিয়ার শাসন ব্যবস্থা পডিব্র্যাডের জর্জ হয়ে জাগিলন রাজবংশ এবং শেষ অবধি ১৫২৬ সালে হাবসবার্গের হাউস এ চলে গিয়েছিল। ত্রিশ বছরের যুদ্ধ- এ চেক এবং জার্মান বোহেমিয়ান উভয়ই চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল। বোহেমিয়া এর জনসংখ্যার ৭০% হারিয়েছিল। ১৬২০ সালে হোয়াইট মাউন্টেনের যুদ্ধ এ ভেঙে যাওয়া বোহেমিয়ান বিদ্রোহের পরাজয়ের সুবিধা নিয়ে হাবসবার্গীয়রা ধীরে ধীরে বোহেমিয়া রাজ্যকে তাদের রাজতন্ত্র এ একীভূত করে‌ ফেলেছিল। পরবর্তী পাল্টা সংস্কার এর সময়, অস্ট্রিয়ার ভূখণ্ড থেকে কম জনবহুল অঞ্চলগুলো ক্যাথলিক জার্মান দের দ্বারা পুনর্গঠিত হয়েছিল। ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে হাবসবার্গীয়রা তথাকথিত ভার্নিউয়ের্তে ল্যান্ডেসর্ডনং(পুনর্নবীভূত ভূমির সংবিধান) প্রয়োগ করেছিলেন এবং এর একটি পরিণতি হল মাতৃভাষা অনুযায়ী জার্মান আস্তে আস্তে প্রাথমিক এবং সরকারি ভাষাতে পরিণত হয় যেখানে চেকরা সাম্রাজ্যের একটি গৌণ ভূমিকা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। এছাড়াও ১৭৪৯ সালে অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য আবারও জার্মানকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করেছিল। ১৭৮০ সালে সম্রাট দ্বিতীয় জোসেফ বোহেমিয়ার রাজা হিসাবে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছিলেন এবং সমস্ত হাবসবার্গে(হাঙ্গেরি সহ) একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে জার্মানকে বাতিল করে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। তবুও, আলোকিতকরণের যুগ এবং ওয়েমার ক্লাসিকিজম]] এর সময়ে জার্মান সাংস্কৃতিক প্রভাব আরও জোরদার হয়েছিল।

অন্যদিকে, রোমান্টিকতাবাদ আন্দোলনের সময় জাতীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, উভয়ই ফ্রান্টিসেক পালেকি দের মত চেক রাজনীতিবিদদের এবং প্যান-জার্মানবাদী কর্মীদের দ্বারা উত্থাপিত জার্মান প্রশ্ন-এ বিকশিত অস্ট্রোস্লাভিজম আদর্শ এর আকারে। চেক ও জার্মান জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্বগুলো ১৯ শতকে উত্থিত হয়েছিল, উদাহরণস্বরূপ ১৮৪৮ সালের বিপ্লবসমূহ: যখন বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার জার্মান-ভাষী জনসংখ্যা একটি জার্মান রাষ্ট্র গঠনে অংশ নিতে চেয়েছিল, তখন চেক-ভাষী জনগণ জোর করেছিল বোহেমিয়াকে এমন পরিকল্পনার বাইরে রাখতে। বোহেমিয়ান রাজ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর পরে ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি-র একটি অঙ্গ ছিল।

নামের উৎপত্তি

[সম্পাদনা]
১৯১১ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি তে জাতিগত বিন্যাস:জার্মান সংখ্যাগুরু অঞ্চল=গোলাপী,চেক সংখ্যাগুরু অঞ্চল=নীল

ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষিতে, বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে "সুদাতেনডু্চ"(সুদাতেন জার্মান) নামটি আত্মপ্রকাশ করেছিল। এটি মূলত অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যে জার্মানদের তিনটি গ্রুপিংয়ের বৃহত্তর শ্রেণিবিন্যাসের একটি অংশ হিসাবে গঠিত হয়েছিল, যার মধ্যে "আলপাইন ডুচেন"(আলপাইন জার্মান)ও অন্তর্ভুক্ত ছিল যা পরবর্তীকালে অস্ট্রিয়া প্রজাতন্ত্র হয়েছিল, এছাড়াও হাঙ্গেরির "বালকানডুচ"(বালকান জার্মানস) এবং এর পূর্বের অঞ্চলগুলো ছিল। এই তিনটি শব্দের মধ্যে কেবল বোহেমিয়ার সাথে নৃতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের কারণেই "সুদাতেনডু্চ" শব্দটি বহাল ছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং এর ফলাফল

[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর সময়, পরবর্তীকালে সুদাতেনল্যান্ড হিসাবে পরিচিতি পাওয়া অংশে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি-র অন্যান্য জার্মান-ভাষী অঞ্চলের তুলনায় যুদ্ধের মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল এবং কেবল জার্মান দক্ষিণ মোরাভিয়া এবং কারিনথিয়া এর চেয়ে কম ছিল। এ অঞ্চলের প্রতি এক হাজার জনের চৌত্রিশজনকে হত্যা করা হয়েছিল।[]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ভেঙে যায়। ১৯১৮ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে বোহেমিয়ান রাজ্যের ভূমি এবং হাঙ্গেরির রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে একটি স্বাধীন চেকোস্লোভাক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়েছিল। ইম্পেরিয়াল কাউন্সিল(রেখস্রাট) এর‌ বোহেমিয়া, মোরাভিয়া এবং সাইলেসিয়ার জার্মান প্রতিনিধিরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এর চৌদ্দ দফা এর কথা উল্লেখপূর্বক নিজেদের আত্মনিয়োগ এর দাবী জানান এবং জার্মান-ভাষী অঞ্চলগুলোকে নতুন জার্মান অস্ট্রিয়া প্রজাতন্ত্রের ‌সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, যা নিজেই ওয়েমার জার্মানিতে যোগদানের লক্ষ্য নিয়েছিল।

বোহেমিয়ান রাজ্য-এর পূর্বের ভূমিগুলো-র জার্মান-ভাষী অংশগুলো একটি নব নির্মিত চেকোস্লোভাকিয়া তে রয়ে গিয়েছিল, যা ছিল বহু দেশের বহু-জাতিগত রাষ্ট্র: চেক, জার্মান, স্লোভাক, হাঙ্গেরীয়, পোলিশ এবং রুথেনীয়। ১৯১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রাগ সরকার সুদাতেনল্যান্ডের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এর মতামত জিজ্ঞাসা করে। রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন রাষ্ট্রদূত আর্কিবাল্ড কুলিজকে চেকোস্লোভাকিয়া তে প্রেরণ করেছিলেন। কুলিজ জার্মান বোহেমিয়ান বিক্ষোভের সাক্ষী হওয়ার পরে,[] কুলিজ বোহেমিয়ার কিছু জার্মান-ভাষী অংশ জার্মানি(চেব) এবং অস্ট্রিয়া(দক্ষিণ মোরাভিয়া এবং দক্ষিণ বোহেমিয়া)-কে দেয়ার সম্ভাবনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন যাতে পশ্চিম ও উত্তর বোহেমিয়ার জার্মান জনবহুল অঞ্চলগুলো চেকোস্লোভাকিয়ার মধ্যেই থাকে। প্যারিসে আমেরিকান প্রতিনিধি দলের প্রধান কূটনীতিক হিসাবে অ্যালেন ডুলস চেকোস্লোভাক কমিশনে চেক ভূমির ঐক্য রক্ষায় জোর দিয়েছিলেন এবং কুলিজের প্রস্তাব অনুসরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[]

চারটি আঞ্চলিক সরকারি প্রদেশ গঠন করা হয়েছিল:

  • জার্মান বোহেমিয়া প্রদেশ(প্রভিনস ডয়চেবহমেন), উত্তর ও পশ্চিম বোহেমিয়ার অঞ্চল; জার্মান-অস্ট্রিয়ান প্রজাতন্ত্রের একটি গঠনমূলক রাষ্ট্র(ভূমি) ঘোষণা করে রাইখেনবার্গ(স্বার্বভৌম) কে রাজধানী করে, যা ল্যান্ডশেপটম্যান (রাজ্য অধিনায়ক) দ্বারা পরিচালিত হত: রাফায়েল প্যাচার (১৮৫৭–১৯৩৬), ২৯ অক্টোবর - ৬ নভেম্বর ১৯১৮, এবং রুডলফ রিটার ভন লডজম্যান ভন অউইন (১৮৭৭–১৯৬২), ৬ নভেম্বর - ১৬ ডিসেম্বর ১৯১৮ (চেক সেনাবাহিনী দ্বারা শেষ প্রধান শহরটি জয় করা হয়েছিল তবে তিনি নির্বাসনে অব্যাহত ছিলেন, প্রথমে স্যাক্সোনির জিত্তাউ এবং তারপরে ভিয়েনায়, ২৪ ই সেপ্টেম্বর ১৯১৯ অবধি)।
  • সুদাতেনল্যান্ড প্রদেশ(প্রভিনস সুদাতেনল্যান্ড), উত্তর মোরাভিয়া এবং অস্ট্রিয়ান সাইলেসিয়া অঞ্চলসমূহ; জার্মান-অস্ট্রিয়ান প্রজাতন্ত্রের একটি গঠনমূলক রাষ্ট্র ঘোষণা করে ট্রপপাউ(ওপাভা) কে রাজধানী হিসাবে করে, ল্যান্ডশেপটম্যান দ্বারা পরিচালিত: রবার্ট ফ্রেইসলার (১৮৭৭-১৯৫০), ৩০ অক্টোবর - ১৮ ডিসেম্বর ১৯১৮. এই প্রদেশের সীমানা পরবর্তীকালে যাকে সুদাতেনল্যান্ড বলা হবে তার অনুরূপ না, যা চেক ভূমির সমস্ত জার্মান-ভাষী অংশ ধারণ করতো।
  • বোহেমিয়ান বনাঞ্চল(বোহেমারওয়াল্ডগৌ), বোহেমিয়ান বন/দক্ষিণ বোহেমিয়া অঞ্চল; উচ্চ অস্ট্রিয়া তে বিদ্যমান অস্ট্রিয়ান ভূমি নিয়ে একটি জেলা(ক্রেইস) ঘোষণা করেছিলেন; ক্রেইশাপটম্যান (জেলা অধিনায়ক) দ্বারা পরিচালিত: ফ্রিডরিচ উইচটল(১৮৭২–১৯২২) ৩০ অক্টোবর ১৯১৮ সাল থেকে।
  • জার্মান দক্ষিণ মোরাভিয়া(ডয়চেস‌উডমাহরেন), বিদ্যমান নিম্ন অস্ট্রিয়ান ভূমি নিয়ে একটি জেলা (ক্রেইস) ঘোষণা করেছিলেন, একটি ক্রেইশাপটম্যান দ্বারা পরিচালিত: ওসকার টেউফেল (১৮৮০-১৯৪৬) ৩০ অক্টোবর ১৯১৮ সাল থেকে।

প্যারিস পিস কনফারেন্স এ মার্কিন কমিশন একটি ঘোষণা জারি করেছিল যা "চেক দেশগুলোর ঐক্য"‌‌‌‌[] এর জন্য সর্বসম্মত সমর্থন দেয়। বিশেষত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:

কমিশন ... এর সুপারিশে সর্বসম্মত ছিল যে জার্মান-বোহেমিয়ানদের দ্বারা বাসিত সমস্ত অঞ্চলকে পৃথক করা চেকোস্লোভাকিয়াকে কেবল বড় বিপদগুলির মুখেই উন্মোচিত করবে না, একইসাথে জার্মানরা তাদের জন্য সমানভাবে বিরাট সমস্যা তৈরি করবে। একমাত্র কার্যকর সমাধান ছিল এই জার্মানদের চেকোস্লোভাকিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা।

মোরাভিয়াসহ ব্রোনো, জিহলাভা এবং ওলোমুক-এ জার্মানভাষী সংখ্যালঘুরা তাদের মাতৃভাষা অনুসারে জার্মান অস্ট্রিয়ার সাথে তাদের সংযুক্তির চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। তারপরও চেকরা জার্মান বোহেমিয়ানদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং ৯০% (১৯২১ সালের হিসাবে) জাতিগত জার্মানদের উপস্থিতি সত্ত্বেও তাদের রাজ্যে জাতিগত জার্মানদের দ্বারা বসবাসকারী ভূমিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছিল (যার ফলে সমস্ত চেকোস্লোভাকিয়ায় ২৩.৪% জার্মান উপস্থিত থাকলো), যা সবসময় বোহেমিয়ান রাজ্যের অংশ ছিল। ১৯১৯ সালে সেন্ট জার্মেইন এর চুক্তি চেকোস্লোভাকিয়ায় জার্মান-ভাষী অঞ্চলগুলোর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরবর্তী দুই দশক ধরে, সুদাতেনল্যান্ডের কিছু জার্মান চেকোস্লোভাকিয়া থেকে জার্মান-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে পৃথক করার পক্ষে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।

চেকোস্লোভাক প্রজাতন্ত্রের অভ্যন্তরে (১৯১৮-১৯৩৮)

[সম্পাদনা]
সুদাতেন জার্মানদের নিজস্ব পতাকা[]

১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারির আদমশুমারি অনুসারে, চেকোস্লোভাকিয়ায় ৩,১২৩,০০০ জার্মানভাষী বাস করত যা মোট জনসংখ্যার ২৩.৪%। চেক এবং জার্মান ভাষী সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিতর্কগুলো ১৯২০ এর পুরো দশকজুড়ে স্থায়ী ছিল এবং ১৯৩০-এর দশকে তীব্রতর হয়েছিল।

মহামন্দার সময় জার্মান সংখ্যালঘু দ্বারা জনবহুল বেশিরভাগ পার্বত্য অঞ্চল এবং চেকোস্লোভাকিয়া-র অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো দেশের অভ্যন্তরীন ইস্যুর চেয়ে অর্থনৈতিক মন্দায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্বল্পোন্নত অঞ্চলের (রুথেনিয়া, মোরাভিয়ান ওয়ালাচিয়া) বিপরীতে, সুদাতেনল্যান্ডে অতিরিক্ত রফতানি-নির্ভর শিল্পের ব্যাপক বাজার ছিল (যেমন কাচের কাজ, টেক্সটাইল শিল্প, কাগজ তৈরি এবং খেলনা তৈরির শিল্প)। অলংকার এবং গ্লাস তৈরি শিল্পের ষাট শতাংশ সুদাতেনল্যান্ডে অবস্থিত, এই সেক্টরের ৬৯% কর্মচারী ছিলেন জার্মানভাষী ছিলেন এবং অলংকার শিল্পের ৯৫% এবং অন্যান্য কাচ সরঞ্জামের ৭৮% রফতানির জন্য উৎপাদিত হতো। কাচ শিল্প ব্যয় ক্ষমতা হ্রাস এবং অন্যান্য দেশের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল এবং অনেক জার্মান শ্রমিক তাদের কাজ হারিয়েছিল।[]

উচ্চ বেকারত্ব, সেইসাথে বিদ্যাপীঠ এবং সমস্ত গনস্থনে চেকদের আধিপত্য জনগণকে ফ্যাসিবাদ, সাম্যবাদ এবং জার্মান তাৎপর্যবাদ এর মতো জনপন্থী ও চরমপন্থী আন্দোলনের প্রতি আরও উম্মুখী করেছিল। এই বছরগুলোতে, জার্মান জাতীয়তাবাদীদের দলগুলো এবং পরে সুদাতেন জার্মান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (এসডিপি) তাদের মৌলিক দাবি দ্বারা চেকোস্লোভাকিয়ার জার্মানদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

সুদাতেন সংকট

[সম্পাদনা]
জার্মান আন্দোলনকারীদের মুছে দেয়া চেক লিখন, মার্চ ১৯৩৮, তেপ্লিস

হিটলারের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন চেকোস্লোভাক সামরিক বাহিনীকে ১৯৩৬ সালে অস্থিরতাময় সীমান্ত অঞ্চলটি রক্ষার জন্য ব্যাপক সীমান্ত ঘাঁটি তৈরি করতে প্ররোচিত করেছিল। ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে অস্ট্রিয়া নাৎসি জার্মানির তৃতীয় রাজত্ব এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরপরই হিটলার "সুদাতেন সংকট" কে উসকে দিয়ে নিজেকে চেকোস্লোভাকিয়ায় বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জার্মানদের পরিচালক দাবি করেন। পরের মাসে, কোনরাড হেনলেইন এর নেতৃত্বে সুদাতেন নাৎসিরা স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ২৪ এপ্রিল ১৯৩৮-এ এসডিপি কার্লসবাদ প্রোগ্রাম ঘোষণা করে, যা আট দফায় সুদাতেন জার্মান এবং চেক জনগণের মধ্যে সম্পূর্ণ সমতা দাবি করেছিল। ১৯৩৮ সালের ৩০ জুন সরকার এই দাবিগুলো মেনে নিয়েছিল।[]

আগস্টে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলাইন লর্ড রুনসিমানকে চেকোস্লোভাকিয়ায় মিশন এ প্রেরণ করেছিলেন, তিনি চেকোস্লোভাক সরকার এবং সুদাতেনল্যান্ডের জার্মানদের মধ্যে কোনো সমঝোতা করতে পারেন কিনা তা দেখার জন্য। লর্ড রুনসিমান প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি বেনেস ও প্রধানমন্ত্রী মিলান হোডজাদের সাথে বৈঠকের পাশাপাশি হেনলেইনের এসডিপি থেকে সুদাতেন জার্মানদের সাথে সরাসরি বৈঠকে বসার কথা ছিল। পরের দিন তিনি ডাঃ এবং এমএম বেনেসের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন এবং পরে তার হোটেলে অ-নাৎসি জার্মানদের সাথে দেখা করেছিলেন।[]

বিভিন্ন দলের সাথে তার বৈঠকের সিদ্ধান্তের সংক্ষিপ্তসার সহ তার প্রতিবেদনের পুরো বিবরণ, তিনি ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার পরে মন্ত্রিসভায় ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীতে 'ডকুমেন্ট সিসি ৩৯ (৩৮)'[] এ পাওয়া গেছে। লর্ড রুনসিম্যান[১০] দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন দলের সাথে চুক্তি করতে পারেন নি, তবে লর্ড হ্যালিফ্যাক্স এর সাথে তিনি একমত হয়েছিলেন যে সময়টি অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি সুদাতেন জার্মানদের পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট করেছিলেন এবং সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তাবিত চারটি পরিকল্পনার বিবরণ দিয়েছিলেন।

চারটি হল: সুদাতেনল্যান্ডকে নাৎসি জার্মানের কাছে স্থানান্তর; সুদাতেনল্যান্ডকে নাৎসি জার্মানের কাছে স্থানান্তরের বিষয়ে একটি গণভোট আয়োজন, বিষয়টি নিয়ে চারটি বৃহৎ শক্তির সম্মেলনের আয়োজন, একটি ফেডারেল চেকোস্লোভাকিয়া তৈরিকরণ। সভায় তিনি বলেছিলেন যে তিনি নিজের সমাধান দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব অনিচ্ছুক; তিনি এটিকে নিজের কাজ হিসাবে দেখেন নি। এছাড়াও তিনি বলেছিলেন যে বিরোধিতার প্রধান কেন্দ্রগুলো ছিল বোহেমিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ইগার এবং আসচ-এ, যেখানে প্রায় ৮,০০,০০০ জার্মান এবং খুব কম অন্যজাতির লোক ছিল।

তিনি বলেছিলেন যে এই অঞ্চলগুলোকে জার্মানিতে স্থানান্তর করা অবশ্যই একটি ভাল জিনিস হবে; তিনি আরও যোগ করেছিলেন যে চেকোস্লোভাক সেনাবাহিনী অবশ্যই এর কঠোর বিরোধিতা করবে এবং বেনেস বলে দিয়েছিলেন যে তারা এটি গ্রহণ করার চেয়ে বরং যুদ্ধ করবে।[১১]

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলাইন ১৫ সেপ্টেম্বর বার্চতেসগাডেনআডলফ হিটলার‌ এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং সুদাতেনল্যান্ডকে স্থানান্তরের চুক্তিতে সম্মত হন; তিন দিন পরে ফরাসী প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ দালাদিয়েরও একই কাজ করেছিলেন। এই আলোচনায় কোনও চেকোস্লোভাক প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জার্মানি তখন গুলো চালানো ছাড়াই সুদাতেনল্যান্ডে পদচারণ করার সক্ষমতা অর্জন করেছিল।

চুক্তিগুলো নিশ্চিত করতে চেম্বারলাইন ২২ সেপ্টেম্বর গডেসবার্গ এ হিটলারের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। সঙ্কটকে যুদ্ধের অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে হিটলার তখন কেবলমাত্র সুদাতেনল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তি নয় তাৎক্ষণিক সামরিক দখলের দাবি জানিয়েছিলেন চেকোস্লোভাক সেনাবাহনীকে তাদের নতুন সীমান্তের সাথে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মানিয়ে নেওয়ার কোনো সময় না দিয়েই।

বার্লিনের স্পোর্টপ্যালাস্টে এক বক্তৃতায় হিটলার দাবি করেছিলেন যে সুদাতেনল্যান্ড "আমার ইউরোপের শেষ আঞ্চলিক দাবি"[১২] এবং চেকোস্লোভাকিয়াকে জার্মানিতে সুদাতেনল্যান্ডকে তুলে দেওয়ার জন্য বা যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ২৮ শে সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টা এর সময়সীমা দিয়েছিলেন।[১৩]

একটি সমাধান অর্জনের জন্য, ইতালির একনায়ক বেনিতো মুসোলিনি মিউনিখ এ প্রধান বিশ্বশক্তিগুলোর একটি সম্মেলনের পরামর্শ দিয়েছিলেন ২৯ সেপ্টেম্বরে। হিটলার, দালাদিয়ের এবং চেম্বারলাইন মুসোলিনির প্রস্তাবে (যেটি হারম্যান গরিং প্রস্তুত করেছিলেন) সম্মত হন এবং মিউনিখ চুক্তি তে স্বাক্ষর করেন, তাৎক্ষণিকভাবে জার্মানিতে সুদাতেনল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়ে। চেকোস্লোভাক সরকার আলোচনায় অংশ না নিলেও ৩০ সেপ্টেম্বর চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

১৯৩৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর এর মধ্যে সুদাতেনল্যান্ডকে জার্মানিতে অর্পণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে চেকোস্লোভাকিয়ার চেক অংশ জার্মানি আক্রমণ করে এবং এর অংশটি জার্মানির দখলে নিয়ে নেয় এবং বাকি অংশটুকু বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার অধীন এ পরিণত হয়। স্লোভাক অংশ চেকোস্লোভাকিয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্লোভাক প্রজাতন্ত্র (স্লোভাক রাষ্ট্র) হয়ে ওঠে, যা জার্মানির মিত্র ও সহযোগী রাষ্ট্র। (রুথেনিয়ান অংশ - সাবকারপাথিয়ান রুস তাদের কার্পাথো-ইউক্রেন হিসাবে ঘোষণা করে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করেছিল তবে কেবল ক্ষণিকের সাফল্যের সাথে। এই অঞ্চলটি হাঙ্গেরি দ্বারা দখল হয়ে যায়।)

সীমান্তের কিছু অংশ পোল্যান্ড দ্বারা দখল হয়ে যায়।

১৯৩৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রাক্তন চেকোস্লোভাক সুদাতেনল্যান্ডে সীমান্ত অতিক্রম করার পরে ইগার শহরের জাতিগত জার্মানরা হিটলারকে নাৎসি সালাম দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়
সুদাতেন জার্মান স্বেচ্ছাবাহিনীর সদস্যরা ইগার শহরের স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে হালকা খাবার গ্রহণ করছেন
আডলফ হিটলার ইগার শহরে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন ৩ ই অক্টোবর ১৯৩৮-এ

জার্মানির অংশ হিসেবে সুদাতেনল্যান্ড

[সম্পাদনা]

জেনারেল উইলহেম কেইটেল কে সামরিক গভর্নর বানিয়ে প্রথমদিকে সুদাতেনল্যান্ডকে সামরিক প্রশাসনের অধীনে রাখা হয়েছিল। ১৯৩৮ সালের ২১ শে অক্টোবর, দখলকৃত অঞ্চলগুলো ভাগ করে নিকটবর্তী রাইক্সগাউ নিরদের, ওবেরদনাউ, বায়েরিশ্চ অস্টমার্ক এ সংযুক্ত করা হয়েছিল।

নির্বাচনী ব্যালট পেপার,‌ রাইক্সগাউ সুদাতেনল্যান্ড, ডিসেম্বর ১৯৩৮

উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলগুলো পুনর্গঠিত হয়েছিল রাইক্সগাউ সুদাতেনল্যান্ড হিসাবে, রাইখেনবার্গ শহরটিকে (বর্তমানে লিবারেক) এর রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। কনরাড হেনলেইন (ততদিনে প্রকাশ্যে একজন এনএসডিএপি সদস্য) জেলাটিকে প্রথমে রাইকস্কোমিসার (১ মে ১৯৩৯ অবধি) এবং পরে রাইকস্ট্যাথাল্টার হিসাবে (১ মে ১৯৩৯ - ৪ মে ১৯৪৫) পরিচালনা করেছিলেন। সুদাতেনল্যান্ড তিনটি প্রশাসনিক জেলা(রেগিরুংসবিজার্ক) নিয়ে গঠিত ছিল: ইগার (কার্লসবাদ কে রাজধানী করে), অসিগ এবং ট্রপপাউ

সুদাতেনল্যান্ড যুদ্ধকালীন সময়ে কনরাড হেনলেইন দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল

দখলের অল্প সময়ের মধ্যেই সুদাতেনল্যান্ডে বসবাসরত ইহুদীদের উপর ব্যাপকভাবে নির্যাতন শুরু করা হয়েছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে ক্রিস্টালনাখ্ত হয় । জার্মানির অন্যান্য স্থানে, অনেক উপাসনালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল এবং অসংখ্য নেতৃস্থানীয় ইহুদিদের নির্যাতন শিবির এ প্রেরণ করা হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে, নাৎসিরা ৩,০০,০০০ চেক এবং স্লোভাক ইহুদিদের নির্যাতন শিবির এ প্রেরণ করেছিল,[১৪] যেখানে তাদের বেশিরভাগই মারা গিয়েছিলেন বা তাদের হত্যা করা হয়েছিল। ইহুদি এবং চেকরাই শুধুমাত্র দুর্গতদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না; জার্মান সমাজতন্ত্রবাদী, কমিউনিস্ট এবং শান্তিবাদীরাও ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়েছিল। কিছু জার্মান সমাজতন্ত্রবাদী সুদাতেনল্যান্ড ছেড়ে প্রাগ এবং লন্ডন হয়ে অন্য দেশে পালিয়েছিলেন।নাৎসিকরণ এর পর সুদাতেনল্যান্ড এর সম্পূর্ণ সম্রপদায় স্থায়ীভাবে বদলে গিয়েছিল।

তা সত্ত্বেও, ১৯৩৮ সালের ৪ ডিসেম্বর রাইক্সগাউ সুদাতেনল্যান্ডে নির্বাচন হয়েছিল, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯৭.৩২% এনএসডিএপি কে ভোট দিয়েছিল। প্রায় ৫ লাখ সুদাতেন জার্মান নাৎসি পার্টি তে যোগ দিয়েছিল যা সুদাতেনল্যান্ডের মোট জার্মান জনসংখ্যার ১৭.৩৪% ছিল (১৯৪৪ সালে জার্মানি তে এনএসডিএপি-র গড় সদস্য অন্তর্ভুক্তি ছিল মাত্র ৭.৮৫%)। এর অর্থ সুদাতেনল্যান্ড তৃতীয় রাজত্যের অন্যতম নাৎসিপন্থী অঞ্চল ছিল।[১৫] চেক ভাষা সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের কারণে, অনেক সুদাতেন জার্মান আদি চেক দের বোহেমিয়া ও মোরাভিয়া সরকারি প্রশাসন এর পাশাপাশি নাৎসি সংগঠনগুলোতে (গেস্টাপো ইত্যাদি) নিযুক্ত ছিলেন। সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল কার্ল হারম্যান ফ্র্যাঙ্ক: এসএস এবং পুলিশ জেনারেল এবং রাজ্য-সচিব।

তিনটি প্রশাসনিক জেলা, রাইক্সগাউ সুদাতেনল্যান্ড

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিতাড়ণ ও পুনঃঅভিবাসন

[সম্পাদনা]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ফলশ্রুতিতে জার্মানদের চেকোস্লোভকিয়া হতে বিতাড়ণ
নাৎসি বাহিনীর দখলদারিত্বের কারণে ১,৬০,০০০ হতে ১,৭০,০০০ চেক জনগণকে ঘরছাড়া হতে হয়েছিল

১৯৪৫ সালের মে মাসে চেকোস্লোভাকিয়া স্বাধীন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই, সরকারীভাবে সুদাতি (সুদাতেনল্যান্ড) শব্দটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং একে 'সীমান্ত অঞ্চল' শব্দটি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।[১৬]

১৯৪৫ এর গ্রীষ্মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পটসডাম সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে সুদাতেন জার্মানদের চেকোস্লোভাকিয়া ছেড়ে যেতে হবে (দেখুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মান বিতারণ)। নাৎসি বর্বরতার ফলে চেকোস্লোভাকিয়ায় বেড়ে ওঠা সমস্ত জার্মানের বিরুদ্ধে প্রচুর বিদ্বেষাত্বক আচরণের ফলস্বরূপ, সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মানকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল ( চেকোস্লোভাক সরকার যেসকল জার্মান তাদের নাৎসি বিরোধী সম্পর্ক প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেনি)।

প্রাথমিক পর্যায়ে (১৯৪৫ সালের বসন্ত-গ্রীষ্মে) বহিষ্কৃত জার্মানদের সংখ্যা প্রায় ৫,০০,০০০ অনুমান করা হয়। বেনেস ডিক্রি অনুসারে এবং ১৯৪৬ সাল শুরু হওয়ার পরে বেশিরভাগ জার্মানকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং ১৯৫০ সালে কেবল ১,৫৯,৯৩৮ জার্মান চেক প্রজাতন্ত্রে বাস করত (যেখানে ১৯৩০ সালে সংখ্যাটি ৩১,৪৯,৮২০ ছিল)। বাকী জার্মানদের মধ্যে যারা প্রমাণিত ফ্যাসিবাদী এবং দক্ষ শ্রমিক ছিল তাদের চেকোস্লোভাকিয়ায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে তাদের জোর করে দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।[১৭] চেকোস্লোভাকিয়ার কিছু জার্মান শরণার্থী সুদাতেনডুচ ল্যান্ডমানশ্কাফ্ট এর মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছিলেন।

চেকোস্লোভাকিয়ায় অবস্থানকারী বেশিরভাগ জার্মান (এক লক্ষেরও বেশি) পরবর্তীতে পশ্চিম জার্মানি তে পাড়ি জমান। জার্মান জনসংখ্যা দেশের বাইরে স্থানান্তরিত হওয়ায়, পূর্বের সুদাতেনল্যান্ডকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল, বেশিরভাগ চেক দ্বারা এবং চেকোস্লোভাকিয়ায় অন্যান্য জাতীয়তা দ্বারাও: স্লোভাক, গ্রিক (গ্রীক গৃহযুদ্ধ ১৯৪৪-৪৯ এর পরে আগত), কার্পাথিয়ান রুথেনিয়ানস, রোমানি এবং যে সকল ইহুদী গণহত্যা হতে বেঁচে গিয়েছিল, এবং হাঙ্গেরীয় (যদিও হাঙ্গেরীয়রা বাধ্য হয়ে এই দেশে ফিরে এসেছিল-দেখুন স্লোভাকিয়ায় হাঙ্গেরীয় জনগোষ্ঠী: জনসংখ্যার রদবদল)।

কিছু অঞ্চল যেমন- চেক সাইলেসিয়ান-মোরাভিয়ান সীমান্তভূমি, দক্ষিণ-পশ্চিম বোহেমিয়া (সুমাভা জাতীয় উদ্যান), বোহেমিয়ার পশ্চিম ও উত্তর অংশ বেশ কয়েকটি কৌশলগত কারণে (খননকাজ এবং সামরিক স্বার্থ) অবরুদ্ধ ছিল বা এখন জাতীয় উদ্যান এবং প্রাকৃতিক অঞ্চলরুপে সুরক্ষিত রয়েছে। তদুপরি, ১৯৫২-৫৫ সালে আয়রন কার্টেন প্রতিষ্ঠার আগে, তথাকথিত "নিষিদ্ধ অঞ্চল" স্থাপন করা হয়েছিল সীমান্ত থেকে ২ কিলোমিটার (১.২ মাইল) পর্যন্ত, যেখানে কোনো বেসামরিক লোক থাকতে পারেনি। সীমানা থেকে 12 কিলোমিটার অবধি একটি বিস্তৃত অঞ্চল বা "সীমান্ত অঞ্চল" বিদ্যমান ছিল, যেখানে কোনও "অসাধু" বা "সন্দেহভাজন" নাগরিক বাস করতে বা কাজ করতে পারেনি। তাই সম্পূর্ণ আস শহরটি সীমান্ত অঞ্চলে পরে যায়। ১৯৮৯ সালে ভেলভেট বিপ্লব পর্যন্ত এই অবস্থা বিদ্যমান থেকে যায়।

চেব এর আশেপাশের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তভূমিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জার্মান সংখ্যালঘুরা রয়ে যায়, যেখানে ইয়ালতা সম্মেলন আইনের আওতায় অনুমোদিত হয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত দক্ষ জাতিগত জার্মান খনিজ শ্রমিকরা খনন ও শিল্পে কাজ অব্যাহত রেখেছে; ইগারল্যান্ড এ সংখ্যালঘু জার্মান প্রতিষ্ঠানসমূহের অস্তিত্ব রয়ে যায়। এছাড়াও, চেক সাইলেসিয়া-র বহুজাতিক হ্লুসিন অঞ্চল এর ক্র্যাভারে নামক ছোট শহরে একটি নৃতাত্ত্বিক জার্মান মেয়র সহ জাতিগত জার্মান সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে(২০০৬ সাল)।

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চেক প্রজাতন্ত্রের প্রায় ৪০,০০০ মানুষ জার্মান জাতিসত্তার দাবি করেছিল।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
নোট
  1. Rothenburg, G. The Army of Francis Joseph. West Lafayette: Purdue University Press, 1976. p 218.
  2. "em. o. Prof. Dr. Gerard Radnitzky, Emeritus Professor of Philosophy of Science at the University of Trier, Germany, Vertreibung vor dem Krieg geplant — Ethnic cleansing was planned before the war, 3. May 2002" (পিডিএফ)। ২০১২-০৭-১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০১ 
  3. Bruegel, Johann Wolfgang (১৯৭৩)। Czechoslovakia Before MunichCambridge University Press। পৃষ্ঠা 44। 
  4. Bruegel, Johann Wolfgang (১৯৭৩)। Czechoslovakia Before MunichCambridge University Press। পৃষ্ঠা 45। 
  5. "Sudetenland (flag)"। Flaggenlexikon.de। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০১ 
  6. Kárník, Zdeněk. České země v éře první republiky (1918–1938). Díl 2. Praha 2002.
  7. Zayas, Alfred Maurice de: Die Nemesis von Potsdam. Die Anglo-Amerikaner und die Vertreibung der Deutschen, überarb. u. erweit. Neuauflage, Herbig-Verlag, München, 2005.
  8. iPad iPhone Android TIME TV Populist The Page (১৯৩৮-০৮-১৫)। "CZECHOSLOVAKIA: Pax Runciman"TIME। ২০১৩-০৫-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০১ 
  9. "The Cabinet Papers | CAB 23 interwar conclusions"। Nationalarchives.gov.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০১ 
  10. Note, what he reports is an expression of his opinion on the situation. He may have been entirely mistaken on this, but it helps us to understand how he saw the situation. For example, that he felt that the Czechoslovakian government being blind to the situation, does not make it true.
  11. cab-23-95.pdf p71; CC 39(38) p 4.
  12. Max Domarus; Adolf Hitler (১৯৯০)। Hitler: speeches and proclamations, 1932-1945 : the chronicle of a dictatorship। পৃষ্ঠা 1393। 
  13. Santi Corvaja, Robert L. Miller. Hitler & Mussolini: The Secret Meetings. New York, New York, USA: Enigma Books, 2008. আইএসবিএন ৯৭৮১৯২৯৬৩১৪২১. Pp. 73.
  14. Wheeler, Charles (২০০২-১২-০৩)। "Czechs' hidden revenge against Germans"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-২৬ 
  15. Zimmermann, Volker: Die Sudetendeutschen im NS-Staat. Politik und Stimmung der Bevölkerung im Reichsgau Sudetenland (1938–1945). Essen 1999. (আইএসবিএন ৩-৮৮৪৭৪-৭৭০-৩)
  16. Zdeněk Beneš. Facing history: the evolution of Czech-German relations in the Czech provinces, 1848–1948. Gallery, 2002. p. 218.
  17. "Přesun v rámci rozptylu občanů německé národnosti."