সিরক্কো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সিরক্কো (ইংরেজি: Sirocco, উচ্চারণ: /sɪˈrɒk/; শিরক্কো (scirocco), ইউগো (jugo), অথবা কদাচিৎ সিরক (siroc) (অন্যান্য নাম নিচে দেখুন)) হচ্ছে সাহারা হতে আগত ভূমধ্যসাগরীয় বায়ু, যা উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ইউরোপে ঘূর্ণিঝড়ের বেগে রূপ নিতে পারে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে

পিওতর ফ্লাতাউ কর্তৃক চিত্রিত সিরক্কো বায়ুপ্রবাহের রেখাচিত্র

নামসমূহ[সম্পাদনা]

সিরক্কো শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ শার্‌ক্বীয়্যা (شرقية) হতে, যার অর্থ “পূবালি”। বিভিন্ন ভাষায় এই বায়ু বিভিন্ন নামে পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে:

ইতালীয়: scirocco (শিরক্কো)

সিসিলীয়: sciroccu (শিরক্কু)

স্পেনীয়: siroco (সিরোকো)

কাতালান: xaloc (শ্যালক)

মাল্টীয়: xlokk (শ্লক)

অক্সিতঁ: siròc (সিরক) অথবা eisseròc (এইসেরক)

গ্রিক: σορόκος (সরোকোস; রোমানীকৃত: sorókos) অথবা, σιρόκος (সিরোকোস; sirókos)

আলবেনীয়: shirok (শিরক)

ক্রোয়েশীয়: jugo (ইউগো)

লিগুরীয়: sciöco (শিওকো) অথবা, mainasso (মাইনাসো)

লিবীয় আরবি: قبلي, (ক্বিব্‌লি; রোমানীকৃত: ghiblī), যার অর্থ ‘ক্বিবলা’ হতে আগত

মিশরীয় আরবি: خمسين, (খামসিন; রোমানীকৃত: khamsīn); যার মানে ‘পঞ্চাশ’ (‘পঞ্চাশ দিনের বাতাস’)

তিউনিশীয় আরবি: شلوق‎, (শ্লুক; রোমানীকৃত: chlūq), সম্ভবত "شروق" (শুরুক; shurūq) থেকে এসেছে; যার অর্থ শার্‌ক্বীয়্যা (sharqiyya) অথবা "شهيلي" (শাহিলি; ch'hīlī) এর অর্থের মতই

মরক্কান আরবি: شركي‎, (শার্‌কি; রোমানীকৃত: chergui), এর মানেও হচ্ছে ‘পূবালি’।

বিকাশ লাভ[সম্পাদনা]

এই বায়ু আরব্য অথবা সাহারা মরুভূমি হতে উৎপত্তি লাভের পর, উষ্ণ, শুষ্ক, ক্রান্তীয় বায়ুভর হতে উত্থিত হয়ে, নিম্নচাপ প্রকোষ্ঠ কর্তৃক উত্তর দিকে চালিত হয়, এবং ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে পূর্ব দিকাভিমুখে প্রবাহিত হয়।[১] উষ্ণতর ও শুষ্কতর মহাদেশীয় বায়ু আর শীতলতর, আর্দ্রতর সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের বায়ু মিশ্রিত হয় এবং সৃষ্ট নিম্নচাপের বামাবর্তী (counter-clockwise) প্রবাহ এই মিশ্রিত বায়ুকে ইউরোপের পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে চালিত করে।

প্রভাব[সম্পাদনা]

সিরক্কো আফ্রিকার উত্তর উপকূলবর্তী অঞ্চলে ধূলিময় শুষ্ক অবস্থার জন্ম দেয়, ভূমধ্যসাগরে ঝড়ের উদ্রেক করে, এবং ইউরোপে শীতল, আর্দ্র আবহাওয়ার সৃষ্টি করে। সিরক্কো’র স্থায়ীত্বকাল অর্ধেক দিনও হতে পারে, আবার কয়েক দিনব্যাপী স্থায়ীও হতে পারে। ভূমধ্যসাগর অতিক্রমকালে, সিরক্কো আর্দ্রতা সংগ্রহ করে; এর ফলে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটে। বৃষ্টির পানির সাথে লোহিত ধূলিকণা মিশে থাকে বলে স্থানীয়দের কাছে এটা “রক্ত বর্ষা” (blood rain) নামে পরিচিত।

বলা হয়ে থাকে, সিরক্কো মানুষের মনে অস্থিরতা এবং খিটখিটে মেজাজের উদ্রেক করে।[২] এছাড়াও, লোকজন অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হিসেবে এই বাতাসকে দায়ী করে থাকে; হয় আফ্রিকান উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আগত উত্তপ্ত বাতাস ও ধূলার জন্য, নয়তো ইউরোপের আরও উত্তরভাগে সৃষ্ট স্যাঁতসেঁতে শীতল পরিবেশের জন্য। সিরক্কোর বাতাসে থাকা ধূলা যন্ত্রপাতিতে ঘর্ষণজনিত ক্ষয় (abrasion) সৃষ্টি করতে পারে, এবং দালানকোঠা ভেদ করতে পারে।

শরৎবসন্তে সিরক্কো বাতাসের গতিবেগ ১০০ কিমি/ঘ (৬২ মা/ঘ; ৫৪ নট) হয়ে থাকে। মার্চনভেম্বরে যখন তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে, তখন এর গতিবেগ সর্বোচ্চ হয়।

ক্রমবর্ধমান জোয়ারের সাথে মিলে সিরক্কো বায়ু ভেনেশীয় উপহ্রদে (Venetian Lagoon) জোয়ারের (acqua alta) সৃষ্টি করে।

মাছ ধরার ওপরও এই বাতাসের প্রভাব রয়েছে। যেমন- কেবলমাত্র সিরক্কো বায়ুপ্রবাহ চলাকালেই বার্কোলা’র কাছে অবস্থিত ত্রিয়েস্ত উপসাগরে (Gulf of Trieste) অ্যানচোভি মাছ ধরা যায়, সুস্বাদু খাবার হিসেবে যার অনেক চাহিদা রয়েছে। বোরা’র মতন শীতল বায়ুপ্রবাহের সময় এই সব মাছ অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের বিশালতার মাঝে অদৃশ্য হয়ে যায়।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Golden Gate Weather Services. Names of Winds. Retrieved on 2006-12-28.
  2. "Južina značenje, definicija i primjeri"Jezikoslovac (ক্রোয়েশীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২০ 
  3. Georges Desrues "Eine Lange Nacht am Meer", In: Triest - Servus Magazin (2020), p 73.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]