সাহানা দেবী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাহানা দেবী
জন্মনামঝুনু (ডাকনাম)
জন্ম(১৮৯৭-০৫-১৭)১৭ মে ১৮৯৭
ফরিদপুর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
উদ্ভবঅধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর
মৃত্যু৬ এপ্রিল ১৯৯০(1990-04-06) (বয়স ৯২)
শ্রী অরবিন্দ আশ্রম, পণ্ডিচেরি
ধরনরবীন্দ্রসঙ্গীত
পেশাকণ্ঠশিল্পী
কার্যকাল১৯০৫ –১৯৯০
পিতা-মাতাপ্যারীমোহন গুপ্ত (পিতা)
তরলা দেবী (মাতা)

সাহানা দেবী (১৭ মে ১৮৯৭ – ৬ এপ্রিল ১৯৯০) ছিলেন একাধারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্যা বিশিষ্ট গায়িকা[১] অন্যদিকে ছিলেন ঋষি অরবিন্দের প্রিয় শিষ্যা ও শ্রীমায়ের আদরিনী কন্যা। তিনি শিশুবয়স থেকেই গান গেয়ে মুগ্ধ করেছিলেন কবিকে। রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছিলেন—


কবি তাঁর রচিত গানকে সাহানার কণ্ঠ মাধুর্যে সার্থক হয়ে উঠতে দেখে তিনি লিখেছেন—

প্রথিতযশা রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী হিসাবে তিনি সেসময় নাইটিঙ্গেল অব বেঙ্গল নামেও ভূষিত হয়েছিলেন।[৩]

জন্ম ও সঙ্গীত জীবন[সম্পাদনা]

সাহানা দেবীর জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরের এক ব্রাহ্ম পরিবারের সাংগীতিক পরিমণ্ডলে। পিতা প্যারীমোহন গুপ্ত ছিলেন সিভিল সার্জন মাতা তরলা দেবী ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জ্যেষ্ঠা ভগিনী। সাহানা দেবীর ডাকনাম ছিল 'ঝুনু'। জ্যাঠামশাই কৃষ্ণগোপাল গুপ্ত ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত আইসিএস। পিতামহ কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন সমাজসেবক, ব্রাহ্মধর্মের প্রচারক ও ব্রহ্মসংগীত রচয়িতা। কবি অতুলপ্রসাদ সেন ছিলেন তার পিসতুতো দাদা। ঝুনু'র দেড় বৎসর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে তিনি মায়ের সঙ্গে চলে আসেন কলকাতার রসা রোডে মামার বাড়িতে। মামারবাড়ির শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বদেশপ্রেম ও সঙ্গীতে আলোকিত পরিবারে কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রী তার মাসিমা অমলা দাশই তার সংগীত জীবনের উৎস। ১৯০৫-০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কলকাতার ভবানীপুরে আট বৎসর বয়সে "কালমৃগয়া" নাটকে ঋষিকুমারের ভূমিকায় গান ও অভিনয় করেন ঝুনু।[২] কবিগুরুর কাছে গান শেখা ছাড়াও তিনি কবির ব্যবস্থাপনায় বিষ্ণুপুর ঘরানার পণ্ডিত সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তালিম নেন। তার কাছেই সাহানা স্বরলিপি দেখে গান করতে শেখেন। রবীন্দ্রনাথের "বসন্ত উৎসব"-এর গান তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গেয়েছেন। ' বিসর্জন' ও 'বসন্ত উৎসব'-এর আমার যাবার বেলা পিছু ডাকেযদি তারে নাই চিনি গো গান দু-খানি নিয়ে তার প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি যে কয়েকটি গান রেকর্ড করেছেন সেখানে তাকে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সাহায্য করেছেন দিলীপকুমার রায়

পরবর্তী জীবন[সম্পাদনা]

দিলীপকুমার রায়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অতুলপ্রসাদ সেনের লখনউ-এর বাড়িতে। অবশ্য তার সঙ্গের বন্ধুত্ব সাহানাকে জীবনের এক নতুন পথে পরিচালিত করে। সাহানা তার "স্মৃতির খেয়া" গ্রন্থে উল্লেখ করেন—

নানা ঘাত-প্রতিঘাতে তার জীবনের স্রোত বয়ে গেলেও তার সঙ্গীতসাধনা থেমে থাকেনি কখনো। আঠারো-ঊনিশ বৎসর বয়সে তার বিবাহ হয় কাশী তথা বারাণসীর এক চিকিৎসক বিজয়কুমার বসুর সঙ্গে। পাঁচ-ছয় বৎসর সেখানে কাটিয়ে সংসার ত্যাগ করেন।

এরপর চরম শারিরীক অসুস্থতা ও তীব্র মানসিক টানাপড়েনে যুবতী বয়সে অনাত্মীয় পরিবেশে অভিভাবকহীন অবস্থায় তিনি বাঁচার এক সংগ্রামী জীবদ্দশায় এসে পৌঁছান। কিছুদিন অতিবাহিত করেন এক ভাওয়ালি আরোগ্যনিকেতনে। তবে তিনি কবিগুরুর অকুন্ঠ স্নেহ সারাজীবন লাভ করেছেন।[১] আলিপুর বোমা মামলায় প্রমাণাভাবে ছাড়া পাওয়ার পর অরবিন্দ ঘোষকে তিনি কৈশোরে প্রথম দেখেন ও পরিচিত হন মামার বাড়িতে। সেই সূত্র ধরেই ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ নভেম্বর দিলীপকুমারের সহযোগিতায় তিনি চলে যান পণ্ডিচেরিতে শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে। ঋষি অরবিন্দ ও শ্রীমায়ের সান্নিধ্য লাভের পর সেই আশ্রম ছেড়ে তিনি আর কলকাতায় বা পূর্ব জীবনে ফিরে আসেন নি। সেখানে তিনি এমব্রয়ডারি বিভাগে কাজে লিপ্ত থাকেন।[৩] সেই সঙ্গে গান ও কবিতা রচনা ও সঙ্গীত সাধনা করতে থাকেন। ভাওয়ালি সেবাসদনে থাকার সময় তিনি বেশ কিছু কবিতা বাংলা ও ইংরেজিতে লিখেছেন। কিছু কবিতার স্বরলিপি করে পাঠিয়েছিলেন ভারতবর্ষ পত্রিকায়। এছাড়াও তিনি 'রবীন্দ্রায়ণ', 'শৃণ্বন্তু', 'বসুধারা', সংগীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা প্রভৃতি পত্রিকায় লিখতেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় তার ধারাবাহিক রচনা 'পণ্ডিচেরির পথে' প্রকাশিত হতে থাকে। তার রচিত গ্রন্থসমূহ হল—

কাব্যগ্রন্থ—
  • নীরাজনা
আত্মকথা—
  • স্মৃতির খেয়া
অনুবাদ—
  • শাশ্বত মুহূর্ত
অন্যান্য গ্রন্থ—
  • শ্রীঅরবিন্দ প্রণাম
  • শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমার চরণছায়ায়
স্বরলিপি—
  • কাকলি (অতুলপ্রসাদ সেনের গানের বই)[১]

নির্বাচিত কিছু গান[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রসঙ্গীত
  • এই তো তোমার আলোক ধেনু
  • তোমায় নতুন করে পাবো বলে
  • তোমার সোনার থালায় সাজাব
  • রূপ সাগরে ডুব দিয়েছি অরূপ রতন আশা করি
অতুলপ্রসাদী
  • কেন যে গাহিতে
  • তোর কাছে আসব মা গো
  • কোথা হে ভবের কাণ্ডারী
  • তব অন্তর এত মন্থর আগে তো তা জানি নি

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

সাহানা দেবী ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল পণ্ডিচেরির আশ্রমেই প্রয়াত হন।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪২৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "তুমি যখন গাও, মনে হয় আমার রচনা সার্থক"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৯ 
  3. "Sahana Devi - Forty Years Ago"। Sri Aurobindo Ashram Trust। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-৩০