সলিল চৌধুরী
সলিল চৌধুরী | |
---|---|
![]() সলিল চৌধুরী | |
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্ম | রাজপুর সোনারপুর, গুয়াহাটি, ভারত | ১৯ নভেম্বর ১৯২৫
মৃত্যু | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ কলকাতা, ভারত | (বয়স ৬৯)
পেশা | সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, গল্পকার |
ওয়েবসাইট | salilda |
সলিল চৌধুরী (হিন্দি: सलिल चौधरी, মালয়ালম: സലില് ചൗധരി) (নভেম্বর ১৯, ১৯২৫ – সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৯৫)[১] একজন ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার এবং গল্পকার। তিনি মূলত বাংলা, হিন্দি, এবং মালয়ালম চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। আধুনিক বাংলা গানের সুরস্রষ্টা হিসেবে এবং গণসংগীতের প্রণেতা হিসেবে তিনি একজন স্মরণীয় বাঙালি। তার গুণগ্রাহীদের কাছে তিনি সলিলদা বলেই পরিচিত।[২]
তার সঙ্গীতপ্রতিভা মূলত ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পেই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। তিনি একজন আয়োজক ছিলেন এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র যেমন বাঁশি, পিয়ানো, এসরাজ ইত্যাদি বাজাতে জানতেন। তার মৌলিক কবিতাগুলোর জন্যে তিনি ব্যাপকভাবে নন্দিত এবং প্রশংসিত।
প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]
সলিল চৌধুরী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার রাজপুর সোনারপুর অঞ্চলের গাজিপুরে এক হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরী, আসামের লতাবাড়ি চা বাগানে ডাক্তারি করতেন। বাবার কাছেই সলিল চৌধুরীর সংগীত শিক্ষার হাতেখড়ি। জ্যাঠাতো দাদা নিখিল চৌধুরীর কাছেও সংগীতের তালিম গ্রহণ করেন তিনি। মূলত নিখিল চৌধুরীর ঐক্যবাদন দল 'মিলন পরিষদ'-এর মাধ্যমেই গানের জগতে শৈশবেই সম্পৃক্তি। তার শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছে আসামের চা বাগানে। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুভাষগ্রামে, (পুরাতন নাম কোদালিয়া) মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেন। হারিনাভি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং উচ্চ মাধ্যমিক (আইএসসি) পাশ করেন। এরপর কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
প্রারম্ভিক প্রভাব[সম্পাদনা]
ছোটবেলা থেকেই তিনি তার পিতার সংগ্রহে থাকা পাশ্চাত্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতেন। তার পিতা চা বাগানের কুলি এবং স্বল্প বেতনের কর্মচারীদের সাথে মঞ্চ নাটকের জন্য সুখ্যাতি সম্পন্ন[৩] ছিলেন। তিনি কলকাতায় অবস্থিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বঙ্গবাসী কলেজ[৩] থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এ সময়েই তার সঙ্গীত জ্ঞানে পরিপক্কতা লাভের পাশাপাশি দ্রুত তার রাজনৈতিক ধারণা জন্মায়। তিনি দারুণ মেধা সম্পন্ন ছিলেন।
১৯৪৪ সালে যখন তরুণ সলিল তার স্নাতক পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসেন, তখনই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক দল ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা আইপিটিএ-এ (Indian Peoples Theater Association) যোগ দেন। এ সময় তিনি গণসঙ্গীত লিখতে এবং এর জন্য সুর করা শুরু করেন। আইপিটিএ এর সাংস্কৃতিক দলটি বিভিন্ন শহর এবং গ্রামগঞ্জে ভ্রমণ করতে থাকে, যা এই গানগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে। বিচারপতি , রানার এবং অবাক পৃথিবীর মত গানগুলো তখন সাধারণ জনতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
গাঁয়ের বধু মত গান তখন বাংলা সঙ্গীতে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছিল, যা মাত্র ২০ বছর বয়সে সুর করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে তখনকার প্রায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এসব গান গেয়েছেন। এর মধ্যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্র কর্মজীবন[সম্পাদনা]
তার প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র "পরিবর্তন" মুক্তি পায় ১৯৪৯ সালে। তার ৪১টি বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল "মহাভারতী" যা ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়।
১৯৫৩ সালে বিমল রায় পরিচালিত দো ভিঘা জামিন চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সলিল চৌধুরীর হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে অভিষেক ঘটে। সলিল চৌধুরীর ছোট গল্প "রিকসাওয়ালা" অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি তার কর্মজীবনকে নতুন মাত্রা যোগ করে যখন এটি প্রথমে ফিল্মফেয়ার সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং কান চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নেয়।
বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে ২০ বছর কাজ করার পরে সলিল ১৯৬৪ সালে চিম্মিন দিয়ে মালয়ালম চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। চলচ্চিত্র সফলতা পাক বা না পাক তার মালয়ালম গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
তিনি প্রায় ৭৫টির বেশি হিন্দি চলচ্চিত্র, ৪০টির বেশি বাংলা চলচ্চিত্র, প্রায় ২৬টি মালয়ালম চলচ্চিত্র, এবং বেশ কিছু মারাঠী, তামিল, তেলুগু, কান্নাডা, গুজরাটি, ওড়িয়া এবং অসামীয়া চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
পাশ্চাত্য প্রভাব[সম্পাদনা]
সলিল চৌধুরীর সঙ্গীতে পশ্চিমা এবং ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সমান মিশ্রণ লক্ষ করা যায়।
সলিল চৌধুরীর পাশ্চাত্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সরাসরি অভিযোজনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,
- ছায়া চলচ্চিত্রে মোৎজার্টের সিম্ফোনি নং ৪০ এর উপর ভিত্তি করে - "ইতনা না মুঝে তু পেয়ার বাড়া "
- অন্যদাতা চলচ্চিত্রে শপ্যাঁর কাজের উপর ভিত্তি করে -"রাতো কি সায়ে ঘানে "
ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]
সলিল চৌধুরী বিয়ে করেছিলেন জ্যোতি চৌধুরী এবং সবিতা চৌধুরীকে।প্রথম স্ত্রী জ্যোতি চৌধুরী।সলিল চৌধুরীর দুই কন্যা এবং এক পুত্র রয়েছে।
গ্রন্থতালিকা[সম্পাদনা]
কবিতা[সম্পাদনা]
- প্রান্তরের গান
- সলিল চৌধুরীর গান (১৯৮৩)
চলচ্চিত্র তালিকা[সম্পাদনা]
- পরিবর্তন
- দুই বিঘা জমি
- মায়া
- কাবুলিওয়ালা
- মধুমতি
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি[সম্পাদনা]
বছর | শিরোনাম | শিরোনামের লেখ |
---|---|---|
১৯৫৮ | মধুমতি | ফিল্মফেয়ার সেরা সঙ্গীত পরিচালক |
১৯৮৮ | — | সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার |
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সম্পাদনাঃ অঞ্জলি বসু, ২য় খণ্ড, চতুর্থ সংস্করণ, সাহিত্য সংসদ, ২০১৫, কলকাতা
- ↑ বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭। পৃষ্ঠা ৩৯৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ "সলিল চৌধুরী: জীবনী"। chandrakantha.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ০১, ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- ১৯৮৬-এ জন্ম
- ১৯৯০-এ মৃত্যু
- ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ী
- মালয়ালম সঙ্গীত পরিচালক
- কলকাতার সঙ্গীতজ্ঞ
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক
- বাঙালি গীতিকার
- বাঙালি গণসঙ্গীতশিল্পী
- বাঙালি সুরকার
- বাঙালি কবি
- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যক্তি
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় সুরকার
- ভারতীয় পুরুষ সুরকার
- বঙ্গবাসী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ২০শ শতাব্দীর পুরুষ সঙ্গীতজ্ঞ