সত্যানন্দ দাশ
সত্যানন্দ দাশ | |
---|---|
জন্ম | ১৮৬৩ |
মৃত্যু | ১৯৪২ | (বয়স ৭৮–৭৯)
পেশা |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | কুসুমকুমারী দাশ |
সন্তান | জীবনানন্দ দাশ |
পিতা-মাতা |
|
সত্যানন্দ দাশ (১৮৬৩–১৯৪২) একজন বাঙালি স্কুলশিক্ষক, প্রবন্ধকার, সমাজসেবক ও ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ এর বাবা ও কবি কুসুমকুমারী দাশ এর স্বামী। তিনি ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করেন এবং বরিশাল ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও উপাচার্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।[১] ধর্ম, নীতি, শিক্ষা ও সমাজ-বিষয়ে তার বহু রচনা ব্রহ্মবাদী, তত্ত্বকৌমুদী, প্রবাসী প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত।
প্রথম জীবন ও বংশ পরিচয়
[সম্পাদনা]সত্যানন্দ দাশ ১৮৬৩ সালে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সর্বানন্দ দাশ ও মা প্রসন্নকুমারী। তিনি তাদের সাত পুত্র ও চার কন্যার মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। বাবা সর্বানন্দ দাশ বরিশালে সরকারি চাকুরি করতেন। পৈতৃক ভিটা ছিল বিক্রমপুরের গাঁওপাড়া গ্রামে। পদ্মার শাখানদী কীর্তিনাশার তীরে গ্রামখানি জলে তলিয়ে গেলে বরিশালে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি ব্রাহ্মধর্মে অনুপ্রানিত হয়ে দীক্ষিত হন ও ১৮৬১ সালে বরিশালে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। মূলত, দাশ পরিবারের বংশ পদবী ছিল দাশগুপ্ত, ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণের পর পদবী থেকে "গুপ্ত" অংশটুকু ছেটে ফেলেন ও কেবল "দাশ" লেখেন। বাবা সর্বানন্দ দাশের মত সত্যানন্দ দাশও ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী ছিলেন।[২]
শিক্ষা ও কর্ম জীবন
[সম্পাদনা]সত্যানন্দ দাশ বরিশাল জিলা স্কুলে মাধ্যমিক পাঠ শেষে, কলকাতার ব্রাহ্ম মহাবিদ্যালয় সিটি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে স্নাতক শেষে, হবিগঞ্জে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে অশ্বিনীকুমার দত্ত বরিশালে ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন নামে একটি ইংরেজি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ও কালক্রমে তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। তার পুত্র জীবনানন্দ দাশের ভাষায়,
‘বাবাকে কেন্দ্র করে বি.এম. স্কুলের উচ্চ শ্রেণির ছেলেদের এক উন্মেষধর্মী সংঘ গড়ে উঠেছিল যেখানে সাহিত্যিক নৈতিক রাষ্ট্রিক আলোচনারও প্রসার ছিল কিন্তু তিনি প্রচলিত ও স্বদেশপ্রীতির পার্থক্য অনুভব করতেন...জোর দিয়েছিলেন তিনি চরিত্র ও চেতনাশুদ্ধির উপর।'
১৮৯৪ সালে সত্যানন্দ দাশ বরিশালের আরেক ব্রাহ্ম পরিবারের মেয়ে কুসুমকুমারী দাশ কে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি একজন নামী কবি হয়ে ওঠেন। সত্যানন্দ তৎকালীন জনপ্রিয় শিশুদের মাসিক "মুকুল" পত্রিকায় লিখতেন। তখন এই পত্রিকায় কুসুমকুমারী দাশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্র কিশোর রায়ও লিখতেন। তার লেখার বিষয়বস্তু ছিল ইতিহাস, ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের ওপর সত্যানন্দ দাশ একটি ইতিহাসনির্ভর লেখা লিখেছিলেন।[৩]
ছাত্রাবস্থাতেই সত্যানন্দ দাশ বরিশাল ছাত্র সেবাদল ও তার মুখপত্র ‘স্বদেশী’ পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯০০ সালে সত্যানন্দ দাশ ব্রাহ্মসমাজের মুখপাত্র হিসেবে ব্রহ্মবাদী নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। তার ভগ্নীপতি মনমোহন চক্রবর্তীও পত্রিকার সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন। পত্রিকাটির প্রথম দিকের বেশ কিছু কবিতা মনমোহন চক্রবর্তীই লিখেছিলেন; এবং কবি কুসুমকুমারী দাশের প্রায় শখানেক কবিতা ছাপা হয়। বাংলা শেখানো এবং প্রার্থনাপুস্তকের অনুবাদসূত্রে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনের সাধুদের সঙ্গেও সত্যানন্দ দাশের যোগ ছিল। মনোরঞ্জন গুহের সঙ্গে ‘সহযোগী’ সাপ্তাহিকপত্র প্রকাশ করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "দাশ, জীবনানন্দ"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৭।
- ↑ "শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশ-এর ৬২তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি"। সোনার দেশ। ২০২১-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৭।
- ↑ বি সিলি, ক্লিন্টন। "অনন্য জীবনানন্দ"।
- ↑ দাশ, সত্যানন্দ। বাঙালি চরিতাভিধান। সংসদ।