লাল বান্দর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

লাল বান্দর[১]
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Primates
পরিবার: Cercopithecidae
গণ: Macaca
প্রজাতি: M. mulatta
দ্বিপদী নাম
Macaca mulatta
(জিমারমান, ১৭৮০)
Rhesus macaque range

রেসাস বানর বা লাল বান্দর (ইংরেজি: Rhesus Macaque, Rhesus Monkey; বৈজ্ঞানিক নাম: Macaca mulatta) প্রাচীন বিশ্বের বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বানর বিশেষলাল বান্দর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের প্রাদেশিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত।

এ প্রজাতির বানরটি আইইউসিএন লাল তালিকায় ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪[৩] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৪] বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংখ্যায় এর বিস্তৃতি ঘটেছে এবং বাসস্থানের উপযোগী পরিবেশও বিদ্যমান। দক্ষিণ, মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে তৃণভূমিসহ বনাঞ্চল এলাকার বৃক্ষের শাখাসমূহে এদেরকে দেখা যায়। এছাড়াও, এরা মানব বসতির কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে।[৫]

মনস্তাত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাল বান্দর জটিল মানসিক সক্ষমতার অধিকারী। বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ, সাধারণ নিয়ম-কানুন প্রতিপালন, তাদের নিজস্ব মানসিক রাজ্যে বিচরণ করতে সক্ষম।[৬] এমনকি তারা নিজস্ব সচেতনতায়ও পারদর্শী।[৭]

বৈশিষ্ট্যাবলী[সম্পাদনা]

স্তন্যপায়ী ও চতুষ্পদী লাল বান্দরের দেহ বাদামী অথবা ধূসর বর্ণের লোমে আচ্ছাদিত। মুখমণ্ডল ও পিছনের অংশ গোলাপী রঙের। এর লেজের দৈর্ঘ্য মাঝারি প্রকৃতির। লেজের দৈর্ঘ্য ২০.৭ সেন্টিমিটার থেকে ২২.৯ সেন্টিমিটারের মধ্যে (৮.১ থেকে ৯ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বানরের দৈর্ঘ্য সাধারণতঃ গড়ে ৫৩ সেন্টিমিটার (২১ ইঞ্চি) এবং ওজন প্রায় ৭.৭ কেজি (১৭ পাউন্ড) হয়। স্ত্রীজাতীয় বানর আকারে পুরুষের তুলনায় ছোট হয়। গড়পড়তা দৈর্ঘ্য ৪৭ সে.মি. (১৯ ইঞ্চি) এবং ওজন ৫.৩ কেজি (১২ পাউন্ড) হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে এদের কশেরুকার সংখ্যা গড়ে ৫০টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই দাঁতের সংখ্যা ৩২টি।

আবাসস্থল[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ, ভারতের উত্তরাঞ্চল, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, চীনের দক্ষিণাংশসহ কিছু প্রতিবেশী দেশসমূহে লাল বান্দরের আবাসস্থল। উন্মুক্ত এলাকা, তৃণভূমি, বনভূমি এমনকি পাহাড়-পর্বতের ২,৫০০ মিটার (৮,২০০ ফুট) উচ্চ এলাকায়ও এদের আবাস রয়েছে। এরা নিয়মিতভাবে সাঁতার কেটে থাকে। বান্দর শাবকগুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাঁতারে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। দ্বীপ এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক বানরগুলো অর্ধ-মাইলেরও বেশি দূরত্বের জায়গা সাঁতার কেটে অতিক্রমণ করতে পারে। কিন্তু প্রায়শঃই এদেরকে ছোট আকারের দলভূক্ত হয়ে খাবার পানি পানের উদ্দেশ্যে পানিতে পরে ডুবন্ত অবস্থায় দেখা যায়।

খাদ্যাভ্যাস[সম্পাদনা]

লাল বান্দর দ্বি-চারী প্রাণী হিসেবে বৃক্ষ এবং ভূমি - উভয় স্থানেই চলাচল করতে পারে। চতুষ্পদী প্রাণী হলেও এরা মানুষের ন্যায় হাঁটতে পারে। তৃণজীবি হিসেবে এরা প্রধানত গাছের ফল খায়। এছাড়াও এদের খাদ্য তালিকায় বীজ, শিকড়, গাছের ছাল রয়েছে। হিসেব করে দেখা গেছে যে, ৪৬টি বানর প্রজাতি ৯৯টি বিভিন্ন গাছের নিয়মিত ভোক্তা। মৌসুমী ঋতুতে পছন্দসই পাকা ফল থেকে এরা প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করে। নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে দূরে থাকে। গাছের পাতায় প্রাপ্ত শিশিরকণা ও বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণ করে।[৮] এছাড়াও, ঘাস ফড়িং, পিঁপড়াও এদের শিকারের অন্তর্ভুক্ত।[৯]

স্বভাব[সম্পাদনা]

লাল বান্দর কলহপ্রিয় জাতি। দলের প্রধান পুরুষ বানর অনুপ্রবেশকারীকে চোখ বড় বড় করে ও মুখ হা করে ভয় দেখায়। ভয় পেলে কাশির মত খক খক শব্দ করে ডাকে। তীব্র চিৎকার ও দাঁত বের করে একে অপরকে হুঁশিয়ার করে দেয়। দলের আকার ছোট থেকে বড় হতে পারে। আবাসস্থল ও খাদ্যের প্রাচুর্যের উপর ভিত্তি করে দলের সদস্যসংখ্যা ১০-৯০ পর্যন্ত হতে পারে। বন্য বানরের দল শহরাঞ্চলের দল থেকে অনেক বড় হয়। দলের প্রধান থাকে একটি প্রভাবশালী পুরুষ বানর। মানব বসতিতে বসবাসকারী বানরদের বিচরণের সীমা ১০-১০০ হেক্টর। কিন্তু বন্য বানরদের ক্ষেত্রে তা ৩০০-৪৯১ হেক্টর। দিনের ৬৫ ভাগ সময় এরা খাবার খোঁজা ও আহারের পেছনে ব্যয় করে।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Groves, C. (২০০৫)। Wilson, D. E., & Reeder, D. M., সম্পাদক। Mammal Species of the World (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 163। আইএসবিএন ০-৮০১-৮৮২২১-৪ 
  2. Timmins, R. J., Richardson, M., Chhangani, A., Yongcheng, L. (২০০৮)। "Macaca mulatta"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2010.4প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন 
  3. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: স্তন্যপায়ী, খণ্ড: ২৭ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ২১-২২।
  4. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯০
  5. Timmins, R. J., Richardson, M., Chhangani, A., Yongcheng, L. (2008). "Macaca mulatta". IUCN Red List of Threatened Species. Version 2010.4. International Union for Conservation of Nature[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Couchman, J. J., et al. (2010). "Beyond Stimulus Cues and Reinforcement Signals: A New Approach to Animal Metacognition". Journal of Comparative Psychology 124 (4): 356–368. doi:10.1037/a0020129. PMC 2991470. 20836592
  7. Couchman, J. J. (2011). "Self-agency in rhesus monkeys". Biology Letters. doi:10.1098/rsbl.2011.0536
  8. Makwana, S. (1979). "Field Ecology and Behavior of the rhesus macaque. Food, Feeding and Drinking in Dehra Dun Forests." Indian Journal of Forestry 2(3): 242–253
  9. Lindburg, D.G. (1971) The rhesus monkeys in north India: an ecological and behavioural study. In: Rosenblum, LA (ed.) Primate Behaviour: Developments in the field and laboratory research. Academic Press, New York, vol.1, pp. 83–104.
  10. Feeroz, M.M., Islam, M.A. and Kabir, M.M. "Status distribution and conservation of Primates in Bangladesh." Kyoto University overseas Research Report of Studies on Asian Non-human Primates. 1995, 9: 73-82.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]