রশিদ আলি আল-কাইলানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রশিদ আলি আল-কাইলানি
رشيد عالي الكيلاني
ইরাকের ৯ম প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২০ মার্চ ১৯৩৩ – ৯ নভেম্বর ১৯৩৩
সার্বভৌম শাসকপ্রথম ফয়সাল
গাজি বিন ফয়সাল
পূর্বসূরীনাজি শওকত
উত্তরসূরীজামিল আল-মিদফাই
কাজের মেয়াদ
৩১ মার্চ ১৯৪০ – ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১
সার্বভৌম শাসকদ্বিতীয় ফয়সাল
আবদুল্লাহ বিন আলি (রাজপ্রতিভূ)
পূর্বসূরীনুরি আল-সাইদ
উত্তরসূরীতাহা আল-হাশিমি
কাজের মেয়াদ
১৩ এপ্রিল ১৯৪১ – ৩০ মে ১৯৪১
সার্বভৌম শাসকদ্বিতীয় ফয়সাল
আবদুল্লাহ বিন আলি (রাজপ্রতিভূ)
পূর্বসূরীতাহা আল-হাশিমি
উত্তরসূরীজামিল আল-মিদফাই
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৮৯২
বাগদাদ, ইরাক
মৃত্যু২৮ আগস্ট ১৯৬৫ (বয়স ৭২–৭৩)
বৈরুত, লেবানন
রাজনৈতিক দলহিজব আল-ইখা আল-ওয়াতানি
ধর্মইসলাম (সুন্নি)

রশিদ আলি আল-কাইলানি (আরবি: رشيد عالي الكيلاني, আরবি উচ্চারণ: [raʃiːd ʕaːliː al.keːlaːniː]),  (১৮৯২ – ২৮ আগস্ট ১৯৬৫), ছিলেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী। ইরাক থেকে ব্রিটিশ প্রভাব দূরতে প্রচেষ্টা চালানোর কারণে তাকে স্মরণ করা হয়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪১ সালের সংক্ষিপ্ত মেয়াদকালে তিনি ব্রিটিশ প্রভাব হ্রাস করার জন্য বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তির সাথে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

রশিদ আলি বাগদাদের খ্যাতনামা কাইলানি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াহহাব আল-কাইলানি।[১] রশিদ আলি বাগদাদ আইন স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। উকিল হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন।[২]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯২৪ সালে কাইলানি প্রধানমন্ত্রী ইয়াসিন আল-হাশিমির সরকারে তিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। হাশিমি তাকে সরকারের বিচারমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। উভয়েই আরব জাতীয়তাবাদি ছিলেন এবং ইরাকের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্রিটেনের হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিলেন। ১৯৩০ সালে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল সাইদের সরকারের স্বাক্ষরিত ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তি তারা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা হিজব আল-ইখা আল-ওয়াতানি দল গঠন করেছিলেন। ১৯৩৩ সালে কাইলানি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তিনি আট মাসের বেশি ক্ষমতায় ছিলেন না।[৩]

১৯৪০ সালের ৩১ মার্চ তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং বাদশাহ গাজি বিন ফয়সাল মারা যান। গাজির চার বছর বয়সী ছেলে দ্বিতীয় ফয়সাল নতুন বাদশাহ হন এবং গাজির চাচা আবদুল্লাহ বিন আলি তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ফয়সালের পক্ষে শাসনকাজ তদারক করেন। যুদ্ধে আবদুল্লাহ ব্রিটেনকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু কাইলানি ভিন্ন মত প্রকাশ করে মিত্রবাহিনীকে ইরাকের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিতে রাজি হননি। কাইলানি ইতালির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে রাজি হননি। জার্মান সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে তুরস্কে জার্মান রাষ্ট্রদূত ফ্রাঞ্জ ফন পাপানের সাথে সাক্ষাতের জন্য তিনি তার বিচারমন্ত্রী নাজি শওকতকে আঙ্কারায় প্রেরণ করেন।[৪] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বাগদাদ মধ্যপ্রাচ্যে নাৎসিদের গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের একটি কেন্দ্র ছিল।[৫]

১৯৪১ ইরাকি অভ্যুত্থান[সম্পাদনা]

১৯৪১ সালের অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির সময় বার্লিনে রশিদ আলি আল-কাইলানি ও মুহাম্মদ আমিন আল-হুসাইনি

ব্রিটেন ইরাকের উপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। পাশাপাশি উত্তর আফ্রিকায় ইতালীয়দের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয়ের ফলে কাইলানির সরকারের প্রতি সমর্থন হ্রাস পায়। ১৯৪১ সালের ৩১ জানুয়ারি আবদুল্লাহ বিন আলির চাপের কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। এর ফলে ব্রিটেনের প্রতি তার ও তার সমর্থকদের বিরূপ অনুভূতি আরো বৃদ্ধি পায়। আবদুল্লাহকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের জন্য কয়েকজন সেনা অফিসারের সাথে মিলে তিনি ১৯৪১ সালের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। ৩১ মার্চ আবদুল্লাহ এই পরিকল্পনার কথা জেনে যাওয়ার পর দেশত্যাগ করেন।

১ এপ্রিল অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ৩ এপ্রিল কাইলানি নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি হাব্বানিয়ায় অবস্থিত ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর ঘাটির মোকাবেলার জন্য ইরাকি গোলন্দাজদেরকে প্রেরণ করেন। ইরাকি সেনারা বিমানঘাটি অবরোধ করে।

ইরাক মিত্রশক্তির অন্যতম প্রধান পেট্রোলিয়াম সরবরাহকারী ছিল। এছাড়াও ইরাক ছিল ভারত থেকে মিশরের যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। ইরাককে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল জেনারেল আর্চি‌বল্ড ওয়াভেলকে হাব্বানিয়ার বিমানঘাটি রক্ষার নির্দেশ দেন। ১৮ এপ্রিল ভারত থেকে ব্রিটিশ বাহিনী বসরায় এসে পৌছায়। এদিকে মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন থেকে আরেকটি বাহিনী ইরাকে প্রেরণের জন্য গঠন করা হয়।

ইঙ্গ-ইরাকি যুদ্ধ[সম্পাদনা]

ইরাকিরা হাব্বানিয়ার ঘাটির সব কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানায়। ২ মে ঘাটির প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল হ্যারি জর্জ স্মার্ট ইরাকিদের উপর হামলা শুরু করেন। এর ফলে ইঙ্গ-ইরাকি যুদ্ধ শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ইরাকিরা এলাকা ত্যাগ করে। মে মাসের মধ্যভাগ নাগাদ হাব্বানিয়া থেকে ব্রিটিশরা ফালুজাহ ও এরপর বাগদাদ সরে আসে। ব্রিটিশ হামলার আশঙ্কায় ২৯ মে কাইলানি পারস্যে পালিয়ে যান। বাগদাদ ত্যাগের পূর্বে তিনি মোল্লা এফেন্দির সাথে যোগাযোগ করে জানান যে সংঘর্ষ‌ শেষ হওয়া পর্যন্ত তার বাড়ি রাজপরিবারের সদস্যরা নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

৩১ মে ব্রিটিশ ও ইরাকিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হয়। ১ জুন আবদুল্লাহ বাগদাদ ফিরে আসেন এবং তার সরকার পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়।

পারস্য, জার্মানি ও সৌদি আরব[সম্পাদনা]

কায়রোতে মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসেরের সাথে রশিদ আলি আল-কাইলানি, আগস্ট ১৯৫৮

১৯৪১ সালের ২৫ আগস্ট ব্রিটেন ও সোভিয়েত সেনারা পারস্যে হামলা চালিয়ে রেজা শাহকে উৎখাত করে। এরপর কাইলানি ইউরোপে চলে যান। বার্লিনে তাকে প্রবাসী ইরাকি সরকারের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। জার্মানির পরাজয়ের পর তিনি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন।

পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৫৯ সালে রাজতন্ত্র উৎখাতের পর কাইলানি ইরাক ফিরে আসেন। দেশে আসার পর তিনি আবদুল করিম কাসিমের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা ফাস হয়ে যায়। কাইলানিকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হলেও পরে ক্ষমা করা হয়। এরপর তিনি বৈরুতে নির্বাসিত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি বৈরুতে মৃত্যুবরণ করেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Makiya, p. 216
  2. Cleveland, p. 212
  3. Longrigg, 1953, p. 274
  4. Aboul-Enein and Aboul-Enein, 2013, pp. 51-52
  5. Lewis, 2003, pp. 69-70

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
নাজি শওকত
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী
২০ মার্চ ১৯৩৩ - ২৯ অক্টোবর ১৯৩৩
উত্তরসূরী
জামিল আল-মিদফাই
পূর্বসূরী
নুরি আল-সাইদ
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী
৩১ মার্চ ১৯৪০ - ৩১ জানুয়ারি ১৯৪১
উত্তরসূরী
তাহা আল-হাশিমি
পূর্বসূরী
তাহা আল-হাশিমি
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী
৩ এপ্রিল ১৯৪১ - ২৯ মে ১৯৪১
উত্তরসূরী
জামিল আল-মিদফাই