আবদুল্লাহ বিন আলি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল্লাহ
ইরাকের যুবরাজ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইরাকের বাদশাহর অভিভাবক আমির আবদুল্লাহ
অভিভাবকত্ব১৯৩৯-১৯৫৩
জন্ম১৪ নভেম্বর ১৯১৩
তাইফ, আরব উপদ্বীপ
মৃত্যু১৪ জুলাই ১৯৫৮ (৪৪ বছর)
বাগদাদ, ইরাক
পিতাবাদশাহ আলী বিন হুসাইন

আবদুল্লাহ বিন আলি (আরবি : عبد الإله) (১৪ই নভেম্বর ১৯১৩ – ১৪ই জুলাই ১৯৫৮) ছিলেন ইরাকের বাদশাহ গাজির চাচাত ভাই ও শ্যালক। গাজির পুত্র দ্বিতীয় ফয়সালের অভিভাবক হিসেবে তিনি ১৯৩৯ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ১৯৫৩ সালের ২৩ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি ইরাকের যুবরাজের পদবী ধারণ করেন।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

মাউন্ট ভেরননে যুবরাজ আবদুল্লাহ (হ্যাট হাতে), ১৯৪৫ সাল

তিনি আলী বিন হুসাইনের একমাত্র পুত্র ও উত্তরাধিকারী ছিলেন। আলী বিন হুসাইন ছিলেন বাদশাহ ফয়সালের বড় ভাই। রানি আলিয়া বিনতে আলি ছিলেন তার বোন। নজদের ইবনে সৌদ হেজাজের ক্ষমতা দখলের পর তার পরিবার হেজাজ ত্যাগ করে।[১] একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় বাদশাহ গাজির মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। অপ্রাপ্তবয়স্ক বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সালের অভিভাবক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।[১]

১৯৪১ সালের ইরাকি অভ্যুত্থান[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবদুল্লাহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী রশিদ আলি আল-কাইলানি কর্তৃক সাময়িককালের জন্য ক্ষমতাহীন হন। আবদুল্লাহর ব্রিটেনপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে রশিদ আলি একটি জার্মানপন্থি অভ্যুত্থান পরিচালনা করেন। দেশত্যাগের পর তার স্থলে শরিফ শারাফকে বসানো হয়। শরিফ শারাফ একজন বৃদ্ধ ও ধর্মীয় মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এসময় আবদুল্লাহ জর্ডানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নুরি আস-সাইদের সাথে অবস্থান করেন। তিনি জর্ডানের হাশেমি শাসক (পরবর্তীতে বাদশাহ) যুবরাজ আবদুল্লাহ ইবনে আল-হুসাইনের অতিথি হিসেবে ছিলেন।[২]

২ মে, যুক্তরাজ্য ইরাকি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। ২৬ মে, নিউ ইয়র্ক টাইমস আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে যে আবদুল্লাহ বিদ্রোহী সরকারকে হটাতে গোত্রীয় ও ধর্মীয় নেতাদেরকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে আহ্বান জানাচ্ছেন। বিশেষত তিনি ইরাকি জনগণ, সেনাবাহিনী ও পুলিশকে এই কাজে অগ্রসর হতে আহ্বান করে।

২ জুনের মধ্যে রশিদ আলির “জাতীয় প্রতিরক্ষা সরকারের” পতন হয়। রশিদ আলি পারস্যে পালিয়ে যান। আবদুল্লাহ বাগদাদ ফিরে আসেন ও পুনরায় বাদশাহর অভিভাবক হিসেবে আসীন হন।[৩]

আবদুল্লাহ ও নুরি আস-সাইদ মডারেট জাতীয়তাবাদী পথে অগ্রসর হতে ইচ্ছুক ছিলেন। একই সাথে মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারেও তারা সজাগ ছিলেন।[১]

১৯৪২ সালে ওয়েন্ডেল উইলকি রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের প্রতিনিধি হিসেবে ব্রিটেন ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন। ইরাকে আবদুল্লাহ তার জন্য রাষ্ট্রীয় ভোজের ব্যবস্থা করেন।[৪]

১৯৪৫ সালে আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। আমেরিকার নতুন ফার্স্ট লেডি বেস ট্রুমান তার জন্য প্রথম রাষ্ট্রীয় ভোজসভার ব্যবস্থা করেন।[৫] রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান তাকে লিজিওন অব মেরিট সামরিক পদক প্রদান করেন।[৬]

দ্বিতীয় ফয়সাল প্রাপ্তবয়স্ক হলে আবদুল্লাহ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর তিনি বাদশাহর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ও পশ্চিমাপন্থি বৈদেশীক নীতির পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেন।[১]

১৯৫৫ সালে ইরাক বাগদাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এটি Central Treaty Organization বা CENTO নামেও পরিচিত। এর অন্যান্য সদস্যরা হল ইরান, পাকিস্তান, তুরস্কযুক্তরাজ্য। প্রাথমিকভাবে সংস্থার সদরদপ্তর বাগদাদে অবস্থিত ছিল।

১৯৫৭ সালের মে মাসে ইবনে সৌদ আট দিনের সরকারি সফরে ইরাক আসেন। তিনি বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সাল, যুবরাজ আবদুল্লাহ ও প্রধানমন্ত্রী নুরি আস-সাইদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এটি ছিল কোনো সৌদি বাদশাহর প্রথম ইরাক সফর। এ সফরে ইরাকের আরব ফেডারেশনে সদস্যপদ ও জামাল আব্দেল নাসেরের ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদকে স্মরণ করা হয়।[৭]

১৪ই জুলাই বিপ্লব[সম্পাদনা]

আবদুল্লাহর খন্ডিত মৃতদেহ।

১৪ জুলাই বিপ্লবে রাজপরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সাথে আবদুল্লাহ নিহত হন। ১৯৫৮ সালে কর্নেল আবদুল করিম কাসিমের এ অভ্যুত্থানে ইরাকের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। আবদুল্লাহর মৃতদেহ রশিদ স্ট্রিটে প্রদর্শন করা হয় ও পরে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। ২১ জুলাই টাইম ম্যাগাজিনের সংস্করণ অনুযায়ী, “জামাল আবদেল নাসেরের ‘মধ্যপ্রাচ্য সংবাদ সংস্থা আবদুল্লাহর হত্যাকান্ডের বর্ণনা করেঃ লোকেরা আবদুল্লাহর শরীরকে কুকুরের মত রাস্তায় টেনে নিয়ে যায় এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।‘ এরপর জনতা মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেয়।[৮]

সামরিক পদবী[সম্পাদনা]

আবদুল্লাহ নিম্নোক্ত সামরিক পদবীর অধিকারী ছিলেনঃ[৯]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'Abd al-Ilah"। Encyclopedia Britannica। I: A-Ak - Bayes (15th সংস্করণ)। Chicago, IL: Encyclopedia Britannica, Inc.। ২০১০। পৃষ্ঠা 14। আইএসবিএন 978-1-59339-837-8 
  2. "Trouble in Paradise"Time Magazine। ২১ এপ্রিল ১৯৪১। ২৮ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০০৯ 
  3. Lyman, p. 86
  4. "Points East"Time Magazine। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪২। ২৫ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০০৯ 
  5. "Family at Home"Time Magazine। ৪ জুন ১৯৪৫। ২২ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০০৯ 
  6. "Talk & Ceremony"Time Magazine। ১১ জুন ১৯৪৫। ২১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০০৯ 
  7. "Gathering of Kings"Time Magazine। ২৫ মে ১৯৫৭। ১৯ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৯ 
  8. "Revolt in Baghdad"Time Magazine। ২১ জুলাই ১৯৫৮। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০০৯ 
  9. Al-Hashimi Dynasty. Retrieved 15 September 2010.

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]