বিষয়বস্তুতে চলুন

মহিষাসুরমর্দিনী (বেতার অনুষ্ঠান)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মহিষাসুরমর্দ্দিনী
মহিষাসুরমর্দিনীর প্রচ্ছদ চিত্র
অন্য নামচণ্ডীপাঠ
ধরনধর্মীয়
সময়১ ঘণ্টা ২৯ মিনিট
দেশভারত
ভাষাবাংলা, সংস্কৃত
প্রচারতরঙ্গআকাশবাণী
রচয়িতা
বর্ণনা করেছেনবীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
প্রথম প্রকাশ১৯৩১ – বর্তমান
সূচনা আবহশঙ্খধ্বনি
সমাপ্তি আবহশান্তি দিলে ভরি সঙ্গীত ও শঙ্খধ্বনি

মহিষাসুরমর্দ্দিনী (অর্থাৎ মহিষাসুরকে দমনকারিণী) হল আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত বাংলা ভাষার বিশেষ প্রভাতী বেতার অনুষ্ঠান। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে আজ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানটি প্রতিবছর মহালয়ার দিন সম্প্রচারিত হয়ে আসছে, যা ভারতের বেতার ইতিহাসে দীর্ঘতমকাল ধরে সম্প্রচারিত একটি স্থায়ী বেতার অনুষ্ঠান। দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে রয়েছে শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দুর্গা সপ্তশতী থেকে গৃহীত দেবী চণ্ডীর স্তোত্র বা চণ্ডীপাঠ, বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রুপদী সঙ্গীত এবং পৌরাণিক কাহিনির নাট্যরূপ। প্রথমদিকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত, কিন্তু ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে রেকর্ড করা পূর্বের অনুষ্ঠানই শোনানো হয়। এই অনুষ্ঠানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, প্রায় ৯১ বছর পর আজও এর জনপ্রিয়তা তথা মহিমায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।[১]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের চৈত্র মাসে বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা পূজার সন্ধিক্ষণে প্রথম সম্প্রচারিত হয় বসন্তেশ্বরী শীর্ষক অনুষ্ঠান, যা মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর উপর ভিত্তি করে বাণীকুমারের লেখা একটি বেতার লিপিলিখন। বসন্তেশ্বরী শীর্ষক অনুষ্ঠানের অনুকরণেই কিছু পরিমার্জনের মাধ্যমে সেই বছরই দুর্গাষষ্ঠীর দিন অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত করা হয়। এই অনুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল, চণ্ডীপাঠ করেন বাণীকুমার স্বয়ং এবং নাট্যকথা সূত্র এবং গীতাংশ গ্রহণে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র[২] পরবর্তীতে ১৯৩১-৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিবছরই কিছু পরিমার্জন করে নতুন স্তবস্ততি, দেবীসূক্তি, নতুন গান এবং পুরাতন গানের সুরের পরিবর্তন ঘটিয়ে অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার করা হয়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানটি মহিষাসুর বধ, শারদ বন্দনা[৩] নামে সম্প্রচারিত হয়, যার সঙ্গীত পরিচালনা করেন পঙ্কজ কুমার মল্লিকরাইচাঁদ বড়াল এবং শ্লোকপাঠ ও গ্রন্থনা করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই অনুষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে মহিষাসুরমর্দ্দিনী রাখা হয়, যা এখনও একই নামে সম্প্রচারিত হয়ে চলেছে।[৪][৫] এই প্রভাতী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বছর সঙ্গীতশিল্পীদের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বোম্বাইতে গানের রেকর্ড করাতে যাওয়ায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে রিহার্সালে অংশ নিতে পারেননি এবং বাণীকুমারের নির্দেশে তিনি অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়েন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বদলে শচীন গুপ্তের নাম ঠিক করা হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর বদলে জাগো দুর্গা গানটি করেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়।[৬] ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র স্নান করে শুভ্র পোশাকে এসে শ্লোক পাঠ করতেন। বর্তমানে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের রেকর্ডটিই মহালয়ার দিন ভোর চারটের সময় সম্প্রচারিত করা হয়।[৭]

১৯৭৬-এর ঘটনা

[সম্পাদনা]
দেবীং দুর্গতিহারিণীম্-এর প্রচ্ছদ চিত্র

১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারমহলের চাপে আকাশবাণী মহিষাসুরমর্দিনীর পরিবর্তে ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী রচিত দেবীং দুর্গতিহারিণীম্ নামে একটি ভিন্ন অনুষ্ঠান মহালয়ার দিন একই সময়ে সম্প্রচার করে। যেখানে অনুষ্ঠানে শ্লোকপাঠ করেন উত্তমকুমার, সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, আরতি মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয়।[৮] কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর এবং মহিষাসুরমর্দিনীর অনুষ্ঠানের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বাঙালি জনগণ নতুন অনুষ্ঠানটিকে মেনে নেননি। অনুষ্ঠান শেষ হতেই বিশাল জনতা আকাশবাণীর সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।[৯] তৎকালীন আকাশবাণীর একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন[৭],

এই জনরোষ সামলাতে না পেরে এবং জনগণের দাবিতে আকাশবাণী সেইবছরই দুর্গাষষ্ঠীর দিন পুনরায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে অনুষ্ঠিত পূর্বের মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচার করে এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে আজ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়েই মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচারিত হয়ে আসছে।

মহিষাসুরমর্দিনী এই জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান তৈরির গল্প নিয়ে কৌশিক পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে- মহিষাসুরমর্দিনী:সম্পূর্ণ নেপথ্যকাহিনি। গ্রন্থটিতে অনুষ্ঠানে গীত গানের স্বরলিপিসহ মূল স্ক্রিপ্ট সংযোজিত হওয়ায়, বইটি ঐতিহাসিক দলিলের মর্যাদা পেয়েছে। [১০]

সঙ্গীত ও চণ্ডীপাঠ

[সম্পাদনা]

পৌরাণিক পটভূমিতে আধারিত এবং বৈদিক মন্ত্র সমন্বিত হওয়া সত্ত্বেও এই অনুষ্ঠানটি একটি অতুল্য অদ্বিতীয় সৃষ্টি। বাণীকুমারের রচনা ও প্রবর্তনায় সৃষ্ট এই অনুষ্ঠানে শ্লোকপাঠ ও গ্রন্থনা করেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং পঙ্কজ কুমার মল্লিকের পরিচালনায় দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় (জাগো দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী), মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় (তব অচিন্ত্য), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জী, উৎপলা সেন (শান্তি দিলে ভরি ), শ্যামল মিত্র (শুভ্র শঙ্খ-রবে) এবং সুপ্রীতি ঘোষ (বাজলো তোমার আলোর বেণু) তাঁদের মধুর স্বরে গান গেয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাঁখে তিনবার ফুঁ দেওয়ার পর সমবেত কণ্ঠে গীত যা চণ্ডী মধুকৈটভাদি গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।[১১]

শিল্পী

[সম্পাদনা]

প্রধান শিল্পী

[সম্পাদনা]

গান ও গায়ক

[সম্পাদনা]

অন্যান্য সঙ্গীতশিল্পীরা ছিলেন ― অরুণকৃষ্ণ ঘোষ, ধীরেন বসু, রবীন ব্যানার্জী এবং ইলা বসু

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. admin। "মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সুধাকন্ঠে ঝরে পড়ে শিউলি মাথা দোলা দেয় কাশফুলের দল | Sambad Today" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১ 
  2. bartamanpatrika.com https://bartamanpatrika.com/detailNews.php?cID=72&nID=189996&P=1। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  3. Acharjya, Sanjoy (২০১৫-০৮-১০)। "জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা"বাংলায় গানের কথা | Bangla Song Lyrics। ২০২০-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১ 
  4. "মহিষাসুরমর্দিনী কলকাতা বেতারের শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য"Eisamay। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১ 
  5. http://jugasankhasuppli.zohosites.com/files/KOLKATA/KK%2042_18%20September%2C%202017.pdf
  6. https://www.aajkaal.in। "মহিষাসুরমর্দিনী মানেই মহালয়া"https://www.aajkaal.in/ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "মহিষাসুরমর্দিনী: বাঙালির মহালয়া"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১ 
  8. "আগে কী নামে সম্প্রচারিত হত প্রভাতী মহিষাসুরমর্দিনী?"www.dailyo.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১ 
  9. "মহালয়ার দিন কেন মনে আঘাত পেয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র?"Indian Express Bangla। ২০১৯-০৯-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১ 
  10. "কলকাতার কড়চা - নেপথ্য-ইতিহাস"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১০ 
  11. SHUVENDU (২০১৯-০৯-১৯)। "মহিষাসুরমর্দিনী : বেতার অনুষ্ঠানে যাঁদের কণ্ঠ শুনে আসছি ছোটবেলা থেকে"মানি 2 মার্কেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-৩১