মতিলাল রায় (যাত্রাপালাকার)
কবিরত্ন মতিলাল রায় | |
---|---|
জন্ম | ফেব্রুয়ারি ১৮৪৩ (২১ মাঘ, ১২৪৯ বঙ্গাব্দ) |
মৃত্যু | ১৯০৮ |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারত |
অন্যান্য নাম | মতি রায় |
পেশা | যাত্রাপালাকার, অভিনেতা, পরিচালক এবং লেখক |
প্রতিষ্ঠান | নবদ্বীপ বঙ্গ গীতাভিনয় সম্প্রদায় |
পরিচিতির কারণ | আধুনিক যাত্রাপালার প্রবর্তক, যাত্রাগুরু |
পিতা-মাতা | মনোহর রায় (পিতা) কাশীশ্বরী দেবী (মাতা) |
মতিলাল রায় (ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৩ - ১৯০৮) মতি রায় নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন বাঙালি যাত্রাপালাকার, অভিনেতা, পরিচালক এবং লেখক। তিনি সহজ সাবলীল ও মার্জিত ভাষায় পালা রচনা করে যাত্রাগানকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। তিনি পুরোনো ঐতিহ্যকে নতুনত্বের ধারায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। তাকে আধুনিক যাত্রাপালার জনক[১] ও যাত্রাগুরু বলে অভিহিত করা হয়।[২]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]মতিলাল রায় বর্ধমান জেলার ভাতশালা গ্রামে ১২৪৯ বঙ্গাব্দের ১২ মাঘ (ইংরেজির ফেব্রুয়ারি ১৮৪৩) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মনোহর রায় এবং মাতা কাশীশ্বরী দেবী।[৩] গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করার পরে তিনি নবদ্বীপে এসে নবদ্বীপ মিশনারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। পরে তিনি বারাসত উচ্চ বিদ্যালয়ে ও কলকাতার ওরিয়েন্টাল স্কুলে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]মাধব চৌধুরীর সহায়তায় মতিলাল রায় নবদ্বীপ মিশনারি স্কুলের শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি জোড়াসাঁকো থানায় একটি চাকরি পান এবং কয়েক মাসের মধ্যেই কলকাতা জিপিওতে একটি ভাল চাকরি পাওয়ায় সেখানে কাজে যোগ দেন।[৪]
ছোটবেলা থেকেই কবিতা লেখার নেশা থাকায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সান্নিধ্য পেলে তিনি সংবাদ প্রভাকরে কবিতা লেখার সুযোগ পান। কলকাতার চাকরিতে মন না থাকায় একদিন হরিনারায়ণের যাত্রা দেখতে গেলে সেই যাত্রা দেখে তিনি খুবই আনন্দিত হন এবং বাড়ি ফিরেই একটি যাত্রাপালা রচনা করে ফেলেন। হরিনারায়ণ মতিলালের অসাধারণ প্রতিভা দেখে তাঁর যাত্রাদলে তাঁকে নিয়ে নেন। হরিনারায়ণের যাত্রাদলে থেকে মতিলাল যাত্রাপালা রচয়িতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এই যাত্রাদলে তাঁর লেখা তরণীসেন বধ ও রাম বনবাস এই দুটি যাত্রা অভিনীত হয়।[৫]
১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে মতিলাল নবদ্বীপে নবদ্বীপ বঙ্গ গীতাভিনয় সম্প্রদায় নামে নিজস্ব যাত্রাদল গঠন করেন।[৬] তাঁর এই যাত্রাদলটি মতিরায়ের দল নামেও পরিচিত ছিল।[৭] মতিলাল রায় যাত্রার রীতি ও আখ্যান বদলে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আধুনিক যাত্রাপালার প্রবর্তন করলেন। তিনি যাত্রাকে থিয়েটারের সমতুল্য পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম যাত্রাপালায় গীতাভিনয়ের (গানের মাধ্যমে অভিনয়) প্রবর্তন করেছিলেন।[৮][৯]
রচিত যাত্রাপালা
[সম্পাদনা]মতিলাল রায় প্রায় ৪০টি পালা রচনা করেছিলেন এবং তাতে প্রায় হাজারের উপরে গীতাভিনয় ছিল। তাঁর রচিত নাটক ও গীতাভিনয়গুলি হল[১০]-
- রামায়ণ বিষয়ক
- তরণীসেন বধ (নাটক)
- রাম বনবাস বা রাম বিদায় (১৮৭৩)
- সীতাহরণ (১৮৭৮)
- রামরাজা
- লক্ষণভোজন
- রাবণবধ
- সীতা অন্বেষণ
- রাম পরিণত
- মহাভারত বিষয়ক
- ভরতমিলন বা ভরত আগমন (১৮৮৮)
- দ্রৌপদির বস্ত্র হরণ (১৮৮১)
- পাণ্ডব নির্বাসন
- ভীষ্মের শরশয্যা
- কর্ণবধ
- যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেক (১৯০০)
- যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ
- কৃষ্ণলীলা বিষয়ক
- কালীয়সর্পদমন
- ব্রজলীলা (১৮৯৪)
- গয়াসুরের হরি পাদপদ্ম লাভ
- অন্যান্য পুরান
- জগন্নাথের মাহাত্ম্য বা ক্ষেত্রধামের মাহাত্ম্য
- সুবচনী মাহাত্ম্য
- লৌকিক কাহিনী ও ব্রতকথা
- নিমাই সন্ন্যাস
- বিজয় চণ্ডী (১৮৮০)
- মহালীলা
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস (২০১৬-১১-০১)। "টিভি উড়িয়ে যাত্রা ফিরছে শীত-মাঠে"। www.anandabazar.com। ২০২২-১১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩।
- ↑ "বাংলার যাত্রা : বাঁকে বাঁকে এবং একুশ শতকে"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩।
- ↑ Ghosh, Gourangaprasad (১৯৯৬)। Jatra Shilper Itihas। পৃষ্ঠা ১২৪।
- ↑ Dr Hemendra Nath Das Gupta। The Indian Stage Volume I। Universal Digital Library। Dr Hemendra Nath Das Gupta। পৃষ্ঠা ১৪৮।
- ↑ Bhaṭṭācārya, Haṃsanārāẏaṇa (১৯৬৭)। Yātrāgāne Matilāla Rāẏa o tam̐hāra sampradāẏa। Calantikā। ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২১।
- ↑ Ghatak, Dr. Arpita (জুলাই ২০২০)। "Jatragaan in Bengal: A Study in Musical Traditions"। International Journal of Multidisciplinary। 5 (7): 8। আইএসএসএন 2455-3085। ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২১ – RESEARCH REVIEW-এর মাধ্যমে।
- ↑ Sinha, Biswajit (২০০০)। Encyclopaedia of Indian Theatre: pt.1-2. Rabindranath Tagore (ইংরেজি ভাষায়)। Raj Publications। আইএসবিএন 978-81-86208-35-9। ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২১।
- ↑ "Conscience on Stage: Revising Jatra in Bengal as a Tool for Representation, Restoration, and Revolution" (পিডিএফ)। search.proquest.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-১১-০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩।
- ↑ Chakrabarti, Kunal; Chakrabarti, Shubhra (২০১৩-০৮-২২)। Historical Dictionary of the Bengalis (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা ২৪০। আইএসবিএন 978-0-8108-8024-5। ২০২৩-১১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩।
- ↑ Chowdhury, Darshan (১৯৯৫)। Bangla Theatrer Itihas। পৃষ্ঠা ৩৩।