বিশ্ব রঞ্জন নাগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিশ্ব রঞ্জন নাগ
বিশ্ব রঞ্জন নাগ
জন্ম(১৯৩২-১০-০১)১ অক্টোবর ১৯৩২
মৃত্যু৬ এপ্রিল ২০০৪(2004-04-06) (বয়স ৭১)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তন
পরিচিতির কারণঅর্ধপরিবাহী বিষয়ক গবেষণা
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠানসমূহ
ডক্টরাল উপদেষ্টা
  • অরুণ কে. চৌধুরী

বিশ্ব রঞ্জন নাগ (১ অক্টোবর ১৯৩২ – ৬ এপ্রিল ২০০৪) ছিলেন একজন ভারতীয় পদার্থবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের শিশির কুমার মিত্র চেয়ার অধ্যাপক। অর্ধপরিবাহী পদার্থবিদ্যা বিষয়ক গবেষণার জন্য পরিচিত, বিশ্ব রঞ্জন নাগ ছিলেন ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর নির্বাচিত ফেলো। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভারত সরকারের শীর্ষ সংস্থা বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, তাঁকে ভৌত বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে ভূষিত করে, যা সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান বিষয়ক পুরস্কারসমূহের মধ্যে একটি।[১][টীকা ১]

জীবনী[সম্পাদনা]

বিশ্ব রঞ্জন নাগ তাঁর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রেডিওফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সে (আইআরই) অনুষদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্ব রঞ্জন নাগ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্ব রঞ্জন নাগ ১৯৪৯–৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতাস্থিত প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতক অধ্যয়ন করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ বিদ্যায়তনে (রাসবিহারী শিক্ষাপ্রাঙ্গন) ইনস্টিটিউট অব রেডিওফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স (আইআরই) থেকে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এমটেক) অর্জন করেন।[২] তিনি ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে আইআরই-এর একজন অনুষদ সদস্য হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই সাথে অরুণ কে. চৌধুরীর পরামর্শে ডক্টরেট অধ্যয়ন করেন। এর মধ্যে, তিনি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে এমএস অর্জনের জন্য উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর অতিবাহিত করেন। বিশ্ব রঞ্জন নাগ তাঁর ডক্টর অব ফিলোসফি বা পিএইচডি উপাধি অর্জনের জন্য পুনরায় গবেষণা ও অধ্যয়ন (ডক্টরাল) শুরু করার জন্য কলকাতায় ফিরে আসেন, এবং ১৯৬১ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষকতা পেশা অব্যাহত রেখে তিনি ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে একজন পূর্ণ অধ্যাপক হয়ে ওঠেন।[৩] আরও গবেষণার কারণে তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪] তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নিয়মিত একাডেমিক কর্মজীবনের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে শিশির কুমার মিত্র অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন সম্পন্ন করার পরেও তার সহযোগীতা অব্যাহত রাখেন।[৫] এর মধ্যে, তিনি গুইনেডের ব্যাঙ্গরে কমনওয়েলথ অনাবাসিক অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।[৪]

বিশ্ব রঞ্জন নাগের বিবাহ হয়েছিল মৃদুলা রায় চৌধুরীর সহিত, এবং এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে, বিশ্বদীপ ও মৃদুচন্দ। তিনি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ই এপ্রিল ৭১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।[২]

কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

সিলিকন স্ফটিক, একটি সাধারণ অর্ধপরিবাহী উপাদান

বিশ্ব রঞ্জন নাগের গবেষণা অর্ধপরিবাহীসমূহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল এবং এটি সেই উচ্চ বৈদ্যুতিক প্রতিরোধী কঠিন পদার্থের বৈদ্যুতিক পরিবহন প্রপঞ্চ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি প্রসারিত করতে সাহায্য করেছে।[৬] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রাথমিক বছরগুলিতে, তিনি একদল শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন যারা অর্ধপরিবাহী বৈশিষ্ট্যের মাইক্রোওয়েভ পরিমাপের উপর গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন এবং গান প্রভাবঅণুতরঙ্গ বিকিরণ বিষয়ক উন্নত গবেষণা করেছিলেন।[২] তিনি দ্বি-মাত্রিক ইলেকট্রন গ্যাসের তাপমাত্রার স্বতন্ত্রতা এবং এর অ্যালয় স্ক্যাটারিং সীমিত গতিশীলতা প্রদর্শন করেন, যা ছিল প্রথমবারের মতো আবিষ্কার।[৪][৭] তাঁর গবেষণায় সংকীর্ণ কোয়ান্টাম ওয়েল-এ ইলেকট্রন শক্তির বিচ্ছুরণের অ-পরাবৃত্তীয় প্রকৃতি প্রকাশ পেয়েছে, এবং এটি সীমিত বাধা উচ্চতা ও ওয়েল প্রস্থ সহ কোয়ান্টাম ওয়েলসের জন্য সীমিত গতিশীলতার ইন্টারফেস রুক্ষতা বিক্ষিপ্তকরণের তত্ত্বকে পরিবর্তন করেছে। তরল-পর্যায়ে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি অর্ধপরিবাহী III-V যৌগসমূহ, অ্যাকোস্টো-ইলেকট্রিক ইফেক্ট ও ফ্রি ক্যারিয়ার শোষণ, জিনি সহগ এবং হট-ইলেক্ট্রন গ্যালভানোম্যাগনেটিক ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে সম্পর্কিত সি সহগ ছিল তাঁর গবেষণার অন্যান্য ক্ষেত্র।[২] তিনি অর্ধপরিবাহী সম্পর্কিত ইলেক্ট্রন পরিবহন তত্ত্বের বিকাশে অবদান রেখেছিলেন, এবং বেগের পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রসারণ ও শব্দের পরামিতি সম্পর্কিত সহগ গণনার জন্য মন্টে কার্লো পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন।[৩] অণুতরঙ্গ যোগাযোগরাডার, বিশেষ করে অণুতরঙ্গ অর্ধপরিবাহী যন্ত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর কাজের মূল অংশের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।[৮] তাঁর অধ্যয়ন বেশ কয়েকটি নিবন্ধের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হয়েছে[টীকা ২] এবং তাদের মধ্যে ইন্ডিয়ান একাডেমী অব সায়েন্সেস-এর নিবন্ধ ভাণ্ডার ১৯০ টি নিবন্ধকে তালিকাভুক্ত করেছে।[৯] তিনি তিনটি মনোগ্রাফ রচনা করেন, থিওরি অব ইলেকট্রিকাল ট্রান্সপোর্ট ইন সেমিকন্ডাক্টরস,[১০] ফিসিক্স অব কোয়ান্টাম ওয়েল ডেভিসেস[১১] এবং ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট ইন কম্পাউন্ড সেমিকন্ডাক্টরস[১২] যার মধ্যে সর্বশেষ উল্লিখিতটি গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র পাঠ্য বলে জানা গেছে।[২] তিনি অন্যদের দ্বারা প্রকাশিত বইতে অধ্যায় রচনার মধ্যদিয়ে অবদান রেখেছিলেন[১৩][১৪][১৫], এবং তাঁর কাজ অনেক বইতে উদ্ধৃত হয়েছে।[১৬][১৭][১৮][১৯][২০]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

বিশ্ব রঞ্জন নাগ, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফেলো,[২] ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশ ইনস্টিটিউশন অব রেডিও ইঞ্জিনিয়ার্সের জে.সি. বোস মেমোরিয়াল পুরস্কার পান।[৩] বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ তাঁকে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করে, যা ভারতের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি।[২১] তিনি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরু ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত হন[২২] এবং ভারতীয় ন্যাশনাল সায়েন্স একাডেমী তাঁকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে একজন ফেলো হিসেবে নির্বাচিত করে;[২৩] একাডেমী তাকে আবার ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে উপাদান বিজ্ঞানের জন্য আইএনএসএ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে।[২৪] তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের নির্বাচিত ফেলো হন।[২৫] বিশ্ব রঞ্জন নাগ একাডেমিক চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার এক বছর পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিও পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্মানে একটি বার্ষিক সম্মেলন – "ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কম্পিউটার অ্যান্ড ডিভাইসস ফর কমিউনিকেশন (সিওডিইসি)" – প্রতিষ্ঠা করে।[৫]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. দীর্ঘ লিঙ্ক - বিস্তারিত দেখতে অনুগ্রহ করে পুরস্কারের বছর নির্বাচন করুন
  2. অনুগ্রহ করে নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি বিভাগ দেখুন

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "View Bhatnagar Awardees"। শান্তি স্বরূপ ভটনাগর প্রাইজ। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "B. R. Nag – Obituary" (পিডিএফ)। Current Science। ২০০৪। 
  3. Proceedings of the International Conference on Computers and Devices for Communication। Allied Publishers। ১৯৯৮। পৃষ্ঠা 19–। আইএসবিএন 978-81-7023-767-9 
  4. "Deceased fellow"। Indian National Science Academy। ২০১৭। ৭ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২৪ 
  5. "Codec History"। CODEC 2012। ২০১৭। 
  6. "Brief Profile of the Awardee"। Shanti Swarup Bhatnagar Prize। ২০১৭। 
  7. P.K. Basu, B.R. Nag (১৯৮৪)। "Alloy scattering limited mobility of two-dimensional electron gas formed in In0.53Ga0.47As"। Surface Science142 (1–3): 256–259। ডিওআই:10.1016/0039-6028(84)90317-0বিবকোড:1984SurSc.142..256B 
  8. "Handbook of Shanti Swarup Bhatnagar Prize Winners" (পিডিএফ)। Council of Scientific and Industrial Research। ১৯৯৯। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  9. "Browse by Fellow"। Indian Academy of Sciences। ২০১৭। 
  10. B. R. Nag (১৯৭২)। Theory of electrical transport in semiconductors। Pergamon Press। আইএসবিএন 9780080168029 
  11. B.R. Nag (১১ এপ্রিল ২০০৬)। Physics of Quantum Well Devices। Springer Science & Business Media। আইএসবিএন 978-0-306-47127-8 
  12. B.R. Nag (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Electron Transport in Compound Semiconductors। Springer Science & Business Media। আইএসবিএন 978-3-642-81416-7 
  13. Institution of Engineers (India) (জুলাই ১৯৬৮)। Journal of the Institution of Engineers (India)। The Institution। 
  14. K. Lal (২ ডিসেম্বর ২০১২)। Synthesis, Crystal Growth and Characterization। Elsevier Science। পৃষ্ঠা 426–। আইএসবিএন 978-0-08-098469-8 
  15. Institution of Engineers (India). Metallurgy & Material Science Division (১৯৬৭)। Journal of the Institution of Engineers (India). Part MM, Mining & Metallurgy Division। The Institution। 
  16. Hari Singh Nalwa (১৭ নভেম্বর ২০০১)। Handbook of Thin Films, Five-Volume Set। Academic Press। পৃষ্ঠা 492–। আইএসবিএন 978-0-08-053324-7 
  17. Karl W. Böer (২৩ এপ্রিল ২০১৪)। Handbook of the Physics of Thin-Film Solar Cells। Springer Science & Business। পৃষ্ঠা 826–। আইএসবিএন 978-3-642-36748-9 
  18. Proceedings of the International Conference on Computers and Devices for Communication। Allied Publishers। ১৯৯৮। পৃষ্ঠা 19–। আইএসবিএন 978-81-7023-767-9 
  19. Kamakhya P. Ghatak; Sitangshu Bhattacharya (৩০ জুলাই ২০১৪)। Heavily-Doped 2D-Quantized Structures and the Einstein Relation। Springer। পৃষ্ঠা 17–। আইএসবিএন 978-3-319-08380-3 
  20. Kamakhya Prasad Ghatak; Sitangshu Bhattacharya; Debashis De (১৬ নভেম্বর ২০০৮)। Einstein Relation in Compound Semiconductors and Their Nanostructures। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 9–। আইএসবিএন 978-3-540-79557-5 
  21. "CSIR list of Awardees"। Council of Scientific and Industrial Research। ২০১৭। 
  22. "List of Jawaharlal Nehru Fellows"। Jawaharlal Nehru Memorial Fund। ২০১৭। 
  23. "INSA Year Book 2016" (পিডিএফ)। Indian National Science Academy। ২০১৭। ৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  24. "INSA Prize for Materials Science"। Indian National Science Academy। ২০১৭। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  25. "Fellow profile"। Indian Academy of Sciences। ২০১৭। 

নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বই[সম্পাদনা]

অধ্যায়[সম্পাদনা]

নিবন্ধ[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:ভৌত বিজ্ঞানে এসএসবি প্রাপক