সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি
সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি (ইংরেজি: Epitaxy এপিট্যাক্সি) বলতে কোনও উপাদান পদার্থের একটি কেলাসের স্তরের উপরে একই উপাদান বা অন্য কোনও উপাদানের অপর আরেকটি কেলাসের স্তরের পরিন্যাস (deposit) ও এভাবে কেলাসের আকার বৃদ্ধির এক ধরনের প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে অধস্থ কেলাসী স্তর তথা বীজ স্তরের সাপেক্ষে এক বা একাধিক সুসংজ্ঞায়িত দিকমুখিতা সহকারে সুবিন্যস্তভাবে সেটির উপরে নতুন কেলাসী স্তরগুলি গঠিত হয়। এভাবে পরিন্যস্ত কেলাসী পর্দা বা ঝিল্লিটিকে একটি সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রলেপ (epitaxial film) বা সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি স্তর (epitaxial layer) বলে। বীজ স্তরের সাপেক্ষে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি স্তরটির দিকমুখিতা কী রকম হবে, সেটি স্তর দুইটির উপাদানের কেলাসী জাফরির দিকমুখিতার উপর নির্ভর করে সংজ্ঞায়িত হয়। সিংহভাগ সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন স্তরটি সাধারণত কেলাসী হয়ে থাকে এবং এই পরিবৃদ্ধি স্তরটির প্রতিটি কেলাসী অধিক্ষেত্রের অবশ্যই অধঃস্তরীয় কেলাস কাঠামোর সাপেক্ষে একটি সুসংজ্ঞায়িত দিকমুখিতা থাকতে হয়। সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধিতে এক-কেলাসী কাঠামো ব্যবহার করা হতে পারে, যদিও দানাদার প্রলেপগুলিতে দানা-থেকে-দানা সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।[১][২] বেশিরভাগ প্রযুক্তিগত প্রয়োগের ক্ষেত্রে একক অধিক্ষেত্র সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি পছন্দ করা হয়, যেখানে অধঃস্তরীয় কেলাসটির সাপেক্ষে একটিমাত্র সুসংজ্ঞায়িত দিকমুখিতায় একটি উপস্তরীয় কেলাসের আকার বৃদ্ধি করা হয়। সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি অতিজাফরি কাঠামোসমূহের আকার-বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।[৩]
অর্ধপরিবাহী শিল্পখাতে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যবহার বিদ্যমান। সেখানে অর্ধপরিবাহী অধঃস্তরীয় পাতলা চাকতির উপরে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্ধপরিবাহীর বিভিন্ন পাতলা প্রলেপ বা স্তর নির্মাণ করা হয়।[৪] এছাড়া আলোক-ইলেকট্রনীয় কলকৌশলের শিল্পোৎপাদনেও এর প্রয়োগ আছে। পরিগণক যন্ত্র (কম্পিউটার), চলমান চিত্র বা ভিডিও প্রদর্শন পর্দা ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার আছে।
একটি অধঃস্তরীয় পাতলা চাকতির উপরে একটি সমতলীয় পাতলা প্রলেপের সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবৃদ্ধিমূলক পাতলা প্রলেপটির কেলাসী জাফরিটির অধঃস্তরীয় পাতলা চাকতিটির কেলাসী জাফরির সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট দিকমুখিতা থাকে। যেমন অধঃস্তরের [০০১] সূচকের সাথে পাতলা প্রলেপের [০০১] মিলার সূচকটি সমরেখ হয়। সবচেয়ে সরল ক্ষেত্রটিতে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধিমূলক স্তর ও অধঃস্তরটি একই অর্ধপরিবাহী যৌগ বা উপাদান দিয়ে গঠিত হতে পারে; এই ব্যাপারটিকে সুষম সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি (Homeoepitaxy) বলে। অন্য ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধ স্তরটি অধঃস্তর অপেক্ষা ভিন্ন একটি যৌগ দিয়ে গঠিত হতে পারে; এ ব্যাপারটিকে বিষম সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি (Heteroepitaxy) বলে। অর্ধপরিবাহী ছাড়াও ধাতু ও অক্সাইড যৌগের মতো উপাদানের ক্ষেত্রেও সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা হতে পারে। ১৯৮০-র দশক থেকে দানবীয় চৌম্বকরোধ প্রদর্শনকারী উপাদানসমূহ প্রস্তুতিকে এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হয়েছে; দানবীয় চৌম্বকরোধ ধর্মটি ব্যবহার করে উচ্চ-ঘনত্বের দ্বি-আংকিক তথ্য-সংরক্ষণ কলকৌশল উৎপাদন করা হয়েছে।
সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধিকে ইংরেজিতে "এপিট্যাক্সি" বলা হয়, যে শব্দটি গ্রিক শব্দমূল "এপি" (ἐπί) অর্থাৎ "পরি-" বা "উপরে" এবং "ট্যাক্সিস" (τάξις) অর্থাৎ "সুশৃঙ্খল উপায়ে" - এই দুইয়ের সমবায়ে গঠন করা হয়েছে।
বাষ্পীয় দশার সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রক্রিয়াতে একটি বাষ্প থেকে পরমাণুগুলি পরিন্যস্ত হয়, অর্থাৎ পদার্থের বায়বীয় দশা ও কঠিন দশার আন্তঃপৃষ্ঠতলে এই কেলাসীয় আকার বৃদ্ধির ঘটনাটি ঘটে। তরল দশার সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রক্রিয়াতে পরিন্যস্ত স্তরগুলি একটি তরল উৎস থেকে আকার বৃদ্ধি করে, অর্থাৎ পদার্থের তরল দশা ও কঠিন দশার আন্তঃপৃষ্ঠতলে এটি ঘটে। কঠিন দশার সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রক্রিয়াতে একটি কেলাসী অধঃস্তরের উপরে প্রথমে একটি পাতলা অকেলাসী বা আকৃতিহীন প্রলেপ স্তর পরিন্যস্ত করা হয়, এরপর একটি কঠিন দশার স্তর-থেকে-স্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি প্রক্রিয়াটি অগ্রসর হয়, যেখানে কেলাসী-অকেলাসী আন্তঃপৃষ্ঠতলে পারমাণবিক চলনের মাধ্যমে পুনর্কেলাসীভবন ঘটে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- পারমাণবিক স্তরে সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি
- তরল দশায় সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি
- সুষম সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি
- সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি স্তর
- রাসায়নিক বাষ্প পরিন্যাস
- কেলাসের আকার বৃদ্ধি
- কেন্দ্রীয়ভবন
- বিকাচীয়ভবন
- আঞ্চলিক গলন
- ভের্নই প্রক্রিয়া
- এরলিখ-শভ্যোবেল প্রতিবন্ধক
- সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধিমূলক পাতলা চাকতি
- বিনিময় পক্ষপাত
- গ্যালিয়াম নাইট্রাইড
- বিষম সন্ধিস্থল
- দ্বৈপ আকার বৃদ্ধি
- ন্যানো-র্যাম
- কোয়ান্টাম প্রপাত লেজার
- নির্বাচনী এলাকা সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি
- নীলকান্তমণীর উপরে সিলিকন
- একক ঘটনা বিপর্যয়
- পাতলা প্রলেপ
- উল্লম্ব-গহ্বর পৃষ্ঠ-নিঃসারী লেজার
- তাপীয় লেজার সুশৃঙ্খল পরিবৃদ্ধি
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ K, Prabahar (২৬ অক্টোবর ২০২০)। "Grain to Grain Epitaxy-Like Nano Structures of (Ba,Ca)(ZrTi)O3/ CoFe2O4 for Magneto–Electric Based Devices"। ACS Appl. Nano Mater.। 3 (11): 11098–11106। ডিওআই:10.1021/acsanm.0c02265।
- ↑ Hwang, Cherngye (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। "Imaging of the grain‐to‐grain epitaxy in NiFe/FeMn thin‐film couples"। Journal of Applied Physics। 64 (6115)। ডিওআই:10.1063/1.342110।
- ↑ Christensen, Morten Jagd (এপ্রিল ১৯৯৭)। Epitaxy, Thin films and Superlattices। আইএসবিএন 8755022987।
- ↑ Udo W. Pohl (১১ জানুয়ারি ২০১৩)। Epitaxy of Semiconductors: Introduction to Physical Principles। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 4–6। আইএসবিএন 978-3-642-32970-8।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Jaeger, Richard C. (২০০২)। "Film Deposition"। Introduction to Microelectronic Fabrication (2nd সংস্করণ)। Upper Saddle River: Prentice Hall। আইএসবিএন 978-0-201-44494-0।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- epitaxy.net ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ মার্চ ২০১৩ তারিখে: a central forum for the epitaxy-communities
- Deposition processes
- CrystalXE.com: a specialized software in epitaxy