বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ এটি গণঅধিকার পরিষদের এর ছাত্র সংগঠন । এটি গঠিত হয়েছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে। এর সূচনা ঘটে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে ব্যাপক ছাত্র অসন্তোষের প্রেক্ষিতে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ | |
---|---|
সভাপতি | বিন ইয়ামিন মোল্লা |
সাধারণ সম্পাদক | নাজমুল হাসান |
প্রতিষ্ঠাতা | নুরুল হক নুর, হাসান আল মামুন |
প্রতিষ্ঠা | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ |
পূর্ববর্তী | বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ |
দলীয় পতাকা | |
সংগঠনটির প্রথম কর্মসূচি ছিল ২০১৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে। কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন প্রথম আহবায়ক রাজু আহমেদ। পরবর্তীতে প্রশাসনের চাপে তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে ২০ ফেব্রুয়ারি হাসান আল মামুন আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠনের ইতিহাস এক বিশাল ও তাত্পর্যপূর্ণ আন্দোলনের ফলাফল, যা ২০১৮ সালে দেশের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়।[২] এর শুরুর পটভূমি ছিল বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ। কোটা ব্যবস্থা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০%, নারীদের জন্য ১০%, উপজাতিদের জন্য ৫% এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১% কোটা সংরক্ষিত ছিল। এতে ৫৬% কোটা বরাদ্দ থাকায় মেধার ভিত্তিতে চাকরির প্রার্থীরা নিয়োগে বঞ্চিত হচ্ছিলেন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ২০১৩ সাল থেকে ছেলেমেয়েরা কোটা সংস্কারের জন্য আওয়াজ তুলতে শুরু করে, তবে ২০১৮ সালে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।
আন্দোলনের সূচনা
[সম্পাদনা]২০১৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন এবং নুরুল হক নুর-সহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন, যা পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে পরিচিত হয়, এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। তারা পাঁচটি মূল দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—কোটার হার কমিয়ে ১০% করা, কোটা পূরণ না হলে শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া, এবং কোটা বাতিল হলে তা আদালতের মাধ্যমে ঘোষণা করা।
আন্দোলনের বিস্তার এবং প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]এই আন্দোলন দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসে এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ এবং ধর্মঘটের ডাক দেয়। আন্দোলনের মূল দাবিগুলো ছিল:
- কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬% থেকে কমিয়ে ১০% করা।
- কোটা না পূরণ হলে শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ।
- কোটা সুবিধাভোগীদের পরীক্ষার যোগ্যতা কমিয়ে না রাখা।
- চাকরির আবেদন ফি সমান করা।
- কোটা বাতিল করলে তা আদালতের মাধ্যমে করা।
সরকার প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের দাবির গুরুত্ব বিবেচনা করে একটি আশ্বাস দেয়, কিন্তু আন্দোলন থামেনি। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলা হয় এবং অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। এসব ঘটনার ফলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
আদালতে রিট এবং বাতিল
[সম্পাদনা]কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন, একটি পক্ষ এই দাবির বিপরীতে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে।[৩][৪] তবে, রিটটি পরবর্তীতে উচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল করা হয়,[৫][৬] যা আন্দোলনকারীদের মনোবলকে আরও শক্তিশালী করে।শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতে থাকে যে কোটা সংস্কার ছাড়া অন্য কোনো সমাধান গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও যুক্ত হয়।
সরকারী সিদ্ধান্ত এবং প্রতিশ্রুতি
[সম্পাদনা]প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ই এপ্রিল ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন যে, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা হবে।[৭] তার এই ঘোষণা আন্দোলনকারীদের মধ্যে স্বস্তি আনে, তবে এর প্রেক্ষিতে কোনো আনুষ্ঠানিক গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামে। গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।[৮] পরবর্তীতে সরকার একটি কমিটি গঠন করে কোটার সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কাজ শুরু করে, তবে এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফের অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠা
[সম্পাদনা]এই দীর্ঘ ও তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। আন্দোলনের সাফল্যের পর, এই সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে। ২০১৯ সালে এটি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নামে পূর্ণাঙ্গ ছাত্র সংগঠনে রূপান্তরিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রাখা।
পরবর্তীতে, সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে, বিশেষত গণতান্ত্রিক অধিকার এবং শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার সংক্রান্ত ইস্যুগুলোতে।
প্রথম পরিষদ
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২৮ই আগষ্ট ২০২১ খ্রিঃ। এতে বিন ইয়ামিন মোল্লা সভাপতি ও আরিফুল ইসলাম আদীব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন মোল্লা রহমতুল্লাহ।
ডাকসু নির্বাচন, ২০১৯
[সম্পাদনা]২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য সংগঠনটি ২৫ ফেব্রুয়ারি নিজেদের প্যানেল ঘোষণা করে।[৯][১০] প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোঃ রাশেদ খাঁন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোঃ ফারুক হোসেন মনোনীত হন।[১১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "'বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের' এক বছর"। thedailycampus.com। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ bdnews24.com। "Timeline: How a quota reform movement caused a government to fall"। How a quota reform movement caused a govt to fall (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৪।
- ↑ "সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল চেয়ে রিট"। আরটিভি অনলাইন।
- ↑ "সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল চেয়ে রিট"। বাংলা ট্রিবিউন।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "কোটা সংস্কার চেয়ে করা রিট খারিজ"। দৈনিক প্রথম আলো।
- ↑ "সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের রিট খারিজ"। দৈনিক যুগান্তর।
- ↑ Report, Star Online (২০১৮-০৪-১১)। "PM announces to abolish quota system in public service"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৪।
- ↑ "কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে আটক ৩ - poriborton.com"। ৩০ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ "হুদা কমিশন নেই এটাই ডাকসুর ভরসা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-২৮।
- ↑ "ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন কোটা আন্দোলনকারীরা"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "ডাকসু নির্বাচনে নুর–রাশেদ–ফারুকের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-২৮।