ফ্রঁসোয়া ত্রুফো
ফ্রঁসোয়া ত্রুফো | |
---|---|
জন্ম | ফ্রঁসোয়া রোলঁ ত্রুফো ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ |
মৃত্যু | ২১ অক্টোবর ১৯৮৪ নোইয়ি-সুর-সেন, ও-দ্য-সেন, ফ্রান্স | (বয়স ৫২)
পেশা | চলচ্চিত্র সমালোচক, পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৫৫ - ১৯৮৩ |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাদলেন মর্গেনস্টার্ন (বি. ১৯৫৭–১৯৬৫) (তালাকপ্রাপ্ত) |
সন্তান | ২ |
ফ্রঁসোয়া রোলঁ ত্রুফো (ফরাসি ভাষা: François Roland Truffaut) (৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ - ২১শে অক্টোবর, ১৯৮৪) একজন ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক ও সমালোচক। তিনি ফ্রান্সের চলচ্চিত্র নির্মাণে নতুন ধারার সৃষ্টি করেন এবং এর মাধ্যমে সে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ স্থান করে নেন। মাত্র ২৫ বছর দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা, প্রযোজনা এবং অভিনয়ের কাজ করেন। তিনি ২৫টির মত চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
জীবনী
[সম্পাদনা]চলচ্চিত্র সমালোচনা
[সম্পাদনা]১৯৪৮ সালে নিজের চলচ্চিত্র ক্লাব শুরুর পর ত্রুফো অঁদ্রে বাজাঁর সাথে পরিচিত হন। ত্রুফোর পেশাদারী ও ব্যক্তিগত জীবনে বাজাঁর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাজাঁ সে সময়ে একই সাথে একজন চলচ্চিত্র সমালোচক ও অন্য একটি চলচ্চিত্র সমিতির প্রধান ছিলেন। ত্রুফোর সাথে তার বন্ধুত্ব হয় এবং তিনি ত্রুফোকে বিভিন্ন রকমের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন।[১]
১৯৫০ সালে ১৮ বছর বয়সে ত্রুফো ফরাসি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, কিন্তু পরবর্তী দুই বছর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেনাবাহিনী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে ত্রুফো গ্রেফতারও হন। বাজাঁ তার রাজনৈতিক যোগসূত্রের মাধ্যমে ত্রুফোকে ছাড়িয়ে নেন এবং তাকে তার নব্যপ্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র সাময়িকী কাইয়ে দ্যু সিনেমায় (ফরাসি Cahier du Cinéma) চাকরি দেন। পরবর্তী কয়েক বছরে ত্রুফো কাইয়ে-র সমালোচক (ও পরবর্তীতে সম্পাদক) হয়ে ওঠেন। সেখানে তিনি তার নিষ্ঠুর ও নির্দয় পর্যালোচনার জন্য এমনই কুখ্যাত হয়ে ওঠেন, যে এক পর্যায়ে তাকে "ফরাসি চলচ্চিত্রের গোরখোদক" নাম দেওয়া হয়।[২] তিনিই একমাত্র ফরাসি সমালোচক ছিলেন যাকে ১৯৫৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বাজাঁকে চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রভাবশালী তত্ত্ব "রচয়িতা তত্ত্ব"টির (ইংরেজি Auteur theory) উন্নয়নে সমর্থন দেন ও সহযোগিতা করেন।[৩]
১৯৫৪ সালে ত্রুফো কাইয়ে দ্যু সিনেমায় "আঁ সেরত্যাঁ তঁদঁস দ্যু সিনেমা ফ্রঁসে" ("ফরাসি চলচ্চিত্রের একটি নির্দিষ্ট প্রবণতা") নামে একটি নিবন্ধ লেখেন, যেখানে তিনি ফরাসি চলচ্চিত্রের তৎকালীন অবস্থার বিরুদ্ধে, কয়েকজন চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজকদের বিরুদ্ধে লেখেন এবং আটজন পরিচালকের তালিকা করেন, যাদেরকে তিনি "জঘন্য" ও "হাস্যরসাত্মক" ধরনের চরিত্র ও কাহিনী বিকাশে অপরাগ মনে করতেন, যা ছিল সে সময়ের মূলধারার ফরাসি চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই আটজন পরিচালক হলেন - জঁ রনোয়ার, রোবের ব্রেসোঁ, জঁ ককতো, জাক বেকের, আবেল গঁস, মাক্স অফ্যুল্স, জাক তাতি ও রোজে লেনার্ত। এই নিবন্ধ প্রকাশের পর বিতর্ক শুরু হয় এবং ত্রুফোকে দেশব্যাপী প্রচারিত ও অধিক পঠিত সাংস্কৃতিক সাপ্তাহিকী আর-লেত্র-স্পেক্তাক্ল-এ লেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ত্রুফো পরবর্তী চার বছরে ঐ প্রকাশনার জন্য আরও ৫০০ চলচ্চিত্র বিষয়ক নিবন্ধ রচনা করেন।
ত্রুফো পরবর্তীতে তার "রচয়িতা তত্ত্ব" উদ্ভাবন করেন, যেখানে বলা হয় একজন পরিচালক তার কাজের "রচয়িতা"। বিখ্যাত পরিচালক রনোয়ার ও হিচককের সকল চলচ্চিত্রে ভিন্ন কৌশল ও বিষয়বস্তু ছিল, যা তাদের সকল চলচ্চিত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবিষ্ট হতো। যদিও তার এই তত্ত্ব খুব বেশি গ্রহণযোগ্য হয়নি, ১৯৬০ এর দশকের মার্কিন সমালোচক অ্যান্ড্রু স্যারিস এই তত্ত্বকে সমর্থন দেন। ১৯৬৭ সালে ত্রুফো হিচককের সাথে তার সাক্ষাৎকার নিয়ে হিচকক/ত্রুফো নামে একটি বই প্রকাশ করেন।
চলচ্চিত্র পরিচালনা
[সম্পাদনা]চলচ্চিত্র সমালোচনা লেখার পর ত্রুফো চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৯৫৫ সালে উ্যন ভিজিত (ফরাসি Une Visite) নামক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচালনা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি লে মিস্তোঁ (১৯৫৭) নির্মাণ করেন। অরসন ওয়েলস নির্মিত টাচ অব ইভিল দেখার পর তিনি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে অনুপ্রাণিত হন এবং ১৯৫৯ সালে তিনি লে কাত্র্ সঁ কু নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি সফলতা লাভ করে এবং তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার লাভ করেন।[৪] তার পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোও স্বল্প ব্যয়ে নির্মাণ হলেও সফল হয়।
তিনি ১৯৭৭ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ক্লোজ এনকাউন্টার্স অব দ্য থার্ড কাইন্ড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তিনি বিজ্ঞানী ক্লোদ লাকোঁব চরিত্রে অভিনয় করেন।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Truffaut, François (১৯৮৯)। Correspondence, 1945–1984 (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Farrar, Straus and Giroux। পৃষ্ঠা 17, 50, 57।
- ↑ SUKHDEV SANDHU (২ এপ্রিল ২০০৯)। "Film as an act of love" (ইংরেজি ভাষায়)। New Statesman। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ The Editors of Encyclopædia Britannica (২০ জুলাই ১৯৯৮)। "Auteur theory FILMMAKING" (ইংরেজি ভাষায়)। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Francois Truffaut" (ইংরেজি ভাষায়)। François Truffaut। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ Aurélien Ferenczi (২৬ অক্টোবর ২০১৪)। "Qu'allait-donc faire Truffaut chez Spielberg ?" (ইংরেজি ভাষায়)। Télérama। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ফ্রঁসোয়া ত্রুফো (ইংরেজি)
- François Truffaut bibliography via the UC Berkeley Media Resources Center
- Senses Of Cinema: François Truffaut
- Legendary interview with Truffaut from 1970
- An article on Truffaut and his influence by director Martin Scorsese as he commemorates him as one of the 60 greatest heroes from Europe as selected by Time magazine ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে
- ১৯৩২-এ জন্ম
- ১৯৮৪-এ মৃত্যু
- চলচ্চিত্র ঐতিহাসিক
- চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক
- প্যারিসের অভিনেতা
- ফরাসি নাস্তিক
- ফরাসি চলচ্চিত্র অভিনেতা
- ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক
- ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক
- ফরাসি চলচ্চিত্র প্রযোজক
- ফরাসি চিত্রনাট্যকার
- ফ্রান্সে ক্যান্সারে মৃত্যু
- মস্তিষ্কের টিউমার থেকে মৃত্যু
- শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে সেজার পুরস্কার বিজয়ী
- শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে বাফটা পুরস্কার বিজয়ী
- শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রের পরিচালক
- ২০শ শতাব্দীর ফরাসি অভিনেতা
- ২০শ শতাব্দীর ফরাসি ইতিহাসবিদ
- শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার বিজয়ী