ফৌজদার

পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার সাম্রাজ্যিক, রাজকীয় ও অভিজাত পদমর্যাদা |
---|
একটি ধারাবাহিকের অংশ |
![]() |
|
ফৌজদার মুঘল-পূর্ব একটি শব্দ ছিল। মুঘলদের অধীনে এটি একটি সামরিক দলের সেনাপতি, বিচার বিভাগীয় এবং ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত কার্যগুলি সমন্বিতভাবে করার একটি পদ ছিলো।[১][২]
মুঘল-পূর্ব যুগে এই শব্দটি নির্দিষ্ট পদ না বুঝিয়ে শুধুমাত্র একজন সামরিক কর্মকর্তাকে বোঝাতো। মুঘল সম্রাট আকবর কর্তৃক পরিচালিত প্রশাসনিক সংস্কারের সাথে এই পদটিও ব্যবস্থাভুক্ত হয়েছিল।
এটি একটি স্বতন্ত্র প্রশাসনিক একক হিসেবে গঠিত হয়েছিল এবং এর আঞ্চলিক সীমা, স্থান এবং সময়েভেদে পরিবর্তিত হয়েছিল।[৩]
একটি ফৌজাদারীতে বেশ কয়েকটি থানা বা সামরিক ফাঁড়ি ছিলো। এগুলোর প্রত্যেকটিতে একটি থানাদারের অধীনে কিছু অশ্বারোহী/সৈন্য ছিল। ফৌজদার তার সাথে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য বহন করত এবং বিভিন্ন থানায় সেনা মোতায়েনের দায়িত্ব তার অধীনে ছিল।[৪]
এছাড়াও কিছু ফৌজদারিতে হুজুরি বা হুজুরি মাশ্রুতি হিসাবে বর্ণিত বেশ কয়েকটি থানা ছিল। এই থানায় থানাদারদের রাজকীয় আদেশের মাধ্যমে বা প্রদেশের নাজিম বা দিওয়ানের সুপারিশের মাধ্যমে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োগ দিতো। এই ধরনের থানাদারগণ যথেষ্ট পরিমাণে স্বতন্ত্র ক্ষমতাধারী কর্মকর্তা ছিলেন, যারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সরাসরি আদেশ পেতে পারেন। এদের সম্ভবত ফৌজদারের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় তার সাথে সহযোগিতা করাতো আশা। হয়তো উচ্চাভিলাষী ফৌজদারদের নজরে রাখতে থানাদার পদ সৃষ্টি করা হয়েছিলো।[৫]
যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে কোনো ফৌজদারকে সাম্রাজ্যবিধি কার্যকর করার জন্য বলা যেতে পারতো।[৬]
তারা রাজকীয় আদেশের ভিত্তিতে নিযুক্ত হতো এবং এ নিয়োগপত্রে বকশী উল মুল্কির মোহর ছাপা থাকতো। তারা সরাসরি আদেশ সম্রাটের কাছ থেকে আদেশ পেতো এবং সরাসরি দরবারে তথ্য জমা দিতো। স্থানান্তর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অনুশীলন ছিল।[৭]
সাধারণত তার নিম্নোক্ত দায়িত্বগুলো ছিলো:[৮][৯][১০]
- আইন শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ।
- সাম্রাজ্যবিধিসমূহ প্রয়োগ।
- মদ্যপান এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ ক্রিয়াকলাপ রোধ করা।
- কামাররা যেনো বন্দুক তৈরি না করে তা নিশ্চিত করা।
- চোরদের ধরা এবং চুরি করা সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করা। তিনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ ছিলেন।
- আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সড়ক ও মহাসড়কগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
- বিদ্রোহী জমিদারদের তদারকিতে রাখা।[১১]
- যে কোনও কারণেই কোনও সৈনিক তার ঘোড়া হারিয়ে ফেললে তার সৈন্যরা সুসজ্জিত কিনা তা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
- তিনি ন্যায়বিচার রক্ষা করবেন।
- আদালতে তিনি, কাজী ও দিওয়ান উপস্থিত থাকবেন। তিনি এর সভাপতিত্ব করেন।
- পবিত্র আইন সম্পর্কিত মামলাগুলোতে মুফতি, কাজী ও মীর আদলের-এর মতো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
- যেসব মামলা রাজস্ব এবং অন্যান্য সাধারণ সাম্রাজ্যীয় বিধিবিধানের আওতায় আসে, তার সিদ্ধান্ত অন্য কারও সাথে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিতেন।
- যেসব জমিদাররা অর্থ প্রদান থেকে বিরত থাকতো এবং কেবলমাত্র বলের হুমকিতে অর্থ প্রদান করে, সেখানে তিনি সরাসরি যুক্ত হতেন।
- এ জাতীয় জমিদারদের কাছ থেকে জমির রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা মাওরিদের হাতে অর্পণ করতে বা কোনও মধ্যস্থতাকারীকে মনোনীত করতে এবং মাওরিকে মধ্যস্থতাকারীর থেকে জমির রাজস্ব আদায়ের অনুমতি দিতে পারেন।
- পরোক্ষভাবে ভূমি রাজস্বের সাথে জড়িত ছিল কারণ খলসারর আমিল বা জগিরের লিখিত অনুরোধে জমির রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে হতো। আমিলের কাছ থেকে লিখিত অনুরোধ না আসা পর্যন্ত কোনও গ্রামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
- এ জাতীয় লিখিত অনুরোধের পরে তাকে কয়েকজন মুকাদ্দামকে ধরে রাখতে এবং অনুগত হতে বাধ্য করতেন। তারা যদি এ পর্যায়ে অনুকূল প্রতিক্রিয়া জানায় তবে ফৌজদারকে আমিলের কাছ থেকে লিখিত সম্মতি পেতে হতো।
- যদি মুকাদ্দামরা জমা দিতে অস্বীকার করে, তবে তিনি এই গ্রামে লাঠিপেটা-লুন্ঠন করতে এবং বিদ্রোহীদের শাস্তি দেবেন। চাষীদের ক্ষতি করা উচিত নয়। অর্জিত মালামালসমূহ আমিলের হাতে হস্তান্তর করতেন, বিপরীতে যারা ফৌজদারকে একটি রসিদ দিত।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Alam, Muzaffar; Subrahmanyam, Sanjay, সম্পাদকগণ (১৯৯৮)। The Mug̲h̲al state, 1526-1750। Oxford in Indian readings। Delhi ; New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা ২৫১। আইএসবিএন 978-0-19-563905-6।
- ↑ Chaturvedi, Vinayak (২০০৭)। Peasant Pasts: History and Memory in Western India (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। পৃষ্ঠা ৪৪। আইএসবিএন 978-0-520-25076-5।
- ↑ Ibid pg 236
- ↑ Ibid pg 243
- ↑ Ibid pg 243-4
- ↑ Ibid pg 244
- ↑ Ibid pg 245
- ↑ Ibid pg 246-47
- ↑ Ibdid pg 248-49
- ↑ Ibid pg 250
- ↑ Hakeem, Farrukh B.; Haberfeld, M. R.; Verma, Arvind (২০১২-০৫-০২)। Policing Muslim Communities: Comparative International Context (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা ৬৭। আইএসবিএন 978-1-4614-3552-5।