প্রবেশদ্বার:কবিতা/নির্বাচিত জীবনী/১২

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

"কবিরঞ্জন" রামপ্রসাদ সেন (১৭১৮ বা ১৭২৩ – ১৭৭৫) ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর এক বিশিষ্ট বাঙালি শাক্ত কবি। বাংলা ভাষায় দেবী কালীর উদ্দেশ্যে ভক্তিগীতি রচনার জন্য তিনি সমধিক পরিচিত; তাঁর রচিত "রামপ্রসাদী" গানগুলি আজও সমান জনপ্রিয়। রামপ্রসাদের জীবন সংক্রান্ত নানা বাস্তব ও অলৌকিক কিংবদন্তি বাংলার ঘরে ঘরে প্রবাদবাক্যের মতো প্রচারিত। তবে নানা সূত্র থেকে তাঁর জীবন সম্পর্কে কিছু ঐতিহাসিক তথ্যও পাওয়া যায়।

রামপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের এক তান্ত্রিক পরিবারে। বাল্যকাল থেকেই কাব্যরচনার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ লক্ষিত হত। পরবর্তীকালে তিনি তন্ত্রাচার্য ও যোগী কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর রচিত ভক্তিগীতিগুলি তাঁর জীবদ্দশাতেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভে সমর্থ হয়। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। রামপ্রসাদ সেনের উল্লেখযোগ্য রচনা হল বিদ্যাসুন্দর, কালীকীর্তন, কৃষ্ণকীর্তনশক্তিগীতি

বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত ধারা বাউল ও বৈষ্ণব কীর্তনের সুরের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগরাগিণীর মিশ্রণে তিনি বাংলা সংগীতে এক নতুন সুরের সৃষ্টি করেন। রামপ্রসাদী সুর নামে প্রচলিত এই সুরে পরবর্তীকালেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বহু সংগীতকার গীতিরচনা করেছেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হলেন রামপ্রসাদ সেন। তিনিই বাংলায় ভক্তিবাদী শাক্তধর্ম ও দেবী কালীর লীলাকীর্তন শ্যামাসংগীতের ধারাটিকে[২৮][২৯] জনপ্রিয় করে তোলেন। রামপ্রসাদ সেনই প্রথম কবি যিনি এই প্রকার গভীর ভক্তিসহকারে দেবী কালীর লীলাকীর্তন গান রচনা করেন। তাঁর গানেই প্রথম কালীকে স্নেহময়ী মাতা এমনকি ছোটো মেয়ের রূপেও দেখা যায়। তাঁর পরে একাধিক শাক্ত কবি এই কালীভক্তি প্রথাটিকে উজ্জীবিত করে রাখেন।

কীর্তন ও বাংলার লোকসঙ্গীত ধারার বাউল গানের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরের মিশ্রণে রামপ্রসাদ বাংলা সংগীতে এক নতুন সুর সৃষ্টি করেন। পরবর্তী দেড়শো বছরে শতাধিক কবি ও সংগীতকার এই সুরে গান রচনা করেছিলেন। তাঁর কাব্য ছিল "মধুর, আটপৌরে ও অসংস্কৃত"।[৩০] যদিও এই সব গান লোকসুরের বদলে শাস্ত্রীয় ধারায় গাওয়ারই রীতি প্রচলিত ছিল।[৫][৩১] একই ধারায় সংগীতরচনাকারী তাঁর দুই বিশিষ্ট উত্তরসূরি হলেন কমলাকান্ত ও মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।