পিত্তপাথুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিত্তপাথুরী
বিশেষত্বপাকান্ত্রবিজ্ঞান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
পিত্তাশয়ের প্রস্থচ্ছেদের মাধ্যমে পিত্তাশয়ের পাথর দেখা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আকারের হলুদ পাথরগুলো কোলেস্টেরল জমে তৈরী, সবুজাভ বা বাদামী বর্ণের পাথরগুলি সম্ভবত বাইল পিগমেন্ট (bile pigments) যেমন বিলিভারডিন (biliverdin) দ্বারা তৈরী।

পিত্তপাথুরী বা পিত্তাশয় পাথর (ইংরেজি: Gallstone) হলো পিত্তাশয়ের একটি রোগ যাতে মানুষের পিত্তাশয়ে পাথর জমা হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কোলেলিথিয়াসিস (Cholelithiasis) নামে পরিচিত। উন্নত দেশে প্রায় ১০-২০% প্রাপ্তবয়স্ক লোক এই রোগে আক্রান্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রতে প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যক্তির পিত্তথলিতে পাথর যার মোট ওজন প্রায় ২৫-৫০ টন হতে পারে! ৮০% এরও বেশি ক্ষেত্রে এটি কোন সমস্যা বা জটিলতা সৃষ্টি করে না। মূলত দুই ধরনের পাথর পাওয়া যায়; কোলেস্টেরল পাথর ও পিগমেন্ট পাথর। উন্নত বিশ্বে ৯০% পাথরই কোলেস্টেরল দিয়ে তৈরি; বাদবাকি পিগমেন্ট পাথর। তবে অনেকসময় মিশ্র পাথরও পাওয়া যায়। পিগমেন্ট পাথর এশিয়াতে বেশি পাওয়া যায়। কোলেস্টেরল পাথরের কারণগুলো হলো:

★ বয়সঃ বয়স্ক লোকের পাথর বেশি হয়; যেমন ৮০ বছর বয়স্ক লোকের পাথর হওয়ার সম্ভাবনা ২৫-৩০% যেখানে ৪০ বছরের নিচে এটি ৫-৬% এর নিচে নেমে আসে।

★ লিঙ্গঃ পুরুষের তুলনায় মহিলাদের পিত্তথলির পাথর হবার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে মহিলাদের সেক্স হরমোন(ইস্ট্রোজেন), জন্মবিরতি করণ বড়ি, গর্ভধারণ প্রভৃতি।

স্থুলতামেটাবলিক সিনড্রোম

★ খুব দ্রুত ওজন কমানো।

★ পিত্তথলির স্থবিরতা।

★ বাইল এসিড বিপাকের জন্মগত ত্রুটি।

হাইপারলিপিডেমিয়া সিনড্রোমস।

পিগমেন্ট পাথরের কারণসমূহ হলো--

★ ক্রনিক হিমোলাইটিক সিনড্রোম।

★ বিলিয়ারি ইনফেকশন।

★ আইলিয়ামের রোগ যেমন, ক্রন্স ডিজিজ, আইলিয়াম কেটে ফেলা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ইত্যাদি।

পিগমেন্ট পাথরসমূহ প্রধানত বিলিরুবিনের ক্যালসিয়াম লবণ, কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম পামিটেট প্রভৃতি নিয়ে তৈরি। পিগমেন্ট পাথর দুই ধরনের হয় যথা কালো ও বাদামি। প্রায় ৫০-৭৫% কালো পাথর রেডিও-ওপেক অর্থাৎ এক্সরেতে সাদা দেখায়; অপরদিকে বাদামিগুলো রেডিও-লুসেন্ট অর্থাৎ এক্সরেতে দেখা যায়না। ১০-২০% কোলেস্টেরল পাথর এক্সরেতে দেখা যায় কারণ সেগুলোতে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট যুক্ত থাকে, বাকিগুলো বিশুদ্ধ কোলেস্টেরল হওয়ায় দেখা যায়না। [১]

পিত্তাশয় পাথরের ভিডিও বিশ্লেষণ

উপসর্গসমূহ[সম্পাদনা]

পিত্তাশয় পাথর

ল্ল ৮০% ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ দেখা যায়না। ১০-২০% ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষ্মণসমূহ দেখা যায়ঃ

বিলিয়ারি কোলিক

পেটের ডানদিকের উপরের অংশে ব্যথা তবে এপিগ্যাস্ট্রিয়াম বা পেটের মাঝ বরাবর উপরের অংশে বুকের ঠিক নিচেও ব্যথা হতে পারে।

অ্যাকিউট কোলেসিস্টাইটিস: পিত্তাশয় এর তীব্র প্রদাহ হয়, ব্যথা, জ্বর, বমি হতে পারে।

ক্রনিক কোলেসিস্টাইটিস [২]

জটিলতাসমূহ[সম্পাদনা]

এম্পাইমা অব গলব্লাডার

পিত্তাশয়ে অনবরত মিউকাস ক্ষরণের ফলে এটি ধীরে ধীরে আকারে বাড়তে থাকে একে মিউকোসিল বলে। মিউকোসিলে ইনফেকশন হলে পিত্তাশয়ে পুঁজ তৈরি হয়(এম্পাইমা)। পিত্তাশয়ে প্রদাহজনিত কারণেও এম্পাইমা হতে পারে। পুঁজ বের করে পরবর্তীতে পিত্তাশয় কেটে ফেলতে হবে।

কোলেডোকোলিথিয়াসিস

পাথর কমন বাইল ডাক্টে এসে আটকে যায় এবং পিত্তরসের প্রবাহে বাধা দেয় ফলে রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং জন্ডিস হয়, ব্যথা হয়। এই ধরনের জন্ডিসকে অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস বলে। পাথর সরিয়ে ফেললে দ্রুত জন্ডিস ভালো হয়।

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস: পাথর অনেকসময় কমন পিত্তনালী বেয়ে নিচের দিকে ডিউওডেনামের অ্যাম্পুলা অব ভ্যাটার নামক অংশে যেখানে পিত্তনালী উন্মুক্ত হয় সেখানে আটকে যায় এবং পিত্তরস ও অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত উৎসেচকের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে ফলে উক্ত উৎসেচকগুলো অগ্নাশয়ের কোষকে ধ্বংস করতে শুরু করে এবং তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে।

পোর্সিলিন গলব্লাডার

কখনো কখনো পিত্তাশয়ে ক্যালসিয়াম ক্ষরণ হয় এবং পিত্তরসকে চুনের মত দেখায়। ক্যালসিয়াম পিত্তাশয়ের গায়ে জমা হয় ফলে পিত্তাশয়কে এক্সরেতে চীনামাটির বাসনের মত দেখায়।

গলস্টোন আইলিয়াস

পিত্তাশয় ফুটো হয়ে ডিউওডেনাম বা কোলনের সাথে ফিস্টুলা তৈরি করতে পারে এবং পাথর ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদান্ত্রে চলে যেতে পারে। পাথরের আকার ২.৫ সে.মি. থেকে বেশি হলে এটি আইলিয়ামের শেষ অংশে বা কখনো কখনো ডিওডেনাম বা সিগময়েড কোলনে আটকিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদান্ত্রের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাদান করে(ইন্টেস্টিনাল অবস্ট্রাকসন)। এক্সরে করলে বিলিয়ারি ট্রিতে বায়ুর উপস্থিতি পাওয়া যায়(নিউমোবিলিয়া)।

মিরিজি সিনড্রোম

সিস্টিক নালীতে পাথর আটকিয়ে গেলে তা কমন হেপাটিক বা কমন বাইল ডাক্টে চাপ দিয়ে প্রদাহ করতে পারে ফলশ্রুতিতে কমন পিত্তনালীতে স্ট্রিকচার(প্রদাহজনিত সংকোচন) হয়ে পিত্তরসের প্রবাহ ব্যাহত করে অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস করবে।

পিত্তাশয় ক্যান্সার

পিত্তাশয় ক্যান্সার দুর্লভ হলেও প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রে এটি পিত্তপাথরের সাথে সম্পর্কিত। [২]

পরীক্ষা-নিরীক্ষা[সম্পাদনা]

আল্ট্রাসনোগ্রাম প্রথম পছন্দ কারণ এর মাধ্যমে খুব সহজে পাথর দেখা যায়। অন্যান্য উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সিটি স্ক্যান, এম আর সি পি, এক্সরে।

পিত্তাশয় পাথরের সিটি (CT) স্ক্যানের ছবি

চিকিৎসা[সম্পাদনা]

মেডিকেল : পাথরের আকার ১৫ মি.মি. এর কম হলে, এক্সরেতে দেখা না গেলে, রোগীর স্থুলতা মাঝারি হলে এবং রোগীর উপসর্গ হালকাধরনের হলে মেডিকেল চিকিৎসা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাইল এসিড যেমন আরসোডিঅক্সিকোলিক এসিড দীর্ঘমেয়াদে মুখে খেতে হয়। এটি পাথরকে ভেঙে দ্রবীভূত করে। তবে কিছুটা সময় লাগলেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় পিত্তথলির পাথরের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

সার্জারি : পিত্তাশয় কেটে ফেলাকে কোলেসিস্টেক্টোমি বলে। এটি দুই ভাবে করা হয়; ওপেন বা পেট কেটে এবং ল্যাপারস্কপির মাধ্যমে। ল্যাপারস্কপির কিছু বাড়তি সুবিধা আছে যেমন পেট কাটার প্রয়োজন হয় না, হাসপাতালে রোগীকে বেশিদিন অবস্থান করতে হয় না, তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায় প্রভৃতি। অসুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কমন পিত্তনালীতে পাথর থাকলে তা বের করা যায়না। [৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lammert F, Miguel JF: Gallstone disease: from genes to evidence based therapy. J Hepatol 48:S124, 2008.
  2. Liver and Biliary Tract Disease, Davidson's Principles And Practice of Medicine, 21st edition, page:978.
  3. The gallbladder and bile ducts, Bailey & Love's Short Practice of Surgery, 25th edition, page:1122-1123.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]