পদার্থের অবস্থা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পদার্থবিদ্যার ভাষায়,একটি পদার্থের চিহ্নযোগ্য অবস্থাকেই পদার্থের অবস্থা বলা হয়।আমরা আমাদের রোজকার জীবনে পদার্থের ৩ ধরনের অবস্থা দেখে থাকি: কঠিন,তরল, গ্যাসীয়। এছাড়াও আরও কিছু অবস্থা আছে, যা কেবলমাত্র চরম পরিস্থিতিতেই পাওয়া যায়। যেমন বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট, নিউট্রন ডিজেনারেট ম্যাটার এবং কোয়ার্ক গ্লুওন প্লাজমা, যেগুলো যথাক্রমে চরম নিম্ন তাপমাত্রা, চরম ঘনত্ব এবং চরম উচ্চশক্তির কোল্ড চার্জড পদার্থের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। আরও কিছু অবস্থা আছে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, কিন্তু সেগুলো এখন পর্যন্ত তত্ত্বেই সীমাবদ্ধ আছে। পদার্থের সকল এক্সটিক অবস্থার সম্পূর্ণ তালিকার জন্য পদার্থের অবস্থাসমূহের তালিকা দেখুন।

পদার্থের এমন পৃথকীকরণ তাদের স্বধর্মের গুনগত পার্থক্যের উপর ভিক্তি করেই তৈরী করা হচ্ছে। কঠিন অবস্থায় পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকে।পদার্থ গঠনকারী কণাগুলো (অণু, পরমাণু অথবা আয়ন) কাছাকাছি অবস্থান করে এবং একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে।তরল অবস্থায় পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আয়তন থাকে,কিন্তু আকার নির্দিষ্ট হয়না।এ কারণে এরা ধারণকারী পাত্রটির আকার ধারণ করতে পারে।এর গঠনকারী কণাগুলো কাছাকাছি থাকে কিন্তু মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারে। গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের কোন নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকেনা, আর সেজন্য এটি ধারক পাত্রের আকার ও আয়তন ধারণ করতে পারে।গঠনকারী কণাগুলো কাছাকাছিও থাকেনা, আবার একটি নির্দিষ্ট অবস্থানেও থাকেনা।প্লাজমা অবস্থায় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকেনা কিন্তু চার্জবিহীন পরমাণুর মত এর নির্দিষ্ট পরিমান আয়ন আর ইলেকট্রন থাকে। এরা উভয়েই মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারে।প্লাজমা দৃশ্য পদার্থগুলোর সবচেয়ে সাধারণ রূপ।[১]

পদার্থের চারটি মৌলিক অবস্থা।উপর থেকে প্রথমটিতে বরফ ভাস্কর্য দিয়ে কঠিন অবস্থা,তারপরেরটিতে পানির ফোটা দিয়ে তরল অবস্থা,তারপরেরটিতে মেঘ দিয়ে গ্যাসীয় অবস্থা আর সবশেষে টেসলা কয়েল থেকে সৃষ্ট বৈদ্যুতিক আর্ক দিয়ে প্লাজমা অবস্থা দেখানো হয়েছে।

দশা শব্দটিকে কোন কোন সময় পদার্থের অবস্থার সমার্থক শব্দরূপে ব্যবহার করা হয়।কিন্তু একটি ব্যবস্থা পদার্থের একটি অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন দশায় থাকতে পারে (এ দুটির পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন দশা (পদার্থ))।

চারটি মৌলিক অবস্থা[সম্পাদনা]

কঠিন[সম্পাদনা]

একটি স্ফটিকসদৃশ কঠিন পদার্থ: স্ট্রনটিয়াম টাইটানেট এর আণবিক চিত্র।উজ্জ্বল পরমাণুগুলো হল স্ট্রনটিয়াম আর অন্ধকার পরমাণুগুলো হল টাইটানিয়াম।

কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে গাঠনিক কণাগুলো একত্রে অবস্থান করে। তাদের আন্তঃআণবিক শক্তি অনেক বেশি থাকে, ফলে তারা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারেনা, শুধু কম্পিত হতে পারে। ফলস্বরুপ, কঠিন পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকে। কঠিন পদার্থের আকার শুধুমাত্র ভাঙা বা কাটার সময় সৃষ্ট বলের কারণেই পরিবর্তিত হতে পারে।

স্ফটিকসদৃশ কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে কণাগুলো একত্রে একটি নিয়মিত সুবিন্যস্ত এবং পৌনঃপুনিক নকশা গঠন করে রাখে। অনেক ধরনের স্ফটিকসদৃশ গঠন দেখা যায়, এমনকি একটি পদার্থের (কঠিন দশায়) একাধিক গঠন থাকতে পারে।উদাহরণস্বরূপ, আয়রন ৯১২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বডি সেন্টারড কিউবিক গঠনে এবং ৯১২-১৩৯৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফেস সেন্টারড কিউবিক গঠনে থাকতে পারে। বরফের ১৫ টি ভিন্ন ভিন্ন স্ফটিকসদৃশ গঠন অথবা ১৫ টি কঠিন দশা আছে, যা ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা এবং চাপে তৈরী হয়।[২]

কাচ এবং অন্যান্য দীর্ঘ নিয়তাকার ক্রমবিন্যাস বিহীন অনিয়তাকার কঠিন পদার্থগুলো তাপীয় সাম্যবস্থায় থাকেনা। তাদেরকে পদার্থের নন ক্লাসিকাল অবস্থায় বর্ণনা করা হয়।

কঠিন পদার্থকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তরল পদার্থে পরিণত করা যায়, এবং তরল পদার্থকে ঘনীভবনের মাধ্যমে কঠিন পদার্থে রূপান্তরিত করা যায়।এছাড়াও কঠিন পদার্থকে ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি বাষ্পে রূপান্তরিত করা যায়, এবং বাষ্পও অপসারণ প্রক্রিয়ায় সরাসরি কঠিনে পরিণত হতে পারে।

তরল[সম্পাদনা]

একটি ক্লাসিকাল মনাটমিক তরল পদার্থের গঠন।পরমাণুগুলোর কাছাকাছি কিছু প্রতিবেশী পরমাণু রয়েছে,যদিও কোন দীর্ঘ নিয়মিত ক্রমবিন্যাস নেই।

তরল পদার্থ প্রায় অসঙ্কোচনীয় প্রবাহী যা তার ধারকের আকার গ্রহণ করে কিন্তু চাপের প্রভাবমুক্ত নির্দিষ্ট আয়তন থাকে।এই আয়তনও পরিবর্তিত হবে যদি তাপমাত্রাচাপ পরিবর্তিত হয়।যখন কোন কঠিন পদার্থকে তার গলনাঙ্ক এর উপরে তাপ দেয়া হয়,তখন তা তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়,তবে এক্ষেত্রে চাপ অবশ্যই ঐ পদার্থের ত্রৈধ বিন্দুর চেয়ে বেশি হতে হবে।আন্তঃআণবিক (অথবা আন্তঃপারমানবিক অথবা আন্তঃআয়নিক) বল অবশ্যই প্রয়োজনীয়,কিন্তু অণুটির একে অন্যের সাপেক্ষে মুক্তভাবে চলাচল করার মত প্রয়োজনীয় শক্তি আছে এবং এদের গঠন ভ্রাম্যমাণ।এর মানে এই দাঁড়ায় যে তরলের গঠন নির্দিষ্ট নয়,কিন্তু তা তরলের ধারকের গঠন দ্বারা নির্ধারিত হয়।তরল পদার্থের আয়তন সাধারণত যে কঠিন পদার্থ থেকে তরল তৈরী করা হয়েছে সে কঠিনের চেয়ে বেশি হয়।ব্যতিক্রম - পানি। যে সর্বশেষ তাপমাত্রায় একটি তরল পদার্থ তরলাবস্থায় থাকে তাকে তার ক্রান্তি তাপমাত্রা বলে।[৩]

গ্যাস[সম্পাদনা]

গ্যাসের অনুগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব অনেক বেশি হয়।গ্যাসের অণুগুলোর মধ্যে অনেক দুর্বল বল কাজ করে,অথবা কাজ করেনা বললেই চলে।গ্যাসের অণুগুলো মুক্তভাবে বিচরন করতে পারে এবং দ্রুতগামী হয়।

গ্যাস এক ধরনের সঙ্কোচনীয় প্রবাহী। গ্যাস শুধুমাত্র তার ধারকের আকারই দখল করেনা, নিজেকে বিবর্ধিত করে তার আয়তনও দখল করে।

গ্যাসের অণুগুলোর পর্যাপ্ত গতিশক্তি থাকে। ফলে তাদের মধ্যে আন্তঃআণবিক বলের প্রভাব নগন্য হয় (আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে শুন্য), এবং এদের পার্শ্ববর্তী অণুগুলোর দূরত্ব অণুগুলোর আকারের চেয়েও অনেক বড়। গ্যাসের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকেনা, এরা এদের ধারকের আকার ও আয়তন দখল করে। তরলকে তার স্ফুটনাঙ্কএর উপরে তাপ দিয়ে এবং চাপ স্থির রেখে গ্যাসে পরিণত করা যায়, আবার তাপমাত্রা স্থির রেখে চাপ কমিয়েও গ্যাসে রূপান্তর করা যায়।

ক্রান্তি তাপমাত্রার নিচে গ্যাসকে বাষ্পও বলা হয়, যাকে শুধু চাপ কমিয়ে শীতলীকরণ ছাড়ায় তরলীভূত করা যায়। বাষ্প তরল (অথবা কঠিন) এর সাথে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে, যেখানে গ্যাসের চাপ তরল (বা কঠিন) এর ক্রান্তি চাপের সমান হয়।

চরমক্রান্তিক তরল হল এক ধরনের গ্যাস, যার তাপমাত্রা ও চাপ উভয়েই যথাক্রমে ক্রান্তি তাপমাত্রা ও ক্রান্তি চাপের উপরে থাকে। এমন অবস্থায়,গ্যাস আর তরলের মধ্যকার পার্থক্য থাকে না। সুপারক্রিটিকাল ফ্লুইডের গ্যাসের ধর্ম থাকে, কিন্তু এর উচ্চচাপ দ্রাবকের পরিচয় বহন করে,যার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুপারক্রিটিকাল কার্বন ডাইঅক্সাইড ক্যাফেইনবিহীন কফি তৈরীতে ক্যাফেইন বের করে নিতে ব্যবহৃত হয়।[৪]

প্লাজমা[সম্পাদনা]

প্লাজমায় ইলেকট্রনগুলো নিউক্লেই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা একটি ইলেকট্রন "সমুদ্র" তৈরী করে। এ জন্যেই এর বিদ্যুত পরিবহণ ক্ষমতা আছে।

গ্যাসের মতোই প্লাজমার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই।কিন্তু এতে বিদ্যুত পরিবহন ক্ষমতা আছে,যা গ্যাসের নেই। এটি চৌম্বকক্ষেত্র এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরী করতে পারে এবং তাড়িতচৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতি শক্তিশালী সাড়াপ্রদান করতে পারে।ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লেই পৃথক ইলেকট্রনের "সমুদ্রে" ভাসতে থাকে,যেমনটা হয় পরিবাহী ধাতুর ক্ষেত্রে। আসলে এই "সমুদ্র" ই প্লাজমা অবস্থার পদার্থকে বিদ্যুত পরিবহন করতে দেয়।

প্লাজমা অবস্থা নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে,কিন্তু এটি আসলে পৃথিবীতে অহরহই দেখা যায়।এবং বেশিরভাগ লোক এটাকে জানা ছাড়াই সাধারণ ভাবেই দেখে। বিদ্যুৎ চমকানো, বৈদ্যুতিক স্পার্ক, ফ্লুরোসেন্ট বাতি, নিওন বাতি, প্লাজমা টিভি, কিছু ধরনের শিখা এবং সকল তারাগুলো প্লাজমা অবস্থার আলোকিত বস্তুগুলোর উদাহরণ।

গ্যাস দুটি উপায়ের যে কোন একটিতে প্লাজমা হতে পারে, হয় দুটি বিন্দুর মধ্যকার বিশাল বিভব পার্থক্য, অথবা বস্তুকে উচ্চ তাপমাত্রা দিলে।

পদার্থকে উচ্চ তাপমাত্রায় তাপ দিলে পরমাণুগুলো ছেড়ে যেতে শুরু করে, যা মুক্ত ইলেকট্রনের উপস্থিতিতে ঘটে। উচ্চ তাপমাত্রায়, যেমনটা নক্ষত্রে থাকে, সেক্ষেত্রে এটা মনে করে হয় যে সকল ইলেকট্রন অবশ্যই "মুক্ত", এবং উচ্চশক্তির প্লাজমা ইলেকট্রনের সমুদ্রে উন্মুক্ত নিউক্লেই এ অবশ্যই ভাসমান থাকবে।

দশার পর্যায়কাল[সম্পাদনা]

এই ডায়াগ্রামটিত পদার্থের ৪টি দশার পর্যায়কাল নির্দেশ করে।

পদার্থের অবস্থা তাদের দশার পর্যায়কাল দিয়েও প্রকাশ করা যায়। দশার পর্যায়কাল গঠনে পরিবর্তন নির্দেশ করে এবং পদার্থের ধর্মে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দ্বারা একে চেনা যায়। একটি নির্দিষ্ট পদার্থের অবস্থা পদার্থের একটি অবস্থার সেট থেকে আরেকটি অবস্থার সেট থেকে দশার পর্যায়কাল-এর পার্থক্য থেকি বুঝা যায়।পানির বিভিন্ন কঠিন অবস্থা থাকতে পারে।[৫]

এই দশার পর্যায়কালের সাথে সুপারকন্ডাক্টিভিটির আবির্ভাবের সম্পর্ক রয়েছে,তাই তারা সুপারকন্ডাক্টিভ অবস্থায় থাকে। যেমন, ফেরোম্যাগনেটিক অবস্থা দশার পর্যায়কাল দ্বারা নির্ধারিত এবং পৃথক ধর্ম আছে।যখন কোন ধাপে অবস্থার পরিবর্তন তখন তার প্রাথমিক ধাপকে মেসো দশা বলে। তরল স্ফটিক প্রযুক্তির জন্য এসব দশা কাজে লাগে।[৬][৭]

এক সেট পদার্থের দশা চাপ অথবা তাপমাত্রার অবস্থা উপর নির্ভর করে অন্য দশায় পরিবর্তিত হতে পারে,যেখানে এই অবস্থার(চাপ বা তাপমাত্রা) পরিবর্তন ঘটে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। যেমন,কঠিন পদার্থ তরলে রূপান্তরিত হলে তাপ উৎপন্ন হয়। পরম শুন্য-এর কাছাকাছি,একটি বস্তু কঠিন অবস্থায় বিরাজ করে। গলনাঙ্ক পর্যন্ত তাপ দিলে বস্তুটি তরলে পরিণত হয়, আবার স্ফুটনাঙ্ক-এ গ্যাসে পরিণত হয়। এবং আরও তাপ দিতে থাকলে প্লাজমা অবস্থায় চলে যায় যেখানে ইলেকট্রন এতটা শক্তিসম্পন্ন থাকে যে তারা ধারক পরমাণু ছেড়ে বেরিয়ে আসে।

অণু দ্বারা গঠিত নয় এমন এবং বিভিন্ন বল দ্বারা সংঘটিত এমন পদার্থের গঠনকে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা হিসেবে ভাবা যায়। সুপারফ্লুইড (ফার্মিওনিক কনডেনসেট-এর মত) এবং কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাজমা-এর উদাহরণ।

রাসায়নিক সমীকরনে কঠিনকে (s), তরলকে (l), গ্যাসকে (g), জলীয় দ্রবণকে (aq) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।প্লাজমা অবস্থার ক্ষেত্রে (p) ব্যবহৃত হয়,যদিও এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।

নন-ক্লাসিকাল অবস্থা[সম্পাদনা]

কাঁচ[সম্পাদনা]

Atoms of Si and O; each atom has the same number of bonds, but the overall arrangement of the atoms is random.
Regular hexagonal pattern of Si and O atoms, with a Si atom at each corner and the O atoms at the centre of each side.
একটি অনিয়মিত নেটওয়ার্ক গ্লাসি গঠন (বামে),এবং নিয়মিত স্ফটিকাকার ল্যাটিস (ডানে) এর অভিন্ন রাসায়নিক গঠনের পরিকল্পিত বিবরন।

কাঁচ এক ধরনের অনিয়তাকার কঠিন পদার্থ যা তরল অবস্থার কাছাকাছি তাপমাত্রায় কাঁচ রূপান্তর ধর্ম প্রদর্শন করে। কাঁচ বিভিন্ন শ্রেণির পদার্থ দ্বারা গঠিত হতে পারে: অজৈব নেটওয়ার্ক (যেমন জানালার কাচ, সিলিকেট এবং আর কিছুর সমন্বয়ে তৈরি কাঁচ), ধাতব খাদ, গলিত আয়ন, জলীয় দ্রবন, আণবিক তরল এবং পলিমার। তাপগতিবিদ্যা অনুযায়ী,স্বল্প সুস্থিত অবস্থায় থাকা কাঁচ, তার স্ফটিকাকার প্রতিরূপের সাথে সম্পর্কিত থাকে। এর পরিবর্তনের হার একদম শুন্য হয়।

ডিসঅর্ডারের মাত্রাযুক্ত কিছু স্ফটিক[সম্পাদনা]

একটি প্লাস্টিক স্ফটিক এক ধরনের আণবিক কঠিন পদার্থ যার দীর্ঘ পরিসরের অবস্থানগত বিন্যাস রয়েছে কিন্তু এর উপাদান অণুগুলোর স্বাধীনভাবে ঘূর্ণনের ধর্ম আছে। ওরিয়েন্টাল গ্লাস-এ এই স্বাধীনতার মাত্রা নিবারিত অবিন্যস্ত অবস্থায় হিমায়িত হয়ে থাকে। একইভাবে, স্পিন গ্লাসএ চৌম্বকীয় অবিন্যস্ততা হিমায়িত হয়ে থাকে।

তরল গ্লাস অবস্থা[সম্পাদনা]

তরল গ্লাস অবস্থায় পদার্থ দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং নিয়মিত অবস্থা - এ দুইয়ের মাঝামাঝি ধর্ম প্রদর্শন করে। সাধারণত তারা তরলের মত প্রবাহিত হয়, কিন্তু দীর্ঘ পরিসরের নিয়মিত ধর্ম প্রদর্শন করে। উদাহরণস্বরূপ, রডের মত অণু দিয়ে গঠিত নেমাটিক দশা। যেমন প্যারা-এজোঅক্সিএনিসোল, যা ১১৮-১৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নেমাটিক দশায় থাকে।[৮] এমন অবস্থায় অণুগুলো তরলের মতই প্রবাহিত হয়,কিন্তু তারা একই দিকে মুখ করে থাকে (নিজেদের ডোমেইন অনুযায়ী) এবং মুক্তভাবে ঘুরতে পারেনা। স্ফটিকসদৃশ কঠিন পদার্থের মত, তরল স্ফটিক পোলারাইজ করা আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়। তরল স্ফটিকের অন্যান্য অবস্থাগুলো প্রধান আর্টিকেলে আছে। এদের মধ্যে কোনটির প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা আছে, উদাহরণ, তরল স্ফটিক ডিসপ্লে

চৌম্বকীয় নিত্যতা[সম্পাদনা]

রূপান্তরিত ধাতুর পরমাণুর প্রায়শই চৌম্বক ভ্রামক থাকে যা সেইসব ইলেকট্রনের নেট স্পিন এর কারণে হয় যারা বিজোড় অবস্থায় থাকে আর রাসায়নিক বন্ধনে অংশ নেয়না। কিছু কঠিন পদার্থের পরমাণুতে চৌম্বক ভ্রামক নিয়মিত হয় এবং ফেরোম্যাগনেট,এন্টিফেরোম্যাগনেট অথবা ফেরিম্যাগনেট হতে পারে।

ফেরোম্যাগনেট এ,যেমন কঠিন আয়রন - প্রত্যেক পরমাণুর চৌম্বক ভ্রামকগুলো একই দিকে সারিবদ্ধ থাকে (চৌম্বক ডোমেইনের মধ্যে)।যদি ডোমেইনগুলোও সারিবদ্ধ থাকে,পদার্থটি স্থায়ী চুম্বক হয়,যা চৌম্বকক্ষেত্র ছাড়াও চুম্বক হয়েই থাকে। এই চুম্বককে কুরি বিন্দুতে তাপ দিলে সে চৌম্বকত্ব হারায়,যার মান লোহার ক্ষেত্রে ৭৬৮0C। এন্টিফেরোম্যাগনেট-এর চৌম্বক ভ্রামকের দুটি নেট এমাউন্ট সমান ও বিপরীত হয়,যা একে অপরকে বিনষ্ট করে দেয়, যার ফলে নেট চৌম্বকত্ব শুন্য হয়।উদাহরণস্বরূপ,নিকেল (২)অক্সাইড (NiO) এ অর্ধেক নিকেল একদিকে,বাকি অর্ধেক তার বিপরীতে সারিবদ্ধ থাকে।

ফেরিম্যাগনেট এর ক্ষেত্রে চৌম্বক ভ্রামকের দুটি নেট বিপরীত কিন্তু অসমান হয়,ফলে এরা সম্পূর্ণভাবে একে অপরকে বিনষ্ট করতে পারেনা,তাই চৌম্বকত্ব শুন্য হয়না। এর উদাহরণ হল ম্যাগনেটাইট(Fe3O4),যাতে Fe2+ এবং Fe3+ আয়ন আছে যাদের আলাদা চৌম্বক ভ্রামক আছে।

কোয়ান্টাম স্পিন তরল (QSL) হল এক ধরনের একটি সমন্বয়কারী কোয়ান্টাম স্পিন এর একটি সিস্টেমের একটু অনিয়মিত অবস্থা যা খুব নিম্ন তাপমাত্রায়ও এর অনিত্যতা বহন করে।আসলে এটি সত্যিই "তরল" নয়,এটি আসলে কঠিন পদার্থ যার চৌম্বকীয় নিত্যতা মজ্জাগতভাবে অনিয়মিত। এই "তরল" শব্দটি আসলে তরলের মতোই আণবিক অনিত্যতা বোঝাতে একটি উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।এই QSL ফেরোম্যাগনেটিক ও নয়, যার চৌম্বক ভ্রামক সমান্তরাল, আবার এন্টিফেরোম্যাগনেটিক ও নয়, যার চৌম্বক ভ্রামক সমান্তরাল নয়।এর চৌম্বক ডোমেইন এলোমেলোভাবে সজ্জিত।একে বোঝা যায় জ্যামিতিক ফ্রস্ট্রেটেড চৌম্বক ভ্রামকের উদাহরণ থেকে,যা একদম সমান্তরাল বা অসমান্তরাল কোনটাই নয়।যখন এর তাপ কমিয়ে ঠান্ডা করা হয় এবং একটি অবস্থায় সেট করা হয়,তখন ডোমেইনগুলোকে একটি সজ্জা "বেছে নিতে" হবে।কিন্তু যদি সম্ভাব্য অবস্থাগুলো সমশক্তিসম্পন্ন হয়,তাহলে যেকোন একটা নিজে নিজেই বাছা হয়ে যাবে। অতএব, শক্তিশালী ছোট পরিসরের নিত্যতা থাকা সত্ত্বেও,এখানে কোন দীর্ঘ পরিসরের চৌম্বকীয় নিত্যতা থাকেনা।

মাইক্রোদশায় পৃথকীকরন[সম্পাদনা]

TEM এ SBS ব্লক কো-পলিমার

কো-পলিমার পর্যাবৃত্ত ন্যানোস্ট্রাকচারের বিচিত্র বিন্যাস তৈরির জন্য মাইক্রো সেপারেশন করতে পারে।,উদাহরণ - চিত্রের স্টাইরিন-বিউটাডাইইন-স্টাইরিন ব্লক কো-পলিমার।মাইক্রোদশা পৃথকীকরণ সহজে বোঝা যায় তেল এবং পানি এর দশা পৃথকীকরনের উপমা ভাবলে।ব্লকগুলোর রাসায়নিক বেমানান্যতা জন্য কো-পলিমারগুলো সমদশার পৃথকীকরণে যায়।যাই হোক,যেহেতু ব্লকগুলো সমযোজী বন্ধন এ আবদ্ধ, সেহেতু তারা তেল-জলের মত সম্পূর্ণ আমিশ্রিত হয়না,এবং তাই এর বদলে ব্লকগুলো ন্যানোমিটার দৈর্ঘের গঠন তৈরী করে।তাদের আপেক্ষিক দৈর্ঘ্য এবং পলিমারের সম্পূর্ণ ব্লক টপোলজি এর উপর নির্ভর করে,যেগুলোর প্রত্যেকটি পদার্থের নিজস্ব দশা।

আয়নিক তরল ও মাইক্রোদশা পৃথকীকরণ বিক্রিয়ায় যায়।এনায়ন এবং ক্যাটায়ন এর মানানসই হওয়া এবং তেল-জলের মত মিশ্রনের ব্যাপারটা না হয় ঘটল, কিন্তু তারপরেও তাদের ইলেকট্রন চার্জ আকর্ষণ তাদের আলাদা হওয়া থেকে আটকায়।এতে মনে হয় তরলে থাকাকালে মুক্তভাবে বিচরণের বদলা এনায়ন এবং ক্যাটায়ন প্রকোষ্ঠবদ্ধ স্তর বা মাইসেলির মধ্যে বিকীর্ণ হচ্ছে।[৯]

নিম্ন তাপমাত্রার অবস্থাসমূহ[সম্পাদনা]

অতিপ্রবাহী[সম্পাদনা]

তরল হিলিয়ামের অতিপ্রবাহী দশা যা রলিন ফিল্ম এর কাপের দেয়াল এর উপর দিয়ে লাফিয়ে বের হয়।

পরম শুন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি কিছু তরল এক আলাদা তরলে পরিনত হয় যাকে অতিপ্রবাহী বলা হয়। কারণ এর সান্দ্রতা শুন্য হয় (অথবা অসীম তারল্য থাকে, অর্থাৎ এরা ঘর্ষণ ছারাই প্রবাহিত হতে পারে)। এই ঘটনাটি সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে দেখা যায় হিলিয়াম এর,যা লাম্বডা তাপমাত্রার (২.১৭ কেলভিন) নিচে অতিপ্রবাহীতে পরিণত হয়।এমন অবস্থায় এটি ধারক পাত্র থেকে "লাফিয়ে" বের হওয়ার চেষ্টা করে।[১০] এর আবার অসীম তাপ পরিবাহিতা রয়েছে,আর তাই কোন তাপমাত্রা নতি ই অতিপ্রবাহী হতে পারবেনা।অতিপ্রবাহী কে একটি ঘুর্ণায়মান ধারকে রাখলে কোয়ান্টায়িত ঘূর্ণিতে পরিণত হবে।

এই ধর্মগুলো ব্যাখ্যা করা হয় অতিপ্রবাহী দশায় হিলিয়াম-৪ আইসোটোপের বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট তৈরী করার তত্ত্ব থেকে। কিছুদিন আগেই নিম্ম তাপমাত্রায় বিরল আইসোটোপ হিলিয়াম-৩ আর লিথিয়াম-৬ এর ফার্মিওনিক কনডেনসেট তৈরীর সংবাদ দিয়েছে এমআইটি এর পদার্থবিদরা।[১১]

বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট[সম্পাদনা]

শীতলীকরণ করার সময় রুবিডিয়াম গ্যাসের বেগ: শুরুর অবস্থা বা দিকে এবং বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট ডানে দেখানো হয়েছে।

১৯২৪ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু সর্বপ্রথম "বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট" (BEC), যাকে পদার্থের পঞ্চম অবস্থা বলা হয়,এর কথা উল্লেখ করেন। BEC এ পদার্থ আর স্বাধীন কণার মত আচরণ করেনা, এবং একটি একক কোয়ান্টাম স্টেটে পতিত হয় যা একটি অভিন্ন ওয়েভফাংশন দ্বারা বর্ণনা করা যায়।

গ্যাসীয় অবস্থায় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট অনেক বছর ধরেই অযাচিত তত্ত্ব ছিল।১৯৯৫ সালে কলোরাডো ইউনিভার্সিটির এরিক কর্নেল এবং কার্ল ওয়েইম্যান-এর একটি রিসার্চ গ্রুপ সর্বপ্রথম এই কনডেনসেট পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করেন।বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট কঠিন অবস্থার চেয়েও শীতল।মনে করা হয় এমনটি ঘটে যখন পরমাণুগুলোর পরম শুন্য তাপমাত্রা,অর্থাৎ -২৭৩.১৫ কাছাকাছি সমান (অথবা সমান ই) কোয়ান্টাম লেভেল থাকে।

ফার্মিওনিক কনডেনসেট[সম্পাদনা]

ফার্মিওনিক কনডেনসেট এবং বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট মূলত একই কিন্তু এরা ফার্মিওন দ্বারা গঠিত। পাউলির বর্জন নীতি অনুযায়ী ফার্মিওনরা সম-কোয়ান্টাম স্টেটে প্রবেশ করতে পারেনা। কিন্তু এরা যখন জোড় অবস্থায় থাকে তখন তারা বোসন হিসেবে আচরণ করতে পারে, এবং এমন কিছু জোড় মিলে সম-কোয়ান্টাম স্টেটেও কোন বাধা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারে।

রিডবার্গ অণু[সম্পাদনা]

অনাদর্শীয় প্লাজমার একটি স্বল্প-সুস্থিত অবস্থা হল রিডবার্গ পদার্থ, যা উত্তেজিত পরমাণু এর ঘনীভবন এর ফলে তৈরী হয়। এই পরমাণুগুলো আয়ন এবং ইলেকট্রন ও হতে পারে যদি তারা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌছে।২০০৯ সালের এপ্রিলে নেচার রিডবার্গ পরমাণু এবং একটি ভূমি দশার পরমাণু থেকে রিডবার্গ অণু তৈরীর সংবাদ জানান;[১২] এবং এর অস্তিত্ব প্রতিপাদন করে।[১৩] এই পরীক্ষাটি অতি শীতল রুবিডিয়াম পরমাণু ব্যবহার করে করা হয়।

কোয়ান্টাম হল অবস্থা[সম্পাদনা]

কোয়ান্টাম হল অবস্থা কোয়ান্টায়িত হল বিভব সৃষ্টি করে,যা তড়িৎ প্রবাহের সাথে উল্লম্ব অবস্থায় থাকে। কোয়ান্টাম স্পিন হল অবস্থা হল একটি তাত্ত্বিক অবস্থা যা সেসব ইলেকট্রনিক যন্ত্রের উন্নয়নের পথ সুগম করে যেগুলো কম শক্তি খরচ করে এবং কম তাপ উৎপাদন করে। এটাই পদার্থের কোয়ান্টাম হল অবস্থার সংজ্ঞা।

ফোটনিক পদার্থ[সম্পাদনা]

ফোটনিক পদার্থ এমন এক ঘটনা যা ফোটনের গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে আপাত ভর বৃদ্ধি,তাদের নিজেদের সাথে বিক্রিয়া এবং ফোটনিক "অণু" তৈরীর সময় ঘটে। এই ভরের উৎস হল ঐ গ্যাস,যার পরিমাণ অত্যধিক হয়। এটি ফোটনের শুন্যস্থানে ঘুরে বেরানোর বিপরীত অবস্থা,যার স্থিতি ভর থাকেনা, এবং এরা বিক্রিয়াও করতে পারেনা।

ড্রপলেটন[সম্পাদনা]

ইলেকট্রন এবং হোলের একটি "কোয়ান্টাম মেঘ" যা একে অপরের চারপাশে প্রবাহিত হয়, কিন্তু তরলের মত তরঙ্গায়িত হয়না, বরং স্বতন্ত্র জোড় হিসেবে থাকে।[১৪]

উচ্চশক্তির অবস্থাসমূহ[সম্পাদনা]

ডিজেনারেট পদার্থ[সম্পাদনা]

মৃত নক্ষত্রের কেন্দ্রের মত অতি উচ্চচাপে সাধারণ পদার্থ এক ধরনের অদ্ভুত অবস্থায় চলে যায়।ঐ অবস্থাকে ডিজেনারেট অবস্থা বলে,যা কোয়ান্টাম মেকানিক্স সমর্থিত অবস্থা।পদার্থবিজ্ঞানে "ডিজেনারেট" বলতে এমন দুটি অবস্থা বোঝায় যেখানে দুটিই সমশক্তিসম্পন্ন এবং নিজেদের মধ্যে অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে।এই অবস্থা পাউলির বর্জন নীতি মেনে চলে,যা দুটি অভিন্ন কোয়ান্টাম স্টেট এর ফার্মিওনকে একসাথে থাকতে দেয়না।ডিজেনারেট প্লাজমাকে তাপ দিলে তা সাধারণ প্লাজমার চেয়ে অনেক কম ব্যায়িত হয়।এর কারণ সেখানে কোন ভরবেগ থাকেনা।ফলস্বরুপ,ডিজেনারেট নক্ষত্রগুলোর অনেক ঘনত্ব থাকে।বিশাল ভরের ডিজেনারেট নক্ষত্র আকারে ছোট হয়,কারণ মহাকর্ষীয় বল বৃদ্ধি পায়,কিন্তু সেই অনুপাতে চাপ বাড়েনা।

ইলেকট্রন-ডিজেনারেট পদার্থ পাওয়া যায় শ্বেত-বামন নক্ষত্রের অভ্যন্তরে।ইলেকট্রনগুলো পরমাণুতে থাকে ঠিকই,কিন্তু পাশের পরমাণুতে চলে যেতে পারে।নিউট্রন ডিজেনারেট পদার্থ পাওয়া যায় নিউট্রন তারায়।বিশাল মহাকর্ষীয় চাপ পরমাণুকে এত জোড়ে চাপ দেয় যে ইলেকট্রন বিপরীত বিটা ক্ষয়ের মাধ্যমে প্রোটনের সাথে মিলিত হতে বাধ্য হয়,যার ফলে নিউট্রনের সুপারডেনস একত্রীভবন ঘটে।সাধারণত পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের বাইরের মুক্ত নিউট্রন এর ১৫ মিনিটের মধ্যেই অর্ধ-জীবন ক্ষয় হয়ে যায়।কিন্তু নিউট্রন তারায়,বিপরীত ক্ষয়ের জন্য এই ক্ষয় বাদ হয়ে যায়।বৃহস্পতি গ্রহ,বাদামী-বামন নক্ষত্র ইত্যাদিতে শীতল ডিজেনারেট পদার্থ পাওয়া যায়,যার কেন্দ্র মেটালিক হাইড্রোজেন এর একটি কোর আছে।

এই ডিজেনারেসির ফলে অধিক ভারী বাদামী বামনগুলো ততটা বৃহৎ হয়না।ধাতুর মধ্যে ইলেকট্রনকে নন-ডিজেনারেট ধনাত্মক আয়নের ল্যাটিসে ভ্রাম্যমাণ ডিজেনারেট গ্যাস হিসেবে মানা হয়।

কোয়ার্ক পদার্থ[সম্পাদনা]

সাধারণ শীতল পদার্থগুলোর মধ্যে কোয়ার্ক হল নিউক্লিয়ার পদার্থের গাঠনিক কণা,যা ২-৪ টি কোয়ার্ক (যেমন প্রোটন,নিউট্রন) দ্বারা গঠিত হ্যাড্রন-এ সবল নিউক্লিয় বল দ্বারা আবদ্ধ থাকে। কোয়ার্ক পদার্থ বা কোয়ান্টাম বর্ণগতি পদার্থ হল পদার্থের কয়েকটি দশার একটি গুচ্ছ যেখানে সবল নিউক্লীয় বল অতিক্রান্ত হয় এবং কোয়ার্ক আবদ্ধ থাকেনা এবং মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে।

কোয়ার্জ পদার্থের দশাটি অতি উচ্চ ঘনত্ব অথবা তাপমাত্রায় ঘটে।স্ট্রেঞ্জ পদার্থ এক ধরনের কোয়ার্ক পদার্থ যা এমন কিছু নিউট্রন তারার ভেতরে থাকে যারা টলম্যান-অপেনহাইমেন-ভল্কফ লিমিট (প্রায় ২-৩ সৌরভর) এর কাছাকাছি থাকে। তৈরীর পর নিম্ন শক্তির অবস্থায় এরা কিছুটা স্থায়ী হয়,যদিও এ নিয়ে খুব একটা জানা যায়নি।কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাজমা অতি উচ্চ তাপমাত্রায় সৃষ্ট অবস্থা যেখানে কোয়ার্ক মুক্ত হয়ে যায় এবং গ্লুওন (অতিপারমানবিক কণা যা সবল নিউক্লীয় বল বহন করে,যা কোয়ার্ককে একত্রিত করে রাখে।) এর সমুদ্রে স্বাধীনভাবে চলতে পারে।

এটা প্লাজমা অবস্থায় পরমাণুতে মুক্ত ইলেকট্রনের মতই ঘটনা।এই অবস্থাটি কণা-ত্বরক এ অতি উচ্চশক্তির ভারী আয়নের সংঘর্ষ থেকে সহজেই পাওয়া যায়, এবং এ দ্বারা বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি কোয়ার্কের ধর্ম বুঝতে পারেন এবং ব্যাখ্যা করতে পারেন,শুধু তত্ত্বই দেন না। কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাজমা ২০০০ সালে সার্ন এ আবিষ্কৃত হয়।এটি প্লাজমা অবস্থার মত গ্যাসের মত প্রবাহিত হয়না,QGP এর মধ্যের বিক্রিয়াগুলো শক্তিশালী হয় এবং এরা তরলের মত প্রবাহিত হয়। উচ্চ ঘনত্বে এবং নিম্ন তাপমাত্রায় কোয়ার্ক তাত্ত্বিকভাবে কোয়ার্ক তরলে পরিণত হয় যার ধর্ম এখনো জানা যায়নি। এটি উচ্চচাপেও একটি স্বতন্ত্র কালার ফ্লেভার লকড অবস্থায় পরিণত হয়। বর্ণ পরিবর্তনের জন্য এই দশা অতিপরিবাহীর মত।এউ অবস্থাগুলো সম্ভবত নিউট্রন তারায় দেখা যায় কিন্তু বর্তমানে এরা কেবলি তাত্ত্বিক।

কালার গ্লাস কনডেনসেট[সম্পাদনা]

কালার গ্লাস কনডেনসেট পদার্থের এক ধরনের তাত্ত্বিক অবস্থা যা আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে ধাবমান পারমাণবিক নিউক্লেই এ পাওয়া যায়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী একটি উচ্চ শক্তির নিউক্লিয়াস তার গতিপথের দিকে গতিশীল থাকলে দৈর্ঘ্য সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ফলে নিউক্লিয়াসে থাকা গ্লুওন একটি স্থির দর্শকের কাছে "গ্লুকনিক দেয়াল" মনে হয়, যা প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি বেগে যাচ্ছে।অতি উচ্চ শক্তিতে ঐ দেয়ালে গ্লুওনের ঘনত্ব অনেক বৃদ্ধি পায়। কোয়ার্ক গ্লুওন প্লাজমার মত এসব দেয়ালের সংঘর্ষে তৈরী হবার বদলে কালার গ্লাস কনডেনসেট এমন দেয়াল নিজেই বর্ণনা করে এবং এটি সেই কণাগুলোর সহজাত বৈশিষ্ট্য যা কেবলমাত্র উচ্চশক্তিতেই দেখা যায়, যেমন RHIC এবং LHC এ যেমনটা হয়।

অতি উচ্চ শক্তির অবস্থাসমূহ[সম্পাদনা]

সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব এ যে '''মহাকর্ষীয় সিঙ্গুলারিটির কথা বলা হয়েছে যা ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রে অবস্থান করে তা আসলে কোন বস্তুই নয় (যদিও এর ভর শক্তি এর তৈরীতে লেগে যায়),একটা নির্দিষ্ট অবস্থানের স্থানকালের ধর্ম মাত্র।অবশ্য এই বিষয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে যে সকল বস্তুই একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের স্থানকালের ধর্ম মাত্র।[১৫]

আরও কিছু অবস্থাসমূহ[সম্পাদনা]

অতিকঠিন[সম্পাদনা]

অতিকঠিন হল স্থানিক নিয়মিত বস্তু (অর্থাৎ, যা কঠিন বা স্ফটিকাকার) যার অতিপ্রবাহী ধর্ম আছে। অতিপ্রবাহীর মত অতিকঠিনও কোন ঘর্ষণ ছাড়াই চলতে পারে কিন্তু তার সুকঠিন কাঠামো ধরে রাখে।যদিও অতিকঠিন কঠিন পদার্থই, কিন্তু এটি এমন কিছু ধর্ম প্রদর্শন করে যা একে বিতর্কিত করে তোলে।[১৬]

স্ট্রিং নেট তরল[সম্পাদনা]

স্ট্রিং নেট তরলের ক্ষেত্রে পরমাণুর তরলের মতোই অস্থির গঠন থাকে,কিন্তু সব মিলিয়ে এর যে নকশা পাওয়া যায়,তা কঠিন পদার্থের মত দৃড়। সাধারণ কঠিনে পরমাণুগুলো শ্রেণীবদ্ধভাবে নিজেদের একটি গ্রিড নকশায় সজ্জিত করে ফেলে, যাতে যেকোন স্পিনের ইলেকট্রন তার বিপরীত স্পিনের সব ইলেকট্রনের সাথে লেগে থাকে। কিন্তু স্ট্রিং নেট তরলের পরমাণুগুলো নকশায় দেখা যায় একই স্পিনের ইলেকট্রনগুলো একই সাথে আছে। এটি একটি কৌতূহলী অবস্থার জন্ম দেয়,তার সাথে মহাবিশ্বের গাঠনিক অবস্থার কিছু প্রস্তাবও সমর্থন করে।

সুপারগ্লাস[সম্পাদনা]

সুপারগ্লাস পদার্থের সে দশা যা অতিপ্রবাহীতার এবং শীতল অনিয়মিতাকার গঠনের সময়ে বর্ণীত হয়।

কৃষ্ণ বস্তু[সম্পাদনা]

যেখানে এই কৃষ্ণ বস্তু মহাবিশ্ব এর প্রায় ৮৩% দখল করে আছে, সেখানে আমরা এর ধর্ম সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানিনা। এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে এরা কোন তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ শোষন কিংবা নিঃসরণ করেনা। যাই হোক, এই বস্তু কি দ্বারা তৈরী তা নিয়ে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন তত্ত্ব রয়েছে।যেখানে এটা ধারণা করা হচ্ছে যে এটি আছে এবং মহাবিশ্বের বিশাল জায়গা দখল করে আছে, সেখানে এর সকল ধর্মই আমাদের অজানা এবং কেবল একটি জল্পনার বিষয় নয় ,কারণ এটি কেবলমাত্র এর মহাকর্ষীয় প্রভাব দেখেই চেনা যায় এবং ২০১৯ সালের ১০ ই এপ্রিল প্রথম ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা ।[১৭][১৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A Bhattacharjee, D.A.Gurnett (২০০৫)। "Introduction to Plasma Physics: With Spaces and Laboratory Application."। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 2।  এবং B Heber,H Fichtner, K Scherer (২০০৫)। "Space Weather: The Physics Behind A Slogan."। পৃষ্ঠা 138। 
  2. M.A.Wahab (২০০৫)। Solid State Physics: Structure and Properties of Materials। পৃষ্ঠা 1–3। আইএসবিএন 1-84265-218-4 
  3. F.White (২০০৩)। Fluid Mechanics.। McGrow Hill। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 0-07-240217-2 
  4. G.Turrell (১৯৯৭)। Gas Dynamics: Theory and Application.। John Wiley and Sons। পৃষ্ঠা 3–5। আইএসবিএন 0-471-97573-7 
  5. M.Chaplin (20 August,2009)। "Water Phase Diagram".। Water Structure and Science। সংগ্রহের তারিখ 23 February,2010  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. D.L.Goodstein (১৯৮৫)। States of Matter। Dover Phoenix। আইএসবিএন 978-0-486-49506-4 
  7. A.P.Sutton (১৯৯৩)। Electronic Structure of Materials.। Oxford Science Publication। পৃষ্ঠা 10–12। আইএসবিএন 978-0-19-851754-2 
  8. Shao,Y., Zerda,T.W. (১৯৯৮)। doi:10.1021/jp9734437। Journal of Physical Chemistry B.1202(18):3387-3394.। 
  9. Alvarez,V.H.;Dosil,N.;Gonzalez-Cabaleiro,R., Mattedi S.;Matin Paston;Iglesias,M & Navaza,J.M.। Bronsted Ionic Liquids for Sustainable Processes.। Journal of Chrmical and Engineering Data 55 (2010),Nr.2,S.625-632.url=http://pubs.acs.org/doi/abs/10.1021/je900550v। 
  10. J.R.Minked (২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Strange but True: Superfluid helium Can Climb Walls".। Scientific American। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  11. L.Valigra (২২ জুন ২০০৫)। "MIT Physicist Created New Form of Matter".MIT News। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ 
  12. V.Bendkowsky; ও অন্যান্য (২০০৯)। ""Observation of Ultralong Range Rydberg Molecule"."। Nature.458(7241): 1005-8ডিওআই:10.1038/nature07945পিএমআইডি 19396141বিবকোড:2009Natur.458.1005B 
  13. V.Grill (২৩ এপ্রিল ২০০৯)। "Worlds First for Strong Molecule".BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  14. "http://www.iflscience.com/physics/new-state-matter-discovered#3Oe9x65kkHViXABt.99"  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  15. David Chalmers, David Manley, Ryan Wassermann (২০০৯)। Metametaphysics: New Essays on the Foundation of Ontology.। Oxford University Press.। পৃষ্ঠা 378–। আইএসবিএন 978-0-19-954604-6 
  16. G.Murthy; ও অন্যান্য (১৯৯৭)। ""Superfluid and Supersolid on Fraustrated Two Dimensional Lattice."."। Physical Review B..55(5):3104arXiv:cond-mat/9607217অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1103/PhysRevB.55.3104বিবকোড:1997PhRvB..553104M |বিবকোড= length পরীক্ষা করুন (সাহায্য) 
  17. Trimble,Virginia (১৯৮৭)। "Existence and nature of dark matter in the universe."। "Annual review of Astronomy and Astrophysics."25:425-478.ডিওআই:10.1146/annurev.aa.25.090187.002233বিবকোড:1987ARA&A..25..425T 
  18. Hinshaw, Gary F. (২৯ জানুয়ারি ২০১০)। What is the Universe made of?। Universe 101,NASA website.। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১০ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]