ধনুর্বিদ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তীরন্দাজ কর্তৃক শিকারের দৃশ্য
ভুটানে তীরন্দাজ

তীরন্দাজী বা ধনুর্বিদ্যা (ইংরেজি: Archery) এক ধরনের কলাবিদ্যা, অনুশীলন কিংবা দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তীর-ধনুকের সাহায্যে ব্যবহার করা হয়। ল্যাটিন শব্দ আর্কাস থেকে ইংরেজি আর্চারি শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। ঐতিহাসিকভাবে ধনুর্বিদ্যা মূলতঃ পশু শিকার এবং যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে উদ্ভাবন করা হয়। বর্তমানে এটি চিত্তবিনোদনমূলক খেলায় বহুল প্রচলিত ক্রীড়াবিশেষ। ব্যক্তি হিসেবে যিনি তীর-ধনুক ব্যবহার করেন বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন, তিনি তীরন্দাজ বা আর্চার বা বোম্যান নামে পরিচিত। যিনি বা যারা এ খেলা উপভোগ করেন কিংবা ধনুর্বিদ্যায় অভিজ্ঞ, তিনি ধনুর্বিদ্যাবিশারদ নামে আখ্যায়িত হয়ে থাকেন।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ধারণা করা হয় যে, পাঁচ হাজারেরও অধিক বছর পূর্বে ধনুর্বিদ্যার প্রচলন ঘটেছিল। শুরুতে ধনুক দিয়ে শিকার করা হতো। পরবর্তীকালে হস্তনির্মিত অস্ত্র হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে এর বহুল প্রচলন ঘটে। এটি গোলন্দাজ সৈন্যবিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। আধুনিক সভ্যতা হিসেবে পারস্য, মেসিডোনিয়া, নুবিয়া, গ্রীক, পার্থিয়া, ভারতীয়, জাপান, চীন এবং কোরিয়ার সরকার ব্যবস্থায় তাদের সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংখ্যায় ধনুক সংরক্ষণ করা হতো। নিখুঁত লক্ষ্যভেদে এর জুড়ি ছিল না এবং দক্ষ তীরন্দাজগণ যুদ্ধ জয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখতেন।

সংস্কৃত শব্দ ধনুর্বিদ্যাকে সাধারণ অর্থে মার্শাল আর্টকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে। ধনুর্বিদ্যার উত্থান ঘটে এশিয়ায়। পূর্ব এশিয়ায় কোরিয়ার তিনটি রাজ্যের একটি গোগুরিও রাজ্যে একদল দক্ষ তীরন্দাজের রেজিমেন্ট ছিল।[২][৩]

অলিম্পিক ক্রীড়া[সম্পাদনা]

১৯০০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে আধুনিক অলিম্পিকে ধনুর্বিদ্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন নিয়ম-কানুন এ ক্রীড়ায় না থাকায় অলিম্পিক গেমস থেকে বাদ পড়ে যায়। ১৯৩০-এর দশকে আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশন বা ফিটা গঠিত হয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অলিম্পিকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে দলগত পর্যায়ে যুক্ত হয়। ১৯৯২ সালের প্রতিযোগিতায় এর নিয়ম-কানুন খানিকটা পরিবর্তিত হয়।

অলিম্পিকের আসরে শুধুমাত্র বাঁকানো ধনুক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে লস এঞ্জেলেস অলিম্পিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া মহিলাদের ইভেন্টে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত সিডনী অলিম্পিকের আসর থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক ও ব্রোঞ্জপদক এবং দলীয়ভাবেও স্বর্ণপদক লাভ করেছিল। এছাড়াও তারা ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত এথেন্স অলিম্পিক, ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক এবং ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক লাভ করে। বর্তমানে চীন, জাপান, তাইপে, ভারত প্রমূখ দেশের ক্রীড়াবিদগণ কোরিয়ার আধিপত্য রোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The noun "toxophilite", meaning "a lover or devotee of archery, an archer", is derived from Toxophilus by Roger Ascham —"imaginary proper name invented by Ascham, and hence title of his book (1545), intended to mean 'lover of the bow'." "toxophilite, n." Oxford English Dictionary. Second edition, 1989; online version November 2010. <http://www.oed.com:80/Entry/204131>; accessed 10 March 2011. Earlier version first published in New English Dictionary, 1913.
  2. Book of the Later Han [১]"句驪一名貊耳有別種依小水為居因名曰小水貊出好弓所謂貊弓是也"
  3. Duvernay, Thomas A.; Duvernay, Nicholas Y. (২০০৭), Korean Traditional Archery, Handong Global University 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]