দত্তাত্রেয় জয়ন্তী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দত্তাত্রেয় জয়ন্তী
হিন্দু ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণুশিবের সম্মিলিত অবতার দত্তাত্রেয়
অন্য নামদত্ত জয়ন্তী
পালনকারীহিন্দু
ধরনহিন্দু
তাৎপর্যউপবাস, ধ্যান ও প্রার্থনার দিন
পালনহিন্দু দেবতা দত্তাত্রেয়ের পূজা সহ প্রার্থনা ও উৎসব
তারিখহিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত

দত্তাত্রেয় জয়ন্তী বা দত্ত জয়ন্তী হল একটি হিন্দু উৎসব। এই দিনটি হিন্দু দেবমণ্ডলীর তিন প্রধান দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণুশিবের সম্মিলিত অবতার দত্তাত্রেয়ের জন্মজয়ন্তী উৎসব হিসেবে পালিত হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে এই উৎসব বিশেষ জনপ্রিয়।[১][২]

কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দত্তাত্রেয় হলেন ঋষি অত্রি ও তার স্ত্রী অনুসূয়ার পুত্র। অনসূয়া ছিলেন ধর্মপ্রাণ নারী। তিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের সমতুল্য পুত্র লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব হিন্দু দেবমণ্ডলে ত্রিমূর্তি নামে পরিচিত। তাদের শক্তি সরস্বতী, লক্ষ্মীপার্বতী – এই ত্রিদেবী অনসূয়ার প্রতি ঈর্ষান্বিত হলেন। তারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে প্ররোচিত করলেন অনসূয়ার সতীত্ব পরীক্ষার জন্য। তিন দেবতা সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে অনসূয়ার সামনে এসে বললেন, অনসূয়াকে নগ্ন হয়ে তাদের ভিক্ষা দিতে হবে। অনসূয়া প্রথমে বিভ্রান্ত হলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তার মাথায় একটি বুদ্ধি এল। তিনি জল ছিটিয়ে মন্ত্র পড়ে তিন দেবতাকে শিশুতে রূপান্তরিত করলেন এবং নগ্ন হয়ে স্তন্যপান করালেন। অত্রি আশ্রমে ফিরে অনসূয়ার কাছে সব ঘটনা শুনলেন এবং ধ্যান বলে তিন সন্ন্যাসীর প্রকৃত স্বরূপের কথা জানতে পারলেন। তিনি তিন শিশুকে আলিঙ্গন করে তাদের একটি মাত্র শিশুতে পরিণত করলেন। এই শিশুর তিনটি মাথা ও ছয়টি হাত হল। দেবতারা ফিরছেন না দেখে ত্রিদেবী চিন্তিত হয়ে অনসূয়ার কাছে ছুটে গেলেন। তারা অনসূয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের স্বামীদের ফেরত চাইলেন। অনসূয়া রাজি হলেন। তখন ত্রিমূর্তি অত্রি ও অনসূয়ার সামনে তাদের প্রকৃত মূর্তি ধরে দাঁড়ালেন এবং তাদের দত্তাত্রেয় নামে এক পুত্র দান করলেন। যদিও দত্তাত্রেয় ত্রিমূর্তির সম্মিলিত রূপ, তবু তাকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবেই গণ্য করা হয়। অন্যদিকে চন্দ্রদুর্বাসাকে যথাক্রমে ব্রহ্মা ও শিবের অবতার মনে করা হয়।[২]

পূজা[সম্পাদনা]

দত্তাত্রেয় জয়ন্তীর দিন হিন্দুরা সকালে নদীতে স্নান করে উপবাস করেন। ফুল, ধূপ, প্রদীপ ও কর্পূর দিয়ে দত্তাত্রেয়কে পূজা করা হয়। হিন্দুরা দত্তাত্রেয়কে ধ্যান করে তাকে প্রণাম করেন। দত্তাত্রেয়ের সংলাপ-সংবলিত অবধূত গীতাজীবন্মুক্ত গীতা পাঠ করে তার কীর্তিকাহিনি স্মরণ করা হয়।[২] দত্তাত্রেয়ের জীবন ও বাণী অবলম্বনে রচিত আধুনিক গ্রন্থগুলিও পাঠ করা হয়।[৩] এছাড়া ভজন গান করা হয়।

দত্তাত্রেয়ের মন্দিরগুলিতে মহাসমারোহে দত্তাত্রেয় জয়ন্তী পালিত হয়। সারা ভারতে দত্তাত্রেয়ের বিভিন্ন মন্দির অবস্থিত। তবে কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও গুজরাটের দত্তাত্রেয় মন্দিরগুলিতে দত্তাত্রেয় জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ উৎসব হয়।[৪]

কর্ণাটকের মানিকনগরের মানিকপ্রভু মন্দিরে একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত মোট সাত দিন ধরে দত্তাত্রেয় জয়ন্তী পালিত হয়। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানা থেকে বহু তীর্থযাত্রী এই সময় এই মন্দিরে আসেন।[৫][৬] দত্ত সম্প্রদায়ের অনুগামীরা সন্ত মানিক প্রভুকে দত্তাত্রেয়ের অবতার মনে করেন। তিনি দত্তাত্রেয় জয়ন্তীর দিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৩]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Dr. Bhojraj Dwivedi (২০০৬)। Religious Basis Of Hindu Beliefs। Diamond Pocket Books (P) Ltd.। পৃষ্ঠা 125–। আইএসবিএন 978-81-288-1239-2। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১২ 
  2. Sunil Sehgal (১৯৯৯)। Encyclopaedia of Hinduism: C-G। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 501–। আইএসবিএন 978-81-7625-064-1। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১২ 
  3. Eleanor Zelliot; Maxine Berntsen (১৯৮৮)। The Experience of Hinduism: Essays on Religion in Maharashtra। SUNY Press। পৃষ্ঠা 374। আইএসবিএন 978-0-88706-664-1। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ 
  4. Sir Swami Samarth.। Sterling Publishers Pvt. Ltd। পৃষ্ঠা 203–। আইএসবিএন 978-81-207-3445-6। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১২ 
  5. http://www.manikprabhu.org/ShriDattaJayanti[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. http://www.manikprabhu.org/ShriPrabhuJayanti[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]