শ্বেতাভা, কৃষ্ণাভা ও ধূসরাভা
বর্ণতত্ত্ব অনুসারে কোনও রঙের শ্বেতাভা বলতে ঐ রঙের সাথে শ্বেতবর্ণ তথা সাদা রঙের মিশ্রণকে বোঝায়, যা রঙটির আলোকময়তা বাড়ায়। কোনও রঙের কৃষ্ণাভা বলতে ঐ রঙের সাথে কৃষ্ণবর্ণ তথা কালো রঙের মিশ্রণকে বোঝায়, যা রঙটির অন্ধকারাচ্ছন্নতা বাড়ায়। সবশেষে কোনও রঙের ধূসরাভা বলতে ঐ রঙের সাথে ধূসর রঙ মিশ্রিত করলে, অথবা রঙটিতে একই সাথে শ্বেতাভাপ্রদান ও কৃষ্ণাভাপ্রদান করলে (অর্থাৎ একই সাথে সাদা ও কালো রঙ মেশালে) যে মিশ্রণটি পাওয়া যায়, তাকে বোঝায়।[১] ইংরেজি পরিভাষায় শ্বেতাভাকে "টিন্ট" (Tint), কৃষ্ণাভাকে "শেড" (Shade) এবং ধূসরাভাকে "টোন" (Tone) নামে ডাকা হয়। কোনও নিরপেক্ষ রং (যেমন কালো, ধূসর ও সাদা) ও আরেকটি রং মেশালে দ্বিতীয় রংটির বর্ণময়তা (ক্রোমা, Chroma বা কালারফুলনেস, Colourfulness) কমে যায়, তবে সেটির বর্ণস্বাতন্ত্র্য (হিউ, hue) অপরিবর্তিত থাকে। বর্ণস্বাতন্ত্র্য হল সেই বৈশিষ্ট্য যার দ্বারা কোনও রঙকে লাল, সবুজ, নীল, হলুদ বা এগুলির অন্তর্বর্তী কোনও রঙ হিসেবে শনাক্ত ও শ্রেণীবদ্ধ করা যায়।
সংযোজী রং প্রতিমানসমূহে রঙিন আলোকরশ্মির মিশ্রণের সময় বর্ণালিগতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ লাল, সবুজ ও নীলের (RGB) অবার্ণ মিশ্রণ সবসময় সাদা হয়, ধূসর বা কালো হয় না। যখন একাধিক রঞ্জনকারক পদার্থ (colorant) মেশানো হয়, যেমন তরল রঙের মিশ্রণের মধ্যে রঞ্জক পদার্থ যখন মেশানো হয়, তখন এমন একটি রং উৎপন্ন হয় যার বর্ণময়তা বা সম্পৃক্তি উৎস রঙগুলির চেয়ে কম এবং গাঢ় হয়। ফলে মিশ্ররঙটি ধূসর বা প্রায়-কালো প্রভৃতি নিরপেক্ষ রঙের দিকে এগিয়ে যায়। উজ্জ্বলতা বা শক্তিস্তর কমবেশি করে আলোকে উজ্জ্বল বা অনুজ্জ্বল করা যায়; আর রঙের আলোকময়তা (lightness) কমবেশি করা হয় তার সাথে সাদা, কালো বা পরিপূরক রঙ মিশিয়ে।
চিত্রশিল্প
[সম্পাদনা]কোনো কোনো চিত্রশিল্পী ছবি আঁকার সময় বিশুদ্ধ রঙকে গাঢ় করার জন্য তাতে কালো রং মেশান, ফলে ঐ রঙটির একটি কৃষ্ণাভা বা শেড তৈরি হয়। তারা বিশুদ্ধ রঙকে হালকা করার জন্যে সাদা রং মেশান, ফলে রঙটির একটি শ্বেতাভা বা টিন্ট তৈরি হয়। বাস্তবধর্মী চিত্রাঙ্কনের জন্য এ পদ্ধতি উপযুক্ত নয়, কারণ এতে রঙের বর্ণস্বাতন্ত্র্য (হিউ) বদলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- হলুদ, লাল বা কমলা রং গাঢ় করতে কালো মেশালে তা সবুজ বা নীলাভ রং ধারণ করতে পারে। রং গাঢ় করার আরেকটি পদ্ধতি হলো বিপরীত তথা পরিপূরক রঙ মেশানো (যেমন পার্পল-বেগুনির সাথে হলুদাভ সবুজ)। এতে করে কোনোরকম বর্ণস্বাতন্ত্র্য বদল ছাড়াই রঙ দুইটি প্রশমিত হয়ে যায় এবং সংযোজী রং উৎস রঙের চেয়ে বেশি গাঢ় হলে উৎপাদিত রঙও গাঢ় হয়। রং লঘুকরণের সময় সংলগ্ন কোনো রঙের অল্প পরিমাণ মিশিয়ে দিলে মিশ্রণের বর্ণস্বাতন্ত্র্য (হিউ) পুনরায় উৎসের মতো হয়ে যায় (যেমন লাল ও সাদার মিশ্রণে সামান্য কমলা মেশালে তা মিশ্রণের নীল হওয়ার প্রবণতা ঠেকাবে)।
অন্য ভাষায় ব্যবহার
[সম্পাদনা]ইংরেজি
[সম্পাদনা]ইংরেজি পরিভাষায় শ্বেতাভাকে "টিন্ট" (Tint), কৃষ্ণাভাকে "শেড" (Shade) এবং ধূসরাভাকে "টোন" (Tone) নামে ডাকা হয়।
চলতি ইংরেজিতে "শেড" কথাটি দিয়ে কোনও রঙের বিভিন্ন রূপভেদ বোঝাতে পারে (যেমন লালের রূপভেদ), যদিও কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলি হয়তো শ্বেতাভা, কৃষ্ণাভা, ধূসরাভা এমনকি বর্ণস্বাতন্ত্র্যের দিক থেকে সূক্ষ্মভাবে ভিন্ন।[২] অন্যদিকে চলতি ইংরেজি "টিন্ট" বলতে রঙের যেকোনো গাঢ় বা হালকা রূপভেদকে বোঝায় (যেমন "টিন্টেড উইন্ডোজ")।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Color Theory: An Essential Guide to Color-from Basic Principles to Practical Applications by Patti Mollica, page 17, আইএসবিএন ১-৬০০৫৮-৩০২-৪, 9781600583025
- ↑ "Definition of SHADE"। www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ "Definition of TINT"। www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)।