ছুটির ঘণ্টা
ছুটির ঘণ্টা | |
---|---|
পরিচালক | আজিজুর রহমান |
প্রযোজক | বমলা সাহা |
রচয়িতা | আজিজুর রহমান |
শ্রেষ্ঠাংশে | রাজ্জাক শাবানা সুজাতা শওকত আকবর খান আতাউর রহমান সুমন (অভিনেতা) এটিএম শামসুজ্জামান রবিউল শর্ব্বরী |
সুরকার | সত্য সাহা |
চিত্রগ্রাহক | সাধন রায় |
সম্পাদক | নুরুন নবী |
পরিবেশক | স্বরলিপি বানীচিত্র |
মুক্তি | ১৯৮০[১] |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা ভাষা |
ছুটির ঘণ্টা ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী শিশুতোষ চলচ্চিত্র।[২] ছবিটি পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান। ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে সকলের অজান্তে তালাবদ্ধ হয়ে আটকে পড়ে একটি ১২ বছর বয়সের ছাত্র। আর তালাবদ্ধ বাথরুমে দীর্ঘ ১১ দিনের ছুটি শেষ হওয়ার প্রতিক্ষার মধ্য দিয়ে হৃদয় বিদারক নানা ঘটনা ও মুক্তির কল্পনায় ১০ দিন অমানবিক কষ্ট সহ্য করার পর কীভাবে একটি নিষ্পাপ কচি মুখ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এমনই একটি করুন দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।
ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছে শিশু শিল্পী সুমন ও অন্যান্য চরিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাক, শাবানা, সুজাতা, শওকত আকবর, এবং এ টি এম শামসুজ্জামান।
কাহিনী সংক্ষেপ
[সম্পাদনা]জেলখানায় দুপুরে খাবারের জন্যে ঘণ্টা বেজে উঠল আর তখনই একজন বৃদ্ধ “আব্বাস” (রাজ্জাক) চিৎকার করে বলতে থাকে- "আমি কতো বার বলেছি তোমরা এই ঘণ্টা বাজাইও না, আমি এই ঘণ্টার শব্দ শুনতে চাই না এই শব্দ আমাকে খোকা সাহেবের কচি মুখের কথা মনে করিয়ে দেয়।" এক পুলিশ জিজ্ঞেস করে "কেন আপনি এই ঘণ্টার শব্দ শুনে প্রতিদিন পাগলের মতো চিৎকার করে উঠেন?" সে বলে "আমি খুনী, আমি খোকা সাহেবকে খুন করেছি।" পুলিশ সব জানতে চাইলে সে বলে: একটি চঞ্চল উচ্ছল হাসিখুশি ছেলে আসাদুজ্জামান খোকন বয়স ১২ বছর। সে স্কুলের খুব ভাল ছাত্র এবং স্কুলের অনন্যা ছাত্র, শিক্ষক সহ সবাই ভালোবাসে ওকে, বিশেষ করে স্কুলের দপ্তরি আব্বাস মিয়া।
ঈদে স্কুল ছুটিতে খোকন নানা বাড়িতে বেড়াতে যাবে, তাই খোকন এর “নানা”ও শওকত আকবর দুদিন আগেই চলে এসেছে, মেয়ে (সুজাতা খোকনের মা) ও নাতিকে নিয়ে যেতে। এসেই মেয়ে ও খোকনকে নিয়ে কেনাকাটায় বেরিয়ে পড়েছে, “জাদুকর” (জুয়েল আইচ) এর জাদু প্রদর্শনী হবে জেনে খোকন বায়না ধরল জাদু দেখবে। জুয়েল আইচ দেখাল একটি তালা বন্ধ বাক্স থেকে কীভাবে বের হতে হয়, খোকন তার কাছে জানতে চায় তালা বন্ধ ঘর থেকে বের হতে পারবে কিনা, সে বলে- "যেকোনো বন্ধ ঘর বা জেলখানা থেকেও বের হতে পারবে।" খোকন জাদু শিখতে চাইলে সে বলে বড় হলে শিখিয়ে দেবে, খোকনকে ঠিকানা দিয়ে যেতে বলে। আজ স্কুলের ছুটি ঘোষণার দিন, খোকনের ভাল লাগছেনা মন চাইছেনা স্কুলে যেতে, তবুও মা ছেলেকে আদর করে বুঝিয়ে স্কুলে পাঠায়। স্কুলে শিক্ষক যখন পড়াচ্ছিল- মরিতে চাইনা আমি সুন্দর ভূবনে... তখনই ছুটির নোটিশ এলো, শিক্ষক ছুটির কথা জানিয়ে দিতেই ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল। ছাত্র, শিক্ষক সহ সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে, ১১ দিন ছুটি। খোকন চলে এলো দপ্তরি চাচার কাছে, তাকে একটি নতুন জামা দিয়ে বিদায় নিল তার কাছ থেকে।
ওর গাড়ি আসতে আজ দেরি হচ্ছে, ওর বন্ধু পিকলু, রবার্ট, গণেশ ওকে গাড়িতে উঠিয়ে বিদায় জানাতে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু গাড়ি আসতে দেরি খোকনই ওদের বেবীতে উঠিয়ে বিদায় জানায়। তখনই প্রকৃতির ডাকে সে স্কুলের বাথরুমে যায়। এদিকে দপ্তরি আব্বাস মিয়া সব কক্ষ তালা মেরে চলে যায়। খোকন বাথরুমের কাজ সেরে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে ওপাশ থেকে আটকানো, প্রথমে ভেবেছিল ওর কোন বন্ধু দুষ্টুমি করছে, কিন্তু অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পরও যখন খুলতে পারেনি তখন সে বুঝতে পারে স্কুল তালা মেরে সবাই চলে গেছে। ওর ভিতরে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, ভাবে- তাহলে আমাকে কি এই ১১ দিন এই বাথরুমেই থাকতে হবে? এতদিন মাকে দেখতে পারব না। দিন গড়িয়ে সন্ধা হয়, খোকন এখনো বাড়ি ফেরেনি, এদিকে আবার ছেলেধরাদের উৎপাত। ওর মা পাগলের মতো ছেলেকে খুঁজতে থাকে দপ্তরি আব্বাস মিয়াকে সাথে নিয়ে। খোকনের বন্ধুদের বাড়ি, হাসপাতাল, থানা কোথাও নেই খোকন আর এতে মায়ের আহাজারি আরও বেড়ে যায়।
এদিকে খোকন একা তালা বন্ধ বাথরুমে পোকা-মাকড় দেখে ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে ব্যাগের আড়ালে মুখ লুকায়। এক সময় নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ খোকনের কানে ভেসে এলো- "একটি বিশেষ ঘোষণাঃ গতকাল খোকন নামে একটি ১২ বছরের ছেলে হারানো গিয়েছে।" খোকনের ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনে পড়ে যায়- সে সারা রাত এই বাথরুমে ছিল। মাইকে ঘোষণা শুনে সে চিৎকার করে বলে- "আমি এখানে, আমি এখানে।" কিন্তু কেউ তার আওয়াজ শুনলো না, তাই মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বাথরুমের দেওয়ালে দেওয়ালে নিজের কষ্টের কথাগুলো লিখতে থাকে। একদিন বুদ্ধি করে একটা চিঠি লিখে বাথরুমের ওয়াল ম্যাটের ফাঁক দিয়ে বাহিরে ফেলে কল্পনা করে- ওর বন্ধুরা খেলতে এসে চিঠিটা পেয়ে দপ্তরী চাচাকে খবর দিলে সে সহ বন্ধুরা এসে তালা খুলছে, ভেঙ্গে যায় কল্পনা, চিঠিটা কুড়িয়ে নিয়ে যায় এক টোকাই। আজ কয়েক দিন যাবত খোকন শুধু পানি খেয়ে বেঁচে আছে। এদিকে তার মাও খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে ছেলে হারানোর শোকে।
এদিকে দপ্তরি আব্বাস মিয়া একরাতে স্বপ্ন দেখে খোকন বাথরুমে আটকে আছে, ঘুম থেকে জেগেই ছুটে যায় প্রাধান শিক্ষকের কাছে চাবি আনতে। এবং তার স্বপ্নের কথা জানালে শিক্ষক বলেন- "আসলে তুমি ওকে বড্ড বেশি ভালবাসোতো তাই এমন স্বপ্ন দেখছ, যাও এখন গিয়ে ঘুমাও।" ঈদের আগের দিন বিকেলে মাইকে ঘোষণা দেয়- ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে স্কুল মাঠে। শুনে খোকন খুশি হয়ে আশায় বুক বাঁধে আর বলে- "কাল সবাই নামাজ পড়তে এলে আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকলে ওরা নিশ্চয়ই শুনতে পেয়ে আমাকে এখান থেকে মুক্ত করবে।" কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস- কিছুক্ষন পরই আকাশে বজ্রপাত সেই সাথে বৃষ্টি, স্কুল মাঠে পানি জমে গেলে রাতেই ঈদের নামাজের স্থান পরিবর্তনের কথা জানিয়ে দেয়। এটা শুনে খোকনের বিলাপ- "মা, সন্তান কোথায় থাকে, কি করে- মায়েরা নাকি সব জানতে পারে, তাহলে তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও না কেন মা।"
আজ ছুটির ১০ম দিন, খোকন পানি খেতে গেল কিন্তু কলে হঠাৎ পানি আসছে না, কল অনেক ঝাঁকাঝাঁকি করেও কোনো লাভ হলো না। এবার কি হবে- মাথায় এলো ফ্লাশ ট্যাংকে জমে থাকা পানির কথা, সেই পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে শিকলে হাতের টান লেগে সব পানি যথাস্থানে পড়ে গেল আর ও শুধু চেয়ে দেখল। সব আশা শেষে হঠাৎ জাদুকরের কথা মনে পড়ে, সে বলেছিল- বন্দি ঘর থেকে মুক্তির কথা, ভাবতেই জাদুকর এসে হাজির সে ওকে মুক্ত করে স্বপ্নের দেশে নিয়ে যায়- আর ও আনন্দে নাচছে গাইছে, এক সময় দেখে এর সবই ওর কল্পনা। এতোদিন ধরে পানি খেয়ে নাম মাত্র বেঁচে আছে, পানির পিপাসায় ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, দেহের তেজও ধীরে ধীরে কমে যেতে লাগলো। ক্ষুদার জ্বালা সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বই-খাতা, কাগজ, টাকা খেয়েও নিজেকে জীবনের ছুটির ঘণ্টার হাত থেকে বাচাতে পারল না খোকন- আস্তে আস্তে কচি শরীর ঢলে পড়লো মেঝেতে, নিথর চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেল চিরতরে।
আর এই মৃত্যুর জন্যেই দপ্তরি আব্বাস মিয়া স্বেচ্ছায় মৃত্যুর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জেলে যায়।[৩]
শ্রেষ্ঠাংশে
[সম্পাদনা]- রাজ্জাক - আব্বাস মিয়া (দপ্তরি)
- শাবানা - আঙ্গুরী (ঝাড়ুদার)
- সুজাতা - মিসেস খান (মা)
- শওকত আকবর - (নানা)
- খান আতাউর রহমান - (পুলিশ)
- এ টি এম শামসুজ্জামান - (পণ্ডিত)
- সুমন (অভিনেতা) - আসাদুজ্জামান খোকন
- জুয়েল আইচ - নিজ (জাদুকর)
- রবিউল আলম
- শর্ব্বরী
সঙ্গীত
[সম্পাদনা]ছুটির ঘণ্টা ছবির সংগীত পরিচালনা করেন বিখ্যাত সংগীত পরিচালক সত্য সাহা।
সাউন্ড ট্র্যাক
[সম্পাদনা]ট্র্যাক | গান | কণ্ঠশিল্পী | নোট |
---|---|---|---|
১ | একদিন ছুটি হবে অনেক দুরে যাবো | শিরোনাম গান | |
২ | আচার খাইলে বিচার হবে | ||
৩ | পুরুষ মানুষ কেনযে আইল দুনিয়ায় | ||
৪ | আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী |
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ছুটির ঘণ্টা (ইংরেজি)
- ছুটির ঘণ্টা ছবির- ভিডিও গান, একদিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো...
- ছুটির ঘণ্টা ছবির- ভিডিও গান, আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী...
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "'ছুটির ঘণ্টা'র ঘটনা ঘটেছিল ঈদের ছুটিতে"। দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। ২০২০-০৫-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৫।
- ↑ "বাংলা চলচ্চিত্র ছুটির ঘণ্টা (১৯৮০)"। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১০।
- ↑ "Chhutir Ghonta (1980)"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০১-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১২।
- ১৯৮০-এর চলচ্চিত্র
- বাংলাদেশী চলচ্চিত্র
- বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র
- শিশুতোষ চলচ্চিত্র
- কিশোর চলচ্চিত্র
- আজিজুর রহমান পরিচালিত চলচ্চিত্র
- রাজ্জাক অভিনীত চলচ্চিত্র
- ১৯৮০-এর দশকের বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র
- সত্য ঘটনা অবলম্বনে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র
- বাংলা ভাষার বাংলাদেশী চলচ্চিত্র
- বাংলাদেশী নাট্য চলচ্চিত্র
- সত্য সাহা সুরারোপিত চলচ্চিত্র