বিষয়বস্তুতে চলুন

আজিজুর রহমান (চলচ্চিত্র পরিচালক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আজিজুর রহমান
জন্ম
আজিজুর রহমান

(1939-10-10) ১০ অক্টোবর ১৯৩৯ (বয়স ৮৬)
সান্তাহার, বগুড়া, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৪ মার্চ ২০২২ ইং
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশাচলচ্চিত্র পরিচালক
কর্মজীবন১৯৫৮–২০২২
উল্লেখযোগ্য কর্ম
পুরস্কারএকুশে পদক (২০২৫)

আজিজুর রহমান (১০ অক্টোবর, ১৯৩৯ – ১৪ মার্চ, ২০২২) একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক। পরিচালক এহতেশামের সহকারী হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র লোককাহিনী নির্ভর সাইফুল মুল্‌ক্‌ বদিউজ্জামাল (১৯৬৭)। তিনি অশিক্ষিত (১৯৭৮), মাটির ঘর (১৯৭৯), ছুটির ঘণ্টা (১৯৮০) চলচ্চিত্র পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

আজিজুর রহমান ১৯৩৯ সালের ১০ অক্টোবর সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরের কলসা সাঁতাহার মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রুপচাঁন প্রামানিক। তিনি স্থানীয় আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস ও ঢাকা সিটি নাইট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি চারুকলা আর্ট ইনস্টিটিউটে কমার্সিয়াল আর্টে ডিপ্লোমা করেন।[]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশামের সহকারী হিসেবে এ দেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এর পূর্বে তিনি ও সুভাষ দত্ত এভারগ্রিন পাবলিসিটিতে চলচ্চিত্রের ব্যানার তৈরি করতেন। দুজনে এহতেশাম ও তার ভাই মুস্তাফিজের সাথে পরিচিত হন শান্তাহারের মিনার সিনেমা হলে। সে সময় তিনি বংশালে থাকতেন। তিনি রাজার দেউড়িতে এহতেশামের লিও ফিল্মসের অফিসে দেখা করতে যান। তিনি এহতেশামকে তার চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশনার কাজের আগ্রহ দেখান। তিনি জানান এই কাজ সুভাষ দত্ত করবে এবং রহমানকে তার সহকারী হিসেবে যোগ দিতে বলেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি এহতেশাম ও মুস্তাফিজের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।[]

তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ময়মনসিংহের লোককথা নিয়ে সাইফুল মুল্‌ক্‌ বদিউজ্জামাল (১৯৬৭)। সে সময় তিনি এহতেশামের চকোরী চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। লিও ফিল্মসের নির্মাণ ব্যবস্থাপক আলী তাকে একজন প্রযোজন হতে আগ্রহী ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচালনা জীবনের শুরুতেই লোককাহিনী ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি অনাগ্রহ দেখালেও এহতেশামের উপদেশে এই ছবিটি নির্মাণ করেন। আশরাফ সিদ্দিকীর গল্প অবলম্বনে ছবিটি তিনি বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাতেই নির্মাণ করেন। উর্দু ভাষায় ছবিটির নাম ছিল মেরে আরমান মেরে স্বপ্নে। ছবিটিতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন সুজাতাআজিম। এটি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান, দুই স্থানে হিট হয়।[] পরের বছর আবার সুজাতা-আজিম জুটিকে নিয়ে নির্মাণ করেন জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে মধুমালা। ১৯৬৯ সালে তিনি সমাধান চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু করেন। কাজ সমাপ্ত হলেও ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। ছবিটি ২৫ সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে চলেছিল।[]

তার পরিচালিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র অশিক্ষিতছুটির ঘণ্টা চলচ্চিত্র দুটি দেশে ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়। অশিক্ষিত চলচ্চিত্রে বয়স্কদের শিক্ষাগ্রহণে কোনো বয়স নেই সেটা দেখানো হয়েছে এবং শিক্ষাকে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ছুটির ঘণ্টা চলচ্চিত্রে অপরাধবোধ প্রায়শ্চিত্য, চাঞ্চল্য, মৃত্যু মিলিয়ে সচেতনতাকে আহ্বান করা হয়েছে।[] অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে স্বীকৃতি, অপরাধ, গরমিল, মায়ের আচঁল, জনতা এক্সপ্রেস প্রভৃতি। ২০১৬ সালে তিনি মাটি নামে একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এটি তার প্রথম কাজ।[]

চলচ্চিত্রের তালিকা

[সম্পাদনা]
মুক্তির সাল চলচ্চিত্র পরিচালক চিত্রনাট্যকার প্রযোজক টীকা
১৯৬৭সাইফুল মুল্‌ক্‌ বদিউজ্জামালহ্যাঁপ্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র
১৯৭১নাচের পুতুলহ্যাঁপ্রযোজিত প্রথম ছায়াছবি
১৯৭৩সমাধানহ্যাঁহ্যাঁ
১৯৭৮অশিক্ষিতহ্যাঁহ্যাঁশিশুতোষ চলচ্চিত্র, মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত
১৯৭৯মাটির ঘরহ্যাঁরোমানিয়া ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত
প্রাণ সজনীহ্যাঁনারায়ণ ঘোষের সাথে যৌথভাবে[]
১৯৮০ছুটির ঘণ্টাহ্যাঁহ্যাঁশিশুতোষ চলচ্চিত্র, তাসখন্দ ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত
শেষ উত্তরহ্যাঁ
১৯৮১মহানগরহ্যাঁহ্যাঁ
১৯৮২জনতা এক্সপ্রেসহ্যাঁতাসখন্দ ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত
লাল কাজলহ্যাঁ
স্বীকৃতিহ্যাঁ
অপরাধহ্যাঁ
গরমিলহ্যাঁ
মায়ের আচঁলহ্যাঁ
কুচবরন কন্যাহ্যাঁ
রঙিন রূপবানহ্যাঁ
জিদহ্যাঁ
সাম্পানওয়ালাহ্যাঁ
১৯৯৭ঘরে ঘরে যুদ্ধহ্যাঁ
কথা দাওহ্যাঁ
২০০১ বন্ধু যখন শত্রুহ্যাঁ


২০০৭ডাক্তার বাড়ীহ্যাঁ
২০১৬মাটিহ্যাঁনির্মাণাধীন, পরিচালিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র[]

টেলিভিশন

[সম্পাদনা]

টিভি প্রোগ্রাম

[সম্পাদনা]
বছরপ্রোগ্রামউপস্থাপকচ্যানেল
২০১৪পুরানো সেই দিনের কথাজিটিভি
২০১৫বেলাশেষেত্রয়ী শাহাদাতএসএ টিভি

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]
বছর পুরস্কার বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
১৯৭২প্রযোজক সমিতি পুরস্কারশ্রেষ্ঠ পরিচালকসমাধানবিজয়ী
২০০৬ঢাকা পোস্ট পুরস্কারশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ববিজয়ী
২০১৪বাংলাদেশী আমেরিকান ক্যালিফর্নিয়া সোসাইটি পুরস্কারআজীবন সম্মাননা পদকবিজয়ী
২০২৫ একুশে পদক মরণোত্তর শিল্পকলা (চলচ্চিত্র) বিজয়ী

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

আজিজুর রহমান ২০২২ সালের ১৪ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় কানাডার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[] এর আগে ফুসফুসে পানি চলে আসার কারণে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "মারা যাওয়ার পর কী কী করতে হবে, সবকিছুই লিখে গেছেন আজিজুর রহমান"। ১৯ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০২২{{সংবাদ উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: মূল ইউআরএলের অবস্থা অজানা (লিঙ্ক)
  2. 1 2 3 "ছবি বানাতে চেয়েছি, অন্য কিছু নয়"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৯ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮
  3. আহমেদ তেপান্তর (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "'চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই জায়েদ খানকে নেয়া'"বাংলা নেক্সট বিডি। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৬[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "আবারও পরিচালনায় আজিজুর রহমান"দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৬
  5. "রবি এ সপ্তাহের বিশেষ ছবি প্রাণ সজনী"টিভি গাইড বাংলাদেশ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৮ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৬[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "আবার পরিচালনায় আজিজুর রহমান"দৈনিক মানবজমিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৬
  7. "'ছুটির ঘণ্টা' সিনেমার পরিচালক আজিজুর রহমান আর নেই"Bangla Tribune। ১৪ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২২
  8. "'ছুটির ঘণ্টা'খ্যাত পরিচালক আজিজুর রহমান হাসপাতালে"banglanews24.com। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২২

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]