খোণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খোন্ড (যারা কোন্ডা এবং কান্ধা নামেও পরিচিত) হল ভারতের একটি আদিবাসী সম্প্রদায় । ঐতিহ্যগতভাবে তারা শিকারী-সংগ্রাহক। তাদের আঞ্চলিক বাসস্থান অনুযায়ী তারা পাহাড়ে বসবাসকারী খোন্ড এবং সমতল-আবাসিক খোন্ড এই দুই ভাগে বিভক্ত। কিন্তু খোন্ডরা নিজেদের নির্দিষ্ট গোষ্ঠী দ্বারা চিহ্নিত করে। খোন্ডরা সাধারণত উর্বর জমির বিশাল অংশের অধিকারী, কিন্তু তারা এখনও বনে শিকার করে এবং শিকার করা খাবার ঝলসিয়ে খায়। তারা যে বনে বাস করে তার মালিকানার দাবি করে। খোন্ডরা কুই ভাষায় কথা বলে এবং লেখার জন্য ওড়িয়া লিপি ব্যবহার করে।

খোন্ডরা ওড়িশা রাজ্যের বৃহত্তম উপজাতীয় গোষ্ঠী। তারা তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বীরত্বপূর্ণ সামরিক ঐতিহ্য এবং দেশীয় মূল্যবোধের জন্য পরিচিত যা তাদের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ওড়িশার কান্ধমাল জেলায় পঞ্চান্ন শতাংশ খোন্ড উপজাতির জনসংখ্যার বসবাস রয়েছে।

তারা অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তফসিলি উপজাতির তকমা পেয়েছে। [১]

ভাষা[সম্পাদনা]

খোন্ডরা কুই ভাষাকে তাদের মাতৃভাষা ও কথ্য ভাষা হিসাবে গ্রহন করেছে। এটি গোন্ডি ভাষার সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কুই একটি দ্রাবিড় ভাষা এবং এটি ওড়িয়া বর্ণমালা দিয়ে লেখা হয়। [২]

সমাজ[সম্পাদনা]

খোন্ডরা বন ও পাহাড়ি পরিবেশে বসবাসে পারদর্শী, তবে শিক্ষা, চিকিৎসা সুবিধা, সেচ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আধুনিক সুবিধা পেতে তারা নানাভাবে আধুনিক জীবনধারার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তাদের ঐতিহ্যগত জীবনধারা, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, অর্থনীতির প্রথাগত বৈশিষ্ট্য, রাজনৈতিক সংগঠন, রীতিনীতি, মূল্যবোধ এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী খোন্ড সমাজ ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ গোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। প্রতিটি সম্পর্কিত পরিবার একটি টোটেম দ্বারা চিহ্নিত হয় ও একটি বৃহৎ গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি বংশের সাধারণত একটি সাধারণ উপাধি থাকে এবং বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী পরিবারের সবচেয়ে বড় পুরুষ সদস্য নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। খোন্ডের সমস্ত গোষ্ঠী কোন্ধ প্রধান -এর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে, যিনি সাধারণত খোন্ডদের সবচেয়ে শক্তিশালী বংশের নেতা।

ঐতিহ্যবাহী খোন্দ বাড়ি।
খোন্ড মহিলা
খোন্ড মহিলারা

সমাজের পুরুষরা সাধারণত বনে শিকার করে। এছাড়াও তারা পাহাড়ের ঢালে জুম চাষের অন্তর্গত পোডু পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করে। যেখানে তারা বিভিন্ন জাতের ধান, মসুর এবং সবজি চাষ করে। মহিলারা সাধারণত দূরবর্তী ঝর্না‌ বা নালা থেকে জল আনা, রান্না করা, পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে খাবার পরিবেশন ইত্যাদি গৃহস্থালির সমস্ত কাজ করে। এছাড়াও তারা পুরুষদের চাষাবাদ, ফসল তোলা এবং বাজারে পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করে। [৩]

ধর্মীয় বিশ্বাস[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যগতভাবে খোন্ডদের ধর্মীয় বিশ্বাস টোটেমিজম, অ্যানিমিজম, পূর্বপুরুষের উপাসনা, শামানবাদ এবং প্রকৃতি উপাসনা ইত্যাদি প্রথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ব্রিটিশ লেখকরা আরও উল্লেখ করেছেন যে খোন্ডদের মধ্যে মানব বলিদানের প্রথা ছিল। [৪] সনাতন খোন্ড ধর্মে পর্বত, নদী, সূর্য, পৃথিবী ইত্যাদির পূজা হয়। সনাতন খোন্ড ধর্ম বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত যেমন ঝাগাদি বা কেদু বা মেরিয়া পূজা, শ্রী পেনু পূজা, ধরনি পেনু পূজা, গুরুবা পেনু পূজা, তুর্কি পেনু পূজা এবং পিতাবালি পূজা। মাটিতে বীজ বপনের আগে মাটির পূজা করা হয়। জমির উর্বরতার সাথে যুক্ত অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানগুলি হল গুরুবা পূজা, তুর্কি পূজা। কিছু ক্ষেত্রে ধরনি দেবীকে (পৃথিবীকে) সন্তুষ্ট করার জন্য মেরিয়া পূজা (মানব বলি) হয়। সারু পেনু পূজায় পাখির বলি ও ভোজ দেওয়ার রীতি আছে। দেহুড়িতে ছাগল ও মুরগি বলি দেওয়া হয়। গুরবা পেনু পূজা এবং তুর্কি পেনু পূজা গ্রামের বাইরে করা হয়। ফুল, ফল, চন্দন, ধূপ, ঘি-প্রদীপ, ঘি, শুকনো ধান, হলুদ, মহিষ বা একটি ছাগল এবং পাখী নিবেদন করে পিতাবলি পূজা করা হয়। [৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "List of notified Scheduled Tribes" (পিডিএফ)। Census India। ৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  2. হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Kui (India)"গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট। 
  3. Jena M. K., et.al.
  4. Russell, Robert Vane (১৯১৬)। pt. II. Descriptive articles on the principal castes and tribes of the Central Provinces (ইংরেজি ভাষায়)। Macmillan and Company, limited। 
  5. "Shifting Cultivation by the Juangs of Orissa"। etribaltribue। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০২২