এশেরিকিয়া কোলাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যাশেরিকিয়া কোলাই

অ্যাশেরিকিয়া কোলাই  (//;[১]ই. কোলাই  নামেও পরিচিত ) একটি গ্রাম নেগেটিভ,রড-আকৃতির, কোলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া। এটি এশেরেকিয়া গণের অন্তর্ভুক্ত যা সচরাচর উষ্ণ রক্তের প্রাণীর অন্ত্রে পাওয়া যায়। [২] বেশিরভাগ ই.কোলাই ক্ষতিকর নয় তবে কিছু ই.কোলাই তাদের হোস্টের শরীরে মারাত্মক  খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। [৩] ক্ষতিকর নয় এরূপ ই.কোলাই স্ট্রেইন  হোস্টের শরীরের বৃহদন্ত্রে বাস করে।  এরা ভিটামিন কে২ তৈরি করায় অবদান রাখে ,[৪]  এবং  অন্ত্রে ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টিকারী অনুজীবের দল গঠনে বাধা দিয়ে হোস্টের সাথে পরজীবি হয়েও একটি সিম্বায়োটিক সম্পর্ক বজায় রাখে। সিম্বায়োটিক সম্পর্ক হল, যখন কোন পরজীবি তার আশ্রয়দাতা হোস্টের উপকারে আসে এবং উভয় পক্ষ একে অপরের সান্নিধ্যে লাভবান হয়। ই.কোলাই ব্যাক্টেরিয়া প্রাণীর মলের মাধ্যমে পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। অন্তত তিনদিন অবাত শ্বসন দশায় এরা টিকে থাকতে পারে। এধরনের ব্যাক্টেরিয়ামের আদিকোষে কোসমিড নামক প্ল্যাসমিড কস অপেরন নামক অঞ্চলে অবস্থিত ColE1 নামক জিন এনকোডিং এর মাধ্যমে কোলিসিন ,মাইক্রোসিননামক ব্যাক্টেরিওসিন উৎপাদন করতে সক্ষম।

জীববিজ্ঞান ও জৈবরসায়ন[সম্পাদনা]

ই.কোলাই এর সফল বাইনারি ফিশনের মডেল
ই.কোলাই এর একটি কলোনী বড় হচ্ছে

প্রকারভেদ ও অঙ্গসংস্থান[সম্পাদনা]

ই.কোলাই একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া। এরা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় এটিপি তৈরি করে। তবে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় অবাত শ্বসন ঘটাতেও এরা সম্ভবপর।[৫] এদের গঠন রড আকৃতির এবং আকারে প্রায় ২.০μm (মাইক্রোমিটার)লম্বা এবং ০.২৫-১.০μm (মাইক্রোমিটার) প্রশ্বস্ত। ই.কোলাই কোষের ঘনত্ব প্রায় ০.৬-০.৭μm3[৬]

পেপ্টিডোগ্লাইক্যানের তৈরি পাতলা আবরণ ও একটি বর্হি আবরণের উপস্থিতি ই.কোলাইকে গ্রাম নিগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া করেছে। কোষ স্টেইনিং এর সময় ই.কোলাই স্যাফ্রানিন এর গোলাপী রঞ্জকে রঞ্জিত হয়। কোষ দেয়ালে বাইরের আবরণ ই.কোলাই প্রতিরক্ষা দেয়। তাই পেনিসিলিয়াম মতো এন্টিবায়োটিক দ্বারাও এরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। 

Protein TolC, the outer membrane component of a tripartite efflux pump in Escherichia coli.

বিপাক[সম্পাদনা]

ই.কোলাই ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন দশায় টিকে থাকতে পারে। অবাত শ্বসনের সময় মিশ্র এসিড ফার্মেন্টেশনের ক্ষেত্রে ই.কোলাই ল্যাক্টেট, সাক্সিনেট, ইথানল, এসিটেট এবং কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। বেশ কিছু উপায়ে মিশ্র এসিড ফার্মেন্টেশন হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদন করে। তবে এসব ক্ষেত্রে ই.কোলাই এর নিম্ন মাত্রার হাইড্রোজেনের উপস্থিতি দরকার হয়। তাই সচরাচর ই.কোলাই হাইড্রোজেন গ্রহণ করে এরকম জীবের শরীরে বাস করে। একই কারণে, মেথানোজেন বা সালফেট-ক্ষয়কারী মেথানোজেনেজ নামক এনজাইম ই.কোলাই ব্যাক্টেরিয়াতে পাওয়া যায়। [৭]

কালচারে বৃদ্ধি[সম্পাদনা]

ই.কোলাইয়ের বৃদ্ধি গড়ে ৩৭°সেন্টিগ্রেড (৯৮.৬° ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় হয়। তবে গবেষণাগারে কিছু ই.কোলাই ৪৯° সেন্টিগ্রেড ( ১২০° ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় পর্যন্ত সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে। গবেষণাগারে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমে ই.কোলাই এর বৃদ্ধি করানো হয়। গ্লুকোজ, এমোনিয়াম ফসফেট, মনোবেসিক, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, পটাশিয়াম ফসফেট, ডাইবেস এবং পানির সমন্বয়ে [৮] যেকোন মাধ্যমে ই.কোলাই কালচার করা যায়। স্ববাত কিংবা অবাত উভয় ধরনের শ্বসন ই.কোলাই কালচারে ব্যবহার করা যায়। এমনকি পাইরুভিক এসিড, ফরমিক এসিড, হাইড্রোজেন এবং এমিনো এসিডের ব্যবহার করা যেতে পারে। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতেও এই ব্যাক্টেরিয়া সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে, যা পানিবিহীন পরিবেশেও টিকে থাকতে সাহায্যকারী [৮]

জিনেটিক গ্রহণক্ষমতা[সম্পাদনা]

ই.কোলাই এবং এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়াগুলো ব্যাক্টেরিয়াল কনজুগেশন বা ট্রান্সডাকশন পদ্ধতিতে ডিএনএ ট্রান্সফার করতে পারে। এতে জিনেটিক বস্তু অনুভূমিকভাবে একটি পপুলেশনে বিস্তার লাভ করতে পারে। ব্যাক্টেরিওফেজ ভাইরাস ট্রান্সডাকশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে শিগেলা ব্যাক্টেরিয়ার শিগা টক্সিনের জিনেটিক কোড ই.কোলাইয়ে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়।

Schematic drawing of bacterial conjugation. 1- Donor cell produces pilus. 2- Pilus attaches to recipient cell, brings the two cells together. 3- The mobile plasmid is nicked and a single strand of DNA is then transferred to the recipient cell. 4- Both cells recircularize their plasmids, synthesize second strands, and reproduce pili; both cells are now viable donors.

[৯] যা ই.কোলাই এর স্ট্রেইন ই.কোলাই ০১৫৭:এইচ৭ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। ই.কোলাই ০১৫৭:এইচ৭ স্ট্রেইন হল শিগা টক্সিন উৎপন্নকারী ই.কোলাই স্ট্রেইন।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

ই.কোলাই কলোনীর স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোগ্রাফ 

জিনেটিক ও ফিনোটাইপিক দিক দিয়ে ই.কোলাই এর বিপুল পরিমান বৈচিত্র্যতা রয়েছে। জিনোম সিকুয়েন্স দিয়ে দেখা যায়, ই.কোলাই এর পুনরায় শ্রেনীবিন্যাস করা প্রয়োজন। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথা বিবেচনা করে তা করা হয় নি। [১০] ই.কোলাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যাক্টেরিয়ার মাঝে অন্যতম। মাত্র ২০ শতাংশ জিনোম সিকুয়েন্স সকল ই.কোলাই স্ট্রেইনের মাঝে  সাধারণত ভাবে পাওয়া যায়।

জিনোম প্লাস্টিসিটি ও বিবর্তন[সম্পাদনা]

যেকোন জীবনের মত ই.কোলাইও সময়ের সাথে বিবর্তিত হয়েছে। সালমোনেলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এমজি ১৬৫৫ স্ট্রেইনের ১৮ শতাংশ জিনোম অনুভূমিকভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিছু কিছু ই.কোলাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমনকি ডায়রিয়া রোগের কারণ।[১১] ডায়রিয়া উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের জন্য প্রাণঘাতী একটি রোগ। আরো ক্ষতিকর স্ট্রেইন, যেমন ০১৫৭:এইচ৭ স্ট্রেইন প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। 

এশেরিকিয়া এবং সালমোনেলা গণ ১০২ মিলিয়ন বছর আগের দিকে বৈচিত্র্য পেতে শুরু করেছিল। তাই এদের এত রকমের রমকমফের দেখা যায়, পূর্বের প্রকারভেদ স্তন্যপায়ী প্রাণী মাঝে এবং তুলনামূলকভাবে নতুনতর স্ট্রেইন পাখি এবং সরীসৃপের মাঝে পাওয়া যায়।[১২] এশেরিকিয়ার সর্বশেষ পূর্বপুরুষ বিভক্ত হয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন বছর।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "coli"অর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজনঅক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।  (Sসাবস্ক্রিপশন বা পার্টিশিপেটিং ইনস্টিটিউট মেম্বারশিপ প্রয়োজনীয়.)(Subscription or UK public library membership ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে required.)
  2. Singleton P (১৯৯৯)। Bacteria in Biology, Biotechnology and Medicine (5th সংস্করণ)। Wiley। পৃষ্ঠা 444–454। আইএসবিএন 0-471-98880-4 
  3. "Escherichia coli"CDC National Center for Emerging and Zoonotic Infectious Diseases। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১২ 
  4. Bentley R, Meganathan R (সেপ্টে ১৯৮২)। "Biosynthesis of vitamin K (menaquinone) in bacteria"Microbiological Reviews46 (3): 241–80। পিএমআইডি 6127606পিএমসি 281544অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  5. "E.Coli"। Redorbit। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৩ 
  6. "Facts about E. coli: dimensions, as discussed in bacteria: Diversity of structure of bacteria: – Britannica Online Encyclopedia"। Britannica.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৫ 
  7. Brock Biology of microorganisms (11th সংস্করণ)। Pearson। ২০০৬। আইএসবিএন 0-13-196893-9 
  8. Tortora, Gerard (২০১০)। Microbiology: An Introduction। San Francisco, CA: Benjamin Cummings। পৃষ্ঠা 85–87, 161, 165,। আইএসবিএন 0-321-55007-2 
  9. Brüssow H, Canchaya C, Hardt WD (সেপ্টে ২০০৪)। "Phages and the evolution of bacterial pathogens: from genomic rearrangements to lysogenic conversion"Microbiology and Molecular Biology Reviews : MMBR68 (3): 560–602। ডিওআই:10.1128/MMBR.68.3.560-602.2004পিএমআইডি 15353570পিএমসি 515249অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  10. Krieg, N. R.; Holt, J. G., সম্পাদকগণ (১৯৮৪)। Bergey's Manual of Systematic Bacteriology1 (First সংস্করণ)। Baltimore: The Williams & Wilkins Co। পৃষ্ঠা 408–420। আইএসবিএন 0-683-04108-8 
  11. Lawrence JG, Ochman H (আগস্ট ১৯৯৮)। "Molecular archaeology of the Escherichia coli genome"Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America95 (16): 9413–7। ডিওআই:10.1073/pnas.95.16.9413পিএমআইডি 9689094পিএমসি 21352অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:1998PNAS...95.9413L 
  12. Battistuzzi FU, Feijao A, Hedges SB (নভে ২০০৪)। "A genomic timescale of prokaryote evolution: insights into the origin of methanogenesis, phototrophy, and the colonization of land"BMC Evolutionary Biology4: 44। ডিওআই:10.1186/1471-2148-4-44পিএমআইডি 15535883পিএমসি 533871অবাধে প্রবেশযোগ্য 

আরোও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Jann K, Jann B (Jul 1992). "Capsules of Escherichia coli, expression and biological significance". Canadian Journal of Microbiology. 38 (7): 705–710. doi:10.1139/m92-116. PMID 1393836.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ডাটাবেইস[সম্পাদনা]