অবাত শ্বসন
যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে সংগঠিত হয় তাকে অবাত শ্বসন(Anaerobic respiration) বলে। অর্থাৎ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনো বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষের ভিতরের এনজাইম দিয়ে আংশিকরূপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ, যেমন: ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক এসিড ইত্যাদি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণ শক্তি তৈরি করে, তাকে অবাত শ্বসন বলে। কেবলমাত্র কিছু অণুজীবে যেমন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট ইত্যাদিতে অবাত শ্বসন হয়।[১]
C6H12O6 ---জাইমেজ এনজাইম+২৫°©--> 2C2H5OH + 2CO2 + শক্তি ( 56 k Cal / Mole )
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা](১).অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই শুধু জাইমেজ এনজাইম ও ২৫° সেলসিয়াস আদিকোষীয় তাপমাত্রা প্রয়োজন।
(২).অল্পপরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। কখনো কখনো হয়না।
(৩).পানি বা জল উৎপন্ন হয়না।
(৪).অ্যালকোহল বা ল্যাক্টিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়।
(৫).ATP আকারে ২০ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
(৬).ATP মোট ২টি উৎপন্ন হয়।
(৭).নিম্নশ্রেণির কিছূ উদ্ভিদে যেমন- ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাকে, বিশেষ করে(ঈস্ট ও মাইক্রোপ্লাজমা)অবাক শ্বসন ঘটে।
(৮).শ্বসনিক বস্তু আংশিক জারিত হয়।
সন্ধান
[সম্পাদনা]সন্ধান (Fermentation) প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের অবাত শ্বসন প্রক্রিয়া। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে জীবকোষের বাইরে সন্ধান ঘটে। সেইজন্য সন্ধানকে বহিঃকোষীয় শ্বসন (Extracellular Respiration) বলা যায়। কয়েকরকম ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাকে এই প্রক্রিয়া হয়। সন্ধান সাধারণত তিন প্রকারের হয়:
[১] কোহল-সন্ধান (Alcoholic Fermentation): যে সন্ধান-প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ অণু ভেঙে ইথাইল অ্যালকোহল ও CO₂ উৎপন্ন হয় তাকে কোহল-সন্ধান বলে। তাল-রস ও খেজুর-রসে প্রচুর পরিমাণে ঈস্ট জন্মায়। ঈস্টের দেহ থেকে জাইমেজ নামে উৎসেচক নির্গত হয়। এই উৎসেচকের প্রভাবে খেজুর রস বা তাল-রসের গ্লুকোজ দ্রবণ আংশিকভাবে জারিত হলে ইথাইল অ্যালকোহল, CO₂ এবং কিছু শক্তি নির্গত হয়। CO₂ বুদবুদের আকারে রসের হাঁড়ি ভরে দেয়। এই রস গেঁজে ওঠে এবং তাড়ি বা মদ উৎপন্ন হয়।
[২] ল্যাকটিক অ্যাসিড-সন্ধান (Lactic Acid Fermentation): এই ধরনের সন্ধান-প্রক্রিয়ায় দুগ্ধ-শর্করা বা ল্যাকটোজ ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। এই সন্ধানে ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটিরিয়া অংশ নেয়। সেইজন্য দুধ থেকে দই হয়।
[৩] অ্যাসিটিক অ্যাসিড-সন্ধান (Acetic Acid Fermentation): এই ধরনের সন্ধান ভিনিগার (Vinegar) প্রস্তুতের সময় ঘটে। ব্যাকটিরিয়া গ্লুকোজ তথা ইথাইল অ্যালকোহল অণু জারিত করে অ্যাসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে।[২]
- ↑ https://www.sciencedirect.com/topics/medicine-and-dentistry/anaerobic-respiration#:~:text=Anaerobic%20respiration%20is%20defined%20as,those%20obtained%20using%20molecular%20oxygen
- ↑ মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর, এপ্রিল,১৯৮৬, পৃঃ ২৭