বিষয়বস্তুতে চলুন

এম এ রশীদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এম এ রশীদ
জন্ম১৬ জানুয়ারি, ১৯১৯
বগাঢুপি , চুনারুঘাট হবিগঞ্জ, সিলেট
মৃত্যু৬ নভেম্বর, ১৯৮১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণঅধ্যাপক, বুয়েটের প্রথম উপাচার্য

এম এ রশীদ (জন্ম: ১৬ জানুয়ারি, ১৯১৯ - মৃত্যু: ৬ নভেম্বর, ১৯৮১) বুয়েটের প্রথম উপাচার্য। এছাড়া তিনিই দেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রকৌশলী বিষয়ে প্রথম পিএইচডি সম্পন্ন করেন। [] তার স্মরনে বুয়েটে এক ছাত্র হল (এম এ রশীদ হল) নামকরণ করা হয়। []

এম এ রশীদের জন্ম হবিগঞ্জ জেলায় । তার পিতার নাম মুহম্মদ সা'দ। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম।

শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাজারবাজার মধ্যবঙ্গ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৩৬ সালে তিনি হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ করে তিনি সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন ও ১৯৩৮ সালে সেখান থেকে বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগে আই.এস.সি. পাশ করেন। পরে শিববুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে পুরাকৌশল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় পড়ালেখায় স্বীকৃতিস্বরূপ স্লেটার মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক ও টেট মেমোরিয়াল পদক পান। ১৯৪২ সালে তিনি এই কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পুরাকৌশলে বি. ই. ডিগ্রী লাভ করেন এবং এই ফলাফলের জন্য ট্রেভর মেমোরিয়াল পুরস্কার ও পদক লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় ভারত সরকারের 'অল ইন্ডিয়া স্টেট স্কলারশিপ' লাভ করেন এবং একই বছরের নভেম্বর মাসে এই বৃত্তিতে পড়ালেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গে অবস্থিত কার্নেগি ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে (বর্তমান কার্নেগিমেলন বিশ্ববিদ্যালয়) পুরাকৌশল বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন ও ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুরাকৌশলে এম.এস. (মাস্টার অব সায়েন্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ২৭ জুন ১৯৪৮ সালের তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. এসসি. (ডক্টর অব সায়েন্স) ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

অধ্যাপক এম এ রশীদ কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৪২-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আসাম সরকারের গণপূর্ত বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে তিনি শিলচরে বদলী হয়ে যান এবং কাছাড় বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে তিনি ঢাকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পুরাকৌশল বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে তিনি অধ্যাপক হন এবং ১৯৫৪ সাল থেকে পরবর্তী প্রায় ১৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৮ সালের ২৩ ডিসেম্বরে তিনি পাকিস্তান সরকারের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৬১ সালের ১ এপ্রিল তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রথম কারিগরী শিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই সময়ে তিনি নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত হন। ১৯৬১ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি কারিগরি শিক্ষা পরিচালকের দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্যের (খণ্ডকালীন) দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কয়েক মাস পরে এই পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি ১ জুন ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পূর্ণকালীন) উপাচার্যের দায়িত্ব নেন। ১৯৬৬ সালের ১ জুন তিনি দ্বিতীয়বার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ব্যাংককে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজীর আজীবন ট্রাস্টি হন। ১৯৬৭ সালে রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭৫ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেন ও একই সাথে 'বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি'র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকৌশল বিভাগে ব্যক্তিগত প্রফেসর পদে যোগ দেন।

১৯৮০ সালে তিনি জনতা ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদের চেয়ারম্যন পদে নিযুক্ত হন।

পারিবারিক জীবন

[সম্পাদনা]

১৯৪১ সালে শিবপুরস্থ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মোসাম্মত্‍ তানজুন্নেসা খাতুনকে বিবাহ করেন। তিনি চার পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের পিতা।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

তিনি ৬ নভেম্বর ১৯৮১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২ বছর বয়সে মৃত্যবরণ করেন। তাকে তার গ্রামের বাড়ী সিলেটের হবিগঞ্জের বগাডুবিতে সমাহিত করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]
  • স্লটার মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক (১৯৪১)
  • টেট মেমোরিয়াল পদক (১৯৪১)
  • ট্রেভর মেমোরিয়াল পুরস্কার এবং স্বর্ণ পদক (১৯৪২)
  • সিতারা-এ পাকিস্তান খেতাব (১৯৬৬)
  • স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৮২)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "বাংলাপিডিয়া"। ১২ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  2. "বুয়েট"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১২