ইন আওয়ার টাইম (ছোটগল্প সংকলন)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইন আওয়ার টাইম
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকআর্নেস্ট হেমিংওয়ে
মূল শিরোনামইন আওয়ার টাইম
দেশমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষাইংরেজি
ধরনছোটগল্প
প্রকাশিত১৯২৫
প্রকাশকবনি অ্যান্ড লিভরাইট
মিডিয়া ধরনমুদ্রিত

ইন আওয়ার টাইম (ইংরেজি: In Our Time, অনুবাদ'আমাদের সময়ে') হল আর্নেস্ট হেমিংওয়ের প্রথম ছোটগল্পের সংকলন। এটি ১৯২৫ সালে নিউ ইয়র্কের বনি অ্যান্ড লিভরাইট থেকে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের শিরোনাম গৃহীত হয়েছে ইংরেজি প্রার্থনার বই "গিভ পিস ইন আওয়ার টাইম, ও লর্ড" থেকে। এই সংকলনের প্রকাশনার ইতিহাস খুবই জটিল ছিল। এর রচনাকার্য শুরু হয় যখন এজরা পাউন্ড ১৯২৩ সালে হেমিংওয়েকে দ্য লিটল রিভিউ-এর একটি সংস্করণের জন্য ছয়টি গদ্য লিখতে বলেন। হেমিংওয়ে আরও ১২টি যুক্ত করে ১৯২৪ সালে 'ইন আওয়ার টাইম' সংস্করণে যুক্ত করেন, যা প্যারিসে মুদ্রিত হয়। এগুলোর সাথে ১৯২৫ সালের সংস্করণে আরও ১৪টি ছোটগল্প যুক্ত করা হয়, তন্মধ্যে নিক অ্যাডামস চরিত্র সংবলিত "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" ও "বিগ টু-হার্টেড রিভার" সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করে। তিনি ১৯৩০ সালের সংস্করণে "অন দ্য কুয়াই অ্যাট স্মায়ার্না" যুক্ত করেন।

এই সংকলনের গল্পগুলোর মূল বিষয়বস্তু হল আরোগ্য লাভ, হারানো, দুঃখ, বিচ্ছেদ এবং এগুলোতে যুদ্ধের বিভিন্ন কাজের বর্ণনা, ষাড়ের লড়াই এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি চিত্রিত হয়েছে। এই সংকলনটি এর স্বল্প ভাষার ব্যবহার, আবেগের পরোক্ষ বহিঃপ্রকাশের জন্য প্রসিদ্ধি অর্জন করে, লেখনীর এই ধরনটি হেমিংওয়ের "বাতিলের তত্ত্ব" (আইসবার্গ তত্ত্ব) নামে পরিচিতি লাভ করে। হেমিংওয়ের জীবনীকার মাইকেল রেনল্ডসের মতানুসারে "কোন কিছুই এর থেকে দ্ব্যর্থবোধক নয়... এর কয়েকটি অংশ - জীবনী, সাহিত্য, সম্পাদকীয়, ও রচনাবলি সম্পর্কিত - এত বেশি মতবিরোধ রয়েছে যে যেকোন প্রকাশ বিশ্লেষণ ত্রুটিপূর্ণ হবে।"[১]

হেমিংওয়ের লেখনীর ধরন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সাহিত্য সমালোচক এডমান্ড উইলসন একে "প্রথম পার্থক্য সৃষ্টিকারী" বলে উল্লেখ করেন।[২] ইন আওয়ার টাইমস-এর ১৯২৫ সালের সংস্করণকে হেমিংওয়ের শুরুর দিকের শ্রেষ্ঠকর্ম বলে গণ্য করা হয়।[৩]

পটভূমি এবং প্রকাশনার ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯১৮ সালে হেমিংওয়ের যখন ১৯ বছর বয়সে তিনি ইতালীয় ফ্রন্টের রেড ক্রস অ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং এর কিছু দিনের মাথায় মর্টার এর গোলার আঘাতে আহত হন। পরের ছয় মাস, তিনি একটি মিলান এর একটি হাসপাতালে সুস্থতা লাভ করেন, সেখানেই তিনি নার্স অ্যাগনেস ভন কুরোস্কির প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার অল্প কদিনের মধ্যেই, তিনি তাকে জানিয়ে দিলেন যে তিনি একজন ইতালিয়ান কর্মকর্তার সাথে সম্পর্কে জড়িত আছেন। এর পরেই তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন।[৪]

১৯২১ সালে হ্যাডলি রিচার্ডসনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কয়েক মাস পর, তিনি টরন্টো স্টারের আন্তর্জাতিক সংবাদ দাতা হিসাবে প্যারিসে নিযুক্ত হন। সে সময়কার গ্রিকো-তুর্কিযুদ্ধের প্রতিবেদন এবং স্পেন আর জার্মানির খেলাধূলার খবর সরবরাহ করছিলেন।[৫] প্যারিসেই তার গের্ট্রুড স্টেইন, এজরা পাউন্ড, এফ স্কট ফিট্জগারেল্ড, জেমস জয়েস, ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ড এবং জন ডস পাসোসের[৬] সাথে শখ্যতা গড়ে উঠে এবং বিশেষভাবে পাউন্ডের সাথে একটি গাড়ো বন্ধুত্ব তৈরি করেন।[৭] পাউন্ডের প্রভাবে তরুণ লেখকের প্রচার প্রসার বেশ তরান্বিত হলো, একে একে হেমিংওয়ের ছয়টি কবিতাও জায়গা করে নিল পয়েট্রি ম্যাগাজিনে।[৭] আগস্টের দিকে তিনি হেমিংওয়েকে অল্প স্বল্প পরিমানে তার সম্পাদিত সিরিজ মর্ডানিস্ট এ কাজ করার জন্য তাগদা দেন এবং বিল বার্ড সেটি তার থ্রি মাউন্টেইনস প্রেস থেকে ছাপিয়ে দেন যার ফলসরুপ পাউন্ডকে "আধুনিক ইংরেজি ভাষার রাজ্যের অনুসন্ধিৎসু" হিসেবে চিন্তা করা হয়।[৭] পাউন্ডের দেয়া কমিশন হেমিংওয়ের মনোযোগ গল্প/উপন্যাসের দিকে নিয়ে যায় এবং লেখক হিসাবে তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে।[৭]

১৯২২ সালের শীতের ছুটিতে চ্যাম্বি (মন্ট্রোক্স) এ হেমিংওয়ে এবং তাঁর স্ত্রী হ্যাডলি

১৯২২ সালের ডিসেম্বরের ২ তারিখে হেমিংওয়ের শুরুর দিকের সমস্ত লেখালেখি- তার প্রাথমিক এবং হাতেখড়ির উপন্যাস গুলো অনুলিপি (কপি) সহ হারিয়ে যায়।[৮][৯] ঠান্ডা জনিত কারণে অসুস্থ স্ত্রী হ্যাডলিকে প্যারিসে ফেলে রেখে তাকে লসান সম্মেলনে নিয়োগ করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লসানে তার সম্মেলনটি কাভার করে এবং লিংকন স্টেফেন্সের সাথে সান্ধ্যকালীন মদ্য পানেই দিন কাটাচ্ছিলেন।[১০] সুইজারল্যান্ডে তার সাথে সাক্ষাতে বসার আগে, স্টিফেন্সকে তার লেখাগুলো দেখাতে পারেন ভেবে হ্যাডলি তার সমস্ত পাণ্ডুলিপি একটি স্যুটকেসে গুছিয়ে রাখেন পরবর্তীতে যেটি গ্যারে ডি লিয়ন রেল স্টেশনে চুরি হয়ে যায়।[১১] রাগে দুঃখে ভেঙ্গে পড়ার পরেও হেমিংওয়ে হ্যাডলিকে সাথে করে চ্যাম্বির (মন্ট্রাক্স) স্কি করতে যান এবং খুব সম্ভবত স্যুটকেসটি ফেরত পাওয়ার জন্য কোন পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয় নি।[৯] একটি প্রাথমিক গল্প "আপ ইন মিশিগান" ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল কারণ গের্ট্রুড স্টেইন তাকে বলেছিলেন যে এটি অমুদ্রণীয় (কিছুটা আবেদনময়ী দৃশ্যের কারণে), এবং তিনি এটি একটি ড্রয়ারে সরিয়ে রেখেছিলেন।[১২]

এক মাস পরে পাউন্ডের কাছে একটি চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে "আপনি স্বাভাবিকভাবেই " 'ভাল' বা এই জাতীয় কিছু বলে আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারেন, তবে আমাকে তা বলবেন না I আমি এখনো সেই মেজাজে পৌঁছিনি।"[১৩] তার উত্তরে পাউন্ড উল্লেখ করেন যে হেমিংওয়ে, কেবল "সময়টি হারিয়েছে ... আপনি যে অংশগুলি মনে করতে পারেন তা আবার লিখতে বসে যান ... যদি গল্পটির মাঝামাঝি, অর্থাৎ কাঠামোটি যদি সঠি ভাবে হয়ে থাকে তবে অবশ্যই সেটি আপনার স্মৃতি থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন ... যদি জিনিসটি ঝাপসা থাকে এবং স্মৃতিতে না আসে ... তবে ধরে নেন এটি কখনই সঠিক ভাবে ছিল না।"[১৪] তিনি যে আসলেই পাউন্ডের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন এবং বিদ্যমান গল্পগুলি পুনরায় তৈরি করেছেন কিনা বা স্যুটকেস হারিয়ে যাওয়ার পরে যা লিখেছিলেন তার সবই নতুন কিনা তা নিয়ে সমালোচকরা নিশ্চিত হতে পারেন নি।[৮]

"লিটল রিভিউ"[সম্পাদনা]

১৯২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, হেমিংওয়ে এবং হ্যাডলি ইতালি ভ্রমণ কালে; রাপালোতে তারা পাউন্ডের সাথে সাক্ষাত করেন, যিনি প্রায়শই নিশ্চিত ভাবে তাদের ভ্রমণের সময় সাহিত্য পত্রিকা দি লিটল রিভিউয়ের জন্য গদ্যাংশের কমিশন দিয়ে থাকতেন।[৭] হারানো কাজের ক্ষতিতে তখনো হতাশাগ্রস্থ হয়ে, হেমিংওয়ে গত ডিসেম্বরের পর থেকে লেখালেখি করতে পারেননি[৮], তবে আস্তে আস্তে তিনি ছয়টি নতুন অনুচ্ছেদ লিখেছেন, সেগুলি মার্চের সময়সীমার মধ্যে জমা দিয়েছিলেন।[৭][১৫] হেমিংওয়ের পণ্ডিত মিল্টন কোহেন এ বিষয়ে বলেছেন যে হ্যামিংওয়ে জানত যে দ্য লিটল রিভিউয়ের আংশটি "পাউন্ড যে বইটি লিখেছিল তার বাকী অংশটির আলোকে হবে।"[১৬] ধারাবাহিকটির শেষ দৃশ্যটি ছয় গ্রীক মন্ত্রিপরিষদকে ফাঁসি দেওয়ার বিচার চলাকালীন সংবাদ থেকে নেওয়া হয়েছিল।[১৭]

ছয়টি গদ্যের আংশ বিশেষ ৭৫ থেকে ১৮৭ শব্দের মধ্যেই ছিল এবং তার বেশিরভাগই যুদ্ধ এবং ষাঁড়ের লড়াই সম্পর্কিত ছিল।[১৮] যুদ্ধের দৃশ্যগুলি হেমিংওয়ের বন্ধু চিংক ডোরম্যান-স্মিথের অভিজ্ঞতা থেকে এসেছিল যিনি ব্যাটেল অব মনস এ ছিলেন: এই ম্যাটাডোর গল্পটির উৎপত্তি হয়েছিল অন্য বন্ধু মাইক স্ট্রেটারের কাছ থেকে। হেমিংওয়ে সয়ং সেই ঘটনাগুলি প্রত্যক্ষ করেছিলেন যা গ্রিকো-তুর্কি যুদ্ধের গল্পটিতে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

লিটল রিভিউ'য়ের "এক্সাইলস" সংস্করণটি বসন্তে প্রকাশিত হওয়ার পরে সর্বশেষ ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়েছিল, যেটি হেমিংওয়ের কাজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যায়। এটিতে গেট্রুড স্টেইন, জর্জ অ্যানথিল, ই. ই. কামিংস এবং জিন কোক্টোর মতো আধুনিকতাবাদীদের অংশ বিশেষ প্রদর্শিত হয়েছিল। হেমিংওয়ের সংক্ষিপ্ত অংশ বিশেষ "ইন আওয়ার টাইম" শিরোনামে এক খণ্ডে প্রস্তাব করেছিলেন।[১৯]

ইন আওয়ার টাইম (in our time)[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সালের জুনে, হেমিংওয়ে রবার্ট ম্যাকআলমন এবং বার্ড এর সাথে হ্যাডলিকে নিয়ে স্পেনে যায়, সেখানে প্রথমবারের মত ষাঁড়ের লড়াই দেখে তিনি একটি নতুন আগ্রহ খুঁজে পেলেন।[২০] সেই গ্রীষ্মে তিনি ৫ টি সংক্ষিপ্ত সংকলন লিখে ফেলেন (অধ্যায় ১২-১৬), যার বেশীর ভাগই ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে,[২১] আর আগস্টে পেরিস ফেরার পথে শেষ দুটি লেখা শেষ করেন।[২২] সেই গ্রীষ্মেই তিনি ৭-১১ অধ্যায়ের নতুন বর্ণনার কৌশলগুলিও সাজিয়ে ফেলেন।[২০] আগস্টেই তিনি পাউন্ডকে জানিয়েদেন যে তিনি শেষ দুটি অংশ শুরু করতে চলেছেন (অধ্যায় ১৭ এবং ১৮),[২১] পাউন্ডের প্রস্তাবিত সংশোধন গুলো মেনে চলেন এবং পান্ডুলিপিটি বিল বার্ডের নিকট পাঠিয়ে দেন। তার পরে তিনি হ্যাডলিকে (তার স্ত্রী তাদের প্রথম সন্তান সম্ভাব্য ছিলেন) সাথে নিয়ে প্যারিস ছেড়ে টরোন্টোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন[২৩] যেখানে তিনি আগে বাসবাসরত ছিলেন যখন বার্ড বইটির প্রকাশনা কাজ শেষ করেছেন।[২৪]

তিনি বার্ডের কাছে যে খন্ডটি জমা দিয়েছিলেন সেগুলি প্রথমে শিরোনামহীন ছিল (পাউন্ড সেটিকে ফাঁকা জমা বলে উল্লেখ করেছিলেন)[২৫]; পরে ইন আওয়ার টাইম শিরোনামটি - বুক অব কমন প্রেয়ার  -থেকে নির্বাচিত হয়েছিল।[২৬] বার্ড ভলিউমটি হস্ত চালিত মুদ্রণ যন্ত্রে হাতে বানানো কাগজে মুদ্রণ করে হেমিংওয়েকে বলেছিল, "আমি আপনার বইয়ের সাথে অভিনব কিছু টানতে যাচ্ছি"।[২৩] বইটিতে ১৮ টি খন্ড চিত্র ছিল[২৭] এবং মাত্র ৩১ পৃষ্ঠা; প্রতিটির নিচে যথেষ্ট পরিমান সাদা জায়গা রাখা হয়েছিল যেটি গদ্যাংশগুলোর সংক্ষীপ্ততা ফুটিয়ে তুলে। কোহেনের মতে, " এ ধরনের দৃশ্যপট হঠাৎ করে তার আখ্যানকে আকস্মিক করে তোলে, সহিংসতার তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তোলে, এবং শীতলতার সাথে সত্যের সুর"।[২৮] বইটির উপস্থাপনা প্রচলিত রীতি বিরুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল কারণ এর পুরোটা জুড়ে ছোট হাতের ব্যবহার এবং উদ্ধৃতি চিহ্নের অভাব ছিল।[২৮] শিরোনামগুলিতে ছোট হাতের ব্যবহার নিয়ে আমেরিকান সম্পাদকদের যখন প্রশ্নবিদ্ধ হ্ন, তখন হেমিংওয়ে স্বীকার করেছেন যে এটি "অর্থহীন এবং প্রভাবিত" হিসাবে দেখা যেতে পারে।[২৯]

১৯২৩ সালের হেমিংওয় -এর পাসপোর্টে তার নিজস্ব ছবি

বার্ড ডাস্ট জ্যাকেট এর পরিকল্পনাটি একটু ভিন্ন ভাবে করেছিলেন- চারটি ভাষায় সংবাদপত্রের নিবন্ধগুলির একটি সংকলন[৩০] চিত্রাংশগুলো যেন সাংবাদিকতা বা সংবাদের ধারণা ফুটিয়ে তুলতে পারে।[৩১] সম্মুখভাগটিতে লেখকের নিজের কাঠের কাটচিত্র দেওয়া হয়েছিল, যা মুদ্রণ প্রক্রিয়া চলাকালীন পরবর্তী পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়, মুদ্রিত অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট করে দেয় যাতে ছাপা ৩০০টির মধ্যে মাত্র ১৭০ টি বিক্রি যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল। বাকিগুলি পর্যালোচক এবং বন্ধুদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়।[২৪]

ইন আওয়ার টাইম (In Our Time)[সম্পাদনা]

এক বছর পরে হেমিংওয়ে প্যারিসে ফিরে এসেছিলেন, যেখানে তিনি তার সেরা কয়েকটি ছোট গল্প লিখেছিলেন এবং স্কট ফিট্জগারেল্ডকে বলেছিলেন যে, নতুন বিষয়গুলোর মধ্যে মধ্যে "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" এবং "বিগ টু-হার্টেড রিভার" উল্লেখযোগ্য ছিল।[৩২] পরবর্তী ছয় মাসে, সমালোচক জ্যাকসন বেনসনের মতে তাঁর অন্যতম উর্বর সময়কালে তিনি আটটি ছোট গল্প লিখেছিলেন।[৩৩] গল্পগুলি পূর্বের আংশগুলির সাথে একত্রিত করা হয়েছিল এবং বছরের শেষদিকে নিউ ইয়র্কের বনি এবং লিভারাইট কে পাঠানো হয়েছিল।[২৫] মার্চের দিকে তিনি ছিলেন অস্ট্রিয়ার শ্রুনসে, তার হাতে অগ্রিম $১০০ ডলার এবং সাথে তার পরবর্তী দুটি বইয়ের সুযোগ এসে যায়। ঠিক তার পরেই, তিনি স্ক্রিবনার্সের ম্যাক্স পারকিন্স এর কাছ থেকে একটি চিঠি পান যিনি বার্ডের প্যারিস সংস্করণটি পড়েছেন এবং মনে করেন যে এটির বাণিজ্যিক আবেদনের অভাব রয়েছে, এবং এই তরুণ লেখকের কাছে আরো কোন মজাদার কোন গল্প আছে কিনা তা জানতে চান। তার উত্তরে হেমিংওয়ে জানিয়ে দেন যে তিনি ইতিমধ্যে বনি এবং লিভারাইটের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন।[৩৪] যখন তিনি বইটির জন্য চুক্তিটি পেয়েছেন, বনি এবং লিভারাইট জানিয়েছিল যে এটি সেন্সর করা হতে পারে এই ভয়ে "আপ ইন মিশিগান" বাদ দেওয়ার অনুরোধ করেন; জবাবে হেমিংওয়ে আগের গল্পটি প্রতিস্থাপনের জন্য লিখে ফেলেন "দ্য ব্যাটার"।[৩৫]

১৯২৫ সালের নিউইয়র্ক সংস্করণে "ইন্টারচ্যাটার" হিসাবে অন্তর্নির্মিত গদ্য চিত্রের সাথে চৌদ্দটি ছোট গল্প ছিল। বনি এবং লিভারাইট ১৯৫৫ সালের ৫ অক্টোবর[৩৬] বইটি প্রকাশ করে, যার ১৩৩৫ টি অনুলিপি ছাপা হয়েছিল, দাম ছিল $ ২ ডলার এবং এর মধ্যে চারটি পুনঃমুদ্রণ দেখা যায়। [১৮] সংস্থাটি প্যারিস সংস্করণের মত একটি "মোডিশ" ডাস্ট জ্যাকেটের নকশা তৈরি করেছিল এবং ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ড, গিলবার্ট সেল্ডেস, জন ডস পাসোস এবং ডোনাল্ড ওগডেন স্টুয়ার্টের মত ব্যক্তিবর্গের স্বীকৃত অনুমোদন পায়। বোনি এবং লিভারাইট ফ্রান্সে প্রকাশিত কাজগুলির জন্য আমেরিকান গ্রন্থস্বত্ব দাবি করে বসে।[৩৭]

হেমিংওয়ে প্রকাশকের বিপণনের[৩৮] প্রচেষ্টায় অসন্তুষ্ট হয়ে পড়লেন এবং সেই ডিসেম্বরেই তিনি বইয়ের পরিচালনা সম্পর্কে বোনি ও লিভারাইটের কাছে অভিযোগ জানান, বিজ্ঞাপনের অভাব উল্লেখ করে তিনি দাবি করেছিলেন যে তাদের "২০,০০০ বিক্রয় করা সম্ভব" এবং তার উচিত ছিল $১০০০ ডলারের অগ্রিমের জন্য অনুরোধ জানানো।[৩৯] পরবর্তীতে তিনি প্রকাশনাটির সাথে চুক্তি ভেঙ্গে ফেলেন এবং সেই বছরেই স্ক্রিবনার-এ ম্যাক্স পার্কিন্সের সাথে স্বাক্ষর করে নুতুন চুক্তিতে অবদ্ধ হন।[৩৮] স্ক্রিবারাররা বনি এবং লিভারাইটের কাছ থেকে স্বত্বাধিকার কিনে নেয়,[৪০] ১৯৩০ সালের ২৪ শে অক্টোবর দ্বিতীয় আমেরিকান সংস্করণ প্রকাশ করে, যার একটি মাত্র পুনঃর্মুদ্রণ দেখা যায়।[৪১] স্ক্রিবনার সংস্করণে এডমন্ড উইলসনের একটি ভূমিকা এবং হেমিংওয়ের "লেখকের পরিচিতি" অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ১৯৩৮ সালে দ্য ফিফথ কলাম এন্ড ফার্স্ট ফোর্টি-নাইন স্টোরিজ প্রকাশনাতে "অন দ্যা কোয়াল এট স্মায়র্না" নামকরণ করা হয়েছিল।[৪২] ১৯৫৫ সালে যখন ইন আওয়ার টাইম পুনরায় প্রকাশ করা হয়, "অন দ্যা কোয়াল এট স্মায়র্না" টি "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" দ্বারা প্রতিস্থাপন করে প্রথম গল্প করা হয়।[৪৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রেনল্ডস (১৯৯৫), পৃ. ৩৫।
  2. ওয়েগনার-মার্টিন (২০০২), পৃ. ৪।
  3. মেলো (১৯৯২), পৃ. ২৬৬।
  4. Putnam, Thomas (2006). "Hemingway on War and Its Aftermath". Prologue Magazine. Vol. 38, No. 1. Retrieved November 30, 2011
  5. Desnoyers, Megan Floyd. "Ernest Hemingway: A Storyteller's Legacy" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে JFK Library. Retrieved September 30, 2011
  6. Reynolds (1995), 36
  7. Cohen (2003), 107–108
  8. Smith (1996), 40–42
  9. Reynolds (2000), 26
  10. Mellow (1992), 205
  11. Mellow (1992), 208
  12. Smith (1996), 40
  13. Cohen (2012), 35
  14. Smith (1996), 41
  15. Cohen (2012), 36
  16. Cohen (2012), 40
  17. Cohen (2012), 37
  18. Oliver (1999), 168–169
  19. Cohen (2003), 106
  20. Cohen (2012), 41–42
  21. Cohen (2012), 44
  22. Cohen (2012), 45
  23. Cohen (2012), 48
  24. Baker (1972), 17
  25. Mellow (1992), 188
  26. Mellow (1992), 239
  27. Reynolds (1995), 40
  28. Cohen (2012), 59
  29. Waldhorn (2002), 259
  30. Tetlow (1992), 46
  31. Meyers (1985), 141
  32. Smith (1983), 271–272
  33. Benson (1983), 105
  34. Mellow (1992), 282–283
  35. Reynolds (1995), 43
  36. Mellow (1992), 314
  37. Leff (1999), 22
  38. Mellow (1992), 317–318
  39. Mellow (1992), 320
  40. Hagemann (1983), 46
  41. Hagemann (1983), 39
  42. Hagemann (1983), 43
  43. Reynolds (1995), 49