এনায়েতুল্লাহ্ খান
এনায়েতুল্লাহ্ খান | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১০ নভেম্বর ২০০৫ কানাডা | (বয়স ৬৬)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পেশা | সাংবাদিকতা |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিক, সাবেক মন্ত্রী, হাই কমিশনার |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় |
|
পুরস্কার | একুশে পদক (২০০৪) |
এনায়েতুল্লাহ্ খান (২৫ মে ১৯৩৯ - ১০ নভেম্বর ২০০৫) বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাবেক মন্ত্রী। তিনি ইংরেজি সাপ্তাহিক দৈনিক হলিডে ও দৈনিক নিউ এজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কয়েকটি দেশে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তাকে একুশে পদক দেওয়া হয়।[১]
জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]এনায়েতুল্লাহ্ খান ২৫ মে ১৯৩৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার বিচারপতি আবদুল জব্বার খান। এনায়েতউল্লাহ খানের ডাকনাম ছিল মিন্টু। তার ভাই-বোনরা হলেন সাংবাদিক সাদেক খান, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এবং বিএনপি সরকারের সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী (অষ্টম জাতীয় সংসদ) বেগম সেলিমা রহমান, ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ এর প্রকাশক শহিদুল্লাহ খান বাদল।[১]
তিনি মাসুদা খাঁন লীনাকে বিয়ে করেছিলেন যিনি মাদারীপুরের খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁর মেয়ে এবং ফজলুর রহমান খাঁনের বোন।[২]
শিক্ষা ও রাজনীতি
[সম্পাদনা]এনায়েতুল্লাহ খান আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং শহীদুল্লাহ হল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। তিনি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে ফারাক্কা লং মার্চ কমিটিতে যোগ দেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]এনায়েতউল্লাহ খান ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান প্রেস অবজারভারের তরুণ সাংবাদিক হিসেবে তার সাংবাদিকতা কর্মজীবনের শুরু করেন। পরবর্তীতে, তিনি ১৯৬৫ সালের আগস্টে সাপ্তাহিক হলিডে প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৬৬ সালে তার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাকিস্তানে আইয়ুব খানের শাসনকালের সাপ্তাহিক হলিডে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানকে সমর্থন প্রদান করে।
পরে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মৃত বুদ্ধিজীবীদের তথ্য বের করতে অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হিসাবে মনোনীত হন।[৩]
পত্রিকাটি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় রক্ষীবাহিনী কর্তৃক সম্পৃক্ত নৈরাজ্যের সম্পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন। পরে তাকে আটক করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক সাপ্তাহিক ছুটির দিন নিষিদ্ধ করা হয়।[৪]
তিনি বেসামরিক লিবার্টি এবং লিগ্যাল এইড কমিটির সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করেন, যে সংগঠনটি জাতীয় রক্ষীবাহিনীর শিকারদের সাহায্য করেছিল। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ শুরু হলে তিনি দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন এবং ক্ষুধার্ত ও নিরর্থককে সাহায্য করেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ টাইমসের সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা ক্লাবের সভাপতি হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা মার্চ কমিটিতে এবং ১৯৮১ সালে সাম্যবাদের বিরুদ্ধে গঠিত কমিটিতে ছিলেন। ২০০৩ সালে, তিনি দৈনিক নিউ এজ পত্রিকার প্রকাশনার সূচনা করেন।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড
[সম্পাদনা]দেশের সুশীল সমাজের সক্রিয় প্রতিনিধি এবং একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক কর্মী হিসেবে এনায়েতুল্লাহ খান ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবী নিধন তথ্য অনুসন্ধান কমিটির অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এই কমিটি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে (ডিসেম্বর ১৪) সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত করে। তিনি সিভিল লিবার্টি ও লিগাল এইড কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের শিকার রাজনৈতিক কর্মীদের সাহায্য করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি ও ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের মাওলানা ভাসানীর ফারাক্কা মার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের (১৯৭৩-৭৬) ও ঢাকা ক্লাবের (১৯৮৪-৮৫) সভাপতি ছিলেন। [১]
পুরস্কার
[সম্পাদনা]মৃত্যু
[সম্পাদনা]২০০৫ সালের ১০ নভেম্বর এনায়েতুল্লাহ খান ৬৬ বছর বয়সে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। [১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ জীবনী গ্রন্থমালা। ১৯। বাংলা একাডেমি। ১৯৯০। পৃষ্ঠা ১২।
- ↑ "একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়?''"। Scribd.com। ৯ অক্টোবর ২০১২। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৩।
- ↑ জামান, রৌশান (৯ নভেম্বর ২০১২)। "An icon of courageous journalism"। নিজ এজ। ২০১২-১১-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৩।