আহমেদ আলী
অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১ মার্চ ১৯৩২[১] |
মৃত্যু | ১১ জানুয়ারি ২০২০ ঢাকা | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | আইনজীবী |
পরিচিতির কারণ | ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিবিদ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ (১৯৫৩–বর্তমান) |
সন্তান | ৪ ছেলে ৫ মেয়ে |
অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী (১ মার্চ ১৯৩২ – ১১ জানুয়ারি ২০২০)[২] একজন বাংলাদেশি আইনজীবী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পূর্বপাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১৬ আসনের (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫) এমএলএ ও বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি হানাদার মুক্ত কুমিল্লা জেলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ক তার লেখা একাধিক বিশ্লেষণধর্মী বই প্রকাশিত হয়েছে।[৩][৪]
প্রারম্ভিক ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]এড. আহমেদ আলী ১ মার্চ ১৯৩২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কাজলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁওয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কুমিল্লা জেলা আদালতের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত আইনজীবী ছিলেন। তাঁর নয় সন্তানের মধ্যে ৫ জন মেয়ে এবং ৪ জন ছেলে।
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]আহমেদ আলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, দেশের পূর্ব- দক্ষিণাঞ্চলে গেলে তিনি আহমেদ আলীর বাসায় বিশ্রাম ও রাত্রিযাপন করতেন। বঙ্গবন্ধু সেখানে ভাষা সৈনিক শহীদ অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় কর্মী অতিন্দ্রমোহন রায়ের সাথে গল্প করে সময় কাটাতেন।[৫] সে সময় থেকে আহমেদ আলীর পারিবারিক বাসস্থান কুমিল্লা অঞ্চলের প্রাচীন রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।[৬] আহমেদ বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম প্রশাসক ও ১৯৫৩ সালে কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের গণপরিষদ নির্বাচনে বৃহত্তর কুমিল্লা-১৬ আসনের (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫) নির্বাচিত এমএলএ হন। তার এ পদটি ১৯৭১ সালে মেম্বার অব কনস্টিটিউশন এডমিনিস্ট্রেটর (এমসিএ) অর্থাৎ বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে রূপান্তরিত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে আহমেদ আলী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে কুমিল্লা জেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হলে তিনি স্বাধীন কুমিল্লায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া তিনি কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন।[১][৩][৭]
তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তৎকালীন ত্রিপুরা জেলা (বর্তমান কুমিল্লা) ছাত্রলীগের সভাপতি ও ত্রিপুরা জেলা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তিনি আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি স্বাধীনতাপূর্ব পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের প্রাক্তন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধকালীন পূর্বাঞ্চল ইয়ুথ ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
সামাজিক কর্মকান্ড
[সম্পাদনা]অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী রাজনীতি ও আইন পেশার পাশাপাশি সমাজ উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তিনি বৃহত্তর কুমিল্লার অন্যতম প্রভাবশালী সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তিনি দেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদ পরিবেশনের মানোন্নয়নে ভূমিকা পালন করেছেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য হিসেবে গ্রামীণ উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। গ্রামীণ আদালত প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের জাতীয় কনসালট্যান্ট হিসেবে তিনি দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও গণমুখীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। কুমিল্লা আইন কলেজের অধ্যক্ষ পদে দীর্ঘদিন আসীন ছিলেন তিনি। কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ভাষা সৈনিক অজিত গুহ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং কুমিল্লা আর্ট ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও কুমিল্লা রুরাল মেডিকেল ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও তিনি সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি কুমিল্লার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।[৬]
প্রকাশিত বই
[সম্পাদনা]আহমেদ আলী বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর বেশ কিছু বই রচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিকথা।
- সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবন ও সাধনা।
- স্বাধীনতা উত্তর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]আহমেদ আলী ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[৮][৯][১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "অনেক মার খেয়ে প্রতিষ্ঠিত এ দল - অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী (সাক্ষাতকার)"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৩ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯।
- ↑ "চলে গেলেন ভাষাসৈনিক আহমেদ আলী"। risingbd.com। ২০২০-০১-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৮।
- ↑ ক খ "ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী"। আমাদের সময়। ১০ জানুয়ারি ২০১৮। ১০ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯।
- ↑ "ভাষা সৈনিক আহমেদ আলী আর নেই"। আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১১।
- ↑ "আমার বাসায় তিন বিপ্লবী একসাথ হতেন-অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী"। দৈনিক আমাদের কুমিল্লা। ১৫ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯।
- ↑ ক খ "অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৩ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯।
- ↑ "প্রবীণ রাজনীতিবিদ আহমেদ আলী গুরুতর অসুস্থ"। সময় টিভি। ৯ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯।
- ↑ "ভাষা সৈনিক এ্যাড. আহমেদ আলী আর নেই"। যমুনা টেলিভিশন। ১১ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "ভাষাসৈনিক আহমেদ আলী আর নেই"। সময় টিভি। ১১ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আহমেদ আলী আর নেই"। কালের কণ্ঠ। ১১ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২০।
- ১৯৩২-এ জন্ম
- ২০২০-এ মৃত্যু
- বাংলাদেশী আইনজীবী
- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রাজনীতিবিদ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আইনজীবী
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মুক্তিযোদ্ধা
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
- বাংলাদেশী পুরুষ লেখক
- বাংলাদেশে ক্যান্সারে মৃত্যু
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্যক্তি
- ২০শ শতাব্দীর পাকিস্তানি আইনজীবী
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িত ব্যক্তি
- প্রোস্টেট ক্যান্সারে মৃত্যু