আবদুল হামিদ (ধারাভাষ্যকার)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল হামিদ
জন্ম(১৯৩৫-০৯-২১)২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫
মৃত্যু৪ আগস্ট ২০১২(2012-08-04) (বয়স ৭৬)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তনজগন্নাথ কলেজ
পরিচিতির কারণধারাভাষ্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীসাহেরা হামিদ
পিতা-মাতা
  • আবদুর রব (পিতা)
  • বেলেজান বিবি (মাতা)

আবদুল হামিদ (২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ - ৪ অগাস্ট ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশে বাংলায় ক্রীড়া ধারাভাষ্যের পথিকৃৎ।[১] ক্রীড়ায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ক্রীড়া বিষয়ক সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০০৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।[২]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

আবদুল হামিদ ১৯৩৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের নদীয়ার নবদ্বীপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২] ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর ১৯৫১ সালে পরিবারের সাথে ঢাকা চলে আসেন। তার পিতার নাম আবদুর রব ও মাতা বেলেজান বিবি।[২] এই দম্পতির তিনি পঞ্চম সন্তান ছিলেন।[২] বর্ধমান টাউন স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর ১৯৫১ সালে ঢাকার গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকার এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবদুল হামিদ ছাত্রাবস্থাতেই বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেন। ঢাকায় আসার পর ইস্ট এন্ড ক্লাবে যোগদান করে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে খেলা শুরু করেন।[৩] ১৯৫২ সালে তিনি দলটির অধিনায়ক ছিলেন ও এসময় ক্লাবটি প্রথম বিভাগে উন্নীত হয়। একই সময়ে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, ইস্পাহানি ক্লাব ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন। ইস্ট পাকিস্তান হোয়াইট টিমে ১৯৫৫-৫৭ সাল পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন। ঢাকায় জাতীয় ফুটবল চ্যম্পিয়নশীপের সময় তিনি এ দলের অন্যতম গোলরক্ষক ছিলেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে আগা খান গোল্ডকাপে অংশ নেন।[৩]

জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী থাকাকালে তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশ নেন।[৩] ইস্ট এন্ড ক্লাবের হয়ে ১৯৫৫-৫৬ এবং ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে প্রথম বিভাগ ভলিবল লীগেও অংশ নেন।[৩] পরে খেলোয়ারী জীবন থেকে অবসর নিয়ে রেফারি ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান ভলিবল ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ভলিবলের রেফারি এবং পাকিস্তান ভলিবল দলের ম্যানাজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩]

১৯৭৬-৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দুই দফা তিনি এশীয় ভলিবল কনফেডারেশনের পরিচালক ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান বেতারে ক্রিকেট ধারাভাষ্য ইংরেজি দেওয়া হত এবং মাঝে পাঁচ মিনিটের জন্য বাংলা এবং উর্দুতে ধারাভাষ্য প্রচার করা হত।[১] হামিদ বাংলা ধারাভাষ্যটি দিতেন।[১] একইসাথে তিনি অন্যান্য খেলায়ও বাংলাতে ধারাভাষ্য দেওয়া শুরু করেন।[১] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি বেতার ও টেলিভিশনে বাংলাতে পূর্ণাঙ্গ ধারাভাষ্য দেওয়া শুরু করেন।[৩]

হামিদ তৎকালীন বিভিন্ন দৈনিকে ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদ ও কলাম লিখেছেন।[৩] চ্যানেল আইতে তিনি ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘আই স্পোর্টস’ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘স্বনামধন্য’ উপস্থাপনা করেছেন।[৩] মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের প্রধান ছিলেন।[৪]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • বেতারব্যক্তিত্ব সম্মাননা (১৯৭৮)
  • ভলিবলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (১৯৭৯
  • কাজী মাহবুবউল্লাহ ও জেবুন্নেসা স্বর্ণপদক (১৯৮৫)
  • ক্রীড়া সাংবাদিকতায় একুশে পদক (২০০৩ )

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

আবদুল হামিদ ব্যক্তিগত জীবনে সাহেরা হামিদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৩] এই দম্পতি এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।[৩] আবদুল হামিদ ২০১২ সালের ৪ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার আবদুল হামিদের মৃত্যু"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০ 
  2. "আবদুল হামিদ এক কিংবদন্তি"বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০ 
  3. "হামিদ ভাই: বর্ণাঢ্য এক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব"বাংলানিউজ২৩.কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০ 
  4. "বাংলাদেশের ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার আব্দুল হামিদ আর নেই"ভিওএ। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০