আউনীআটী সত্র
আউনীআটী সত্র | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | মাজুলী জেলা |
অবস্থান | |
অবস্থান | মাজুলী |
দেশ | India |
স্থাপত্য | |
সৃষ্টিকারী | জয়ধ্বজসিংহ |
ওয়েবসাইট | |
http://www.auniati.org/ |
আউনীআটী সত্র আসাম-এর প্রথম শ্রেণীর রাজসত্র[১]। আহোম রাজা জয়ধ্বজসিংহ মাজুলীতে ১৫৭৫ শকে (ইং ১৬৫৩ চন) এই সত্র নির্মাণ করান[২]। সত্রটির প্রথম সত্রাধিকার ছিলেন শ্রী শ্রী নিরঞ্জনদেব। বর্তমান পর্যন্ত মোট ১৬জন ব্যক্তি সত্রাধিকার পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। বর্তমান সত্রাধিকারজন হচ্ছেন শ্রীশ্রী পীতাম্বর দেব গোস্বামী।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৬শ শতকে আহোমদের শাসনে ক্রমে হিন্দু ধর্ম থেকে নববৈষ্ণব ধর্ম-এর প্রভাব বেড়ে আসে। আহোম স্বর্গদেউ চুটাম্লাই ইং ১৬৫৩ সালে আউনীআটী সত্র নির্মাণ করান। সত্রটির প্রথম সত্রাধিকার শ্রী শ্রী নিরঞ্জনদেব দ্বারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে তিনি জয়ধ্বজসিংহ নাম নেন[২]। মহাপুরুষীয়া ধর্ম গ্রহণ করা তিনিই ছিলেন প্রথম স্বর্গদেউ[৩]। আউনী পানের একটি আঁটি কেটে স্থাপন করা জন্য সত্রটির নাম আউনীআটী হয়। রাজা মোট ৮১,৬৫০ বিঘা জমি "দেবত্র" এবং "ব্রহ্মত্র" নামে দুটি ভাগে সত্রটিকে দেখাশুনা করতে প্রদান করেছিলেন। আহোম রাজার চোখে আসামের সমস্ত সত্রের মধ্যের আউনীআটী সত্রের স্থান ছিল সর্বোচ্চ[৪]।
বাহাদুর গাওঁবুঢ়াই এই সত্রকে হাতী দাঁত-এর পাটি দান করেছিলেন। শিষ্য না হলেও বাহাদুর গাওঁবুঢ়ার বংশের সাথে সত্রের প্রাচীন সর্ম্পক আছে।
সত্রটির ভিতর
[সম্পাদনা]সত্রের মণিকূটে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-এর "গোবিন্দ" নামের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা আছে। একে প্রথমে পুরী, উড়িষ্যার জগন্নাথ ক্ষেত্র থেকে এনে বৈদিক প্রথায় স্থাপন করা হয়েছিল[২]। মূল মূর্তির বাইরেও এখানে অন্যান্য মূর্তি আছে। সত্রের নামঘরে গোবিন্দের প্রতি ভক্তিভাবে বৈষ্ণবদের দ্বারা সত্রীয়া নৃত্য করা হয়[৫]। সত্রে নিয়মিতভাবে "ভাগবত শ্রবণ কীর্তন" এবং "নাম প্রসঙ্গ" করা হয়। সত্রের মূল নাম-কীর্তন ৩৫০ বছর ধরে ভোর থেকে গোধূলি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে[৬]।
আউনীআটী সত্রে মোট "উদাসীন ভকতের" সংখ্যা প্রায় ৫৫০ জন। সত্রটির গঠন ঘোরানো আকৃতির। কাছে কাছে ভকতদের "বহা"সমূহ আছে, মধ্যে "নামঘর" এবং "মণিকূট" আছে। সত্রাধিকার নামঘরের কাছেে একটি গৃহে থাকেন। "ডেকা সত্রাধিকার" উত্তর সারির ডাইনে থাকেন এবং "গোবিন্দ পুরীয়া সত্রাধিকার"জন পূর্ব সারির ডাইনে থাকেন (পূর্ব হাটী)। ভকতরা সত্রের চার সারিতে নিজেদের নিজেদের হাটীতে থাকে[২]।
সত্রটিতে নামঘর, মণিকূট, গুরুগহ, ভকতদের চারিহাটী, ধনভান্ডার, চাউল ভান্ডার, করাপাট ছাড়াও নিজ বৈশিষ্ট সম্পন্ন কয়েকটি অঙ্গ আছে, সেইসমূহের মধ্যের রাঙলী চ’রা, গ্রন্থাগার, যাদুঘর, আলহীঘর, সংস্কৃত টোল, ছাপাশালা, উন্মুক্ত রঙ্গমঞ্চই প্রধান [৭]।
সত্রের কাজকর্ম
[সম্পাদনা]আউনীআটী সত্র আসামের শঙ্করী সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। নিয়মিত ধর্মীয় কাজকর্ম ছাড়াও উল্লেখযোগ্য দিন যেমন পালনাম, রাস লীলা, জন্মাষ্টমী, ফাকুয়া, ব'হাগ বিহু, কাতি বিহু ইত্যাদিতেে শ্রীকৃষ্ণর প্রতি ভক্তিভাবে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়[৮]।
আউনীআটী সত্রের সত্রীয়া পরিবেশনাসমূহের মধ্যে বিভিন্ন নাম-প্রসঙ্গ, নৃত্য এবং পৌরাণিক ভারতীয় কাব্য পুরাণ, বেদ, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদির আধারে করা ভাওনা অন্যতম। সত্রে পরিবেশিত মুখ্য নৃত্যশৈলীসমূহ হচ্ছে- নটুয়া, অপ্সরা, সূত্রধার, ওজাপালি, চালি, কৃষ্ণ-গোপী নৃত্য, মাটি আখরা এবং গায়ন-বায়ন। সত্রীয়া সীতসমূহের মধ্যে গায়ন গান, ওজাপালি গান, জন্মাষ্টমী গান, রাস গান, গোপাল বৈরাগ্য গান, রাজপরিবারের গান, গুরু বন্দনা, দেব বন্দনা এবং নাটরমাজর গান অন্যতম। নামসমূহ হল- হিয়া নাম, দিহা নাম, বৈরাগী নাম, বরনাম, নাম মঙ্গল, ঘোষা মঙ্গল, রাস মঙ্গল ইত্যাদি। আউনীআটী সত্রের উৎসবের মধ্যে অসমীয়া কার্তিক মাসের ২৫ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া "পাল নাম" উল্লেখযোগ্য[২][৯]। আধ্যাত্মিক নির্দেশাবলী "শরণ", "ভজন" এবং "মালামন্ত্রদান" সত্রাধিকার বা তাঁর মুখ্য শিষ্যসমূহ অনুষ্ঠিত করেন।
সত্র নতুন দিল্লীতে ভারতের গণতন্ত্র দিবস, রাষ্ট্রপতি ভবনের বিশেষ কার্যসূচী, যোধপুর, দিল্লী. তামিলনাড়ু ইত্যাদিতে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় সাংস্কৃতিক মহোত্সবে সত্রীয়া সংস্কৃতি প্রদর্শন করেছে[২]। সম্প্রতি আউনীআটী সত্রই মাজুলীর জেংরাইমুখে একটি "মিসিং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র" উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে[১০]।
আউনীআটী সত্রের বিভাগ
[সম্পাদনা]যোরহাট জেলার মাজুলীতে অবস্থিত মূল সত্রটি ছাড়াও আসামের বিভিন্ন স্থানে আউনীআটী সত্রের ১২ টা শাখা আছে। এইসমূহের মধ্যে মুখ্য শাখা হচ্ছে উত্তর গুয়াহাটিতে অবস্থিত সত্রটি। ১৯১৫ সালে সত্রাধিকার কমল চন্দ্র দেব গোস্বামী অশ্বক্লান্ত দেবালয় থেকে ৬০ বিঘা জমি নিয়ে এটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে সত্রাধিকার হেম চন্দ্র দেব গোস্বামী এটির পুনর্নিমাণ করেন। আউনীআটী সত্রের যোরহাট কলীয়াপানী শাখা ২০০৩ সালে সত্রাধিকার পীতাম্বর দেব গোস্বামী নির্মাণ করান।
সত্রাধিকারদের তালিকা
[সম্পাদনা]- শ্রীশ্রী নিরঞ্জন দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী কেশব দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী রামচন্দ্র দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী দামোদর দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী হরি দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী প্রাণ হরি দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নাথ দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী পদ্মপাণি দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী লক্ষ্মী রাম দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী কুশ রাম দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী দেব দত্ত দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী কমল চন্দ্র দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী লীলা কান্ত দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী হেম চন্দ্র দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী বিষ্ণু চন্দ্র দেব গোস্বামী
- শ্রীশ্রী পীতাম্বর দেব গোস্বামী
সাথে দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ চারি রাজসত্রের ইতিহাস - সম্পাদক : শিরীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, প্রকাশক : দক্ষিণপাট সত্র শিষ্য সম্মিলন, প্রকাশ কাল : ১৯৯৭ সন
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ SriSri Auniati Satra ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে, auniati.org, আহরণ-১০ সেপ্টেম্বর ২০১১
- ↑ Gogoi, Padmeshwar (1968) The Tai and the Tai Kingdom, Gauhati University Press.
- ↑ প্রবন্ধ "আসামের সত্রা প্রতিষ্ঠান এবং রাজপরিবারের পৃষ্ঠাপোষকতা" লেখক : ড° মাধব চন্দ্র গোস্বামী,রংপুর তিনিশ বছর উদ্যাপন সমিতি, শিবসাগরে প্রকাশ করা স্মৃতিগ্রন্থ "ইতিহাস পরশা রংপুরে" প্রকাশিত, প্রকাশ কাল : ২০০০ চন
- ↑ Auniati Satra of Majuli ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, vedanti.com, আহরণ-১০ সেপ্টেম্বর ২০১১
- ↑ Assam info-Auniati satra, assaminfo.com, আহরণ-১০ সেপ্টেম্বর. ২০১১
- ↑ মাজুলী জেলা সত্র মহাসভার সম্পাদক পুতুল মহন্তর সৌজন্যে
- ↑ পবিত্র অসম - সম্পাদক : ড°মহেশ্বর নেওগ, প্রকাশক : ড° প্রদীপ ভূঞা, প্রধান সম্পাদক আসাম সাহিত্য সভার হৈ, প্রথম প্রকাশ : ১৯৬০চন
- ↑ Auniati Satra of Majuli ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, vedanti.com আহরণ-১০ সেপ্টেম্বর ২০১১
- ↑ The Assam Tribune ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে, 21 feb 2011,আহরণ-১০ সেপ্টেম্বর ২০১১