বিষয়বস্তুতে চলুন

অ্যালবি রবার্টস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যালবি রবার্টস
১৯৩৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে অ্যালবি রবার্টস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
আলবার্ট উইলিয়াম রবার্টস
জন্ম(১৯০৯-০৮-২০)২০ আগস্ট ১৯০৯
ক্রাইস্টচার্চ, ক্যান্টারবারি, নিউজিল্যান্ড
মৃত্যু১৩ মে ১৯৭৮(1978-05-13) (বয়স ৬৮)
ক্লাইড, ওতাগো, নিউজিল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১১)
১০ জানুয়ারি ১৯৩০ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৪ আগস্ট ১৯৩৭ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৭/২৮ - ১৯৪০/৪১ক্যান্টারবারি
১৯৪৪/৪৫ - ১৯৫০/৫১ওতাগো
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৮৪
রানের সংখ্যা ২৪৮ ৩৬৪৫
ব্যাটিং গড় ২৭.৫৫ ৩০.৮৮
১০০/৫০ ০/৩ ৩/২৮
সর্বোচ্চ রান ৬৬* ১৮১
বল করেছে ৪৫৯ ১৩৫৪৪
উইকেট ১৬৭
বোলিং গড় ২৯.৮৫ ২৮.৫১
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/১০১ ৫/৪৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/- ৭৮/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৫ মার্চ ২০২০

আলবার্ট উইলিয়াম রবার্টস (ইংরেজি: Alby Roberts; জন্ম: ২০ আগস্ট, ১৯০৯ - মৃত্যু: ১৩ মে, ১৯৭৮) ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও রাগবি ইউনিয়ন খেলোয়াড় ছিলেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৭ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ওতাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন অ্যালবি রবার্টস

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৯২৭-২৮ মৌসুম থেকে ১৯৫০-৫১ মৌসুম পর্যন্ত অ্যালবি রবার্টসের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে শুধুমাত্র ব্যাট হাতেই সফলতা পেয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের দিকে চমৎকার মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে বোলিং উদ্বোধনে নিজেকে গড়ে তুলেন।

১৯২৭-২৮ মৌসুমে ১৮ বছর বয়সে ক্যান্টারবারির পক্ষে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যালবি রবার্টসের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২৩ রান। এরপরের দুই খেলায় ৫৪, ৭০, ৭৬ ও অপরাজিত ২৪ রানের কল্যাণে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলার সুযোগ পান।

১৯৩০-৩১ মৌসুমে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম সেঞ্চুরির সন্ধান পান। তার সংগৃহীত ১১৬ রান প্রথম ইনিংসের ১২৭ রানে এগিয়ে থাকার সাথে যুক্ত করে দলীয় সংগ্রহকে স্ফীত করে তুলে। এরফলে, তার দল ১৩৯ রানের কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নেয়।[] ১৯৩১-৩২ মৌসুমের প্লাঙ্কেট শীল্ড প্রতিযোগিতায় ৭৬.৫০ গড়ে ৩৭৮ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ওয়েলিংটনের বিপক্ষে ২৬০ মিনিটে ১৮১ রান তুলেন। এ পর্যায়ে কার্লি পেজের সাথে চতুর্থ উইকেটে ২২০ মিনিটে ২৭৮ রানের জুটি গড়েন।[] এছাড়াও, এ জুটির সংগৃহীত রান প্লাঙ্কেট শীল্ডের যে-কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়ে।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন অ্যালবি রবার্টস। ১০ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৪ আগস্ট, ১৯৩৭ তারিখে ওভালে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। সাত বছরব্যাপী সমগ্র টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে মাত্র পাঁচটি খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন। ২৭.৫৫ গড়ে ২৪৮ রান তুলেন।

১৯২৯-৩০ মৌসুমে হ্যারল্ড জিলিগানের নেতৃত্বে ইংরেজ দল নিউজিল্যান্ড গমন করে। সফররত দলটির বিপক্ষে ক্যান্টারবারির সদস্যরূপে দলের বিপর্যয়কর মুহুর্তে দুইবার কার্যকরী ইনিংস খেলেন। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম খেলায় অংশ নিয়ে ৩ ও ৫ রান তুলতে পেরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, পরের টেস্টে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে দল থেকে বাদ পড়েন।[]

দুই বছর বাদে ১৯৩১-৩২ মৌসুমের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দল নিউজিল্যান্ড গমনে আসে। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৫৪ রান তুলেন। সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে উভয় টেস্টেই তার অংশগ্রহণ ছিল।[]

ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে অংশগ্রহণ

[সম্পাদনা]

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে তার খেলায় ছন্দপতন লক্ষ্য করা যায়। ফলশ্রুতিতে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে কোন টেস্টে খেলানো হয়নি। ১৯৩৩ সালের ইংরেজ মৌসুমে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে চার্চ দলের পক্ষে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন। ২৬.৭৩ গড়ে ৬১৫ রান তুলেন তিনি।[] এছাড়াও, মিডিয়াম-পেস বোলিং করে ১৪.৭২ গড়ে ৫৯ উইকেটে পান।[] এরপর থেকে অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেন।

১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে টেস্টবিহীন চার খেলার তিনটিতে তার অংশগ্রহণ ছিল। সাত কিংবা আট নম্বরে ব্যাটিং নামার পাশাপাশি বোলিং উদ্বোধন করতেন। ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৫ রান করেন। এরপর ৩/৩৩ ও ৩/৩৯ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ফলশ্রুতিতে, অল্পের জন্যে এমসিসি দল পরাজয়বরণ করা থেকে রক্ষা পায়।[]

ইংল্যান্ড গমন

[সম্পাদনা]

১৯৩৭ সালে নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডস টেস্টে অপরাজিত ৬৬ ও ওভাল টেস্টে ৫০ রান করেন। অত্যন্ত কার্যকর ইনিংস দুটির কল্যাণে টেস্ট খেলাগুলোয় ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থানে আরোহণ করেছিলেন। ঐ মৌসুমে সাসেক্সের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ঐ গ্রীষ্মে কাঁধে ব্যথা পান। এরপর আঙ্গুলে আঘাতপ্রাপ্ত হন। ফলশ্রুতিতে, বোলিং করা থেকে নিজেকে দূরে সড়িয়ে আনেন ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাসত্ত্বেও, ২৬.২০ গড়ে ৬২ উইকেট ও ২৫.৫০ গড়ে ৫১০ রান তুলেছিলেন তিনি।[]

টেস্ট খেলাগুলোয় অংশ নিয়ে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থান দখল করেন। ৪৭.৩৩ গড়ে ১৪২ রান তুলেন। তন্মধ্যে, প্রথম টেস্টে অপরাজিত ৬৬ রান সংগ্রহ করে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ২৯.৮৫ গড়ে সাত উইকেট পান তিনি। তিন টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে কাঁধের আঘাতের কারণে খেলতে পারেননি অ্যালবি রবার্টস।[১০] উইজডেনে তার সম্পর্কে মন্তব্য করা হয় যে, দলের অত্যন্ত কার্যকর সদস্য ছিলেন তিনি। বিশেষতঃ স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে পটু। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনের সময়ে তিনি রান তুলতে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।[১১]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হবার পরও ক্যান্টারবারির পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ৪১ বছর বয়স অবধি ওতাগো’র পক্ষে খেলেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ক্যান্টারবারির বিপক্ষে নিজস্ব তৃতীয় ও সর্বশেষ সেঞ্চুরির সন্ধান পান। ওতাগো’র সদস্যরূপে ঐ খেলায় তিনি ৪৪ ও অপরাজিত ১১০ রান তুলে দলকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন।[১২] ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণকালে প্লাঙ্কেট শীল্ডে রেকর্ডসংখ্যক ৪৪ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১৩]

খেলার ধরন

[সম্পাদনা]

বলকে সুইং করাতেন ও পিচ থেকে যথোপযুক্ত পেস আনয়ণ করতেন। তার খেলায় কোন ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, রক্ষণাত্মক খেলায় বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন ও উইকেটের সামনে দিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে বলকে মারতেন। তিনি দলের অত্যন্ত কার্যকরী সদস্যের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। বিশেষতঃ স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনীয় মুহুর্তে দ্রুতলয়ে রান তুলতে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছিলেন।

ডিক ব্রিটেনডেন অ্যালবি রবার্টস সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। অসম্ভব শক্তি প্রয়োগে বলকে আঘাত করতেন ও বোলিংকালে আউট সুইঙ্গারগুলো সজীব প্রকৃতির ছিল। তবে, প্রায়শঃই তাকে ক্লান্ত দেখাতো, অর্ধ-ঘুমন্ত ও আয়েশি ভঙ্গীমায় খেলতেন।[১৪]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

ক্রিকেটের পাশাপাশি রাগবি ইউনিয়ন খেলায়ও দক্ষতা দেখিয়েছেন। ক্যান্টারবারির পক্ষে রাগবি ইউনিয়নে অংশ নিয়েছেন তিনি।[১৫]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন অ্যালবি রবার্টস। ১১ জানুয়ারি, ১৯৩৯ তারিখে ক্রাইস্টচার্চের সেন্ট পল চার্চে জ্যঁ ম্যাকলিওড নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।[১৬] ১৩ মে, ১৯৭৮ তারিখে ৬৮ বছর বয়সে ওতাগোর ক্লাইড এলাকায় অ্যালবি রবার্টসের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Canterbury v Wellington 1930–31
  2. Wellington v Canterbury 1931–32
  3. Evening Post, 5 January 1932, p. 9.
  4. New Zealand v England, Christchurch 1929–30
  5. New Zealand v South Africa, Christchurch 1931–32
  6. Batting and Fielding for Lancashire League Pros in 1933 Retrieved 22 October 2014.
  7. Bowling for Lancashire League Pros in 1933 Retrieved 22 October 2014.
  8. New Zealand v MCC, Wellington 1935–36
  9. New Zealand in British Isles 1937
  10. Don Neely & Richard Payne, Men in White: The History of New Zealand International Cricket, 1894–1985, Moa, Auckland, 1986, p. 156.
  11. Wisden 1979, p. 1086.
  12. Canterbury v Otago 1946–47
  13. A. D. Davidson, "The Plunket Shield", The Cricketer, 28 April 1951, pp. 117–121.
  14. Brittenden, p. 147.
  15. R.T. Brittenden, New Zealand Cricketers, A.H. & A.W. Reed, Wellington, 1961, pp. 147–49.
  16. "[untitled]"Evening Post: 14। ১৩ জানুয়ারি ১৯৩৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৮ 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]