অরোরিন টিউজেনেন্সিস
অরোরিন টিউজেনেন্সিস সময়গত পরিসীমা: Late Miocene, ০.৬১–০.৫৭কোটি | |
---|---|
Orrorin tugenensis fossils | |
The distal phalanx of the thumb. | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | অ্যানিমালিয়া |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | ম্যামালিয়া |
বর্গ: | প্রাইমেট |
উপবর্গ: | Haplorhini |
অধোবর্গ: | Simiiformes |
পরিবার: | Hominidae |
উপপরিবার: | Homininae |
গোত্র: | হোমিনিনি |
গণ: | † Orrorin |
প্রজাতি: | † O. tugenensis |
দ্বিপদী নাম | |
Orrorin tugenensis |
অরোরিন টিউজেনেন্সিস হোমিনির আদিমতম প্রজাতি। এর ফসিল ২০০০ সালে আবিষ্কৃত হয়। অনুমান করা হয় এই ফসিলের বয়স ৬১ লক্ষ বছর থেকে ৫৭ লক্ষ বছর পূর্ব পর্যন্ত। অরোরিনের আবিষ্কার অস্ট্রালোপিথেসিনরা মানুষের পূর্ব পুরুষ অনুকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। [১]
অরোরিন (বহুবচনে অরোরিক) গণ শব্দটির টিউজেন ভাষায় অর্থ হলো খাটি মানব।[২][৩] এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে O. tugenensis (অরোরিন টিউজেনেন্সিস)। টিউজেনেন্সিস নামকরণ করার কারণ ২০০০ সালে এই জীবাশ্ম কেনিয়ার টিউজেন পাহাড়ে প্রথম পাওয়া যায়।[৩] ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রজাতির ২০ টি জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে।[৪]
জীবাশ্ম
[সম্পাদনা]২০০৭ সাল অবধি এই ফসিলের ২০ টার ন্যায় টুকরো পাওয়া যায়। পাওয়া গিয়েছে ম্যান্ডিবুলার ২ টা হাড়, একটি সিমফিসিস, কিছু বিচ্ছিন্ন দাতঁ; ফিমার বা উরুর হাড়ের তিনটি টুকরো; হিউমেরাসের আংশিক, হাতের আঙুলের অংশ ইত্যাদি।[৪]
অরোরিনের তার শরীরের অনুপাতে ছোট দাঁত আছে। এর দাঁত অস্ট্রালোপিথেকাসের চেয়ে ছোট ছিল; ঐগুলো বরং আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস ও কেনিয়্যানথ্রোপাস প্লাটিয়প্সের চেয়ে বড় ছিল। অরোরিনের শ্বদন্ত অতি আদিম প্রকৃতির। আকার আকৃতিতে স্ত্রী শিম্পাঞ্জির শ্ব-দ্বন্তের মত। অরোরিনের দাতেঁর এনামেলের পুরুত্ব জীবিত বনমানুষ ও আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস ও কেনিয়্যানথ্রোপাস প্লাটিয়প্সের মত পুরু ছিল।[৪]
উরুর হাড়ের মাথা গোলাকার আর সামনের দিকে ফিরানো। জীবিত বনমানুষের চেয়ে অরোরিনের উরুর হাড়ের গলা বেশ লম্বা, আড়াআড়ি কাটলে তা ডিম্বাকৃতির এবং লেসার ট্রকেন্টার দেহের মাঝ বরাবর বাঁকানো। এসব বৈশিষ্ট্যগুলো দেখলে এটাই বুঝা যায়, অরোরিন দুইপায়েই হাটত। উরুর হাড়ের ওই জায়গার পেশি সংযোগের যেসব চিহ্ন আছে তা'ও দ্বি পদতত্ত্বের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। উরুর হাড়ের উপরের দিকের সিটিস্ক্যানে দেখা যায় হাড়ের বাইরের স্তর উপরের দিকে পাতলা, আর নিচের দিকে পুরু যা দ্বি-পদদের বৈশিষ্ট্য।
তবে অরোরিনের অনেক লক্ষণ শাখাচারী জীবনের চিত্র তুলে ধরে। অরোরিনের হাতের আঙুলগুলি জীবিত বনমানুষদের আঙুলের মত বাকাঁনো। যা থেকে মনে হয়, এটি গাছে গাছে বিচরণ করতে সক্ষম ছিল। আবার লুসির মত শতভাগ নিশ্চিত দ্বিপদ প্রজাতিরও হাতের আঙুল বাঁকানো ছিল।[৪]
২০০০ সালে উক্ত জীবাশ্ম প্রাপ্তির পর, তা কিপসারামান গ্রামের জাদুঘরে রাখা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে জাদুঘরটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, কেনিয়ার জাদুঘরের প্রধানের মতামত সাপেক্ষে জীবাশ্মসমূহ নাইরোবির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করে রাখা হয়।[৫]
শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]যদি অরোরিন মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ বলে প্রমাণিত হয় তবে অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সির (লুসি) মত অস্ট্রালোপিথেসিনরা হমিনিডের জাতিজনি বৃক্ষের (ফ্যামিলী ট্রি) প্রধানের পরিবর্তে পার্শ্ব শাখায় চলে যাবে। কারণ অরোরিন লুসির চেয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ বছরের পুরাতন এবং অরোরিনের বৈশিষ্ট্য মানুষের সাথে লুসির চেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। এই সাদৃশ্যতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মিলটা হলো অরোরিনের ফিমার দৃশ্যত মানুষের সাথে লুসির চেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ন। যাইহোক, এই বিষয়টা নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক আছে।[৬]
যে পরিবেশে অরোরিন থাকতো তা পুননির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে তা ঝর্ণা ও হ্রদের পাশের শুষ্ক ও চিরসবুজ অরণ্য অঞ্চল। অন্যান্য প্রাণীর যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে, তা হলো ইম্পালা, পাতাবানর ইত্যাদি গভীর বনের প্রাণী। মানব বিবর্তনের তাত্ত্বিকরা অরোরিন আবিষ্কৃত হবার পূর্ব পর্যন্ত মনে করতেন মানুষ তৃণভূমিতে বাস করতে করতেই দুই পায়ে চলতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু অরোরিন গবেষকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অরোরিনের মত গভীর বনের প্রাণীরাও দুই পায়ে হাঁটতে সক্ষম ছিল।[৬]
আবিষ্কার
[সম্পাদনা]২০০০ সালে ফরাসী প্রত্ননৃতত্ত্ববিদ ব্রিজিট সেনুট এবং ভূতত্ত্ববিদ মার্টিন পিটফোর্ড[২] মধ্য কেনিয়ার টিউজেন পার্বত্য এলাকা থেকে ৬০ লক্ষ বছর আগের ১২ টির মত জীবাশ্ম খুঁজে বের করেন। পরবর্তীতে আরো পাওয়া যায়। এই জীবাশ্মের দন্তবিন্যাস ও দ্বিপদী চলনের অবস্থা দেখে তারা এই বলে সমাপ্তি টানেন এই অরোরিন হচ্ছে হোমিনিন, আর এই হোমিনিন থেকে তারা বলেন হোমিনি ও আফ্রিকার গ্রেট এপের মধ্যে বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়া আজ থেকে ৭০ লক্ষ বছর পূর্বে মেসিজিয়ান সময়ে শুরু হয়েছে। আণবিক ঘড়ি ব্যবহার করে, এই বিচ্ছিন্নতার যে বয়স অনুমান করা হয়েছে, তার থেকে অরোরিনের মাধ্যমে করা বয়সসীমার পার্থক্য দেখা গেলেও প্রত্ননৃতত্ত্ববিদরা অরোরিনের মাধ্যমে করা এই বিচ্ছিন্নতার বয়সসীমাকে গ্রহণ করেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কেনিয়ার লুকিনো ফরম্যাশনে যে ২০ টা ফসিল পাওয়া গিয়েছে, তা মুলত ৪ টা সাইটেই পাওয়া গিয়েছে। চিবইট এবং আরাফাইতে প্রাপ্ত জীবাশ্ম তুলনামুলক বেশি প্রাচীন (৬১ লক্ষ বছর পুর্বে) এবং কাপসোমিন ও কাপচেবেরেক সাইট থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্ম ৫৭ লক্ষ বছর পূর্বের।[৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- List of human evolution fossils (with images)
- মার্টিন পিকফোর্ড
নোটস
[সম্পাদনা]- ↑ Reynolds, Sally C; Gallagher, Andrew (২০১২-০৩-২৯)। African Genesis: Perspectives on Hominin Evolution। আইএসবিএন 9781107019959।
- ↑ ক খ Senut এবং অন্যান্য 2001
- ↑ ক খ Haviland এবং অন্যান্য 2007, পৃ. 122
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Henke 2007, পৃ. 1527–9
- ↑ "Whereabouts of fossil treasure sparks row"। Daily Nation। মে ১৯, ২০০৯। এপ্রিল ৩০, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১, ২০১০।
- ↑ ক খ Pickford 2001, Interview
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- CogWeb। "Orrorin Tugenensis: Pushing back the hominin line"। UCLA। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১, ২০১০।
- Haviland, William A.; Prins, Harald E. L.; Walrath, Dana; McBride, Bunny (২০০৭)। Evolution and prehistory: the human challenge। Cengage Learning। আইএসবিএন 0-495-38190-X।
- Henke, Winfried (২০০৭)। Henke, Winfried; Hardt, Thorolf; Tattersall, Ian, সম্পাদকগণ। Handbook of paleoanthropology: Phylogeny of hominids। Springer। পৃষ্ঠা 1527–9। আইএসবিএন 978-3-540-32474-4।
- Pickford, Martin (ডিসেম্বর ২০০১)। "Martin Pickford answers a few questions about this month's fast breaking paper in field of Geosciences"। Essential Science Indicators। ২ জুন ২০০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৮।
- Senut, Brigitte; Pickford, Martin; Gommery, Dominique; Mein, Pierre; Cheboi, Kiptalam; Coppens, Yves (২০০১)। "First hominid from the Miocene (Lukeino Formation, Kenya)" (পিডিএফ)। Comptes Rendus de l'Académie des Sciences। 332 (2): 137–144। ডিওআই:10.1016/S1251-8050(01)01529-4। বিবকোড:2001CRASE.332..137S। ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১, ২০১২।
|df=
অবৈধ (সাহায্য)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Orrorin tugenensis - The Smithsonian Institution's Human Origins Program
- Human Timeline (Interactive) – Smithsonian, National Museum of Natural History (August 2016).