আণবিক ঘড়ি
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান |
---|
নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
আণবিক ঘড়ি হচ্ছে এক ধরনের কৌশল যা জৈব অনুর মিউটেশনের হারকে ব্যবহার করে বিভক্ত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রাগৈতিহাসিক যুগের সময়কে অনুমান করে। এই জৈব আণবিক উপাত্ত সাধারণত ডিএনএর নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স অথবা প্রোটিনের এমিনো এসিড সিকোয়েন্স কলনের (হিসাবের) জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৯৬২ সালে বিভিন্ন প্রাণীর হিমোগ্লোবিন প্রোটিন প্রকরণের উপর প্রথম আণবিক ঘড়ির পরীক্ষণ হয়। বর্তমানে এটি আণবিক বিবর্তনে ব্যবহৃত হয়, যাতে করে প্রজাত্যায়ন অথবা বিবর্তনীয় বিকিরণ সম্বন্ধে অনুমান করা যায়। একে কখনো কখনো জিনগত ঘড়ি অথবা বিবর্তনীয় ঘড়ি বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
প্রাথমিক আবিষ্কার এবং জিনগত সমদুরত্ব
[সম্পাদনা]তথাকথিত "আণবিক ঘড়ির" উপস্থিতি সম্বন্ধে ১৯৬২ সালে এমিল জুকারল্যান্ডল ও লিনাস পাওলিং প্রথম ধারণা দেন। জীবাশ্মের প্রমাণ থেকে প্রাণীগুলোর অস্তিত্বের যে সময় তারা অনুমান করেছেন, তারা দেখলেন, সময়ের সাথে সাথে প্রাণীর এমিনো এসিডের পরিমাণ তার বংশে পরিবর্তিত হয়।[১] (আণবিক ঘড়ি প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে) তারা বললেন, ভিন্ন ভিন্ন বংশে; যে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রোটিনের বিবর্তনীয় পরিবর্তনের হার ধ্রুব হয়।
এমানুয়েল মারগোলিশ ১৯৬৩ সালে জিনগত সমদূরত্বের বিষয়টি প্রথম লক্ষ্য করেন। তিনি লিখেছেনঃ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিবর্তনের ধারায় যখন সাধারণ পুর্বপুরুষ থেকে দুইটি প্রজাতির উদ্ভব হয়, তাদের সাইটোক্রোম সি এর মধ্যে পার্থক্য একটা অবস্থা প্রাপ্ত হয়, এমনটাই প্রতীয়মান হয়। যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর সাইটোক্রোম সি এর সাথে সমস্ত পাখির সাইটোক্রোম সি এর সমান পার্থক্য থাকবে। যেহেতু পাখি অথবা স্তন্যপায়ী প্রানীর পুর্বে, বিবর্তনের ধারায় ভার্টিব্রেটের প্রধান স্টেম থেকে মাছ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, তাই মাছের সাইটোক্রোম সি এর সাথে পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রানীর সাইটোক্রোম সি এর পার্থক্য সমান হওয়া উচিত। একইভাবে, সকল ভার্টিব্রেটের সাইটোক্রোম সি এর সাথে, ইস্ট প্রোটিনের সাইটোক্রোম সি এর সমান সমান পার্থক্য থাকবে।"[২] উদাহরণস্বরুপ, একটি কার্প (পোনা মাছ) এবং একটি ব্যাঙয়ের, কাছিম, মুরগী, ইঁদুর এবং ঘোড়ার সাইটোক্রোম সি এর পার্থক্য খুবই ধ্রুব, যা ১৩ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ। একইভাবে একটি ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট, মথ, টুনা, পায়রা এবং ঘোড়ার সাইটোক্রোম সি এর পার্থক্য ৬৪ শতাংশ থেকে ৬৯ শতাংশ হয়। এমিলি জুকারল্যান্ডল ও লিনাস পাওলিংয়ের জিনগত সমদুরত্বের একীভুত কাজ; ১৯৬০ সালের আণবিক ঘড়ির যে প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছিল তাকে সত্যতা প্রদান করে।[৩]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]আণবিক ঘড়ির কৌশল মলিকিউলার সিস্টেমিক্সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মলিকিউলার জেনেটিক্সের তথ্য ব্যবহার করে, জীবের বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। ফসিল থেকে যদি তথ্য না পাওয়া যায়, তবে সুনির্দিষ্ট জাত্যাংশে আণবিক বিবর্তনের ধ্রুব হারের জ্ঞানকে ব্যবহার করে জাতিজনি ঘটনা ক্রমকে নির্ধারণ করা হয় এবং জাতিজনি বৃক্ষ গঠন করা হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে- বিশেষ করে তা যদি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার হয়, তবে আণবিক ঘড়ি নামক প্রকল্পের সীমাবদ্ধতাকেও বিবেচনায় রাখতে হবে, কারণ এখানে অনুমান ৫০% বা তার বেশিও হতে পারে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Zuckerkandl, E. and Pauling, L.B. (১৯৬২)। "Molecular disease, evolution, and genic heterogeneity"। Kasha, M. and Pullman, B (editors)। Horizons in Biochemistry (ইংরেজি ভাষায়)। Academic Press, New York। পৃষ্ঠা 189–225।
- ↑ Margoliash E (অক্টোবর ১৯৬৩)। "PRIMARY STRUCTURE AND EVOLUTION OF CYTOCHROME C"। Proc. Natl. Acad. Sci. U.S.A. (ইংরেজি ভাষায়)। 50 (4): 672–9। ডিওআই:10.1073/pnas.50.4.672। পিএমআইডি 14077496। পিএমসি 221244 । বিবকোড:1963PNAS...50..672M।
- ↑ Kumar S (আগস্ট ২০০৫)। "Molecular clocks: four decades of evolution"। Nat. Rev. Genet. (ইংরেজি ভাষায়)। 6 (8): 654–62। ডিওআই:10.1038/nrg1659। পিএমআইডি 16136655।
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Morgan, G.J. (১৯৯৮)। "Emile Zuckerkandl, Linus Pauling, and the Molecular Evolutionary Clock, 1959-1965" (পিডিএফ)। Journal of the History of Biology। 31 (2): 155–178। ডিওআই:10.1023/A:1004394418084। পিএমআইডি 11620303।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Zuckerkandl, E. and Pauling, L.B. (১৯৬৫)। "Evolutionary divergence and convergence in proteins"। Bryson, V.and Vogel, H.J. (editors)। Evolving Genes and Proteins। Academic Press, New York। পৃষ্ঠা 97–166।
- San Mauro, D.; Agorreta, A. (২০১০)। "Molecular systematics: a synthesis of the common methods and the state of knowledge"। Cellular & Molecular Biology Letters। 15 (2): 311–341। ডিওআই:10.2478/s11658-010-0010-8।