আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস
আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস সময়গত পরিসীমা: মায়োসিন যুগের শেষ সময় - প্লায়োসিন যুগের প্রারম্ভে, .৪৪কোটি | |
---|---|
![]() | |
Ardipithecus ramidus specimen, nicknamed আর্ডি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | এনিম্যালিয়া |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
বর্গ: | প্রাইমেট |
পরিবার: | হোমিনিডে |
উপপরিবার: | হোমিনিনে |
গোত্র: | হোমিনিনি |
গণ: | আর্ডিপিথেকাস |
প্রজাতি: | A. ramidus |
দ্বিপদী নাম | |
Ardipithecus ramidus |
আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস হোমিনিনের প্রজাতি, এর গণের নাম আর্ডিপিথেকাস। ২০০৪ সাল অবধি আর্ডিপিথেকাস কাডাব্বাকে আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাসের উপপ্রজাতি বলে মনে করা হত।[১]
আবিষ্কার[সম্পাদনা]
আঃ র্যামিডাস এর নামকরণ করা হয় ১৯৯৪ সালে। এই প্রজাতির প্রথম যে জীবাশ্ম খুঁজে পাওয় গিয়েছে, তা ৪৪ লক্ষ ছর আগের।[২] আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস নামটি এসেছে আফার ভাষা হতে। আর্ডি শব্দটির অর্থ হলো মাটি বা মেঝে, র্যামিড এর অর্থ হলো শিকড়। আর পিথেকাস অংশটি এসেছে গ্রীক ভাষা হতে যার অর্থ "বানর"।[৩]
অন্যান্য হোমিনিডের মত তাদের বড় আঙুলের পাতা থাকে; যা দেখে মনে হতে পারে পারে, তারা গাছে গাছে বিচরণ করত। তবে দ্বিপদী অন্যান্য হোমিনিডের মত আর্ডিপিথেকাসের তীক্ষ্ন দাঁত হ্রাস পেয়েছিল।
টিম হোয়াইটের নের্তৃত্বে ১৯৯২-৯৩ এর দিকে গবেষকদল ইথিওপিয়ার আরামিস জেলার আফার নিম্নভূমির মধ্য আওয়াশ অববাহিকায় আঃ র্যামিডাসের ১৭ টুকরো জীবাশ্ম খুঁজে পান। এই জীবাশ্মগুলোর মধ্যেখুলি, ম্যাণ্ডিবল, দাঁত এবং বাহুর হাড় আছে। ১৯৯৪ সালে আরো অনেক টুকরো পাওয়া যায়। এসব হাড় থেকে একটা কঙ্কালের ৪৫ শতাংশ তৈরী করা গিয়েছে। প্রথমে প্রাপ্ত জীবাশ্মকে অস্ট্রালোপিথেকাস গণের প্রজাতি মনে করা হলেও, হোয়াইট একই লেখায় এই প্রাণীটির জন্য নতুন গণ প্রস্তাব করেন। আর এই গণের নাম দেন আর্ডিপিথেকাস। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে সাইলেশী সিমাও ও তার গবেষকরা আফার এলাকার গোনার এস ডুমায় আঃ র্যামিডাসের দাঁত ও হাড়ের ৯ টুকরো পাওয়া যায়।[৪] অনুমান করা হচ্ছে এই জীবাশ্ম ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর থেকে ৪৪ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগের।[৫]
বর্ণনা[সম্পাদনা]
আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাসের ছোট মস্তিষ্ক আছে, যা মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা আধুনিক বনবো অথবা নারী আধুনিক শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্ক থেকে আকারে কিছুটা কম। তবে লুসির ন্যায় অস্ট্রালোপিথেকাসের প্রজাতির মস্তিষ্কের চেয়ে (৪০০ থেকে ৫৫০ সিসি) এটা অনেকাংশে কম। তবে আধুনিক মানব হোমো স্যাপিয়েন্স এর মাত্র ২০ শতাংশ এই আঃ র্যামিডাস। সাধারণ শিম্পাঞ্জির মত এবং আধুনিক মানুষের চেয়ে আঃ র্যামিডাস অনেক বেশি প্রোগন্যাথেটিক ছিল।[৬]
আঃ র্যামিডাসের দাঁতের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য বানরের সাথে বৈসাদৃশ্যপুর্ণ। আঃ র্যামিডাস সম্ভবত সর্বভূক এবং ফলখাদক ছিল। ওদের দাঁতের এনামেল খুব পাতলা বা পুরু ছিল না। যদি দাঁতের এনামেল পাতলা হত, তবে বলা যেত, তারা বেশি বেশি নরম খাবার খায়। তবে তাদের দাঁতেঁর ক্ষয়ের ধরন ও ছেদনদন্তের আকার দেখে বুঝা যায়; তারা বিশেষায়িত ফলভূক ছিল না। ওরা বেশি শক্ত খাবার এড়িয়ে চলত কারণ অগ্রসর অস্ট্রালোপিথেকাসের মত তাদের সব কিছু চিবানোর মত উপযুক্ত পেষণযন্ত্র অর্থাৎ দাঁত, চোয়াল বা পেশী ছিল না। আঃ র্যামিডাস প্রজাতির পুরুষের উপরের দাঁত এবং নারীর উপরের দাঁতে কোনো পার্থক্য নেই। তাদের উপরের দাঁত; আধুনিক শিম্পাঞ্জির তুলনায় কম ধারালো। সাধারণ শিম্পাঞ্জিতে নারীর তুলনায় পুরুষে ধারালো আর বড় ঊর্ধ্ব শ্ব-দন্ত থাকে, কিন্তু আঃ র্যামিডাসের এই বৈশিষ্ট্য; সাধারণ শিম্পাঞ্জির যৌন দ্বিরুপকতার সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের দাঁতের আকার নারী-পুরুষে প্রায় সমান ছিল। অর্থাৎ, এ থেকে অনুমেয় হয়, সম্ভবত আঃ র্যামিডাসে লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্য ছিল না।[৭]
আঃ র্যামিডাসের উপরের শ্ব-দন্তের আকার ছোট হওয়া এটাই আভাষ দেয় যে, এই প্রজাতি ও প্রাক হোমিনিডদের মধ্যে সামাজিক আচরণ দেখা গিয়েছিল। সুনির্দিষ্টভাবে, এটাও প্রস্তাবনা করা হয়েছে যে, হোমিনিডের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ ও আফ্রিকান বানরদের মধ্যে আন্তঃসংঘর্ষ কমে আসে। এই স্বভাব সাধারণ শিম্পাঞ্জির তুলনায় ব্যতিক্রম। কারণ তাদের মধ্যে পুরুষে-পুরুষে, গোত্রে গোত্রে কলহ বিবাদ সুতীব্র।
আঃ র্যামিডাস না আধুনিক মানুষের সম্পুর্ণভাবে প্রতিনিধিত্ব করে, না শিম্পাঞ্জির প্রতিনিধিত্ব করে, এর মধ্যে একইভাবে দুইটারই সংমিশ্রণ ঘটেছে। শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের বংশগতিতে ভিন্নতা তৈরী হওয়া শুরু হবার পর থেকে তারা নিজের মত করে বিবর্তিত হওয়া শুরু করে। শিম্পাঞ্জির পা বিশেষভাবে এমনিভাবে গঠিত যাতে তারা সহজে গাছে গাছে বিচরণ করতে পারে। কিন্তু আঃ র্যামিডাসের পা হাটার জন্য বেশি উপযুক্ত। আঃ র্যামিডাসের শ্ব-দন্ত (ছেদন দাঁত) তুলনামুলক ছোট ছিল। যা থেকে প্রস্তাবনা করা হয়, পুরুষে পুরুষে সংঘর্ষ বা গোত্রভেদের মারামারি সম্ভবত তাদের মধ্যে হত না। তাদের মধ্যে শিশুর প্রতি মায়ামমতার উত্থান ঘটে, জুটি বাধার প্রবণতা দেখা যায়।
"অতএব মনে হয়, হোমিনিডের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি ও পাথুরে হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করার অনেক আগেই, পরিবর্তিত মৌলিক প্রজননগত ও সামাজিক রীতিনীতির বিকাশ ঘটেছিল।"[৮]
আঃ র্যামিডাসের হাড় সংক্রান্ত বিষয়াবলী[সম্পাদনা]
![]() | এই নিবন্ধটি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার অনুরূপ নিবন্ধ অনুবাদ করে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। (জুলাই ২০১৮) অনুবাদ করার আগে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলী পড়ার জন্য [দেখান] ক্লিক করুন।
|
সব জীবিত প্রাইমেট থেকে যে জিনিসটা মানুষকে আলাদা করে, সেটা হলো মানুষের কোমড়ের হাড়ের কাঠামো বা বস্তিদেশের আকার আকৃতি। খাড়া দুইপায়ে চলার জন্য বস্তিদেশের কাঠামোতে প্রচুর খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। বস্তিদেশ দুইপাশে এবং সামনে চ্যাপ্টা কোমড়ের হাড়, আর পিছনে মেরুদণ্ডের নিচের একীভূত ৫ টুকরো জমানো অস্থি স্যাক্রাম ও কক্সিস হাড় দিয়ে গঠিত। কোমড়ের চ্যাপ্টা হাড়ের আবার ৩ অংশ। উপরের চ্যাপ্টা ছড়ানো আইলিয়াম, নিচে পিছনের ইস্কিয়াম ও নিচে সামনের পিউবিস। মানুষের পাছার বিরাট পেশী গ্লুটিয়াস-ম্যাক্সিমাস; চতুষ্পদের বেলা অকিঞ্চিৎকর ছোট পেশী হিসেবে থাকে। চারপেয়ে প্রাণীর বড় গ্লুটিয়াস-ম্যাক্সিমাসের দরকার হয় না। এটা দ্বিপদ হোমিনিড ও মানুষের উরুর হাড়ের উপর বস্তিদেশ এবং ধড়কে খাড়া করে ধরে রাখে। আর্ডিপিথেকাসের আইলিয়াম হাড়ের খাটো ছড়ানো বৈশিষ্ট্য সাক্ষ্য দেয় যে, গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস পেশীর সম্প্রসারণ শুরু হয়ে গেছে। আর্ডির বস্তিদেশের উচ্চতাও কমে এসেছে, যা লম্বা ধরের ভারকেন্দ্র শরীরের মাঝামাঝি নিয়ে আসতে সহায়ক হয়েছে। দুইপায়ে চলার সময় একবারে এক পায়ের উপর দেহের ভার নিতে এতে সুবিধা হয়। কিন্তু ইস্কিয়াম হাড় তুলনামুলকভাবে বেশ বড় রয়ে গেছে, গাছে চড়ার জন্য বড় ও শক্তিশালী হ্যামস্ট্রিং পেশীর সংযোগের জন্য বড় ইস্কিয়াম দরকার ছিল। তার মানে আর্ডির মধ্যে আদিম গাছে চড়ার বৈশিষ্ট্যগুলিও রয়ে গেছে। অর্থাৎ আর্ডিপিথেকাস গাছে চড়া ও দুইপায়ে চলা উভয়তেই পটু ছিল।[৯]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Haile-Selassie, Yohannes; Suwa, Gen; White, Tim D. (২০০৪)। "Late Miocene Teeth from Middle Awash, Ethiopia, and Early Hominid Dental Evolution"। Science। 303 (5663): 1503–1505। ডিওআই:10.1126/science.1092978। পিএমআইডি 15001775। বিবকোড:2004Sci...303.1503H।
- ↑ White, T. D.; Suwa, G.; Asfaw, B. (১৯৯৪)। "Australopithecus ramidus, a new species of early hominid from Aramis, Ethiopia" (পিডিএফ)। Nature। 371 (6495): 306–312। ডিওআই:10.1038/371306a0। পিএমআইডি 8090200। বিবকোড:1994Natur.371..306W। ২০১৩-০৪-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Tyson, Peter (অক্টোবর ২০০৯)। "NOVA, Aliens from Earth: Who's who in human evolution"। PBS। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৮।
- ↑ "New Fossil Hominids of Ardipithecus ramidus from Gona, Afar, Ethiopia"। ২০০৮-০৬-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-৩০।
- ↑ Indiana University News Release। "Anthropologists find 4.5 million-year-old hominid fossils in Ethiopia"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-৩০।
- ↑ Suwa, G; Asfaw, B.; Kono, R. T.; Kubo, D.; Lovejoy, C. O.; White, T. D.; ও অন্যান্য (২ অক্টোবর ২০০৯)। "The Ardipithecus ramidus skull and its implications for hominid origins"। Science। 326 (5949): 68, 68e1–68e7। ডিওআই:10.1126/science.1175825। পিএমআইডি 19810194। বিবকোড:2009Sci...326...68S।
- ↑ Suwa, G; Kono, R. T.; Simpson, S. W.; Asfaw, B.; Lovejoy, C. O.; White, T. D.; ও অন্যান্য (২ অক্টোবর ২০০৯)। "Paleobiological implications of the Ardipithecus ramidus dentition"। Science। 326 (5949): 69, 94–99। ডিওআই:10.1126/science.1175824। পিএমআইডি 19810195। বিবকোড:2009Sci...326...94S।
- ↑ White, Tim D.; Asfaw, Berhane; Beyene, Yonas; Haile-Selassie, Yohannes; Lovejoy, C. Owen; Suwa, Gen; WoldeGabriel, Giday (২০০৯)। "Ardipithecus ramidus and the Paleobiology of Early Hominids"। Science। 326 (5949): 75–86। ডিওআই:10.1126/science.1175802। পিএমআইডি 19810190। বিবকোড:2009Sci...326...64W।
- ↑ প্রকৃতি ও মানুষের ক্রমবিকাশ বিগ ব্যাং থেকে হোমোস্যাপিয়েন্স (প্রথম সংস্করণ)। রোদেলা প্রকাশনী। একুশে বইমেলা ২০১৮। পৃষ্ঠা ৪২৮-৪২৯। আইএসবিএন 978-984-93104-3-8
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য);
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]


- Science Magazine: Ardipithecus special (requires free registration)
- The Smithsonian Institution's Human Origins Program:
- Ardipithecus ramidus ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ মার্চ ২০১২ তারিখে at Archaeology info
- Explore Ardipithecus at NationalGeographic.com
- Ardipithecus ramidus - Science Journal Article
- Discovering Ardi - Discovery Channel
- Human Timeline (Interactive) – Smithsonian, National Museum of Natural History (August 2016).
- বিদেশী ভাষার উইকিপিডিয়া থেকে নিবন্ধের অনুবাদ করা প্রয়োজন
- Taxonbars with automatically added original combinations
- Australopithecus fossils
- Fossil taxa described in 1995
- Hominini
- Miocene species first appearances
- Pliocene primates
- প্রাগৈতিহাসিক ইথিওপিয়া
- Prehistoric primate genera
- Transitional fossils
- Zanclean extinctions