অরুণেন্দু দাস
অরুণেন্দু দাস | |
---|---|
জন্ম | ১৯৩৮ |
মৃত্যু | ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (বয়স ৮১) |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
অন্যান্য নাম | অরুন দা |
পেশা |
|
পিতা-মাতা |
|
সঙ্গীত কর্মজীবন | |
উদ্ভব | কলকাতা |
ধরন | ফোক রক, ব্লুজ রক, সাইকেডেলিক রক |
অরুণেন্দু দাস (১৯৩৮ – ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)[১] বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অলটারনেটিভ বাংলা গান রচনার অন্যতম পথিকৃৎ। যদিও মহীনের ঘোড়াগুলিকে প্রথম বাংলা ব্যান্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয় তবে অরুণেন্দুই প্রথম ব্যক্তি যিনি নির্দিষ্টভাবে গীটার সহযোগে গাওয়ার জন্য বাংলা গান রচনা করেন, যে ধারাটি সময়ের সাথে সাথে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।[২]
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]অরুণেন্দু দাস ইয়াঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করেন, যা সে সময় রেঙ্গুন নামে পরিচিত ছিল। তার পিতা যধুলাল দাস একজন চিকিৎসক এবং তার মাতা অমিয়বালা দাস একজন গৃহিণী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ডা. দাস তার পরিবারকে রেঙ্গুন থেকে বাংলাদেশের বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে নিয়ে যান। দাস পরিবারের ছয় সন্তানের (চার বোন ও দুই ভাই) একজন অরুণেন্দু দাস, তার শৈশবের বছরগুলো বাংলাদেশে অতিবাহিত করেন।[৩]
অরুণেন্দু কলকাতার ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের স্কাউট গ্রুপের সদস্য ছিলেন এবং ১৯৫৫ সালের গ্রীষ্মে পুরীতে (ওড়িশা) একটি ক্যাম্পিং ট্রিপে অংশ নেন। সেখানে অন্যান্য স্কাউট দলের সাথে সঙ্গীত প্রতিযোগিতার সময়, তার নিজস্ব গান রচনার কথা মাথায় আসে। তিনি সমসাময়িক জনপ্রিয় গান 'উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা' এর সুর ব্যবহার করে, নিজের লিরিক প্রয়োগ করে 'চঞ্চল এক দল স্কাউট ভাই' গানটি রচনা করেন।
অরুণেন্দুর স্কুল জীবনের বন্ধু প্রবীর কুমার দাস তাকে সঙ্গীতের প্রাথমিক বিষয়াদি এবং ষ্টীল গিটার বাজানোর কৌশলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তিনি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শিবপুরে (১৯৫৬-১৯৬১) স্থাপত্য বিষয়ে অধ্যয়ন করার সময়ে এই নতুন জ্ঞানকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগান। তিনি তার গান লেখা অব্যাহত রাখেন এবং এসময় তার সহপাঠীদের বিনোদন দানের জন্য সমসাময়িক বিভিন্ন গানের প্যারোডি রচনা করেন। তার গান এবং প্যারোডি তাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল এবং তার অনেক বন্ধু কলেজ ছাড়ার পরেও বিভিন্ন স্থানে অরুণেন্দুর গানগুলো গাইতে থাকে।
বিই কলেজে থাকাকালীন অরুণেন্দু আসলে হাওয়াইয়ান গিটার বাদক হিসেবেই বেশি প্রশংসিত হন এবং তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি কখনও জনসম্মুখে গান গাইতে সাহস করেননি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো বাঙালি গায়কদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও তিনি কখনও গান গেয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাননি, তিনি নিজের আনন্দের জন্য গান লিখতেই ভালোবাসতেন।
তার অধিকাংশ গানই ব্যক্তিগত এবং মূলত ষ্টীল গিটারের কর্ড সম্পর্কে তার সদ্য অর্জিত জ্ঞানের চর্চা ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের শোনানোর জন্য রচিত। তিনি বিভিন্ন পাশ্চাত্য ক্লাসিক গানের অসংখ্য "প্যারোডি" সংস্করণ রচনা করে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই সময় অরুণেন্দু ধ্রুপদী স্প্যানিশ গিটার নিয়ে চর্চা শুরু করেন, যা কলকাতায় তখন ততটা সহজলভ্য ছিল না এবং পার্ক স্ট্রীট এলাকার পানশালা ও অ্যাংলো-ভারতীয় সম্প্রদায়ের কিছু সদস্যের মধ্যেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল।
ইংল্যান্ডে
[সম্পাদনা]অরুণেন্দু ষাটের দশকের শেষের দিকে ইংল্যান্ডে যান এবং সমসাময়িক আমেরিকান এবং ইংরেজি জনপ্রিয় গানের কথা দ্বারা চমৎকৃত হন। অক্সফোর্ডশায়ারের বাইসেস্টারের স্থপতি হিসেবে বসবাসকালীন, তিনি সেখানকার একটি ফোক ক্লাবে যোগ দেন। সেখানকার সঙ্গীত পরিবেশনকারী ও অতিথি শিল্পীদের কাছ থেকে তিনি গিটারের কিছু কৌশল আয়ত্ত করেন। তিনি অনুভব করেন যে এই কৌশলগুলি বাংলা গীতি রচনায় প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং ফলস্বরূপ সেইসব সুর এবং ছন্দ অনুযায়ী বাংলায় গান লিখতে শুরু করেন। তার তুতো ভাই প্রসান্ত দে (হাবুল) সে সময় বিই কলেজের স্থাপত্যের ছাত্র এবং একজন দক্ষ ফোক গিটারিস্ট ছিলেন। তিনি ১৯৭০-এর দশকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে সেই গানগুলিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
মহীনের ঘোড়াগুলি
[সম্পাদনা]অরুণেন্দুর গান কখনই বৃহত্তর শ্রোতাদের জন্য ছিল না এবং ১৯৮৭-এর দশকের প্রথম দিকে গৌতম চট্টোপাধ্যায় মুর এভিনিউতে (কলকাতা) তাঁর বাসভবনে যাওয়া অবধি এমনটাই সত্যি ছিল। গৌতমের এক ছোট ভাই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় (বুলা), একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতজ্ঞ, বিমূর্ত গীতিকার এবং বহির্মুদ্রাবাদী, ১৯৭০ এর দশকে বিই কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন এবং তিনি অরুণেন্দুর বেশ কিছু গান গৌতমকে শোনান। গৌতম সেগুলো এতটাই পছন্দ করেন যে তার গানের দল মহীনের ঘোড়াগুলির নামে প্রকাশিত বাংলা গানের চারটি সংকলনেই অরুণেন্দুর গানগুলি অন্তর্ভুক্ত করেন। মহীনের ঘোড়াগুলির প্রত্যাবর্তনকারী প্রথম অ্যালবাম "আবার বছর কুড়ি পরে " প্রকাশের সময় প্রকাশিত পুস্তিকায় অরুণেন্দুকে মহীনের ঘোড়াগুলির পূর্বসূরী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার গানগুলো "ঝরা সময়ের গান ", "মায়া " এবং "ক্ষ্যাপার গান " অ্যালবামেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অরুণেন্দু সর্বদা তার গানগুলোকে "ছয় তারের গান" হিসেবে উল্লেখ করতে পছন্দ করতেন, কেননা এগুলো রচনার পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল মৃদু ধাচের বাংলা গানের সাথে গিটারের সম্মিলনের মাধ্যমে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় গানগুলোর সাথে বাংলা সঙ্গীতের সামঞ্জস্য ঘটানো। ২০০৪ সালে কলকাতার প্রেস্তো স্টুডিও কর্তৃক "অরুনদার গান" নামে তাঁর কিছু গানের একটি সিডি প্রকাশ করা হয়।
ডিস্কোগ্রাফি
[সম্পাদনা]- অরুণেন্দুর গান (২০০৪, ব্যক্তিগত অ্যালবাম, স্টুডিও প্রেস্টো)
সকল গানের গীতিকার অরুণেন্দু দাস; সকল গানের সুরকার অরুণেন্দু দাস।
নং. | শিরোনাম | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|
১. | "দিশেহারা যে মোর মন" (from Maya (1997)) | ৩:২৬ |
২. | "গানে গানে গল্পে" | ১:৫৮ |
৩. | "আমার প্রিয়া" | ২:৩৫ |
৪. | "Kuhu Kuhu Dake" | ২:২৮ |
৫. | "কেটে গেছে কত না বছর'" | ২:২৭ |
৬. | "Bolo Tobuo Ki Royechhe" | ৪:১৩ |
৭. | "Mane Ki Porey" | ২:১১ |
৮. | "কেনো কাঁদি" | ৩:৪১ |
৯. | "Eshechhe Sarat" | ২:৫০ |
১০. | "Majhe Majhe Mor" | ৩:১৮ |
১১. | "Manbona Aami" | ২:৪৩ |
১২. | "Se Bhebechhilo" | ৩:১১ |
১৩. | "Chupe Chupe Esho" | ২:৫৭ |
১৪. | "Se Bhebechhilo" | ৩:১১ |
১৫. | "যাস কোথা তুই" ("কিসের এত তাড়া", ঝরা সময়ের গান (১৯৯৬) অ্যালবাম থেকে) | ২:৫১ |
১৬. | "Dekhechho Ki Kobhu" | ৩:৫৪ |
১৭. | "Aamar Ginni" | ২:২৬ |
১৮. | "Besh Tobe Jao" | ২:১৬ |
১৯. | "কি লাভ কেঁদে" | ৩:২২ |
২০. | "জানাতে যতো চাই" ("তাই জানাই গানে", ক্ষ্যাপার গান (১৯৯৯) অ্যালবাম থেকে) | ৩:১৪ |
২১. | "Bhola Jay Sob" | ২:৪১ |
২২. | "Maago Tomay" | ৩:৪৬ |
মোট দৈর্ঘ্য: | ০১.০৪:২২ |
মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত অ্যালবাম
[সম্পাদনা]- আবার বছর কুড়ি পরে (১৯৯৫)
- "গঙ্গা" (গীতিকার)
- ঝরা সময়ের গান (১৯৯৬)
- "কিসের এত তাড়া" (গানের কথা ও সুর)
- "কে কে যাবি রে" (গানের কথা ও সুর)
- "সারা রাত" (গানের কথা ও সুর)
- মায়া (১৯৯৭)
- "দিশেহারা যে মোর মন" (গানের কথা ও সুর)
- "ভিক্ষেতেই যাবো" (গানের কথা ও সুর)
- ক্ষ্যাপার গান (১৯৯৯)
- "তাই জানাই গানে" (গানের কথা ও সুর)
একক গান
[সম্পাদনা]- আয় রে ঘুম আয়
- আছে মোর কিছু সুর
- আগে জানলে কি হাবুল
- বার বার তুমি
- বড়ি দিয়ে তরকারি
- বন পাহাড়ির
- বলতে যা চাও
- ধীর সমীরন আরো ধীরে বহে যাও
- গান হয়ে যাই আজ
- ঘুমাওরে নীলা
- ভালোবাসি তোমায় তাই জানাই গানে
- কখনো বসে ভাবি
- কামনা বাসনা যত
- ক্লান্তি জড়ানো আকাশের চোখে
- ওরে আমার মন
- পূর্ণিমা চাঁদ
- পেরিয়ে মাঠের সীমানা
- শিউলি ফোঁটার
- সময় কেটেছে মোর শুধু অবেলায়
- মিছে কেঁদে
সরাসরি
[সম্পাদনা]- ছয় তারের গান (২০১৩; প্রবীর দাস, প্রসান্ত দে, রণজিৎ গাঙ্গুলি ও সুব্রত ঘোষ সহযোগে)[৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Arunendu Das, pioneer of alternative Bengali songwriting, passes away"। Times of India। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "Back to '70s with Mohiner Ghoraguli"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "Mr. Arun Das — ISPaD Interview"। YouTube। 'ISPaD'। ২৩ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "Chhoy Taarer Gaan"। spacemusicschool.com। Space Music School। ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৭।