অর্পিতা (চলচ্চিত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অর্পিতা
পরিচালকশাহরিয়ার নাজিম জয়
প্রযোজকফরিদুর রেজা সাগর
ইবনে হাসান খান
চিত্রনাট্যকারশাহরিয়ার নাজিম জয়
কাহিনিকারশাহরিয়ার নাজিম জয়
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারশান
চিত্রগ্রাহকগোলাম মোস্তফা বাচ্চু
সম্পাদকমোহাম্মদ রাজু
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকজাজ মাল্টিমিডিয়া
মুক্তি
  • ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ (2018-12-21)
স্থিতিকাল৯০ মিনিট
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা

অর্পিতা ২০১৮ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। নারী সংগ্রাম নিয়ে নাট্য ধারার চলচ্চিত্রটির কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য, গানের কথা রচনা, শিল্প ও পোশাক নির্দেশনা এবং পরিচালনা করেছেন শাহরিয়ার নাজিম জয়[১] প্রার্থনার পর এটি জয়ের দ্বিতীয় পরিচালনা।[২] গল্পে শহরের একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের দুই মূখ্য নারী অর্পিতা ও পূজার চরিত্র রূপায়ন করেছেন, চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত গোলাম ফরিদা ছন্দানাজিয়া হক অর্ষা[২] তৌকীর আহমেদ, মামুনুর রশীদ, শহীদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।[১] ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিবেশনায় চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দুটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[৩]

কাহিনি[সম্পাদনা]

অর্পিতা আর পুজা উত্তরায় একসাথে থাকেন, এম জে ফিনান্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিপণনের চাকুরী করেন। অর্পিতার স্বামী সিনেমার সহকারী পরিচালক, বর্তমানে হাতে কাজ নেই,সবসময় মদ আর ধুমপান করেন। সিনেমার নায়িকা কারিশমার গাড়িতে ঢিল ছোড়ার অপরাধে উত্তরা পূর্ব থানায় থাকা মদ্যপ স্বামী ছগির ও তার সহযোগী প্রকাশকে জামিনে ছাড় করতে যায় অর্পিতা। পুলিশ ছগিরকে নিজ স্ত্রী রেখে নায়িকার প্রতি ভালবাসা দেখানোর জন্য ভৎসনা করে। নিজের মেয়ে স্পর্শকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় এক বখাটে শাহেদ তাকে অনুসরণ করে। অফিসে অর্পিতা আর পুজার কর্মকর্তার সাথে ব্যক্তগত সহকারীর অতিরিক্ত মেলামেশা তাদের বিবৃত করে। অর্পিতা অফিস থেকে আগেই অনেক টাকা অগ্রিম নিয়ে রেখেছে, তাই তার বস একটি পলিসি বাগানোর জন্য অর্পিতাকে একজন বিশেষ গ্রাহকের কাছে পাঠায়। সেই গ্রাহক পর্দা ব্যবসার আড়ালে দালালি করে, না না ছুতোয় অর্পিতার শরীরে স্পর্শ করে, দালালের লেলুপ আলাপ শুনে অর্পিতা বিব্রত হয়। চাকুরীর পরে অর্পিতা টিউশনি করে। তার ছাত্র আরিয়ান। টিউশনির বেতন চাওয়ার সময় আরিয়ানের বাবাও অর্পিতাকে বাজে ইঙ্গিত দেয়, একই সাথে অতিরিক্ত টাকা দিতে চায়। সংসারে আর্থিক টানাটানি থাকার কারণে অর্পিতার মায়ের সবসময় ঝগড়া হয়। পূজার ব্যক্তিগত জীবনে কিছু দ্বন্দ্ব থাকে, সেও অফিস থেকে অর্পিতার মত অগ্রীম টাকা নিয়েছে। নিজের ছোট বোনের সাথে সম্পর্কের সংকট নিয়ে আলাপের সময় সে বখাটে শাহেদের নজরে পরে। কর্মক্ষেত্রে, পরিবহনে, বাজার-ঘাটে পুরুষদের যৌন-ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ ও পারিবারিক জীবনের অসস্তি নিয়ে কাটে তাদের জীবন।

এরমাঝে তাদের বাড়িরওয়ালা পাওনা ভাড়া না পেয়ে তাদের খোটা দিয়ে যায়। অর্পিতার মাকে দিয়ে মাছ কুটে রান্না করিয়ে নেয়। স্পর্শ মাছ খেতে চাইলেও তার নানী ও মা কেউ রান্না করা মাছ দিতে পারে না। এসব দেখে পুজা শাহেদের কাছে মাছ কেনার জন্য টাকা চায়। অফিসে বস তাদের ব্যক্তিগত অর্জন ভাল করার জন্য বকা দেয়। বসের ব্যক্তিগত সহকারী নিজেদের রূপ, যৌবন ব্যবহার করে গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য বলে। পলিসি বিক্রি করতে এক প্রৌঢ় ব্যক্তির সাথে একই গাড়িতে যায় তারা। স্কিম খোলার বদলে তাদের সাথে যৌনোত্তেজক আচরণ করে। লোকটি তার স্ত্রীর কাছে ধরা পরলে তারা বাজে আচরণ হতে বেঁচে যায়। কারিশমার বাসার সামনে ঘোড়াঘুড়ি করার জন্য ছগির ও প্রকাশকে আবারো পুলিশ ধরে আনে। পুনরায় অর্পিতা তাদের ছাড়াতে যায়। শেষবারের মত স্বামীকে জামিনে মুক্ত করে মুক্ত করতে আসবে বলে পণ করে। একদিন ছাত্র পড়াতে গিয়ে, ছাত্রের অবর্তমানে তার বাবা অর্পিতাকে ভোগ করতে চায়। অর্পিতা থাপ্পড় মেরে চলে আসে। পাওনাদার এসে পুজাকে টাকার জন্য গালমন্দ করে যায়। অর্পিতার মা বার বার ছগিরের সাথে সবকিছু মিট্মাট করে ফেলার তাড়া দেয়। ছগির কারিশমার বাড়ির সামনে আবারো প্রকাশকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কারিশমার সাথে দেখা হয়। বেইমানির জন্য নায়িকাকে থাপ্পড় মারে।

অতিরিক্ত আয় করতে দুইজন একটা জুতার কারখানায় কাজ করে। প্রকাশ বুঝতে পারে ছগির নায়িকা কে নয়, নায়িকার দেহকে ভালবাসে। নায়িকার সাথে ছগিরের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। আরেকবার নায়িকার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করলে ছগিরের মোহ কেটে যাবে। দালাল পর্দা ব্যবসায়ী অর্পিতার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে। অর্পিতার বদলে পূজাকে পর্দা ব্যবসায়ীর কাছে পলিসি খোলার জন্য পাঠানো হয়। বিভিন্ন গ্রাহকের যৌনদৃষ্টি এড়াতে ক্লান্ত হয়ে যায় অর্পিতা ও পূজা। সমাজের লেলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতে অবশেষে পূজা সেই দালালকে বিয়ে করে। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠানেই গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগ করে। এদিকে অর্পিতার বস তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে। পুজা চিঠি দিয়ে অর্পিতার কাছে ক্ষমা চায়। বেকার, দিশাহীন অর্পিতা ছগিরকে ঘরে ফিরে আসতে বলে। স্পর্শও তার বাবার কাছে যেতে চায়। বখাটে শাহেদ অর্পিতার প্রতি দূর্বল হয়ে তাকে বিয়ে করতে বলে। ঠিক সেই মূহূর্তে ছগির ফোন করে অর্পিতার কাছে আশ্রয় চায়। একই সাথে শাহেদের প্রেমের প্রস্তাব আর স্বামীর আকুতি শুনে ভেঙ্গে পরে সে।

কারিশমা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছগিরকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়ার জন্য তার প্রেমিকের সাথে পরিকল্পনা করে। ঘুমন্ত অর্পিতার কাছে ছগিরের ফোন আসে। ছগির জানায় কারিশমা তার লোক দিয়ে ছগিরের শরীরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে, ছগির অর্পিতার কাছে ক্ষমা চায়। নিজের স্বামিকে বাঁচাতে অর্পিতা থানায় যায়, কিন্তু থানার অফিসার বড়কর্তার বাসায় চুরি তদন্ত নিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে ছগিরকে উদ্ধার করতে চায় না। পুলিশের কাছে সাহায্য না পেয়ে সে প্রকাশের কাছে যায়। প্রকাশ জানায় ছগির অর্পিতার কাছে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। হতদ্যম অর্পিতা কারিশমাকে ফোন করে ছগিরকে ফিরিয়ে দিতে বলে। উত্তর না পেয়ে বাসায় ফিরে আসে। দরজার সামনে বখাটের সাথে দেখা হয়। অর্পিতাকে পাওয়ার জন্য বখাটে কারিশমাকে খুন করে। টিভি সাংবাদিকরা একই সাথে প্রেমিকসহ কারিশমার খুন হওয়া ও শীতলক্ষ্যায় ছগিরের লাশ খুঁজে পাওয়ার খবর প্রচার করে। প্রকাশ টিভিতে শাহেদকে গ্রেফতারের খবর দেখে। ক্লান্ত বিধ্বস্ত অর্পিতা তার মা ও মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যায়।

কুশীলব[সম্পাদনা]

দ্রষ্টব্য: তৌকির আহমেদ হতে শুরু করে গাজী রাকায়েত পর্যন্ত অভিনয়শিল্পীদের নাম প্রারম্ভে এবং বাকি শিল্পীদের নাম সমাপনী দৃশ্যে এসেছে।

শিশুশিল্পী

  • স্পর্শ
  • আরিয়ান

অন্যান্য অভিনয়শিল্পী

  • রফিজুল আলম লিংকন
  • মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
  • ফাহমি
  • স্নিগ্ধা
  • মুক্তা
  • টেস্টার
  • সাজেন
  • খলিল
  • শামিম
  • আলি
  • নূর-এ-জান্নাত জারা
  • পারভেজ সুমন
  • অন্তর আলি জাহাঙ্গীর

ইতিহাস[সম্পাদনা]

অর্পিতা শাহরিয়ার নাজীম জয়ের দ্বিতীয় পরিচালিত ছায়াছবি[২] প্রার্থনার পর ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সাথে জয়ের দ্বিতীয় যৌথকর্ম।[১] এটি ছিল ২০১৮ সালে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত ও মুক্তি পাওয়া পঞ্চম চলচ্চিত্র।[৪] ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।[৫] নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড হতে প্রদর্শনীর অনুমোদন পায়।[৬] চলচ্চিত্রের মুক্তির তারিখ দুইবার পেছানো হয়। প্রথমে ৫ অক্টোবর[৭] এবং পরে নভেম্বরে মুক্তির জন্য পরিকল্পিত ছিল।[৮] ১৭ ডিসেম্বর একটি ট্রেলার প্রকাশ[৯] ও পোস্টার ছাড়া অর্পিতার জন্য কোন প্রচারণা চালানো হয়নি।[১০] ২১ ডিসেম্বর জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিবেশনায় ঢাকার ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ ও টাঙ্গাইলের ‘কেয়া’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হয়।[৩] স্বল্প পরিসরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর ২০১৯ সালের ইদুল আযহার সময় টেলিভিশন দর্শকদের জন্য প্রচারিত হয়।[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "এসেছে জয়ের 'অর্পিতা'"প্রথম আলো। ২০১৮-১২-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে আসছে ইমপ্রেসের 'অর্পিতা'"চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৮-১২-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  3. "শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে 'স্বপ্নের ঘর' ও 'অর্পিতা'"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৮-১২-২১। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  4. "ফিরে দেখা ২০১৮: আলোচনায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি"চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৮-১২-২৭। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  5. "জয়ের সিনেমায় ছন্দা ও অর্ষা"দৈনিক ইনকিলাব। ২০১৬-১০-৩১। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  6. "২০১৮ সালে সেন্সর সনদ প্রাপ্ত চলচ্চিত্রের তালিকা" (পিডিএফ)বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  7. "অক্টোবরে মুক্তি পাচ্ছে ছন্দার প্রথম সিনেমা"জাগো নিউজ। ২০১৮-০৯-২৩। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  8. "'অর্পিতা'র জন্য ছন্দার অপেক্ষা"বিবার্তা২৪ ডট নেট। ২০১৮-১১-০৪। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  9. "প্রেক্ষাগৃহে জয়ের দ্বিতীয় ছবি 'অর্পিতা'"চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৮-১২-২১। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  10. "ছবির প্রযোজক ও পরিচালক ভালো বলতে পারবেন: অর্ষা"প্রথম আলো। ২০১৮-১২-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 
  11. "ঈদে চ্যানেল আইয়ে প্রথমবার জয়ের 'অর্পিতা'"চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৯-০৭-২৩। ২০২৩-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]