ইনামুল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইনামুল হক
জন্ম(১৯৪৩-০৫-২৯)২৯ মে ১৯৪৩
মোটবী, ফেনী
মৃত্যু১১ অক্টোবর ২০২১(2021-10-11) (বয়স ৭৮)
পেশাঅভিনেতা, লেখক, নাট্যকার, শিক্ষক
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠাননটর ডেম কলেজ, ঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক (২০১২), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৭)
দাম্পত্যসঙ্গীলাকী ইনাম
সন্তানহৃদি হক
প্রৈতি হক

ইনামুল হক (২৯ মে ১৯৪৩ – ১১ অক্টোবর ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি অভিনেতা, লেখক, নাট্যকার ও শিক্ষক।[১] তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।[২][৩] নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে 'একুশে পদক' প্রদান করে।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

ইনামুল হক ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার পিতার নাম ওবায়দুল হক ও মাতার নাম রাজিয়া খাতুন।[৪] তিনি ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।[৪] পরবর্তীতে তিনি ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৯৭৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ইনামুল হক ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৭০ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।[২] তিনি ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২ বছর প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[৫]

অভিনয় জীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।[৩] এই দলের হয়ে তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন, তার অভিনীত প্রথম নাটকটি ছিল আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে সামরিক শাসনকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’।[৩]

তার অভিনীত কিছু মঞ্চনাটক হল ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ছিল মুস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’।[৫] তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০), এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫), আয়োময় (১৯৮৮), আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১), এবং বৃহন্নলা (২০১৪)।

তিনি টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে নির্জন সৈকতে, গৃহবাসী, মুক্তিযুদ্ধ নাটকসমগ্র, স্ট্রিন্ডবার্গ এর দু'টো নাটক, মহাকালের ঘোর সওয়ার, বাংলা আমার বাংলা ইত্যাদি।[৬]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

ড. ইনামুল হকের দাম্পত্য সঙ্গী বরেণ্য নাট্যজন লাকী ইনাম। তাদের সংসারে দুই মেয়ে হৃদি হক (স্বামী লিটু আনাম) আর প্রৈতি হক (স্বামী সাজু খাদেম)।[৮]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ইনামুল হক ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর বিকেল তিনটায় তাঁর বেইলী রোডের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।[৪][৯][১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স"। ২১ আগস্ট ২০১১। 
  2. "Retired Faculties" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ 
  3. "অভিনেতা ড. ইনামুল হক না ফেরার দেশে"কালের কণ্ঠ। ১১ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২১ 
  4. "অভিনেতা ইনামুল হক মারা গেছেন"। প্রথম আলো। ১১ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২১ 
  5. "চলে গেলেন নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক"banglanews24.com। ১১ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২১ 
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১২ 
  7. "প্রদান করা হলো 'ট্র্যাব অ্যাওয়ার্ড'"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২৪ এপ্রিল ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২০ 
  8. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৩ 
  9. রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২১-১০-১১)। "চলে গেলেন ড. ইনামুল হক"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১১ 
  10. "অভিনেতা ড. ইনামুল হক আর নেই"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]