হারীতী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শিশুর সাথে রাক্ষস উপপত্নী হিসাবে কিশিমোজিন। ১২শ-১৩শ শতাব্দী, কামাকুরা যুগ । দাইগো-জি, কিয়োটো, জাপান।
অনুবাদে
হরিতি শব্দটির বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ
সংস্কৃত:হরিতি
চীনা:鬼子母
(pinyinগুইঝিমু)
জাপানী:鬼子母神
(rōmaji: কিশিমোজিন)
কোরীয়:귀자모신
(RR: গুইজামোশিন)
বৌদ্ধ ধর্ম সংশ্লিষ্ট টীকাসমূহ

হারীতী (সংস্কৃত, এটি চীনা: 鬼子母(神); ফিনিন: গুইঝিমু(শেন) জাপানি কিশিমোজিন (鬼子母神) নামেও পরিচিত) বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী একজন ব্যাপক সম্মানিত দেবী এবং দৈত্য। তাঁর ইতিবাচক দিকগুলি হল তিনি শিশুদের সুরক্ষা, সহজ প্রসব এবং সুখী সন্তান লালন-পালনের দিকটি দেখাশুনা করেন। তবে তাঁর নেতিবাচক দিকগুলির প্রসঙ্গে বলতে হয়, দায়িত্বজ্ঞানহীন বাবা-মা এবং অনাথ শিশুদের প্রতি তার ক্রোধ রয়েছে এরূপ বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে।

জাপানি বৌদ্ধধর্ম অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় কিশিমোজিনকে অভিভাবক দেবতা হিসেবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। কিন্তু বেশ কিছু লোক-ঐতিহ্যে প্রায়ই শিশু এবং অভিভাবকদের দুঃখ ও দুর্দশার জন্য দায়ী এক মহিলা দৈত্য হিসেবে তিনি স্বীকৃত। এই দুটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যই বর্তমান জাপানি বৌদ্ধ অনুশীলন এবং বিশ্বাসে প্রচলিত রয়েছে।

প্রতিমা শিল্প[সম্পাদনা]

হারীতীর মূর্তির সাথে গ্রিক দেবী টাইকির মিল রয়েছে এবং সম্ভবত সেই গ্রীক দেবীই গ্রেকো-বৌদ্ধধর্মের প্রচারকদের কর্তৃক পূর্ব এশিয়ায় প্রেরিত হয়ে থাকতে পারেন। গ্রিক শিল্পে টাইকির শিশুদের উপস্থিতি সহকারে তৈরি করা হয়ে থাকে। তিনি একটি কর্ণুকোপিয়া (প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ভাণ্ডার), একটি গুবার্নাকুলুম (জাহাজের হালের) প্রতীক, এবং ভাগ্যের চাকা বহন করেন। তিনি ভাগ্যের চাকাটি ঘুরিয়ে সেই চাকার উপর দাঁড়াতে পারেন।[১]

হারীতী লোটাস সূত্রের ২৬ তম অধ্যায়ের একটি চিত্র এবং এটি নিচিরেণ বৌদ্ধধর্মের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিংগন বৌদ্ধ ধর্মে তার নাম কাইরেতি (訶利帝) বা কাইরেতি-মো (訶梨帝母)। তার মূর্তিটি মূলত দাই ইয়াকুশা নিয়ো কাংগিমো নারাহিনি আইশি জোঝুও (大薬叉女歓喜母并愛子成就法) এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।[২]

জাপানি পরম্পরা অনুযায়ী কিশিমোজিন ক্যানোন নামক করুণার দেবীর একটি বিশেষ রূপ এবং তিনি "সুখ আনয়নকারী" (歓喜母) এবং "সন্তান এবং সহজ প্রসব দাত্রী" (子安鬼子母神) বিশেষণে বিশেষিত।

নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকায় তিনি "মা হারীতী" নামে পরিচিত এবং তাঁর প্রধান মন্দির কাঠমান্ডুর শম্ভুনাথ স্তূপ ভবনের একাংশে অবস্থিত। তিনি পঞ্চিকার স্ত্রী বা সঙ্গিনী এবং শিশুদের সুরক্ষক হিসেবে বিবেচিত এবং কাঠমান্ডু, ভক্তপুর এবং ললিতপুর জেলার নেওয়ার মানুষদের পৃষ্ঠপোষক। নেওয়াররা তাকে অজিমা বলে, নেওয়ার ভাষায় যার অর্থ "দাদি"। [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

মেন্দুতের উত্তর দেয়ালের অভ্যন্তরীণ অংশে নিজের সন্তানদের সঙ্গে হরিতির খোদাইকৃত মূর্তি, ৯ম শতাব্দী।

উপকথা অনুযায়ী, হারীতী মূলত ছিল রাজগিরের এক রাক্ষসী। এটা সেসময়ের কথা যখন গৌতম বুদ্ধ সেখানে বসবাস করতেন। তাঁর নিজের কয়েকশো বাচ্চা ছিল, যাদের তিনি অন্ধভাবে ভালোবাসতেন এবং স্নেহ করতেন। কিন্তু তাদেরকে খাওয়ানোর জন্য তিনি অন্যের বাচ্চাদের অপহরণ করে হত্যা করতেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগী শোকাহত মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে রক্ষা করার জন্য বুদ্ধকে আবেদন করেন। এর প্রতিকার বিধানে বুদ্ধ তার পুত্রদের মধ্যে কনিষ্ঠতমকে (এক বর্ণনামতে কনিষ্ঠ কন্যা) চুরি করেন এবং তাকে নিজের ভাতের পাত্রে লুকিয়ে রাখেন। নিখোঁজ ছেলের জন্য সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব জুড়ে মরিয়া হয়ে অনুসন্ধান করার পরে রাক্ষসী হরিতি শেষ পর্যন্ত বুদ্ধের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন।

বুদ্ধ তাকে বলেন যে তিনি কয়েকশ শিশুর মধ্যে মাত্র একজনকে হারিয়েছেন বলেই এত চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, যেসব বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তানকে সে গ্রাস হয়েছে তার কষ্টের কথা তিনি কি কল্পনা করতে পারেন? তিনি দৃঢ়ভাবে উত্তর দেন যে তাদের কষ্ট অবশ্যই তাঁর নিজের চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে। তারপরে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি সমস্ত বাচ্চাদের রক্ষা করবেন এবং বাচ্চাদের মাংসের পরিবর্তে তিনি কেবল ডালিমই খাবেন। তখন থেকেই হরিতি প্রসবকালীন শিশু এবং মহিলাদের সুরক্ষক হয়ে ওঠেন। বিনিময়ে বুদ্ধ তাকে বোধি দান করেন, যা তাকে কালো যাদু এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষমতা প্রদান করে এবং অসুস্থ নিরাময়ের সুযোগ দেয়।[৩][৪]

কাহিনীটির জাপানি সংস্করণে বলা হয়ে থাকে যে, কিশিমোজিন অন্যান্য পরিবারের শিশুদের অপহরণ ও হত্যা করার জন্য দশ রাক্ষসী (十羅刹女, jūrasetsunyo) মহিলার সাহায্য নেন। কিছু পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী দশ রাক্ষসী মহিলারা প্রকৃতপক্ষে কিশিমোজিনের নিজেরই কন্যা (অথবা কন্যার কন্যা)।[৫] কিশিমোজিন যখন বুদ্ধের উপদেশ গ্রহণ করেন তখন দশ দানব কন্যারাও একইভাবে সেই শিক্ষা গ্রহণ করেন।

গান্ধারার হরিতির মূর্তি

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Katsumi Tanabe, Alexander the Great: East-West Cultural Contact from Greece to Japan (Tokyo: NHK Puromōshon and Tokyo National Museum, 2003).
  2. শুমাকার, মার্ক। সি 
  3. Encyclopedia of Ancient Deities, ২০০০ .
  4. A-Z Photo Dictionary of Japanese Buddhist Statuary, ১৯৯৫ 
  5. চিতকারা, এম. জি, সম্পাদক (২০০৫)। "জুরাসেটসু"। এনসাইক্লোপিডিয়া অব বুদ্ধিজম। গ্লোসারি অব বুদ্ধিজম টার্মস, ভলিউম ২১। নয়াদিল্লী: এ.এইচ.জি পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ২১৮। আইএসবিএন 81-7648-184-X 

গ্রন্থ-পঞ্জিকা[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • উইকিমিডিয়া কমন্সে হারীতী সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।