বিষয়বস্তুতে চলুন

হুয়েই জাতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হুয়েই জাতি
回族
خُوِذُو
দুইজন হুয়েই নারী ও একজন হুয়েই পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে আছেন।
মোট জনসংখ্যা
10,586,087 (২০১১ সালের জনগণনা[তথ্যসূত্র প্রয়োজন])
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
 চীন
 প্রজাতন্ত্রী চীন
 কাজাখস্তান কিরগিজিস্তান উজবেকিস্তান রাশিয়া
 সৌদি আরব মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড মিয়ানমার
ভাষা
ম্যান্ডারিন চীনা ভাষা, দুনগান এবং অন্যান্য চৈনিক ভাষা
ধর্ম
প্রধানত সুন্নি ইসলাম (হানাফি)[](Maturidi)[][]
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
হুয়েই জাতি
চীনা 回族
হুয়েই জাতির লোকেরা মসজিদে প্রার্থনা করছেন।

হুয়েই জাতি (চীনা: 回族; ফিনিন: Huízú; ওয়েড-জাইলস: Hui2-tsu2, শিয়াও-আরচিং: خُوِذُو, টেমপ্লেট:Lang-dng, Xuejzw) হল একটি পূর্ব-এশীয় নৃ-ধর্মীয় গোষ্ঠী যাদের সিংহভাগই চীনাভাষাভাষী মুসলমান নিয়ে গঠিত। এরা চীনের সর্বত্র এবং বিশেষ করে চীনের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশগুলিতে ও চুংইউয়েন অঞ্চলে বসবাস করে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী চীনে প্রায় ১ কোটি ৫ লক্ষ হুয়েই জাতির লোক বাস করে। এদের সিংহভাগই চীনাভাষাভাষী ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তবে এদের কিয়দংশ অন্য ধর্ম পালন করে। কাজাখস্তান ও কিরগিজস্তানের ১ লক্ষ ১০ হাজার দুনগান জাতির লোকেরাও হুয়েই নৃগোষ্ঠীগত পরিচয়ের অধীন হিসেবে পরিগণিত হয়।

হুয়েই জাতির লোকেরা ইসলাম অনুসরণ করে বিধায় এদের সংস্কৃতিতে বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে।[] যেমন মুসলমান হিসেবে তারা ইসলামি খাদ্যগ্রহণ বিধিনিষেধ মেনে চলে এবং শূকরের মাংস ভক্ষণ করে না, যদিও চীনে শূকরের মাংস সবচেয়ে জনপ্রিয় মাংস।[] এর ফলে হুয়েই জাতির লোকেরা চীনা রন্ধনশৈলীর নিজস্ব প্রকারণ উদ্ভাবন করেছে। হুয়েইদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদও চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতির লোকদের চেয়ে ভিন্ন। কিছু হুয়েই পুরুষ সাদা রঙের টুপি (তাকিয়া) এবং কিছু হুয়েই নারী মাথায় ওড়না পরিধান করেন, যা চীনের বাইরেও বহু মুসলমান সংস্কৃতিতে বহুল প্রচলিত। তবে চীনের শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের সাথে সাথে সিংহভাগ হুয়েই তরুণ-তরুণীই মূলধারার আধুনিক পোশাকশৈলী অনুসরণ করে।

হুয়েই জাতির লোকের চীনের ৫৬টি নৃতাত্ত্বিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর একটি। চীনা সরকারের সংজ্ঞানুযায়ী চীনের ঐতিহাসিক সমস্ত চীনাভাষী মুসলমান সম্প্রদায়গুলিকে একত্রে হুয়েই নাম দেওয়া হয়েছে। তবে এগুলি অন্যান্য নৃতাত্ত্বিকভাবে স্বতন্ত্র মুসলমান সম্প্রদায় যেমন উইগুরদের অপেক্ষা পৃথক।[] এগুলির বিপরীতে হুয়েই জাতির লোকেরা প্রায় সবাই চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলে[] এবং একই সাথে আরবি ও ফার্সি ভাষার শব্দ ও বাক্যের প্রয়োগ করে।[] হুয়েই জাতিগোষ্ঠীটি চীনের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অনন্য এই কারণে যে তারা চৈনিক ভাষা নয়, এমন কোনও ভাষার সাথে সম্পর্কিত নয়।[]

হুয়েই জাতির লোকেরা উত্তর-পশ্চিম চীন (নিংশিয়া, কানসু, ছিংহাই, শিনচিয়াং) অঞ্চলে বেশি বসবাস করলেও সারা চীনদেশেই, যেমন মাঞ্চুরিয়া, বেইজিং, শিআন, অন্তর্দেশীয় মঙ্গোলিয়া, হপেই, হাইনানইউন্নান প্রদেশ ও অঞ্চলগুলিতে এদের দেখা মেলে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "By choosing assimilation, China's Hui have become one of the world's most successful Muslim minorities"The Economist। ৮ অক্টোবর ২০১৬। ৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  2. "الماتريدية وآثارها في الفكر الإنساني بدول طريق الحرير.. الصين نموذجًا"। Alfaisal Magazine। 
  3. "الحنفية الماتريدية في بلاد الصين"। midad.com। 
  4. Gladney 1996, পৃ. 20।
  5. Gladney 1996, পৃ. 13 Quote: "In China, pork has been the basic meat protein for centuries and regarded by Chairman Mao as 'a national treasure'"
  6. Lipman 1997, পৃ. xxiii or Gladney 1996, পৃ. 18–20 হুয়েই ছাড়া আরও ৯টি নৃতাত্ত্বিক ও মুসলমান গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে চীনে সরকারীভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এই নয়টি দলকে মূলত ভাষাতাত্ত্বিক ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এগুলি হল তুর্কীয় ভাষাসমূহে কথা বলা ছয়টি সম্প্রদায় (কাজাখ, কিরগিজ, সালার, তাতার, উইগুর ও উজবেক), দুইটি মঙ্গোলীয় ভাষাসমূহে কথা বলা সম্প্রদায় (পোনান ও তুংশিয়াং) এবং একটি ইরানীয় ভাষায় কথা বলা সম্প্রদায় (তাজিক)।
  7. Michael Dillon (১৬ ডিসেম্বর ২০১৩)। China's Muslim Hui Community: Migration, Settlement and Sects। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 154–। আইএসবিএন 978-1-136-80940-8। ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫ 
  8. Lipman 1997, পৃ. 50 তবে এও সত্য যে চীনের বেশিরভাগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক ব্যক্তিই তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় আর কথা বলেন না (যেমন মাঞ্চু জাতির কেউই সম্ভবত মাঞ্চু ভাষায় কথা বলে না)। ধারণা করা হয় যে বর্তমানের হুয়েই জাতির লোকদের পূর্বপুরুষরা সম্ভবত অতীতে স্থানীয় চীনা কিন্তু ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং তারা সম্ভবত মিং রাজবংশের শাসনামলের প্রারম্ভে বা তারও আগে (১৪শ শতকের শেষভাগ) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]