জেসন গালিয়ান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জেসন গালিয়ান
২০০৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জেসন গালিয়ান
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজেসন এডওয়ার্ড রিচি গালিয়ান
জন্ম (1971-06-25) ২৫ জুন ১৯৭১ (বয়স ৫২)
ম্যানলি, সিডনি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
উচ্চতা৬ ফুট ০ ইঞ্চি (১.৮৩ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৭৩)
৬ জুলাই ১৯৯৫ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯০ - ১৯৯৩অক্সফোর্ডবিশ্ববিদ্যালয়
১৯৯৩ - ১৯৯৭ল্যাঙ্কাশায়ার
১৯৯৮ - ২০০৭নটিংহ্যামশায়ার
২০০৮ - ২০০৯এসেক্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ টি২০
ম্যাচ সংখ্যা ২৫৯ ২৩১ ১৬
রানের সংখ্যা ৭৪ ১৫,২৬৬ ৬,৭৫৪ ৩১৫
ব্যাটিং গড় ১২.৩৩ ৩৭.৫০ ৩২.৩১ ১৯.৬৮
১০০/৫০ ০/০ ৩৮/৭২ ১১/৪০ ০/২
সর্বোচ্চ রান ২৮ ৩১২ ১৩৪ ৬২
বল করেছে ৮৪ ৭,১৬২ ২,০৪৯
উইকেট ৯৬ ৫৫
বোলিং গড় ৪৩.৩৭ ৩২.৮৭
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/১১৫ ৫/১৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ২৩১/– ৭৭/– ৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৫ জানুয়ারি ২০২১

জেসন এডওয়ার্ড রিচি গালিয়ান (ইংরেজি: Jason Gallian; জন্ম: ২৫ জুন, ১৯৭১) নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যানলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স, ল্যাঙ্কাশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন জেসন গালিয়ান

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত জেসন গালিয়ান ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে দুইটি টেস্ট খেলায় অধিনায়কত্ব করেছেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনটি টেস্টে অংশ নিলেও নিরাশ করেন। অংশগ্রহণকৃত ছয় ইনিংসের মধ্যে সর্বোচ্চ করেন ২৮ রান। পনেরো বছর কাউন্টি ক্রিকেটে পেশাদারী পর্যায়ে খেলেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলার পর নটিংহ্যামশায়ারে যুক্ত হন। ২০০৯ সালের পূর্ব-পর্যন্ত এসেক্সের পক্ষে দুই বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। ঐ কাউন্টির পক্ষে চ্যাম্পিয়নশীপের অভিষেক খেলায় ১৭১ রান করেন।

নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যানলি এলাকায় জেসন গালিয়ানের জন্ম। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নেতৃত্বে থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে পড়াশুনো করেছেন। কূটনীতি ও সামাজিক শিক্ষা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তার ভাষ্য মতে, এ সময়ে তিনি তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন পর্যাপ্ত সময় থাকায় ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।[১] ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। খেলায় তিনি ১১৫ ও ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।[২] এ সময়ে তিনি নিয়মিতভাবে ব্যাটিং ও বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। তবে, এরপর থেকেই তার মিডিয়াম পেস বোলিং মূলতঃ থিতু হয়ে আসা জুটিতে ফাটল ধরতেই ব্যবহৃত হতো। ল্যাঙ্কাশায়ারে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩১২ রান করেছিলেন তিনি।[৩]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জেসন গালিয়ানের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। নিজের স্বর্ণালী সময়ে শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন। তার ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই মাইক গ্যাটিংয়ের অনুরূপ ছিল। এক পর্যায়ে ১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। অনেকাংশেই তিনি দূর্ভাগ্যের শিকার ও ধারাবাহিকতাবিহীন অবস্থায় খেলেছেন।

সেপ্টেম্বর, ২০০৫ সালে জেসন গালিয়ান প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার ১৯৯ রানে থাকাকালে ডিসমিস হয়েছেন। এ পর্যায়ে তিনি কেন্টের বিপক্ষে রান আউটের শিকারে পরিণত হন। এরপূর্বে একই মৌসুমের এপ্রিল মাসে একই ভাবে সাসেক্সের বিপক্ষে বিদেয় নিয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু থেকেই গ্রাহাম থর্পের সাথে তাকেও ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হতেন। পরিসংখ্যানে গ্রাহাম থর্প ইংল্যান্ড দলে চমৎকার খেললেও তিনিও টেস্টে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারতেন। তবে, নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় তা আর হয়ে উঠেনি।

২০০৩ সালে অবনমনের শিকারে পরিণত হওয়া নটিংহ্যামশায়ার কর্তৃপক্ষের কাছে কেভিন পিটারসন চুক্তি ছিন্ন করার অনুরোধ জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, ক্লাবের ফলাফল তিনি অসন্তুষ্ট।[৪] এরফলে, গালিয়ানের সাথে সমর্থকদের বাদানুবাদ ঘটে, তারপর ক্লাবের অধিনায়কের দিকে বিষয়টি গড়ায়। এ পর্যায়ে ট্রেন্ট ব্রিজের বারান্দা থেকে পিটারসনের সরঞ্জামাদিসহ ব্যাট ভেঙ্গে ফেলা হয় ও জেসন গালিয়ানকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০০৭ সাল শেষে নটিংহ্যামশায়ারে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে দুই বছরের জন্যে এসেক্স দলে যুক্ত হন। এসেক্স কর্তৃপক্ষ তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ক্লাবের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে গালিয়ানকে অন্তর্ভুক্ত করে। ক্লাবের প্রধান নির্বাহী ডেভিড ইস্ট বলেন যে, তার দূর্দান্ত রেকর্ড রয়েছে ও ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকায় পরবর্তী কয়েক বছরে আমাদের তরুণ ও আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যানদের উত্তরণে সহায়ক হবে। তার করণীয় সম্পর্কে তিনি সজাগ রয়েছেন ও তরুণদের সাথে কাজ করতে উন্মুখ।[৩]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন জেসন গালিয়ান। ৬ জুলাই, ১৯৯৫ তারিখে বার্মিংহামে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। তাকে কোন ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।

১৯৯৫ সালে বার্মিংহামে তার অভিষেক টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারদের তোপে পড়েন। দুই দিনের অল্প বেশি সময়ে স্বাগতিক দলকে গুটিয়ে দেয়। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে আঙ্গুলে আঘাত পান। ওভালে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে তাকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হয়। ঐ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের জন্য দলে ঠাঁই হয় তার।

দক্ষিণ আফ্রিকা গমন[সম্পাদনা]

পোর্ট এলিজাবেথে নিজস্ব তৃতীয় ও শেষ টেস্টে অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টোফার মার্টিন-জেনকিন্স মন্তব্য করেন যে, তিনি যে টেস্ট মানসম্পন্ন নন, তা তিনি নিশ্চিত করেছেন। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেও ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৩১২ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। তবে, অসন্তোষের জের ধরে পরের মৌসুমেই নটিংহ্যামশায়ারে চলে যান। এরপর, দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন তবে, আঘাত তার পিছু ছাড়েনি।

২০০১ সালের প্রায় পুরোটা সময়ই মাঠের অবস্থান করতে বাধ্য হন। হাঁটুর অস্ত্রোপচার করতে হয় ও এরপর, মাঠে প্রত্যাবর্তন করে নিজের প্রথম খেলায় আঙ্গুলের মাঝখান কেটে যায়। এক বছর পর ২০০৪ সালে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে পুনরায় অধিনায়কত্ব করার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হয়। তবে, কেভিন পিটারসনের সাথে ভঙ্গুর সম্পর্কের পর স্টিফেন ফ্লেমিংকে ২০০৫ সালে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু, এ সিদ্ধান্তটিকে তিনি ভালোভাবে মেনে নেননি। তাসত্ত্বেও, ঐ মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন ও দলের চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালটি তিনি রান খরায় ভুগেন। সহস্র রান স্পর্শ করতে পারেননি ও নটিংহ্যামশায়ার দল দ্বিতীয় বিভাগে অবনমনের শিকার হয়। দলটির পুনরায় উত্থান ঘটে। তবে, ঐ গ্রীষ্মের শেষে আবারও তিনি দল ত্যাগ করেন। এসেক্স দলের সদস্য হন।

অবসর[সম্পাদনা]

আগস্ট, ২০০৯ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন তিনি। ঐ বছর তিনি এসেক্সের পক্ষে পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[৫]

বর্তমানে তিনি সাফরন ওয়ালডেনের পক্ষে ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন ও এসেক্সভিত্তিক ফেলস্টেড স্কুলের ক্রিকেট প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তিনি ভূগোল বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gallian promises Red Rose revival, the Independent
  2. Gallian oversees Oxford advance, the Independent
  3. Cricinfo staff (১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭), Gallian signs for Essex, Cricinfo.com  Retrieved on 7 January 2009.
  4. "Pietersen confirms he wants to quit Notts", Cricinfo, 2003-10-15. Retrieved on 2007-06-05.
  5. Cricinfo staff (১১ আগস্ট ২০০৯), Gallian announces retirement, Cricinfo.com  Retrieved on 30 October 2009.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
পল জনসন
নটিংহ্যামশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৯৮ - ২০০৪
উত্তরসূরী
স্টিফেন ফ্লেমিং